অভিশপ্ত শয়তান থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। সকল প্রশংসা সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য, যিনি পরম দয়ালু, অসীম দয়াময়। নামাজ আর নমস্কার দুটো শব্দেরই ধাতুমূল বা রুট ওয়ার্ড হচ্ছে “নমস”। “নমস” থেকে ফার্সিতে অর্থ করা হয়েছে “নামাজ”, আর “নমস” থেকে আর্য ভাষায় অর্থ করা হয়েছে “নমস্কার”। “আর্য” বলার কারণে আপনারা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এটা কে যদি অরিজিনাল ভাষায় বলা বলি, বা ভারতে এখন যেভাবে বলা হয় যে “আরিয়ান” বলা হয়, শাহরুখ খানের ছেলের নাম আপনারা জানেন, “আরিয়ান”। শুদ্ধ ভাষায় তারা এখন এটাকে “আরিয়ান” বলে। আপনারা কি “আরিয়ান” ও “ইরান”-এ একটু মিল পাচ্ছেন? হ্যাঁ, একই জিনিস। এই ইরানিয়ান‑রা একসময় এই ভারতে এসেছিল। তাদের জেন্দাবিস্তার সাথে এই বেদের ভাষার প্রচুর মিল পাওয়া যায়। যারা ভাষাতত্ত্ববিদ, তারা আমার কথা হয়তো বুঝতে পারছেন। এই ইরানিয়ান বা এই আরিয়ান, এদের যেই মূল ভাষার শব্দ “নমস”, এখান থেকে এখনো হিন্দুরা নিয়েছে “নমস্কার”, আর ইরানিয়ানরা (মানে আরিয়ানরা) নিয়েছে “নামাজ”।
আমি প্রথম পর্বে আলোচনা করেছিলাম, নামাজের বাংলা অর্থ “প্রার্থনা”। আর সাধারণের জন্য বোঝার জন্য, ধনীদের কাছে এর অর্থ হচ্ছে “প্রার্থনা”। আর সাধারণ যারা আমরা আম-জনতা আছি, আমরা “ভিক্ষা” বা “ভিখারী” বা “ভিক্ষা“র সাথে বেশি পরিচিত। খুব জনপ্রিয় ক্ষণার বচন আছে: “ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা খেদাও!” অথবা গান আছে: “আমি তোমারই প্রেম‑ভিখারী”। তো আমি তোমারই প্রেম প্রার্থনা আকারে কিন্তু বলা হয় না, কারণ ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। “আমি তোমারই প্রেম‑ভিখারী” বলা হয়। এই ভিখারী হওয়া মানে কারো কাছ থেকে কিছু চাওয়া। মনের ভিতরের আবেগ থেকে, হৃদয়ের অন্তরের অন্তস্থল থেকে যে প্রেম চাওয়া, এটাই হচ্ছে প্রেম‑ভিখারী। হৃদয়ের অন্তরের অন্তস্থল থেকে মানুষ একজনের কাছে সবচেয়ে আকুলভাবে চাইতে পারে, সেটা হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রতি। সৃষ্টিকর্তার প্রতি মহান আল্লাহর কাছে কোনো কিছু আকুলভাবে চাওয়ার নামই হচ্ছে এই ইরানিয়ান ভাষায় “নামাজ”।
প্রথম পর্বে আলোচনা করেছিলাম, আল্লাহর কাছে আকুলভাবে কোনো কিছু চাওয়ার এটার কোনো পদ্ধতি বা সিস্টেম হয় না। যার যার প্রয়োজন, অভাব‑অনটন, দুঃখ‑কষ্ট‑বেদনা, পেটের ক্ষুধা অনুযায়ী ভিক্ষুক যেমন কোনো কিছু চায়, ভিখারী যেমন কোনো কিছু চায়, ঠিক তেমনি নামাজীও সেইভাবেই আল্লাহর কাছে চাইবে। হাদিস‑বেত্তারা বলেন যে এই নামাজ বা প্রার্থনা বা ভিক্ষা, এটা হচ্ছে যত দোয়া আল্লাহর কাছে করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দোয়া, শেষ শ্রেষ্ঠ প্রার্থনা। এইভাবে যদি আপনি অর্থ বুঝে, শব্দের অর্থ বুঝে, এবং আরবি কোরআনের অর্থ বুঝে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারেন, আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাইতে পারেন, কোনো জরুরত আপনার যত, মনের দুঃখ‑কষ্ট, আবেগ, হতাশা, বেদনা—সেটা যদি আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে পারেন, আকুতি-মিনতি, কাকুতি-অনুনয়-বিনয় সহকারে—একবারই যথেষ্ট। দিনের মধ্যে ১০ ওয়াক্ত, ১৫ ওয়াক্ত, ২০ ওয়াক্ত করার দরকার নেই। আর এইভাবে আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চেয়েছিলেন করুণ আকুতি-মিনতি জানিয়েছিলেন অন্তরের অন্তস্থল থেকে। মিনতি জানিয়েছিলেন নবী, মিনতি জানিয়েছিলেন নূহ নবী, মিনতি জানিয়েছিলেন ইব্রাহিম নবী, মিনতি জানিয়েছিলেন সুলাইমান নবী, দাউদ নবী, ইউসুফ নবী। পবিত্র কোরআনের পাতায় পাতায় নবীদের নামাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে—তাদের প্রার্থনা, তাদের ভিক্ষা, তাদের আল্লাহর কাছে আকুতি-আকুল আবেদনগুলো কত চমৎকারভাবে আল্লাহ উল্লেখ করে দিয়েছেন। আপনি যদি কোরআনটা খুব ভালো করে পড়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে কোথাও তাদের সেই আকুল আবেদনের প্রসেস বলা হয়নি, শুধু শব্দগুলো বলা হয়েছে: কীভাবে, কী শব্দগুলো ব্যবহার করে তিনি আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন করেছিলেন, সেই কথাগুলো বলা হয়েছে।
আদম নবী বলেছিলেন: “ওগো আল্লাহ, রব্বানা, আল্লাহপাক!” তার কাছে কিভাবে ভিক্ষা চাইবো? কিভাবে আকুল আবেদন করব? করুন মিনতি করব? তা কোরআনের পাতায় পাতায় আমাদের শিখিয়েছেন। সূরা ফুরকানে আল্লাহ শিখিয়েছেন: “রব্বানা হাবলানা মুত্তাকিনামা”। ওগো আমাদের রব, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান‑সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখে শান্তি দেয়, চোখ জুড়িয়ে দেয়। আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দিন। কত চমৎকার দোয়া! আমি এই মুত্তাকী ভিডিওতে বলেছিলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছে যারা মুত্তাকী হতে পারে। সূরা হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: “এই জমিনে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে রেস্পেক্টেবল, সবচেয়ে সম্মানিত মানুষ হচ্ছে যারা মুত্তাকী।” মুত্তাকী কিভাবে হবেন? মুত্তাকী কি, কেন? তা নিয়ে একটা ভিডিও আছে। আপনারা দেখলে খুব উপকৃত হবেন।
তো এখানে দেখুন, আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন, তোমরা বলো: “আমরা মুত্তাকীদের ইমাম হতে চাই।” মুত্তাকীদের নেতা হতে চাই। অসুখে-বিসুখে, রোগে-সুখে, কষ্টে-দুঃখে, আইয়ুব নবী আল্লাহর কাছে নামাজ পড়েছিলেন (মানে দোয়া করেছিলেন), করেছিলেন আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন, আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চেয়েছিলেন: “ওগো আল্লাহ, আমি আর কষ্ট সইতে পারি না। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু!” আল্লাহ সাথে সাথে তার সেই আকুল আবেদন গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হাত পেটে বেঁধেছেন না, বুকে বেঁধেছেন না, হাত ছেড়ে দিয়েছেন। গোল টুপি পড়েছেন না, লম্বা টুপি পড়েছেন, উপর হয়েছিলেন না, কুজু হয়েছিলেন—তার কোনো বর্ণনাই আল্লাহ দেননি। কারণ, খুব সহজ: আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন তো অন্তরের অন্তস্থল থেকে। তার মনের দুঃখ‑কষ্ট, আবেগ, হতাশা, বেদনা, সেই অনুযায়ী—যার যার সেই মনের অবস্থা অনুযায়ী, তার কষ্ট অনুযায়ী—সে সেইভাবে নিবেদন করবে, আবেদন করবে। এখানে হাত পেটে বাঁধলো না, বুকে বাঁধলো—ডাজেন্ট ম্যাটার! এটাই তো আল্লাহ শিখিয়েছেন।
সেই মুসা নবী, যিনি রাজপরিবারে বড় হয়েছিলেন, রাজপুত্রের মতো। তিনি দেশ থেকে খুনের অপরাধে (ভুল করে, ইচ্ছাকৃত না) পালিয়ে বেরিয়েছিলেন। চাকরি নাই, বাকরি নাই, পকেটে দুটো টাকা নাই, ঘর নাই, বাড়ি নাই, কোনো জীবিকার ব্যবস্থা নাই। অকুল পাথারে তিনি এক মুঠো ভাত যে খাবেন, একটু রুটি যে খাবেন—সেই সংস্থান নাই। বেকার জীবন। রাত্রে যে একটু ঘুমাবেন, সে ঘুমানোর ব্যবস্থাও তার নাই। সেই অবস্থায় আল্লাহর কাছে নামাজ পড়েছিলেন (মানে দোয়া করেছিলেন), আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন, করুন মিনতি করেছিলেন: “ওগো আল্লাহ, তুমি ছাড়া আমার কে আছে?” আল্লাহ সাথে সাথে তার চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, তার খাবারের ব্যবস্থা করে করে দিয়েছিলেন, তার থাকার জায়গা-ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। চোখের পলকে দোয়াটা করে। আপনি আমার ভয়াবহ বিপদে কিভাবে আল্লাহর কাছে চাইবো, সেই ভিডিওটা দেখলে আরেকটু ডিটেইলস জানতে পারবেন।
ইউনুস নবী মাছের পেটে মৃত্যু প্রায় অপধারিত জেনেও তিনি আল্লাহর কাছে নামাজ পড়েছিলেন, আকুল আবেদন করেছিলেন। আল্লাহ তাকে উদ্ধার করেছিলেন। সেখানে হাত তিনি কোথায় বেঁধেছেন—এই বর্ণনা আল্লাহ দেননি। আল্লাহ কি, কিভাবে সে আল্লাহর কাছে আবেদন করেছিল, নিবেদন করেছিল, সেই বর্ণনা দিয়েছেন। ওটাই আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। কোনো চাইনিজকে, কোনো ইংরেজকে যদি আপনি বাংলাদেশে এনে তাকে কিভাবে ভিক্ষা করতে হয় সেটা শেখান, আর যদি শেখাতে গিয়ে কুটকৌশলে তাকে বলেন যে বাংলার প্রতি শব্দে ১০ নেকি করে তুমি পাবে, তাহলে সাথে সাথে সে প্রশ্ন করবে: “তাহলে সেই যা আমি বলব, আমি বাংলাতেই করব। যদিও ভাষা আমি বুঝি না, বাংলাতেই আমি মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইবো। তাহলে আমার মন কেমন হবে? মানুষের কাছে কতটুকু সামনে গিয়ে দাঁড়াবো? বেশি সামনে দাঁড়াবো না পেছনে দাঁড়াবো? আমার গায়ের পোশাক কি হবে? আমার মাথায় কি থাকবে? আমার পায়ের জুতোটা কেমন হবে? আমার গলার টোনটা কেমন হবে?” সে শত শত প্রশ্ন করবে। তারপর আপনি তাকে তাফসীর, মাহফিল, ওয়াজ, আরবি-বাংলা ব্যাকরণের প্রকৃতি-প্রত্যায়, কারক-সমাস সবকিছু শিখিয়ে তাকে দাওরায় হাদিস পাশ করিয়ে, পুরোপুরি পারফেক্টলি অঙ্গভঙ্গি করে অভিনয় করে শিখিয়ে তাকে তার দেশ চায়নায় অথবা ইংল্যান্ডে (যে আয়ারল্যান্ডে) যখন পাঠাবেন—সে কিন্তু কোনোদিনই তার প্রয়োজন অনুযায়ী, তার মনের দুঃখ‑কষ্ট‑বেদনা, তার কতটুকু প্রয়োজন, তার সে পেটের চাহিদা অনুযায়ী অন্যের কাছে কিন্তু সে সতস্ফুর্ত‑ফুর্তভাবে পরিপূর্ণ মনের ইমোশন নিয়ে, আবেগ নিয়ে কখনোই সে ভিক্ষা চাইতে পারবে না। সে রোবটের মতো কিছু কথা বলবে। তাতে মানুষের মূল না, গলাটাই স্বাভাবিক। সে বলবে: “আমাকে কয়টা ভিক্ষা দেবেন? আমি টিনটিন ধইরা কিছু খাই নাই। দয়া কইরা কিছু ভিক্ষা…” এইরকম করে বললে ইংরেজদের মন গলার কথা না।
সুতরাং, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন-আকুল নিবেদন অবশ্যই আপনাকে মাতৃভাষায় করতে হবে। আর যদি আরবিতে করতে চান, অবশ্যই সেটা বুঝবেন। যখন যেই দোয়াটা করবেন, সেই দোয়াটার সাথে সাথে বাংলার অর্থটা যেন আপনার ব্রেনে ঘুরতে থাকে। এবং যখন ওই দোয়াটা করছেন, সেই পরিপূর্ণ ইমোশনটা যেন আপনার অন্তরে উপস্থিত থাকে। তাহলেই ওই দোয়াটা, ওই দোয়াটার মাধ্যমে, আল্লাহর সাথে আপনার একটা কানেকশন তৈরি হবে, সংযোগ তৈরি হবে। দ্যাটস দা স্পিরিট। এটাই হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মূল আধ্যাত্মিকতা—যে আল্লাহর সাথে রিলেশনশিপ বিল্ড আপ করা, আল্লাহর সাথে আকিমুস সালাত করা। আল্লাহ কখনো আপনার কাছে কোয়ান্টিটি চান না, আল্লাহ কোয়ালিটি চান। আপনি দিনের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ বানিয়েছেন। তারপরে ইশরাক, তারপরে আওয়াবিন, তারপর চাষদ, তারপরে হাজত, তারপরে সফরের নামাজ, বৃষ্টির নামাজ, ঋণমুক্তির নামাজ… মানে সারাদিন আর কোনো কাজকর্ম নাই। রোবটের মতো মেশিনের মতো শুধু বকবক বকবক করেই যাচ্ছেন। আপনার কোনো ইমোশন নাই, কী চাচ্ছেন, কার কাছে চাচ্ছেন, কেন চাচ্ছেন—কোনো সংযোগই নাই। আল্লাহর সাথে আপনার কোনো রিলেশন বিল্ড আপ হচ্ছে না। আপনি দিনে ১০০ রাকাত পড়তে পারেন, কিন্তু ১% সংযোগ, ১% একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা, পারফেকশন আসে নাই, আসবে না, আসার কথাও না। কিন্তু আরেক ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে বুঝে ইউনুস নবীর মতো, মুসা নবীর মতো, ইব্রাহিম নবীর মতো, আইয়ুব নবীর মতো, সুলাইমান নবীর মতো, দাউদ নবীর মতো যদি দুটো লাইন বলে—ওই দুটো লাইনই ওই হাজার কোটি রাকাত নামাজের চেয়ে বেশি ইফেক্টিভ। এই জিনিস আল্লাহ শিখিয়েছেন কোরআনের পাতায় পাতায়। আমরা শিখি না। আমরা শাইখুল কোরআন হতে চাই না, আমরা হতে চাই শাইখুল হাদিস।
এখন আপনি বলেন তো, এইরকম করুণ মিনতি, আকুল আবেদন, একনিষ্ঠ প্রার্থনা, একনিষ্ঠ ভিক্ষা, একনিষ্ঠ চাওয়া-পাওয়া—এটার কি কোনো প্রকারভেদ হতে পারে? এটার কি কোনো সময় হতে পারে? মুসা নবী কি তখন সেই মাদিয়ান শহরে সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন যে কখন এশার সময় হবে, তখন আমি আল্লাহর কাছে চাইবো? ইউনুস নবী কি অপেক্ষা করেছিলেন: “ও এখন তো সকাল সাতটা বাজে, যোহরের সময় হোক, তখন আমি আল্লাহর কাছে চাইবো”? আইয়ুব নবীর কোনো ওয়াক্ত নাই। আপনার যখন প্রয়োজন হবে, তখনই চাইবেন। আপনি যদি পারেন তো সারাদিন চাইবেন। কে আপনাকে নিষেধ করেছে? আল্লাহ তো বলেছে: “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।” আপনি মুত্তাকী হন, আপনার প্রত্যেক ডাকে আল্লাহ সাড়া দেবে। কিন্তু মুত্তাকী তো আপনি হতে চান না। আপনি শিয়া হতে চান, আপনি সুন্নি হতে চান, আপনি আহলে হাদিস হতে চান, আপনি জামাতি হতে চান, আপনি আটরশি হতে চান, আপনি ভান্ডারী হতে চান, আপনি দয়াল বাবার মুরিদ হতে চান—কিন্তু আপনি দয়াল আল্লাহর মুরিদ হতে চান না। দ্যাটস দা প্রবলেম। আপনি ডাইরেক্ট আল্লাহর সাথে রিলেশনশিপ বিল্ড আপ করতে চান না। আপনি ভায়া মিডিয়া খোঁজেন, শিরুকের মধ্যে ঢুকতে চান। আল্লাহ যত আপনাকে বলে যে “আমি আমার বান্দারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে। আমি কোথায়? তাদের বলো, আমি তাদের ঘাড়ের রগের চেয়েও কাছে।” কিন্তু আমরা তো তাকে সাত আসমানের উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি। কতদূরে! সেখান থেকে কি আর আমার ডাক সে শুনবে? তারপর হাদিস দিয়ে তাকে আবার নামিয়ে আনি। প্রতি রাত্রে প্রথম আসমান পর্যন্ত টেনে হিচড়ে সেখান থেকে নামিয়ে আনি। কিন্তু সে যে আমার ঘাড়ের রগের চেয়েও কাছে থাকে—কোরআনে যে আল্লাহ বলে দিয়েছেন—আমি ভুলে যাই। এজন্যই তো মাজারে মাজারে, মন্দিরে মন্দিরে, মসজিদে মসজিদে, গির্জায় গির্জায় আল্লাহকে খুঁজি, ভগবানকে খুঁজি, স্রষ্টাকে খুঁজি, মুর্শিদের পায়ের নিচে খুঁজি, দয়াল বাবা, কিবলা, কাবার মারেফতি জ্ঞানের মধ্যে খুঁজি, ফানাফিল্লা হতে চাই, বাকাবিল্লাহ হতে চাই। কোনোদিনই আপনি হতে পারবেন না। কারণ আল্লাহ ওই মাজারে, মন্দিরে, মসজিদে, গির্জায়—ওখানে আপনি তাকে খুঁজে পাবেন না। আপনার ঘাড়ের রগের চেয়ে কাছে। আপনি ডাকলেই সাড়া দেবে, ডাকলেই শুনবে। সে কিভাবে ডাকবেন? খুব জোরে জোরে ডাকার দরকার নেই। আপনি আস্তে করে ডাকলেও আল্লাহ শোনে। খুবই আশ্চর্যের বিষয়!
সিরাতের গ্রন্থগুলো যদি আপনি পড়েন, আপনি দেখবেন যে আল্লাহর রাসূল ৬১৪ সাল (নবুয়তের চার বছর) পর্যন্ত তিনি দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়েছিলেন। ৬১৯ সাল (মানে মেরাজ যে যাওয়ার আগ পর্যন্ত) তিনি তিন ওয়াক্ত পড়েছেন—এভাবে বলা। মিরাজে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নিয়ে আসলেন। এখানেই তো ঝামেলাটা বেঁধেছে। এই মিরাজের হাদিস সত্য প্রমাণ করতে গিয়ে এখন কুরআন তো তন্নতন্ন করে খুঁজেও কেউ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মিলাইতে (নামাজ মিলাইতে) পারতেছে না। এই হেরে গেল কোরআন, জিতে গেল হাদিস। হাদিসে আছে: তার ডান চোখ কানা। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে: “বা চোখ কানা।” এখন তো আল্লাহ তার কোনো চোখ কানা করবে? হাদিস তো সত্য প্রমাণ করতে হবে। হাদিস সত্য প্রমাণ করতে গেলে তো তার চোখ দুইটা কানা করতে হয়। এখন হাদিসের সত্য প্রমাণ করা যাইতেছে না। আর দাজ্জাল বলতেছে: “দুইটা চোখ কানা করলে আমি চোখে দেখব কিভাবে? এটা কেমন কথা হলো? আমার দুই চোখ কানা করে দিবেন?” এখন এই হাদিস সত্য প্রমাণ করতে যেয়ে এখন দজ্জালকে আল্লাহ পাঠাইতে পারতেছে না—এমন একটা সিচুয়েশন দাঁড় করায় ফেলানো হয়েছে। যেইখানে আল্লাহ বলছেন: “যেহুল্লাহ! আল্লাহ তার বান্দার প্রতি কখনো সাধ্যের বেশি বোঝা চাপিয়ে দেন না। আল্লাহ কখনো তার বান্দার প্রতি জুলুম করেন না।” আল্লাহর কথার কোনো রদবদল নাই, আল্লাহর সুন্নতের কোনো পরিবর্তন নাই। সেইখানে আল্লাহকে জুলুমকারী বানানো হচ্ছে। আল্লাহকে প্রতি ২৮ মিনিট পর পর এক নামাজ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ দিয়েছেন, নবী সেটা বুঝেন পেয়ে নিয়েও আসছেন। মুসা নবীর পরে পরামর্শে তিনি আবার রিটার্ন ব্যাক করেছিলেন। যদিও প্রশ্ন হচ্ছে যে আল্লাহর রাসূল যখন ৫০ ওয়াক্ত নামাজ খুশি মনে মেনে নিয়ে চলে আসছেন, সেই সময় তো ঘড়ি ছিল না। তাহলে আল্লাহর রাসূল টাইম ডিভাইশনটা কিভাবে করছিলেন? মানে আল্লাহ কি টাইম ওইভাবে বলে? মানে ঘড়ি কি সাথে সাথে রেডিমেড দিয়ে দিছিলেন নাকি দেননি? মানুষের কোনো নাওয়া-খাওয়া, ঘুম, কাজকর্ম, হাগা-মোতা সব বন্ধ করে দিয়ে প্রতি ২৮ মিনিট পর পর আল্লাহ নামাজ দিয়েছেন? মানুষকে এইভাবে আল্লাহকে বান্দার প্রতি জুলুমকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে হাদিসের মাধ্যমে। আর মুসা নবীকে আল্লাহর রাসূলের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি বুদ্ধিমান, ইন্টেলিজেন্ট, এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এবং এই হাদিসের মধ্যেই বলা আছে যে আগের সব নবীরা দুই ওয়াক্ত করে নামাজ পড়তেন। মুসা নবী, ঈসা নবী, ইব্রাহিম নবী, আল্লাহর রাসূলও ৬১৪ সাল পর্যন্ত দুই ওয়াক্ত নামাজে পড়েছিলেন। মিরাজে গিয়েই পাঁচ ওয়াক্ত হয়ে গেল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে: আল্লাহ মিরাজ থেকে আমি ধরে নিলাম এই হাদিস সত্য। আমি ধরে নিলাম (তর্কের খাতিরে) এই হাদিস সত্য। পাঁচ ওয়াক্ত দিয়েছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কি কি? ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা। তাহলে হোয়াট ইজ ৪০০ নামাজ? হোয়াট ইজ আওয়াবিন নামাজ? হোয়াট ইজ ইশরাক নামাজ? এগুলো কোনো মেরাজে যাইয়া আবার আনছিল? এই নামাজের নামগুলো কিভাবে দেয়া হলো? শুধু তাই না, আরো যে নিদারুণ দুঃখজনক ঘটনাগুলো আছে—এই নামাজের ডিভিশনের মানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ১৫-২০ ওয়াক্ত যে কিভাবে নিয়ে গেছে মানে, সেই পারলে এরা সে ৫০ ওয়াক্তই বানাতো। এই মাযহাব বাহিনী (মানে মুসলিম বিশ্বকে পুরো অকর্মণ্য বানানোর মানে)। ইহুদি-খ্রিস্টানরা এইভাবে হাদিস ব্রেন দিয়ে ঢুকাইছে এদের মধ্যে যে, এরা যেন দিন‑রাত ২৪ ঘন্টা শুধু এই উঠক‑ব্যাঠকের মধ্যেই থাকে, একেবারে অলস-অকর্মণ্য ঢেকি হয়ে বসে থাকে। এবং এখনো আপনি দেখবেন যে আরবের ম্যাক্সিমাম আরবে, আরবিয়ানরা হচ্ছে ভাদাইম্মা টাইপের অলস‑বেকার। ওরা কাজটা-কর্ম সেইভাবে পরিশ্রমী কোনো জাতি না। এবং আমার এখনো মনে আছে ছোটবেলায় আমার স্যার বলতো (খায়ের স্যার, যারা জানোস), এই আরবিয়ানরা কবে? সেইদিনও মনে আছে ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে আরবের লোকজন ভিক্ষা চাইতে মুসাফির হিসেবে আসতো। তা আমার বাবা বলতো: “আরে দে দে দে, আমার নবীর দেশের লোক। দে, কিছু দিয়া দে।” এই তেল আবিষ্কার না হলে এরা মনে হয় এখনো ভিক্ষা করতো। এদেরকে এইভাবে অকর্মণ্য বানানো হয়েছে। এই দিনের মধ্যে ১৫-২০-৩০ ওয়াক্ত নামাজ দিয়ে। অথচ সূরা মুজাম্মিল পড়ে দেখুন, আল্লাহর রাসূলকে বলছেন: “আপনি রাত্রে উঠুন, দিনে থাকে আপনার কর্মব্যস্ততা।” মানে ইসলাম হচ্ছে মানুষকে পরিশ্রমী বানাবে। বলেছেন: “যে জাতির নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করে না।” সূরা নাজমে আল্লাহ বলেছেন: “মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে।” আল্লাহ পাকের সিস্টেমগুলো কত চমৎকার, কত প্র্যাকটিক্যাল, কত বাস্তবিক, কত রিয়ালিস্টিক! সেইখানে ইসলামটাকে একটা অকর্মার ধর্ম, সবাইকে একটা ভাদাইমা বানানোর একটা মিশনে নামছে। এই ইহুদি-খ্রিস্টানদের মাধ্যমে হাদিসগুলো ঢুকিয়ে মানুষকে এইভাবে কি যে পড়ছে! দিনের মধ্যে সে ১০০ রাকাত। ইমাম আবু হানিফা প্রতি রাত্রে ১০০ রাকাত নামাজ পড়তেন। এশার নামাজের ওযু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়তেন। বিশাল আল্লাহর ওলি হয়ে গেছেন। তো আল্লাহ কি কোয়ান্টিটি চায় না, কোয়ালিটি চায়? আপনি ১০০ রাকাত নামাজ পড়লেন, কী বলতেছেন নিজেও জানেন না, কিছু। আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়, আল্লাহকে হাজির‑নাজির মাইনা। আল্লাহকে বলতেছেন: “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দিয়েছি। তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করো, নামাজ পড়ো।” আল্লাহকে আপনি অর্ডার দিতেছেন। বলো: “আল্লাহ এক!” বলো: “আল্লাহ অমুখ্যাপেক্ষী।” আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে হাজির‑নাজির জেনে আল্লাহকে এভাবে আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করতেছেন, ফাতরামি করতেছেন। আল্লাহকে এইভাবে নবীদের এত নবীদের ঘটনা, এত নবীদের হিস্টরি আল্লাহ কেন কোরআনে বলছেন? তারা কিভাবে আল্লাহর কাছে চাইছে, এগুলো এই কৌশলগুলো আল্লাহ কেন শিখিয়েছেন? এমনি শুধু আরবিতে পড়ে পড়বেন? শুধু প্রতি রমজান মাসে এক খতম, দুই খতম, তিন খতম দিবেন, পড়বেন, কিছুই বুঝবেন না? এইজন্য আল্লাহ পাঠাইছে এগুলা। এই কোরআন এইজন্য আল্লাহ বলছে, কোরআনকে বলছে যে মানুষের মনের চিকিৎসা। এই কোরআনের এই কোরআন তোমাদের জন্য হেদায়েত, তোমাদের জন্য রহমত। এইভাবে হবে রহমত? আপনার বাস্তব জীবনের যেকোনো কোন সিচুয়েশনে কী কাজ করবেন, কোন নবী কোন সিচুয়েশনে কী করছিল—সে শিক্ষা যদি আপনি নিতে না পারেন, তাহলে এই কোরআন পাঠানোর দরকারটা কি? কী লাভ হইলো? কিভাবে আপনি এর মধ্যে হেদায়েত খুঁজে পাবেন? আল্লাহ বলেছেন যে মুত্তাকীরা হচ্ছে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত। কিভাবে আপনি মুত্তাকী হবেন? কোরআনের পাতায় পাতায় বর্ণনা করা হয়েছে। আপনি জানেনই না কিছু যে কিভাবে আপনি মুত্তাকী হবেন। কোন সাতটা কাজ করলে আপনার সকল আমল বরবাদ হবে—আপনি জানেনই না। আপনি রাত্রের মধ্যে ১০০ রাকাত করে এসে ইমাম আবু হানিফার মত আল্লাহওয়ালা দরবেশের মত করে আপনি নামাজ পড়তেছেন, অথচ আপনার আমল সব বরবাদ হয়ে যাইতেছে। আপনি জানেনই না। কত রকম নামাজ বানিয়েছে! এই পুরো মুসলিম বিশ্বকে অকর্মা ঢেকি বানানোর জন্য। ফরজ নামাজ, সুন্নত নামাজ, ঈদের নামাজ, নফল নামাজ, তারাবির নামাজ, জানাজার নামাজ, শবে বরাতের নামাজ, শবে কদরের নামাজ, গায়েবানা নামাজ, চাষতের নামাজ, আওয়াবিন নামাজ, ইশরাক নামাজ, বৃষ্টির নামাজ, চন্দ্র‑সূর্য গ্রহণের নামাজ, আশুরার নামাজ, সফরের নামাজ, হাজতের নামাজ—আনলিমিটেড প্যাকেজ! গ্রামীণ ফোনের এর মধ্যে প্রধান ভাগ হলো ফরজ ও সুন্নত নামাজ। মানে যেটা আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডার, সেটা হচ্ছে ফরজ। আর যেটা রাসূলের ডাইরেক্ট অর্ডার, সেটা হচ্ছে সুন্নত। অথচ সূরা নিসার ১৫১ এবং ১৫২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের মধ্যে যারা পার্থক্য করে, তাদের কাফের বলেছেন। অথচ এইভাবে নামাজের মধ্যে আল্লাহ আর রাসূলের মধ্যে এইভাবে আমরা পার্থক্য করছি। আপনি বলবেন যে কেন পার্থক্য করবো না? তারা তো আলাদাই তো। পীরবাদী, সুফিবাদী এরা বলে যে, একই আল্লাহর রূপ। রাসূল হচ্ছে আল্লাহর রূপ। আল্লাহর সুরতে আসছে না। আপনি এই আয়াতটার আগে-পরে পড়লে বুঝবেন যে এখানে সে সত্তার আলাদা কথা বলা হয়নি, অর্ডারের আলাদা কথা বলা হয়েছে। মানে আল্লাহর কথা, রাসূলের কথা একই কথা। আল্লাহর কথা (আল্লাহর ওহী) আর রাসূলের মুখ থেকে যা বলছে, এটা এইটা পার্থক্য করতে না করছে। আল্লাহর রাসূল যা বলছে, সেটাই আল্লাহর অর্ডার। মানে রাসূল যা অর্ডার করতেছে, সেটা আল্লাহই অর্ডার করতেছে। এইটা বুঝানো হয়েছে। এখন রাসূলের কাছে ওহী কিভাবে আসে? ধরুন, বর্তমানে মোবাইলের যুগ, টেলিফোনের যুগ। এখন যদি কোনো আল্লাহ কোনো রাসূল মনোনীত করে বা কোনো নবী মনোনীত করে, সে পড়ালেখা কিছুই জানেনা, লিখতে পারে না, পড়তে পারে না। তার কাছে সূরা মুজাম্মল ২০টা আয়াত নাযিল করা হয়েছে। সে তো পড়ালেখা জানে না। সে কি করবে? যারা পড়ালেখা জানে, তাদের সেই সমস্ত ১০ জন কাতেব ওহী বানাতে হবে। তার ফোন করবে, তারপর তারা বাড়িতে আসবে। আসার পরে তারপরে তাদের বলবে। এখন বিষয় হচ্ছে, তারা বাড়িতে আসতে আসছে দুই ঘন্টা। আমার ওহী তো এখন নাযিল হয়ে যাবে ২০ আয়াত। এত সময় যদি আমার মুখস্ত না থাকে। সহজ একটা পদ্ধতি, বুদ্ধি আছে। সেটা হচ্ছে জিব্রাইল ফেরেশতা ফোন করবে দুই ঘন্টা আগে: “হ্যালো, হ্যাঁ মিস্টার রাসুল, বলছিলেন। জি, আপনার কাছে দুই ঘন্টা পরে আমি আসতেছি, ২০টা আয়াত নাযিল হইতেছে। আমি এই উপর থেকে ২৭ মায়ের উপরে আছি। আমি আসতেছি। আসতে আমার এই দুই ঘন্টা লাগবে। আপনি যারা কাতে বহি আছে, ওদেরকে একটু কলটল দিয়ে সবাইকে রেডি-টেডি করে আপনার বাসায় নিয়ে আসেন। কাগজ-কলম নিয়ে সবাই যেন রেডি থাকে।” আচ্ছা, তো সাথে সাথে আল্লাহর নবী কি করবেন? মানে যাকে রাসূল মনোনীত করবেন, সে তিনি ফোন দিবেন সবাইকে: “এই কলিমুদ্দিন, রহিমুদ্দিন, সমিউর উদ্দিন, তোমরা কোথায় আছো? যে হুজুর, আমি তো একটু শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসছি।” ও, তুমি দূরে চলে গেছো। কে আছে আশেপাশে? আশেপাশে তো ইখলাস উদ্দিন আছে। ইখলাস উদ্দিন আছে। আচ্ছা, ইখলাস উদ্দিন, একটু ফোন দাও। ও তো ফোন ধরতেছে না। কি করা যায়? আরেকজনরে পাঠাইছে। পাঠায়, তারপর তাড়াতাড়ি এখলাস উদ্দিন নিয়ে আসছে। তারপর সে সেই ওহীটা লিখে দিল। এরকম হবে আর কি? বর্তমানের অবস্থা যদি বর্তমানে কোনো এরকম নিরক্ষর কারো কাছে এরকম ওহী নাযিল হয়। কিন্তু আপনি একটু বাস্তব‑রিয়ালিস্টিক ভাবে ভাবেন তো। আল্লাহর রাসূলকে হাদিসের মাধ্যমে নিরক্ষর বানানো হয়েছে, আবার এই হাদিসেই বলা হচ্ছে যে তিনি কাগজ-কলম চেয়েছেন (মৃত্যু সজ্জায়)। তাহলে যেই মানুষটাকে আপনি এক হাদিসে বলছেন নিরক্ষর (তিনি পড়ালেখা কিছুই জানতেন না), আবার সে একই মানুষকে বলছেন যে তিনি কাগজ-কলম চেয়েছেন। এর উত্তর তো সহজ হওয়ার কথা ছিল। হযরত ওমর বলতো যে: “উনি তো পড়ালেখাই জানেন না। আপনি কাগজ-কলম দিয়ে কি করবেন? কি বলতে হবে বলেন, আমরা লিখে দিতেছি।” তার মানে, এই হাদিস থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে আল্লাহর রাসূল পড়ালেখা জানতেন। এবং কোরআন থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে অসংখ্য আয়াত আছে যে আল্লাহর রাসূল পড়ালেখা জানতেন। তাকে মূর্খ বানানো হয়েছে। এখন যদি হুজুরদের আপনি প্রশ্ন করেন: “আল্লাহর রাসূল যেরকম করছেন বা যা করছেন, সেগুলো তো সুন্নত, তাই না?” বলবে: “হ্যাঁ।” তাহলে আল্লাহর রাসূল তো কোনোদিন পড়ালেখা করেন নাই। তাহলে পড়ালেখা না করা তাহলে তো সুন্নত না। তখন সে আর কথা বলবে না। “আপনি কেন পড়ালেখা করতেছেন? আপনি কেন দাওরা হাদিস পাশ করতেছেন? আল্লাহর রাসূল তো এরকম পড়ালেখা করে নাই। এটা তো এই আমলটাও তো খুবই সওয়াবের একটা আমল হবে।” যেহেতু আল্লাহর রাসূলের হুবহু আমল। তখন বলবে না: “জ্ঞান অর্জন করতে হবে।” বিভিন্নভাবে কথা বলবে।
আল্লাহর রাসূলের কাছে যখন ওহী আসতো, তিনি নিজে লিখে রাখতেন। তারপর কি করতেন? তিনি কি সাহাবীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে গিয়ে বলতেন: “এই দরজা খোলো, কাসেমের বাপ! জি হুজুর, ভিতরে আসেন। এই শোনো, আমার কাছে তো আজকে ২০ আয়াত নাযিল হয়েছে। সূরা মুজাম্মিল। এই শোনো, একটু মুখস্ত করে নাও। কাগজ-কলম তো আর এখনো আবিষ্কার হয় নাই। তুমি একটু মুখস্ত করে নাও।” যে আচ্ছা ঠিক আছে, একটু আমার তো সময় লাগবে। আর আমি নিজেও তো পড়ালেখা জানিনা, কিভাবে মুখস্ত করব। বলেন, দেখি আমার ছেলেটা। ওরে তো স্কুল‑মাদ্রাসা এদিকে নাই। খুবই ঝামেলার একটা বিষয়। তো প্রতি ঘরে ঘরে ঘরে ঘরে গিয়ে কি এইভাবে ওহী প্রচার করা সম্ভব? সম্ভব না। তাহলে কি আগের যুগে যেই রাসূল‑নবী-রাসূলরা যেই হাদিসে বলা হচ্ছে যে দুই ওয়াক্ত নামাজ (মানে সালাত) সেইভাবে করতেন, সবাই জানতো? মানুষ তো সবাই কর্মব্যস্ত। সূরা মুজাম্মিল তো আল্লাহর রাসূলকেই বলছেন যে, “আপনি দিনে তো আপনার কর্মব্যস্ততা থাকে। আপনি রাত্রে দাঁড়ান।” রাতের দুই‑এর একাংশ, তিনের একাংশ আপনি দাঁড়ান। তারপর কি করেন? সূরাটা পড়লে আপনি বুঝবেন যে আল্লাহ বলতেছেন: “তারপর কোরআন পড়ুন, ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে। আর আপনার সাথে যারা থাকে, তাদেরকেও সাথে নিয়ে দাঁড়ান।” এইটাই সিস্টেম। এবং এটাই রিয়ালিস্টিক, এটাই যুক্তিসংগত। কোনো ধরনের মানুষ সে সকালে হয়তো ব্যস্ত থাকবে, সে সন্ধ্যার সময় (মাগরিবের সময়) সে সে কনফারেন্সে আসবে। আবার যারা সন্ধ্যায় ব্যস্ত থাকবে, তারা সকাল বেলা আসবে। অনেকে থাকে যে যারা কৃষক, অনেকে খুব সকালেই হালটাল নিয়ে মাঠে চলে যাইতে হয়। আবার অনেকে আছে অফিস‑আদালত বা অনেকের অন্যান্য কাজকারবার। সে দেখা যায় যে সকাল আটটা-নটার সময় গেলেও সমস্যা নাই। সে সকালের ফজরের সে কনফারেন্সে যাবে গিয়ে।
আল্লাহর রাসূল সেই কোরআনের ওহী যেগুলো নাযিল হয়েছে (আজকে সূরা মুজাম্মল নাযিল হয়েছে)। তো ডেইলি তো আর এরকম ২০টা ৬০০০ আয়াত ২৩ বছর ধরে নাযিল হয়েছে। তার মানে দেখা যায় বছরে এভারেজ করলে হয়তো ২০০ কি ২৫০ আয়াত। তো দেখা গেল যে পুরো বছরই ওই ২০০-২৫০ আয়াত এভাবে সকালে একবার শুনে, বিকালে একবার শুনে, সবার মুখস্ত হয়ে যাইতেছে। শুনতে শুনতে সবারই মুখস্ত হয়ে যাইতেছে। এবং আরবদের স্মৃতিশক্তি কিন্তু অত্যন্ত প্রখর ছিল। এখনো তারা কিন্তু তাদের ১৫-২০ প্রজন্মের বাবার নাম বলতে পারে। এজন্যই কোরআনকে বলা হয়েছে কোরআন কলবে। কলবে আসছে। এবং আল্লাহর রাসূলের কলবে। কিন্তু জিব্রাইল ফেরেশতা ওহী ই করতো নিয়ে আসতো কলবের মধ্যে (অন্তরের মধ্যে)। এবং আজকে ২০টা আয়াত নাযিল হয়েছে। দেখা গেল এক মাস সকালে-সন্ধ্যায়, সকালে-সন্ধ্যায় শুনতে শুনতে শুনতে সবার মুখস্ত হয়ে গেছে। এজন্য এই কনফারেন্সটা খুব ইম্পর্টেন্ট। এবং আল্লাহর রাসূল এই হাদিস বেত্তাদের বই অনুসারে ৬১৪ সাল পর্যন্ত দুই ওয়াক্ত (মানে সকালে আর সন্ধ্যায়, ফজর আর মাগরিবের নামাজ) পড়তেন। এবং ৬১৯ সাল পর্যন্ত তিন ওয়াক্ত পড়েছেন। এই হাদিস বেত্তারাই বলেন। তারপর ৬২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি দুই রাকাত করে নামাজ পড়তেন (যোহর, আসর, এশা ফরজ, ফজর, মাগরিব সব দুই রাকাত করে পড়তেন)। কিন্তু ৬২৩ সালে যোহর, আসর আর এশার নামাজ দুই রাকাত থেকে চার রাকাত বানানো হয়েছে। তো আল্লাহর সুন্নতের তো পরিবর্তন হয়ে গেল। আল্লাহ তো বলছেন যে আল্লাহর সুন্নতের কোনো পরিবর্তন নাই। তাহলে এর আগের সকল নবী পড়ছে দুই রাকাত করে, আল্লাহর রাসূলও পড়ছেন ৬২৩ সাল পর্যন্ত দুই রাকাত করে সকল নামাজ। হঠাৎ করে চার রাকাত হয়ে গেল! তাহলে এই প্রচলিত নামাজে রাকাত ইম্পর্টেন্ট না, আল্লাহর বাণী বাল্লিক করাটা বেশি ইম্পর্টেন্ট। আল্লাহর বাণী বাল্লিক করা এটা কি আল্লাহর রাসূলের পক্ষে ঘরে ঘরে ঘরে ঘরে গিয়ে শত-সহস্র সাহাবীদের পক্ষে আজকে ২০ রাখ ২০ আয়াত নাযিল হয়েছে, কালকে ৪০ আয়াত নাযিল হয়েছে—এটা কি ঘরে ঘরে গিয়ে তার পক্ষে এভাবেই করা সম্ভব? নাকি মোবাইল-কম্পিউটারের যুগ না যে তিনি WhatsApp মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিবেন, তো সে দেখে দেখে নিয়ে নেবে, বা PDF ফাইল পাঠিয়ে দিবেন। সকাল‑সন্ধ্যায় যাবেন। এজন্যই কিন্তু কোরআনে আপনি দেখবেন যে সূরা জুমার মধ্যে যে তাকে রেখে সেরকম আল্লাহর কোরআন বলতো, তাকে রেখে অনেকে হাঁটা দিত। কেউ বাজারের দিকে চলে যাইত, বেচা-কেনার দিকে চলে যাইত। সূরা জুমার ১১ নাম্বার আয়াতে দেখেন কি বলা হচ্ছে: “যখন তারা কোনো ব্যবসা বা কোনো খেল‑তামাশা, বিনোদন, ক্রীড়া, কৌতুক দেখে বা দেখতে পায়, তখন তার দিকে ছুটে যায় এবং তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে।” মানে আল্লাহর রাসূলকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে অনেকে এরকম ছুটে যাইতো। দেখা গেল যে ওইখানে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো নতুন প্রোডাক্ট আসছে, নতুন কোনো ফল আসছে, বা কোনো পোশাক‑টোশাক কোনো কিছু আসছে, বা কোনো বিনোদনের কোনো (আগে যেমন হইতো না) বিভিন্ন ধরনের বিনোদন আমাদের গ্রাম বাংলায় হইতো সার্কাস পার্টি। ওই পার্টি। সেই পার্টি। তো আল্লাহর রাসূল এভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে চলে যেত। মানে দাঁড়ানো অবস্থায় মানে কি? তিনি ওইভাবে বাল্লিক করতেন, কোরআনের আয়াত বলতেন। ওই অবস্থায় রেখে তারা চলে যাইতো। আল্লাহ তারপরেই বলছেন যে বলো: “আল্লাহর কাছে যা আছে, তা বিনোদন ও বাণিজ্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহর কাছে যা আছে”—মানে এই যে কোরআন। এই কুরআন রেখে আল্লাহর রাসূলকে রেখে দাঁড়া করায় রেখে তোমরা চলে যাচ্ছ। তোমাদের এই বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্যের চেয়ে সেগুলো শ্রেষ্ঠ। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা। যে রিজিকের পিছে তোমরা ছুটছো, এই কোরআনের দিকে আসো। রিজিকের বরকত আল্লাহ দিয়ে দেবে।
তো আল্লাহর রাসূল যা বাল্লিক করতেন, যা বলতেন, এগুলো কার কথা? এগুলো আল্লাহরই কথা। এই কথার সাথে পার্থক্য করা যাবে না যে ওটা উনার পার্সোনাল কথা। তিনি যদি পার্সোনাল বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলতেন, তার জীবন-ধমনী, হৃদপিণ্ডের শিরা আল্লাহ কেটে দিতেন। তাহলে মানুষ কি করে বুঝতো যে এটা উনার পার্সোনাল কথা না, এটা আল্লাহর? স্বাভাবিক, উনি আউজুবিকা দিয়ে শুরু করতেন (শয়তানের আশ্রয় চাইতেন)। আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর কোরআন যখন পড়বেন, আপনি তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় নিয়ে নেবেন। সেইভাবে আশ্রয় নিতেন। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলতেন। তখনই সবাই বুঝে ফেলত। আর দাঁড়িয়ে বলতেন, কিয়াম করতেন। দেখবেন, এখনো কোথাও যত বড় নেতা-মেতা হোক না কেন, আর মানুষ যতই গরীবের সামনে এসে তিনি নির্বাচনের গণসংযোগ করুন, সেই নেতাকে কিন্তু দাঁড়িয়েই কথা বলতে হয়। তিনি বসে বসে জমিদারী স্টাইলে কথা বললে মানুষ শুনতে চাইবে না। “ওরে বাবা, নেতা সে বসে বসে ঠ্যাং এর উপর ঠ্যাং দিয়ে বলতেছে।” কারণ, যেকোনো সাধারণ মানুষের (যত দরিদ্র হোক, গরীব হোক) এটা মানুষের একটা সম্মান। আল্লাহ বলেছেন না যে: “ইয়া বানি আদম, ও সানা-অফ আদম, আই হ্যাভ গিভেন ইউ রেস্পেক্ট। আমি তোমাকে সম্মানিত করেছি।” তোমাদের সম্মানিত করেছি। তো তিনি যখন দাঁড়িয়ে যেতেন, কিয়াম করতেন আর বলতেন: “রব্বি আউজুবিকা মিন হামাজাতি শায়াতিন!” তখনই সবাই বুঝতো যে হ্যাঁ, এই আল্লাহর ওহী এখন বলবে। বুঝে ফেলতো। বলা হয় না। তার কাতেবে ওহী ছিল (লেখক ছিল)। তারা সেই কোরআন লিখতো। বুঝলাম। আপনারা আবার বলছেন যে হাদিসও আল্লাহর ওহী। সেগুলো গাইরে মাতলু। তো সেগুলো লিখতো কারা? সেগুলো তো আল্লাহর ওহী। আপনাদের কথা অনুযায়ী, সেগুলো লেখার জন্য তিনি কাউকে নির্বাচিত করেননি। এই যে ৩০-৪০-৫০-৬০ লক্ষ হাদিস, এগুলো লেখার জন্য এগুলো যেহেতু আল্লাহরই কথা, আল্লাহরই বাণী—আপনারাই তো বলছেন। তাহলে সেই আল্লাহর বাণী লেখা লাগবে না? সেগুলো সংরক্ষণ করবে কে? আল্লাহ তো বলছেন তিনি কোরআন সংরক্ষণ করবেন, তার বাণী সংরক্ষণ করবেন। আল্লাহ তো বলতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আল্লাহ তো কোরআনকে আহসানুল হাদিস বলছেন। ওটাকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাকি যেগুলো আপনারা বলছেন, ওগুলো গায়ের মাতলু। তো ওগুলোর জন্য কাতেবে ওহীর দরকার ছিল না। অথবা মানুষ কি করে বুঝতো যে এটা কোরআন থেকে বলছেন, আর এটা উনি নিজের মন থেকে বানিয়ে বানিয়ে বলতেছেন? একই মুখ থেকেই তো যাচ্ছে। তার কাতেবে ওহীরাই বা ডিফারেন্সিয়েট কিভাবে করতো? কারণ উনার কথা অনেক হাদিস আছে যে ধরার কায়দা নাই। যেটা আপনি কোরআনের আয়াত না হাদিস। যেমন: “মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত।” তো এটা কিভাবে বুঝবে একটা সাধারণ মানুষ যে আরব বেদুইন, অশিক্ষিত। আল্লাহর রাসূলের কাছে আসলো তো তিনি বললেন যে “মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত” অথবা “স্বামীর পায়ের নিচে জান্নাত”। তো মানুষ কিভাবে বুঝবে যে এটা আল্লাহর ওহী না হাদিসের বাণী? মানে এই পুরো হাদিসের যে কাহিনী উনারা বলতেছেন না, এটা কোনো মতেই বিশ্বাস করব মানে যুক্তিতেই খাটে না। তাহলে এই যে আল্লাহর রাসূল যে সমস্ত বাণীগুলো বলতেন, এগুলো সব আল্লাহ‑বাণী। এটাই আল্লাহ সূরা নিসার ১৫১ থেকে ১৫২ নাম্বার আয়াতে বলেছেন যে, যারা আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য করে (যে উনি এটা পার্সোনালি বলতেছেন, এটা আল্লাহর আলাদা আলাদা না), এরকম পার্থক্য করা যাবে না। যারা আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য করে না, তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন। আর যারা পার্থক্য করে, তারা কাফের। সূরা নিসার ১৫১-৫১ এবং ১৫২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন। তাহলে আপনারা পার্থক্য করছেন যে কিছু নামাজ আছে সেগুলো হচ্ছে ফরজ নামাজ (ওটা আল্লাহর অর্ডার), আর কিছু নামাজ আছে সেগুলো সুন্নত নামাজগুলো হচ্ছে রাসূলের অর্ডার। আল্লাহর রাসূলের মধ্যে আপনার পার্থক্য নামাজ দিয়ে আপনি করে ফেলছেন। এবার আল্লাহর যে নামাজ ফরজ, সেটার নিয়ত কি করছেন? তা‘আলা বারাকাত সালাতিল ফরজুল্লাহি তা‘আলা (মানে আল্লাহর ফরজ)। আর সুন্নত নামাজের নিয়ত আপনি কিভাবে করছেন? সুন্নাতে রাসূলুল্লাহি তা‘আলা। তা‘আলা বারাকাত সালাতিল সুন্নতে রাসূলুল্লাহি তা‘আলা। এই যে বললেন সুন্নতে রাসূলুল্লাহি তা‘আলা (যে আল্লাহ‑রাসূলের সুন্নত দুই রাকাত মাগরিবের সুন্নত নামাজ আদায় করছি), মাগরিবের তিন রাকাত পড়ে—এভাবে ওইভাবে নিয়ত করছেন যে সুন্নতে রাসূলুল্লাহ তাআলা দুই রাকাত মাগরিবের নামাজ আদায় করছি। এখন আল্লাহর রাসূল নিজে কিভাবে এই নিয়তটা করতেন? তিনিও কি ওইভাবে বলতেন যে সুন্নতে রাসূলুল্লাহ তা‘আলা? আপনি যদি বলেন যে হ্যাঁ, তিনিও এইভাবেই বলতেন যে, “আর বারাকাত সালাতিল সুন্নতে রাসূলুল্লাহ তা‘আলা”—তাহলে আমার প্রশ্ন: রাসূল যে বলতেন যে সুন্নতে রাসূলুল্লাহ তা‘আলা, তিনি কোন রাসূলের সুন্নত পালন করতেন? আর আপনি যদি যদি বলেন যে না, তিনি তো নিজেই রাসূল। তিনি তিনি কেন আবার সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ তা‘আলা বলবেন? অথবা তিনি কেন শেষ বৈঠকে বলবেন যে “আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নবী ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু”—তিনি কেন বলবেন? তিনি কি নিজে কি নিজে সালাম দিবেন? তাহলে আপনি যদি উত্তর দেন যে না, তিনি এভাবে সুন্নতে রাসূলুল্লাহি তা‘আলা বলেন, সেই নামাজ পড়তেন না, তাহলে আমার প্রশ্ন: তিনি তাহলে কি নিয়ত করতেন? তিনি সুন্নতে রাসূলুল্লাহ তালা না বলে, তাহলে তিনি ওই নামাজে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজে বা এশারের চার রাকাত সুন্নত নামাজে তিনি কি নিয়তটা করতেন বা কি নিয়তটা পড়তেন বা কি নিয়তটা বলতেন? আমার তিন নাম্বার প্রশ্ন: এই নামাজ কেন নীরবে পড়া হয়, সেটা কেন জোরে পড়া হয় না? আল্লাহ তো সূরা বানি ইসরাইলের ১১০ নাম্বার আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন (তিনটা অর্ডার): ১. তোমরা নামাজে তোমাদের শহর উঁচু করবে না; ২. নাম্বার অর্ডার: মনে মনে মনে করবে না; ৩. নাম্বার অর্ডার: মাঝামাঝি স্বরে নামাজ পড়বে। তাহলে আল্লাহ তো আর স্পেশালি বলে দেন নাই যে ফরজ, সুন্নত, ওয়াজিব, নফল। আল্লাহ বলছেন নামাজে। তো নামাজ তো নামাজি সেটা আপনি ফরজ পড়েন আর সুন্নত পড়েন আর নফল পড়েন বা ওয়াজিব পড়েন। আল্লাহ তো এখানে এক বাক্যে সব চলে আসছে। আল্লাহ বলছেন: “তোমরা তোমাদের নামাজে মধ্যমস্বর বলবে, মনে মনেও বলবে না, জোরেও বলবে না।” তাহলে আপনি এই আল্লাহর কোরআনের সূরা বানি ইসরাইলের ১১০ নাম্বার আয়াত ভায়োলেট করে অমান্য করে অস্বীকার করে কুফরি করে কেন আপনি এই সুন্নত নামাজ মনে মনে পড়ছেন? আমার চার নাম্বার প্রশ্ন: জামাতের কেন ফজিলত? আপনারাই বলেন যে জামাতে যদি নামাজ পড়া হয়, তাহলে মুসলিম উম্মার এটা ঐক্যের প্রতীক। যে সবাই বুঝবে যে আমরা মিলেমিশে একসাথে থাকতে পারি, একসাথে কাতারবদ্ধ হয়ে। মানুষের সাথে মানুষের মহব্বত বাড়ে, আন্তরিকতা বাড়ে। এবং ধনী-গরীব যে কোনো ভেদাভেদ নাই, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজে দাঁড়াই। এটাই ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। তাহলে আমার চার নাম্বার প্রশ্ন হচ্ছে: তাহলে এই নামাজ কেন জামাতবদ্ধভাবে আপনারা পড়েন না? এখানে কি সৌন্দর্যের দরকার নাই? এখানে কি একতাবদ্ধ হওয়ার দরকার নাই? এখানে কি মানুষে মানুষের ধনী-গরীবের বৈষম্য দূর করার দরকার নাই? এখানে কি সম্প্রীতির দরকার নাই? যদি বলেন হ্যাঁ, দরকার আছে, তাহলে এই নামাজ কেন জামাতে পড়া নিষিদ্ধ? জানি, এর কোনো উত্তর দিতে পারবেন না। উত্তর বলবেন যে রাসূল করতেন, তাই করি। কিন্তু এই উত্তর এটা কোনো সদুত্তরও না, আর কোনো যুক্তি সংগত না। রাসূল এটা করতেই পারেন না। কারণ আল্লাহ রাসূলকে যা করতে বলেছেন, তা কোরআনের পাতায় পাতায় বর্ণনা করা আছে। এবং যা যা বলেছেন, সমস্ত কিছু লাহে মাহফুজে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এবং এই পৃথিবীতেও সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আল্লাহ নিজে নিয়েছেন এবং বলে দিয়েছেন যে এর সামনে-পিছনে কোনো জিনিস ঢুকতে পারবে না। সেই গ্যারান্টি আল্লাহ দিয়েছেন।
এবার আসি নামাজের নিষিদ্ধ সময়। আপনারা মাযহাব অনুযায়ী বলছেন যে সূর্যোদয়ের সময় সব নামাজে নিষিদ্ধ। সূর্য মাথার উপর থাকা, স্থির থাকা অবস্থায় নামাজ পড়া মাকরুহত হারিমে। সূর্যের সূর্যাস্তের সময় চলমান আসর ব্যতীত অন্য কোনো নামাজে বৈধ নয়। এছাড়া ফজর নামাজের ওয়াক্ত হলে তখন থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসর ওয়াক্তে ফরজ নামাজ পড়া হলে তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো ধরনের নফল নামাজ পড়া নিষেধ। আমার প্রশ্ন হচ্ছে: নামাজ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া। আপনারা বলেন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থনা, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, কাকুতি-মিনতি, আবেদন‑নিবেদন, অনুনয়-বিনয়। তাহলে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি, অনুনয়-বিনয়নের জন্য কি কোনো সময় আছে? ইউনুস নবী, মুসা নবী, আইয়ুব নবী, ইব্রাহিম নবী, ঈসা নবী, উনারা কি কোনো সময়ের ধার ধরেছেন? নাকি যখন প্রয়োজন তখনই আল্লাহকে ডেকেছেন? তাছাড়া সূর্য অস্ত‑উদয়, মাথার উপর‑পিঠের উপর—এগুলো তো সারা পৃথিবীতে আলাদা আলাদা। যে সময় আপনার দেশে সূর্য উদয় হচ্ছে, সেই একই সময় দেখা যায় পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কারণ সূর্য সূর্যের জায়গায় আছে, আপনার পৃথিবী ঘোরার কারণে এরকম মনে হচ্ছে। সম্ভবত হাদিসগুলো বা মাযহাবগুলো যারা বানিয়েছিলেন, তারা এই বিষয়টা জানতেন না যে পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ২৪ ঘন্টা ঘুরতে থাকে আর সূর্য ওইখানে প্রায় স্থির থাকে (পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ঘোরে)। সম্ভবত তারা ধারণা করেছিলেন যে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘোরে। এজন্য অনেক হাদিসে পাবেন যে সূর্য রাত্রেবেলা আল্লাহর আরশের নিচে চলে যায়, সেখানে আল্লাহকে সিজদা করে বসে থাকে। তারপর আল্লাহ অনুমতি দেয়, তারপরে সে ওঠে। আল্লাহ অনুমতি না দিলে সে ওখানে বসেই থাকে, ওঠে না। তারা এইভাবে ধারণা (তাদের) ছিল। দেখি, আল্লাহর রাসূলের নামে এইভাবে অবৈজ্ঞানিক গাঁজাখুরি হাদিস বানিয়েছিল।
এবার আরেকটা নামাজ আপনারা বানিয়েছেন: তাহিয়াতুল ওযুর নামাজ। অযু করার পর পর এই নামাজ দুই রাকাত পড়তে হয়। ওয়াক্ত মাকরুহ হলে মাকরুহু ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন: “যে ব্যক্তি অযু করে দুই রাকাত নামাজ ইখলাসের সঙ্গে পড়বে, তার বেহেশতে লাভ হওয়া অবধারিত।” (মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফের হাদিস)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহতালা বলেন, যে ব্যক্তি ওযু ভাঙ্গার পর অযু করলো না, সে আমাকে অবজ্ঞা করল। আর যে ব্যক্তি অযু করার পর পর দুই রাকাত নামাজ পড়লো না, সেও আমাকে অবহেলা করল।” মানে যে ব্যক্তি দুই রাকাত আল্লাহর কাছে দোয়া করলো না। তো আল্লাহর কাছে দোয়া করার, প্রার্থনা করার, ভিক্ষা চাওয়ার কি কোনো রাকাত হয়? তারপরে এটা কোথায় বলেছেন? হাদিসে কুদসি। এটা আবার কি জিনিস? হাদিস তো হাদিসে আপনারা বলছেন সবই তো আল্লাহর কাছ থেকে আসে। তো এটা কোরআন তো জিব্রাইল ফেরেশতা নিয়ে আসতো। আর যে সোয়া ৬০০০ কোরআনের আয়াত ২৩ বছর ধরে নিয়ে আসছে। কিন্তু এই যে ৪০-৫০ লক্ষ হাদিস—এইটা কোনো ফেরেশতা নিয়ে আসতো? আনলে আল্লাহর রাসূল বুঝতেন কিভাবে যে এটা কোরআনের ওহী না হাদিসের ওহী? উনি নিজে কিভাবে বুঝতেন? সাহাবীরা তো পরে বুঝবেন, আগে উনার তো বোঝার দরকার আছে। যেহেতু ফেরেশতারা সেই ওহী নিয়ে আসছে, গাইরে মাতলে হোক আর ডায়রে মাতলে হোক, ওহী তো ওহী। দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসতেছে। হাদিসের ওহীও আল্লাহর পক্ষ থেকে আসতেছে, আপনারা যেহেতু বলেন। কোরআনের ওহীও আল্লাহর পক্ষ থেকে আসতেছে। দুটোই ফেরেশতা নিয়ে আসতেছে। তো আল্লাহর রাসূল কিভাবে বুঝতেন যে এটা কোরআনের ওহী আর এটা হাদিসের ওহী? এটা হাদিসে কুদসি আর এটা হাদিসে সহি, আর এটা হাদিসে জয়ীফ, আর এটা হাদিসে জাল? উনি কিভাবে বুঝতেন? উনাকে আগে থেকে ওয়ার্নিং দেয়া হতো? উনাকে যে হে আল্লাহর রাসূল, এটা কিন্তু হাদিস হাদিস আকারে যাবে। তখন উনি সেটা কিভাবে কার মাধ্যমে লেখাতেন? কোরআনের ওহীগুলো তো সে কাতে বহি ওহীদের বলতেন অথবা জিব্রাইল ফেরেশতাকে আগে থেকে ফোন করে জানায় দিতেন যে, “এইবার কিন্তু গায়ের মাতলু যাচ্ছে। অতএব কাতে বহি কারো ডাকার দরকার নাই। গায়ের মাতলু সময় ডাকার দরকার নাই। ওটা আপনি নিজে মুখস্ত করতে হবে। ওটা কিছু করার নাই, নিজে মুখস্ত করে।” তারপরে বেদুইনরা কখনো আসলে আসলে আপনার জিজ্ঞেস করলে বিভিন্ন প্রশ্ন টশন করবে। তখনই গায়ের মাতলু থেকে আপনি বলবেন। এটা লেখানো কাতে বহির দরকার নাই। এটা আপনার নিজের মুখস্ত করতে হবে। এটা আপনার ওভারটাইম কিছু করার নাই। কিন্তু শুধু কোরআনটা, ওটার কাতে বহি শুধু দরকার আছে। ওইটা লিখায় নিয়েন, এটা লেখানোর দরকার নাই। এটা আপনি মুখস্ত করে ফেলেন। তো এই ৪০-৫০-৬০ লক্ষ হাদিস আল্লাহর রাসূল মুখস্ত করা লাগছে? সম্ভবত। এছাড়া তো কোনো অপশন দেখি না, আমি কোনো যুক্তি মিলাইতে পারতেছি না।
দুখুল মসজিদ। মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বসার আগেই দুই রাকাত দুখুল মসজিদ নামাজ পড়তে হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখনও বসার আগেই তার দুই রাকাত নামাজ পড়া উচিত। তবে যদি মাকরুহু ওয়াক্ত হয়, তাহলে মাকরুহু ওয়াক্ত শেষ হলে পড়বে। এজন্য বসে অপেক্ষা করতে পারবে।” তো এই তাহিয়াতুল উজু, মসজিদ দুখুল মসজিদ, এই যে এই নামাজ—এই নামাজ আল্লাহ কোনো সূরার কোনো আয়াতে দিয়েছেন? অথবা যেই মিরাজে গিয়েছিল সেই মিরাজে এই নামাজের কথা তো আমরা শুনিনি। অথবা এটা যদি সেই ওহী গায়ের মাত্রের মাধ্যমে জিব্রাইল ফেরেশতা দিয়ে যায়, তো সেইখানে এই এই জিনিসগুলো লেখাই ছিল কারা দিয়ে? এগুলো লেখানোর কাতেবে ওহী কারা? তাদের নাম তো আমরা ইতিহাসে খুঁজে পাই না যে কাদেরকে দিয়ে তিনি লিখিয়েছিলেন যে এইমাত্র জিব্রাইল ফেরেশতা তাহিয়াতুল উজু বা দুখুল মসজিদ বা খুরুজুল মঞ্জিল মসজিদ খুরুজুল মঞ্জিলের নামাজ, সালাতুল হাজতের নামাজ, সালাতুল কাজাইল দা বা ঋণ পরিশোধের নামাজ, সালাতুল ফাকার নামাজ, সালাতুল শোকরের নামাজ, সালাতুল তওবার নামাজ, সালাতুল মাতার নামাজ, সালাতুল নাউমের নামাজ, সালাতুল সাকরাতুল মউতের নামাজ—এই এই সিস্টেমে পড়তে হবে, এখানে এই সূরা পড়তে হবে, এখানে দুই রাকাত, এখানে তিন রাকাত। শবে কদরে যেমন আছে না, শবে কদরের অমুক‑অমুক সূরা দিয়ে পড়তে হবে। শবে বরাতে অমুক‑অমুক সূরা দিয়ে পড়তে হবে। সালাতুল হাজলে অমুক‑অমুক দোয়া পড়তে হবে। নামাজের পরে অমুক দোয়া ১১ বার পড়তে হবে, অমুক দোয়া ১৩ বার পড়ে, অমুক দোয়া পড়তে হবে। তো এই যে ডিটেইলস বর্ণনা, এক্সপ্লেনেশন, ডিসক্রিপশন—এগুলো যে যেই ফেরেশতা নিয়ে আসছে আল্লাহর রাসূলের কাছে, সেই ফেরেশতা যখন আল্লাহর রাসূল কিভাবে বুঝতে পারতেন যে এটা কোরআনের বাইরে আলাদা। অথবা যদি বুঝতে পারতেন, তাহলে এটা কাদের দিয়ে লেখাতেন? এই ৩০-৪০-৫০ লক্ষ হাদিস কোন লেখকের নাম তো আমরা পাই না। আল্লাহর রাসূলের জীবিতকালে যে অমুক‑অমুক তার সেই হাদিসের কাতেবে ওহী ছিল, আমরা তো কোরআনের কাতেবে ওহীর নাম খুঁজে পাই, কিন্তু হাদিসের কাতেবে ওহী কারা ছিল? তারা কিভাবে এগুলো কালেক্ট করলে? কিভাবে এগুলো পাইলো? এর কোনো গ্রন্থ কি ছিল? যদি কোরআনের ৬০০০ গ্রন্থ সেটাই লিপিবদ্ধ করতে খলিফা ওসমানের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়, এত পেরেশানির মধ্যে ভোগা লাগে—সেই এখানে এই ৩০-৪০ লক্ষ যে গাইরে মাতলু ওহী এগুলো তিনি কিভাবে ই করছেন? কম্পাইল করছেন বা কারা করছেন? এটা তো মিলিয়ন ডলার করছেন। এবং এটা তো আমাদের জানার অধিকার আছে। আমরা একটা ধর্ম ধর্ম না দেখে বিশ্বাস করা যায়, আল্লাহ বা রাসূল না দেখে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু না বুঝে বিশ্বাস করা যায় না। আর না বুঝে যদি কেউ বিশ্বাস করে, সেই সেই বিশ্বাস আসলে বিশ্বাস না, সেটা আসলে মনের মধ্যে সবসময় দোকরম থাকে। মনের মধ্যে কখনো তার পরিপূর্ণ বিশ্বাস আসে না, সে কনফিডেন্স আসে না। তার মাঝেমধ্যেই মনে হয় যে আল্লাহ বলতে কি কিছু আছে। কারণ এই অবিশ্বাস আসবেই। কারণ না বুঝে, একমাত্র পাগল যে সেই না বুঝে কোনো জিনিসের উপর বিশ্বাস আনতে পারে। অথবা শিশু-বাচ্চা, সে না বুঝে আগুনে হাত দিবে। কিন্তু একজন বুঝমান মানুষ, যাকে আল্লাহ আকল‑জ্ঞান‑ও বুদ্ধি দিয়েছেন, এবং আল্লাহ বলেছেন যে “তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা করো না? তোমরা কি আল্লাহর নিদর্শন গুলো দেখো না? তোমরা কি পৃথিবীতে একটু হেঁটে দেখো না? তার প্রকৃতির দিকে তাকাও না? সাগর-মহাসাগরের দিকে তাকাও না? দেখো চন্দ্র দেখো সূর্য দেখো।” আল্লাহর নিদর্শন গুলো তো আল্লাহ জ্ঞানবান মানুষের জন্যই বলেছেন যে জ্ঞানবান মানুষদের জন্য আমি কোরআনকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি। তো আল্লাহ আমাদের বুঝে শুনে সবকিছু এভাবে জাস্টিফাই করার কথা বলেছেন। এবং ইব্রাহিম নবীকে আমরা দেখেছি, তিনি সূর্যকে মনে করতেন সৃষ্টিকর্তা, চন্দ্রকে মনে করতেন সৃষ্টিকর্তা। নাস্তিকদের মত জীবন ছিল। তার আল্লাহ তাকে হেদায়েত দিছেন। তিনি খুঁজে বেড়াইতেন, তিনি যুক্তি খুঁজে বেড়াইতেন। তিনি যুক্তির লজিক দিছেন যে, যেই জিনিস অস্ত যায়, সেটা আমার সৃষ্টিকর্তা হইতে পারে না। যেই জিনিস রাতে থাকে, দিনে থাকে না, সেটা আমার সৃষ্টিকর্তা আমার রব হইতে পারে না। এভাবে তিনি লজিক প্রয়োগ করতেন। আমরা তো নাস্তিকদের গালিগালাজ করি। কিন্তু গালিগালাজ করা উচিত না। তো তার লজিক প্রয়োগ করা। এটা তো ইব্রাহিম নবীর ক্যারেক্টার। এজন্যই তো ইব্রাহিম নবী জাতির পিতা হইছেন। তিনি একমাত্র কোরআনে তাকেই খলিল বা বন্ধু বলেছেন আল্লাহ। এবং আমাদের নাম মুসলিম, নাম এটা তারই দেয়া নাম। এত সম্মানিত আল্লাহ তারে করেছেন কেন? তার এই লজিক এপ্লাই। এই যে একটা দার্শনিক তত্ত্বটা এই যে থিওরিটা, এই যে ক্যারেক্টারটা—এটাই তো আমাদের চরম একটা শিক্ষণীয় জিনিস। এবং এজন্যই তো আল্লাহ দুইজন নবীর নাম কোরআনে বলেছেন যে তাদের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। একটা হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সালামু আলা মুহাম্মদ, আরেকজন হচ্ছে এই জাতির পিতা, জাতির ইমাম সালামুন আলা ইব্রাহিম।
তাহলে না বুঝে আসলে ধর্ম পালন করা সম্ভব না। কোনো মানুষ করতে পারবে না। যদি সে না বুঝে, সে করতে চায় বা করতে পারে, সে তার মধ্যে কখনোই সেই একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা, তৃপ্তি-পরিতৃপ্তি কখনোই আসবে না। এজন্য না দেখে আল্লাহ বা রাসূল বা সবকিছু বিশ্বাস করা যেতে পারে। কিন্তু সে বিশ্বাস বেশিদিন টিকবে না। আস্তে আস্তে সে হয়তো মুখে স্বীকার করবে না, কিন্তু সে নাস্তিক হয়ে যাবে। অথবা নামে কাগজে-কলমে হয়তো মুসলিম থাকবে, কিন্তু মুসলিমদের আল্লাহর কোনো আদেশ‑নিষেধ, উপদেশ, কমান্ড সে কিছুই মেনে চলতে পারবে না। কারণ তার কনফিডেন্স বা ভরসাই তার কোনোদিন আসবে না। তাহলে আমাদের জানা দরকার আছে যে ৩০-৪০-৫০ লক্ষ গায়ের মাতলু ওহী কোনো ফেরেশতা নিয়ে আসতো আর কাদেরকে দিয়ে কোনো কাতেব ওহীদেরকে দিয়ে আল্লাহর রাসূল লেখাতেন। এবং সেগুলো কারা মানে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। কারণ আমরা তো জানি যে আবু বকর (প্রথম খলিফা, আল্লাহর রাসূলের বন্ধু এবং শ্বশুর) তার কাছে মাত্র ৫০ গায়ের মাতলু ছিল। সেই ৫০০ গায়ের মাতলু ছিল। সেই ৫০০ তিনি পুড়ায় ফেলছেন। তাহলে এগুলো আল্লাহর ওহী গায়ের মাতলু বলেন আর যেই মাতলু বলেন, সেই ওহী তিনি কেন পুড়ায় ফেলবেন? এটা কত বড় স্পর্ধা!
খুরুজুল মঞ্জিলের নামাজ। বাড়ি থেকে সফরে বের হওয়ার আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়া অতিব বরকতময়। এই নামাজকে সালাতুল সফর বা সফরের নামাজ বলা হয়। আবার বাড়ি ফিরে আসলেও দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে, সেটার নাম কি? এই নামাজকে সালাতুল খুরজিল মঞ্জিল বা মঞ্জিল থেকে প্রত্যাবর্তনের নামাজ বলা হয়। সালাতুল হাজত। সালাতুল হাজত প্রসঙ্গটি বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসা, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত সহ বহু হাদিস গ্রন্থে রয়েছে। পাক‑পবিত্র হয়ে দোয়া বা ইস্তেগফারও কয়েকবার, দুরুদ শরীফ পড়ে, একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে। নামাজ শেষে ১১ বার “ইয়া কাজিয়াল হাজাত” (মানে হে প্রয়োজন পূর্ণকারী) পড়বে এবং আরো কয়েকবার দুরুদ শরীফ পড়ে ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার জন্য দোয়া ও মোনাজাত করতে হবে। ইনশাল্লাহ মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে। এই যে মনের আশা পূরণ করার যে এই যে নামাজ—এই নামাজ পাক‑পবিত্র হয়ে ইস্তেগফার, দরুদ শরীফ পড়ে দুই রাকাত পড়বে, তার নামাজ শেষে যে ১১ বার “ইয়া কাজিয়াল হাজাত” বলবে, এই যে প্রসেসটা—এই প্রসেসটা তো আল্লাহর রাসূল তো বানায়া বানায়া বলেন নাই। তার কাছে গায়রে মাতলু ওহী নাযিল হয়েছে। তো সেই কোনো ফেরেশতা নাযিল করছেন। আর এগুলা কে লিখে রাখছিল যে উনারা কালেক্ট করলেন? কার কাছ থেকে এগুলো লেখা রাখছিলেন? এরকম কোনো গায়রে মাতলু কাতেবে ওহী ইতিহাসে তাদের কোনো নাম নাই। সুতরাং এটা লজিকও খাটে না, যুক্তিতেও খাটে না। কুরআনের আয়াত অনুযায়ী এগুলো এসব জিনিস পুরো বানোয়াট জিনিস। এবং আল্লাহর রাসূলের নামে চাপায় দেয়া হয়েছে। এবং এইসব কারণেই এই মুসলমানরা আস্তে আস্তে ভাদাইম্মা অকর্মণ্যের ঠিকই হইছে যে সে জানেস যে কোনো মনের আশা পূরণ করলে নামাজ পড়লে মনের আশা পূরণ হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ কোরআনে পাতায় পাতায় বলছেন যে তারা কি মনে করেছে, তারা ঈমান এনেছি বললে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। অথচ তাদের পরীক্ষা করা হবে না? তাদেরকে দুঃখ‑কষ্ট‑বেদনা, রোগ‑শোখ দিয়ে আমি তাদের পরীক্ষা করব। এবং সূরা মূলকে আল্লাহ বলেছেন: “আমি সৃষ্টি করেছি জীবন ও মৃত্যু, যাতে করে আমি পরীক্ষা করতে পারি তোমাদের এর মধ্যে সৎকর্মে আমলে কে শ্রেষ্ঠ।” তো আল্লাহ তো আমাদের আমলের পরীক্ষা করার জন্য তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন। তো পরীক্ষা তো আমাদের করবেনই। তো যদি আমাদের নামাজ পড়লেই আমাদের মনের আশা পূরণ হয়ে যায় (এই ১১ বার “ইয়া কাজিয়াল হাজাত” বললে), আর নামাজ পড়ার আগে দুরুদ শরীফ আর ইস্তেগফার পড়লে—তাহলে পরীক্ষাটা হবে কিভাবে? মনের আশা হয়েছে যে আল্লাহ পরীক্ষা নিবে? একটা যে আমারে বাবাকে মৃত্যু দিবে বা মাকে মৃত্যু দিবে বা সন্তানের মৃত্যু দিবে, দেখি প্রচন্ড তারা অসুস্থ। আমি সাথে সাথে মনের আশা যে আল্লাহ তাদের রোগ মুক্ত করে দাও। এই আশা নিয়ে নামাজ‑সালাম। মনের আশা পূরণ হয়ে গেল, তাদের রক্ত থেকে মুক্ত হয়ে গেল। তাহলে তো আমার পরীক্ষাটা আল্লাহ নিতে পারলো না।
সালাতুল কাজী কাজা ঈদ দাঈন বা ঋণ পরিশোধের নামাজ। হযরত আবু ওমর রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর দরবারে এসে বললেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার ঋণ আছে, কিন্তু তা পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই।” উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি দুই রাকাত করে চার রাকাত নামাজ আদায় করো। ইনশাআল্লাহ, তোমার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে।” এই যে মানুষকে অকর্মণ্য বানানোর আরো একটা এই এই হাদিস বানানো হয়েছে। হাদিসগুলো মার্কেটে চলেই। এই কারণে যে কোরআনে এরকম কোনো শর্টকাট টেকনিক নাই। শর্টকাট জান্নাতে যাওয়ার কোনো টেকনিক নাই। শর্টকাটে ঋণমুক্তি হয়ে যাবে, মনের আশা পূরণ হয়ে যাবে—এইসব ধান্দাবাজি জিনিস কোরআনে এত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ কোরআন হচ্ছে আল্লাহ বলছেন, সূরা লাইলের ১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, “তার সম্পদ দান করে এই পরিশুদ্ধির জন্য।” পরিশুদ্ধতার জন্য। তো এই যে আত্মা পরিশুদ্ধির জন্য আল্লাহ শিখিয়ে দিছেন মানুষকে দান করা। আর এখানে আপনাকে শেখানো হয়েছে সালাতুল মাতার পড়লে এই, নাকি সালাতুল নাম পড়লে এই এই ১০০০ স্বর্ণমুদ্রার দানের সওয়াব, আবার ১০০০ জামাকাপড় দান করার সওয়াব। সালাতুল তওবা। সালাতুল তওবা আপনি আদায় করলে আপনার… আপনাকে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। পুরোপুরি কোরআন বিরোধী জিনিস। আল্লাহ কখনোই সালাতুল তওবা পড়লে আল্লাহ ক্ষমা করবেন, এরকম কোনো ঘোষণাই দেন নাই। আল্লাহ বলছেন: “তোমরা মুত্তাকী হবা, মুত্তাকীর চেষ্টা-সাধনা করবা, এই পাপ এড়ায় চলবা, আর এই ভালো কাজগুলো (এই এই লিস্টে দিয়ে দিলাম) এগুলা করবা। করলে তোমাদের আমি এমনিতেও অটোমেটিক ক্ষমা করে দিব, সমস্ত গুনাহ আমি মোচন করে দেব।” কথাটা আল্লাহ চমৎকার করে বলছে: “তোমাদের গুনাহ সমূহ মোচন করে দেব আমি।” তাহলে এই সালাতুল তওবা হচ্ছে কোরআন বিরোধী একটা সালাত। নামাজ।
সালাতুল শুকুর। এটা অন্তরের ব্যাপার। আল্লাহর কাছে আপনি মন থেকেই যদি বলেন “আলহামদুলিল্লাহ”, দ্যাটস এনাফ। আল্লাহপাক তো এটাই বলেছেন যে শয়তান চ্যালেঞ্জ করেছিল যে, “তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকরকারী পাবে না (কৃতজ্ঞতা আদায়কারী পাবে না)।” আল্লাহ বলছেন, যারা আমার প্রিয় বান্দা, তারা ঠিকই হবে। তো মুত্তাকীর ওয়ান অফ দা মেইন কোয়ালিটি—তারা এই আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়। সেখানে আপনি এটা দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মানে আপনার একটা উঠাবে মধ্যে ঢুকায় ফেলছেন। এটা হচ্ছে অন্তরের ইবাদত। সালাতুল ফাকা। এটা তো আল্লাহর রাসূল বলেই নাই। এটা হোসাইন রাদিয়াল্লাহুকে তার রাদিয়াল্লাহু পুত্র আলী রাদিয়াল্লাহু কে বলেন। তো এটা তো হাদিসই না। আলী ইবনে হোসাইন বলেন যে, ব্যক্তি নামাজ পড়বে, আল্লাহ তার বিপদ-আপদ দূর করে দিবে। আল্লাহ পাক বিপদ-আপদ দূর করে দিবে নামাজ পড়লে—এই কথা আল্লাহ কোরআনে কোথাও বলছে? কোথাও বলে নাই। আল্লাহপাক বিপদ-আপদ দূর করে দিতে পারে যদি আল্লাহ বলছে: “তোমরা সালাত ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবা।” তো সেই সালাত তো আর এই নামাজ না। আর সে ধৈর্য ধরতে হবে। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেই যে আল্লাহ করবে, তা তো না। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার তো পদ্ধতি আছে। আপনি সারাদিনের মধ্যে ১০০ করবেন আল্লাহ‑বিরোধী কাজ, আল্লাহর কোরআনের চাইতে ১০০টা ভায়োলেট করে বেড়াবেন। আর শুধুই নামাজ পড়বেন, উঠে ব্যথাক করবেন। আর আল্লাহ আপনার অভাব‑বিপদ-আপদ সব দূর করে দেবে। এটা ভাবাটাই তো একটা চরম বোকামী।
ঋণ পরিশোধের নামাজ। এটা হচ্ছে মানুষ অকর্মণ্য করার জন্য আরেকটা ফাতরামি জিনিস। মানুষ মানুষ হবে অকর্মণ্য। মানে ঋণ পরিশোধ করবেন। তুমি আল্লাহ বলছে, সূরা নজমে: “মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে।” আপনাকে মানুষ আপনাকে পরিশ্রমী বানাইতে চাচ্ছে। আল্লাহ সেইভাবে ইন্সপারেশন দিছে। আল্লাহ কোরআনে আপন
আলহামদুলিল্লাহ
এই আর্টিকেল থেকে অনেক কিছু শিখলাম; তাজকিয়া নফসের সাথে জড়িত সকল স্কলারদের ধন্যবাদ। 💘