প্রচলিত নামাযে ভয়ংকর শিরক সমুহ ( সালাত পর্ব ৬)

সালাত

স্যার, আপনি তো বলেন যে, কোরআন‑হাদিস ঘেটে এই মাযহাব বানানো হয়েছে। কোরআনে পাওয়া না গেলে হাদিসে যাবেন। তো স্যার, কোরআনের একটা আয়াত আপনাকে বলি, দেখুন তো চেনেন কিনা। কোনদিন পড়েছেন কিনা?

সূরা বনী ইসরাইলের ১১০ নাম্বার আয়াত: “নামাজে স্বর উঁচু কিংবা একেবারে মৃদু করো না। তোমরা নামাজে তোমাদের স্বর উঁচু করো না, আর একেবারে নিচু করো না। এ দুইয়ের মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করো।”

আমি আবার বলছি, আয়াতটা: “নামাজে তোমরা তোমাদের স্বর উঁচু করো না, আবার একেবারে নিচুও করো না। এ দুইয়ের মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করো।

এই আয়াতটায় আল্লাহর তিনটা অর্ডার, তিনটা নির্দেশ, তিনটা আদেশ:

  • নামাজে স্বর উঁচু করা যাবে না।
  • একেবারে মনে মনেও বলা যাবে না (মৃদুও করা যাবে না)।
  • তাহলে কেমন করবো?

আমি সেই উত্তর আল্লাহ লাস্টেই দিয়েছেন: “মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করবে। একেবারে উঁচুও না, নিচুও না, মাঝামাঝি।”

এই আয়াতটা বোঝার জন্য আল-আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে ভর্তি হওয়া লাগে? স্যার, এই আয়াতটা বোঝার জন্য কি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাগে? না কওমি মাদ্রাসার দাওরা হাদিস পাশ করতে হয়? একটা ফাইভ পাস বাচ্চাও এই আয়াতটা একবার বললে, একবারই সে বুঝবে যে, এই আয়াতে আল্লাহ তিনটা আদেশ দিয়েছেন মাত্র: ১. উঁচু স্বরে বলা যাবে না। ২. মনে মনে বলা যাবে না। ৩. উত্তর কি, কিভাবে তাহলে বলবো? নামাজের স্বর আমাদের কেমন হবে? মাঝামাঝি হবে।

এই আয়াতটা কার উপর নাযিল হয়েছিল? আপনি খুব সহজ উত্তর: আল্লাহর রাসূলের প্রতি। নাযিল হওয়ার পর কি করেছেন তিনি? এই আয়াতটা তিনি গোপন করেছিলেন না, প্রচার করেছিলেন। কিভাবে? সাহাবীদের জানিয়েছেন। এই সাহাবীরা… এই একটু আগে সূরা বনি ইসরাইলের ১১০ নাম্বার আয়াত আমার উপর নাযিল হয়েছে। “জি হুজুর, বলুন কি আল্লাহ বলেছেন?” “যে নামাজে তোমরা তোমাদের স্বর উঁচু করবে না, আবার একেবারে নিচুও করবে না। কি করবে তাহলে? মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করবে।” তো এই আয়াতটার উপর আমল করেছেন কিনা? আপনারাই তো বলেন যে, আল্লাহর কোরআনকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে, পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করেছেন, জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন আল্লাহর রাসূল।

তাহলে আল্লাহর রাসূল কি এই আয়াতটা সাহাবীদের ডেকে যখন শুনিয়েছেন, শোনানোর পরে তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যোহরের সময়… তারপর নামাজ… তারপর কি মনে মনে মনে নামাজ পড়েছেন? সূরা ফাতিহা পড়েছেন? নাকি আসরের সময় মনে মনে পড়েছেন? তারপর যারা সাহাবী, তারা… তারা ২৪ ঘন্টা তার কাছে থাকতো না। অনেকে বেদুইন ছিল, হয়তো মাসে বা ছয় মাসে একবার হয়তো তার কাছে আসতো, হয়তো একটা আয়াত শুনতো, তারপর তারা বাড়ি যেত, গিয়ে তাদের পরিবারকে, তাদের আত্মীয়-স্বজনকে সেই কোরআনের বাণীগুলো প্রচার করতো। এরকম বহু সাহাবীই তো ছিল। তো তারা যখন তাদের পরিবারে গিয়ে বলছে, “সূরা বনি ইসরাইলের ১১০ নম্বর আয়াতে এই জানো? আজকে আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়েছিলাম, ১১০ নম্বর আয়াতটা শুনে আসছি। সেই আয়াতে আল্লাহ তিনটা অর্ডার দিয়েছেন যে, নামাজে স্বর উঁচুও করা যাবে না, একেবারে মনে মনেও বলা যাবে না, মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করতে হবে।”

তারপর তার পরিবার, তার আত্মীয়-জন যাদের কাছে এই সাহাবীরা এই বাণীগুলো পৌঁছে দিয়েছে (আল্লাহর কোরআন), তারা কিভাবে নামাজ পড়েছে? সেই মনে মনেই পড়েছে? আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডার ভায়োলেট করেছে সাহাবীরা? তাই বলতে চাচ্ছেন আপনারা? অথবা আল্লাহর রাসূল তিনি… তিনি যেই রাসূল নিজ মুখে সাহাবীদের ডেকে বলেছেন যে, “আল্লাহ সূরা বানি ইসরাইলের ১১০ নাম্বার আয়াতে বলেছেন যে, নামাজে স্বর হাই করা যাবে না, লো করা যাবে না, মিডিয়াম স্বর থাকতে হবে,” সেইখানে আপনি কোরআনেও খুঁজে পাচ্ছেন না, হাদিসেও খুঁজে পাচ্ছেন না। তারপর নিজে নিজে মাযহাব বানালেন যে, তিন ওয়াক্ত পড়তে হবে জোরে জোরে, আর দুই ওয়াক্ত পড়তে হবে আস্তে আস্তে। এটা কিসের ভিত্তিতে? এটা কি কোরআনের এই আয়াতের ভিত্তিতে? আল্লাহর রাসূল পড়েছেন?

আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে, আল্লাহর রাসূল তার উপর নাযিল হওয়া কোরআনের এই আয়াতের সরাসরি বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের মনগড়া কোন জিনিসের উপর আমল করেছেন? মানে, আপনি আল্লাহর… আল্লাহর রাসূলকেও ছাড়লেন? আল্লাহর রাসূলকে পর্যন্ত আপনারা আল্লাহ‑বিরোধী বানিয়ে ছাড়লেন? আফসোস! অথচ আল্লাহ আল্লাহর রাসূলকে কি হুমকি দিয়েছেন, জানেন?

সূরা হক, আয়াত ৪৪ থেকে ৪৭। আল্লাহ বলছেন: ৪৪ নাম্বার আয়াতে, “সে যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতো, তবে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম, তারপর কেটে দিতাম তার হৃদপিণ্ডের শিরা (জীবন-ধমনী)। অতঃপর তোমাদের মধ্যেই কেউই এমন নাই যে, তাকে বাঁচাতে পারতো।”

এই আয়াত কার উপর নাযিল হয়েছে? ইমাম আবু হানিফার উপরে? না আপনার মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম‑ওলামার উপরে? আল্লাহর রাসূলের উপরে? আল্লাহর রাসূল এই আয়াত কি যখন হয়েছে, লুকিয়ে রেখেছিলেন না?

সাহাবীদের পড়ে শুনিয়েছেন: “এই সাহাবীরা শোনো, এইমাত্র আমার উপর আয়াত নাযিল হয়েছে: আমি যদি আল্লাহর নামে কোন কিছুর নিজে নিজে বানিয়ে রচনা করে চালাই, তাহলে আল্লাহ আমার ডান হাত ধরে ফেলবে, আর আমার জীবনের ধমনী (হৃদপিণ্ডের শিরা) কেটে ফেলবে। আমি আল্লাহর নামে বানায় বানায় কিছু বলি না, আমি সত্য কথা বলতেছি।”

সূরা বনি ইসরাইলের ১১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, নামাজে স্বর উঁচুও করা যাবে না, মৃদুও করা যাবে না, মধ্যম স্বরে পড়তে হবে। আপনি তো বলবেন যে, আল্লাহর রাসূল কোরআনের বাইরেও অনেক কথা বলেছেন। না, আল্লাহর রাসূল কোরআনের বাইরে যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো আল্লাহর ওহী না। সে যদি তার বউকে বলে যে, “এই আয়েশা, এক গ্লাস পানি দাও,” তো এটাও কি ওহী? সে যদি আবু বকরকে বলে, “আবু বকর বন্ধু কই আছো? একটু আমার বাড়িতে আসো,” তো “চলো একটু বাজারে যাব,” তো খাদিজাকে বলছে যে, “খাদিজা, এই আমার এই কই, মেয়ে কই? ফাতেমা কোথায় আছে?” এই খাওয়া-দাওয়া করছে নাকি? হাসান‑হোসেনের কাছে গেছে? নাতি দেখে আদর করছে, চুমু দিছে? “এই হাসান, এই ওরে খাওয়াইছে?” সকালে না আব্বু খাওয়ায়নি? “তো ক্ষুধা লাগছে মনে হয়। এই ওরে তাড়াতাড়ি খাওয়া। কি আছে ঘরে, দেখতো দে।” তো সব কথা ওহী? এ মানে এ কি?

আপনারা কি… আপনারা কি বাংলাদেশের সকল মুসলিমদেরকে আপনারা গর্ধব মনে করেন? নাকি মুখ থেকে যা বের হয়েছে, সবই ওহী? কিভাবে সম্ভব এটা? মানে, সেই মানে কোরআনের বাইরে ৬২৩৬টা আয়াতেই কম? শুধু এই নবুয়তের পরে যে ২৩ বছর বেঁচে ছিল, এর বাইরে সে কোন কথা বলতো না? কোন পার্সোনাল লাইফ তার ছিল না? তার কোন ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল না? তার স্ত্রী, সন্তান, নাতি-পুতি, ছেলে-মেয়ে ছিল না? তাদের সাথে সে কথা বলতে পারবে না? যা বলবে, সেটাই ওহী হয়ে যাবে?

যাহা বলবে, সেটাই যদি ওহী হয়, তাহলে ওমর কেন তার মৃত্যুর আগে কাগজ-কলম দিল না? হযরত আলী কেন তার নাম কাটতে চাইলো না? আশ্চর্য! মানে কি বলবো… খুব কষ্ট লাগে, খুব দুঃখ লাগে। আপনারা যেইভাবে মুসলিমদের বোকা বানান, সাধারণ মুসলিমদের ঈমান ধ্বংস করেন… তাহলে আল্লাহর রাসূলের সরাসরি মুখ থেকে নিঃসৃত এই যে বাণী… সূরা বনি ইসরাইলের ১১০ নাম্বার আয়াতের সরাসরি বিরুদ্ধে গিয়ে আপনারা দুই ক্যাটাগরি নামাজ বানালেন: একটা জোরে পড়বেন, আরেকটা আস্তে পড়বেন। এর নাম দিয়েছেন আপনারা মাযহাব।

নিয়ত করা

শুধু তাই না, আরো ইন্টারেস্টিং মাযহাব আছে। আপনাদের প্রথমে আসি: নিয়ত করা। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা হচ্ছে বিদাত। শাফি ও হামলি মাযহাব অনুযায়ী সুন্নত। তাহলে যেই হাদিসের আলোকে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা বিদাত ঘোষণা করলেন ইমাম আবু হানিফা সাহেব, শাফি আর হামলি বললেন সুন্নত। দুটোই কারেক্ট?

মানে, একজন বলল পাপের কাজ (বিদাত), মুখে উচ্চারণ করা সেটা হচ্ছে বিদাত। আর দুইজন বলল সুন্নত। দুটোই সঠিক? আচ্ছা মেনে নিলাম। আপনারা তো আবার ইলেকশন করছেন: “লাইলাতুল ইলেকশন”। ২০ জন মাযহাবের আলেম‑ইমাম ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই ভোটে চারজনই সমান সংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন: ইমাম আবু হানিফা, শাফি, মালেকী, হামলী। মেনে নিলাম, চারজনই মহান নেতা (মহান ইমাম)। নেতা তো বলা যাবে না, আরবিতে ইমাম বলতে হবে। চারজনই: ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফি, মালেকী, হামলী। চারজন সমান সংখ্যক ভোট পেয়েছেন, চারজনেরই সঠিক।

মালেক মাযহাব অনুযায়ী, মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা হচ্ছে অনুমোদনযোগ্য, পাপও না, সওয়াবও না। মানে, সুন্নতও না, বিদাতও না। এক্সিলেন্ট! গেল নিয়ত। এবার আমার প্রশ্ন: এই যে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা… সুন্নত? নিয়ত কি মুখ দিয়ে করে মানুষ? না নিয়ত মনের জিনিস, অন্তরের জিনিস। যে, “আল্লাহ, আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছি,” এটা কি মুখে মুখে বলার জিনিস? নিয়ত তো হয় অন্তরে। এটা তো হার্টের সাথে রিলেশন। সেটা মুখে মুখে উচ্চারণ করতে হবে? এটা তাহলে তো আপনি এটা নাম “নিয়ত করা” না দিয়ে, আপনার বলা হচ্ছিল “নিয়ত বলা”। মানে, এই প্রসেসটার নাম হওয়া উচিত ছিল “নামাজে নিয়ত বলা”। তাহলে এটা মিলতো যে, নামাজে নিয়ত বলা যাবে কি যাবে না।

কিন্তু আপনারা তো এটা নিয়ত করা বলেন। তো নিয়ত যেহেতু করাই বলেন, তো বোঝাই যাচ্ছে যে, এটা হার্টের ব্যাপার, মনের ব্যাপার। তো ওটা তো নিয়ত মনে মনেই করতে হয়। তাহলে এটা আবার মুখে উচ্চারণ করতে হবে কেন? আর যদি মুখেই উচ্চারণ হয়, তাহলে সেটাকে তার নিয়ত করা বলে না, সেটা হচ্ছে নিয়ত বলা (মুখ দিয়ে বলা)। সেটাকেই বলে নিয়তে বলা।

কিয়াম

দুই নাম্বার পয়েন্টে আসেন: সেটা হচ্ছে কিয়াম (মানেদাঁড়ানো)। শাফি মাযহাব অনুযায়ী, কিয়ামের সময় দু পায়ের মাঝখানে এক হাত পরিমাণ ফাঁকা থাকতে হবে। হানাফী, মালেকী, হামলি মাযহাব অনুযায়ী সর্বনিম্ন চার আঙ্গুল ফাঁকা থাকতে হবে। খুব ইন্টারেস্টিং! মানে, আল্লাহর রাসূল এবং তাদের সাহাবী-তাবেয়ী-তাবে-তাবেয়ীনদের সবার নাকি সংসর্গে এই চারটা মাযহাব তারা বানিয়েছিল? তাদের সবার সাথে তাদের মুয়ামেলাত কি বলে? এটাকে খুব আন্তরিকতা ছিল? সহবতে ছিল?

তারা তাহলে তারা তিনজন ইমাম তিনি চার আঙ্গুল দেখলেন সাহাবীদের আমল দেখলেন, চার আঙ্গুল। আর একজন ইমাম তিনি দেখলেন এক হাত। মানে, সাহাবীরা কেউ চার আঙ্গুল ফাঁক করে দাঁড়াতো, আর কেউ এক হাত ফাঁক করে দাঁড়াতো? মানে, আল্লাহর রাসূলকে একেকজন একেক সিস্টেমে শিখেছেন? মানে, মক্কা যারা ছিল, মক্কাবাসীদের এক সিস্টেম দাঁড়াতো, আর মদিনাবাসী আরেক সিস্টেমে দাঁড়াতো? খুবই হাস্যকর!

হাত বাঁধার স্থান সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, নাভির নিচে হাত বাঁধতে হবে। মালেকী মাযহাব অনুযায়ী, হাত ছেড়ে দিতে হবে। শাফি মাযহাব অনুযায়ী, নাভির উপরে কিন্তু বুকের নিচে। হামলি মাযহাব অনুযায়ী, নাভির নিচে। মানে, এই চারজন ইমাম এত শত তাবেয়ী-তাবে-তাবেয়ীনদের সাথে নাকি কাছ থেকে হাদিস সরাসরি সংগ্রহ করেছিল? হাদিসের বই ছিল? “কি নাম দেন? আবু হুরায়রা শরীফ, মুসনাবে শরীফ…” এত শরীফ থেকে হাত বাঁধাটা পর্যন্ত এরা পরিষ্কারভাবে বের করতে পারলো না? গেল শরীফ থেকে বের করতে পারলো না?

এরা নাকি সাহাবী-তাবেয়ী-তাবে-তাবেয়ীনদের সংস্পর্শ পেয়েছিলেন, তাদের কাছ থেকে ডাইরেক্ট শিখেছেন? তাহলে চারজন ইমাম যে উনার রাতের আধারে সমসংখ্যক ভোট পেয়ে মুসলিম আপনাদের সেই মহাসম্মেলনে এরা চারজনে হয়েছেন ইমাম হিসেবে, নেতা হিসেবে। সেই সম্মেলনে যে আপনারা গেলেন, এই এখানে কি চারজন উপস্থিত? সম্ভবত ছিল না। যেই মহাসম্মেলন বা ইজমার মাধ্যমে আপনারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, চারজনই সঠিক।

তো সেই চারজন যদি থাকতো… সম্ভবত আমি থাকলে এই প্রশ্নটা করতাম যে, “হুজুর, ইমাম সাহেবরা! আপনারা চারজন আগে এই হাতটা কোথায় বাঁধবেন, সেইটা আগে সিদ্ধান্ত দেন। তারপরে বাকিগুলোর প্রসেস আমাদের শোনায়েন। নাইলে আমরা তো আধা পাগল হয়ে যাব। হাত বাঁধা নিয়ে আমাদের মারামারি শুরু হবে।” আসলেই তো শুরু হয়েছিল! বা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। বাঁধানী মারামারি!

তাকবীর বলা

এক পজিশন থেকে অন্য পজিশনে যাওয়া (মানেদাঁড়ানো থেকে রুকুতে, রুকু থেকে সিজদায়)। হামলি মাযহাব অনুযায়ী, এটা হচ্ছে ওয়াজিব। মালেকী, শাফি ও হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সুন্নত। এই “ওয়াজিব” নিয়ে খুব দারুণ কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করে। ওয়াজিব কি জিনিস? ওয়াজিব হচ্ছে ফরজও না, সুন্নত না। এই হুজুররাই বলে—এই হাদিস‑বেত্তারাই বলে—যেটা আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডার, সেটা হচ্ছে ফরজ। আর যেটা রাসূলের অর্ডার, সেটা হচ্ছে সুন্নত। তাহলে “ওয়াজিব” মানে কি? এটা আল্লাহরও অর্ডার না, রাসূলেরও অর্ডার না। তাহলে এটা তো দুইটার নিচে থাকবে? তা না।

উনারা দুইটার মাঝে নিয়ে গেছে। মানে, ফরজের নিচে, সুন্নতের উপরে। সেটা হচ্ছে ওয়াজিব। কিন্তু এটাকে তো বাংলা ভাষায় আমরা যতটুকু বুঝি, এটাকে তো বিদাত বলা উচিত। কারণ, আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডার নাই, রাসূলেরও করা নাই। যদি করতো, তাহলে তো এটা সুন্নতই হতো। তাহলে সুন্নতও না? মানে, রাসূলের অর্ডারও না, আল্লাহর অর্ডারও না। তাহলে তো ফরজ হতো! আপনি এটাকে মাঝখানে ঢুকিয়ে বলতেছেন, “এটা হচ্ছে ওয়াজিব”। এই হচ্ছে আপনাদের ৩০ লক্ষ হাদিস ঘেটে আপনাদের সেই মাযহাব যে বানালেন, আপনাদের সেই জ্ঞান‑প্রজ্ঞা-বুদ্ধিমত্তার পরিচয়!

শেষ বৈঠকে দুরুদ পড়া

শাফি মাযহাব অনুযায়ী ফরজ। মালেকী, হানাফী, হামলি মাযহাব অনুযায়ী সুন্নত। তার মানে, কে শাফি মাযহাব? উনি বলছেন, যেটা আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডার: “নামাজে যখন তোমরা শেষ বৈঠকে বসবে, তখন তোমরা অবশ্যই দুরুদ পড়িবে।” আর মালেকি, হানাফী, হামলি মাযহাব তারা বলছে সুন্নত। মানে, এটা আল্লাহর অর্ডার না, এটা রাসূলের অর্ডার। কিন্তু এই… এই শেষ বৈঠক তো সূরা নিসার ১০২ তিন নাম্বার আয়াতে—যেটা যুদ্ধের ময়দানে যে সাহাবীরা যে নামাজ পড়েছিল—ওখানে তো দেখলাম যে, শেষ বৈঠকই নাই। ওখানে সেজদার পরেই শেষ। নামাজ এবং সেই নামাজ কোন সিস্টেমে? মানে, আপনি হাতে অস্ত্র নিয়ে—সেই বল্লম, সে ঢাল, তলোয়ার, ছুরি-চাকু… তারপরে ওই যে নিজেকে রক্ষার জন্য যে হাতে যে থাকে সব অস্ত্র‑শস্ত্র, সবকিছু নিয়ে আর্মির ড্রেস‑মেরেস পরে, সেই অবস্থায় কিভাবে নামাজ পড়তো?

আল্লাহ মাবুদ জানে যে, এত অস্ত্রপাতি নিয়ে সেনাবাহিনীর সুসজ্জিত অবস্থায় সে মাথায় শিরস্ত্রাণ, বডিতে আর্মার, হাতে সেই শিল্ড (যে শিল্ড হাতে যে বড় শিল্ড থাকে), সেই শিল্ড নিয়ে সে বুট পায়ে দিয়ে কিভাবে তারা সিজদা করে? তো আল্লাহ মাবুদ জানে। তারপরে তো সেখানে তো এই শেষ বৈঠকই নাই। সেখানে আল্লাহ বলেছেন যে, “সিজদার পরে যেন অন্য গ্রুপে এসে তোমার সাথে দাঁড়ায়।” আমি বুঝি না যে, অন্য গ্রুপে এসে আল্লাহর রাসূলের সাথে দাঁড়াতে হবে কেন? তাদের তো আরেকটা জামাত করে দিলে হয় যে, “এই তোমরা এই ১০০ জন আছো, তোমরা ওইখানে আলাদা একটা জামাত করে।”

ওখানে একজন ইমাম দ্বারা করায় দিত। যেমন, ওই যে আল্লাহর রাসূল তো বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জামাত পাঠায়। তারা কি নামাজ পড়তো না? পড়তো। একজন নিজেরা ইমাম ঠিক করে সেখানে পড়তো। তাহলে ওই আয়াতে কেন বলল যে, এক রাকাত পড়ার পরেই সিজদা করেই তোমরা চলে যাবা, তাহলে আর পরের গ্রুপ আসবে? তাহলে পরের গ্রুপটাকে এইভাবে করা দরকার ছিল: পরের গ্রুপটাকে না দাঁড় করিয়ে, ওখানে তো ওইভাবে দিতে পারতো।

অথবা যদি একসাথেই করতে চায়, তাহলে সিজদার পরে শেষ বৈঠকটা কেন দিল না? শেষ বৈঠক ছাড়াই এখানে। অথচ এখানে তো শাফি মাযহাব বলছে যে, শেষ বৈঠকে দুরুদ পড়া ফরজ। এই ফরজ কাজটা করলো না? অথবা মালেকী, হানাফী, হামলে মাযহাব অনুযায়ী হচ্ছে শেষ বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়া হচ্ছে সুন্নত। সেটাও করলো না? নামাজ শেষ করে ফেলল!

রাফুল ইয়াদান

শাফি মাযহাবে রুকু ও সিজদায় যাওয়ার এবং তৃতীয় রাকাতের শুরুতে রাফেল আদান করে। মালেকি মাযহাব ও হানাফী মাযহাবে শুধুমাত্র প্রথম তাকবীরে করে। হামলে মাযহাব রুকুতে যাওয়ার সময় এবং সেজদায় যাওয়ার আগে করে। খুবই গোজামিল! এক মাযহাবে রুকু ও সেজদায় যাওয়ার সময় করে, আরেক মাযহাবে শুধু প্রথমে করে, আরেক মাযহাবে মাঝখানে করে।

আরেক মাযহাবে প্রত্যেক স্টেপে স্টেপে রাফুলেদান (মানেহাত উপরে উঠাইতে হবে)। চার মাযহাব! অবশ্য আপনার কিছু তো বলার নাই। কারণ, আপনারা ওই যে রাতের আধারে ইলেকশন করছেন—চারজনই সমান সংখ্যক ভোট পেয়ে চারজন নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ১৬ জন পরাজিত হয়েছেন। মাযহাবের ইমামরা এই চারজন যেহেতু নির্বাচিত হয়েছেন সমসংখ্যক ভোট পেয়ে, এবং সেটা যে জালিয়াতি ভোট ছিল, এটাও বলা যাবে না।

তাহলে আবার আপনারা আমাদের নামে মামলা দিতে পারেন! “ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন হয়েছিল। চারজনের সমান সঙ্গে ভোট পেয়েছে, চারজন চার সিস্টেমের নামাজ।” এটা আমাদের মেনে নিতে হবে? মেনে নিলাম। কি করার আছে? কারণ, না মানলে তো ৭২ লোভে আবার আপনারা কতল করে ফেলতে পারেন।

সূরা ফাতিহা

হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, নামাজে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। মালেকী, শাফি ও হামলী মাযহাব অনুযায়ী ফরজ। ওয়াজিব তো বললাম একটু আগে। ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরা পড়া: হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, ইমামের পেছনে মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পড়া মাকরুহ (মানেগুনাহের কাজ)। মুক্তাদি পড়তে পারবে না। শাফি মাযহাব অনুযায়ী ফরজ (মানে পড়তে পারবে না)। মানে কি? পড়তেই হবে? আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডার?

মালেকী ও হামলি মাযহাব অনুযায়ী, ইমাম যখন জোরে কিরাত পড়বে (শব্দ করে), তখন মুক্তাদির কিরাত পড়া মাকরুহ। এবং ইমাম যখন আস্তে কিরাত পড়ে, তখন মুক্তাদির কিরাত পড়া মুস্তাহাব। কি মাথা নষ্ট করা! একটা টার্মস ইউজ করছে। মানে, সাধারণ মুসলিম যেন মনে করে যে, “ওরে বাবা! কত বড় শাইখুল হাদিস! কি বিশাল বিশাল টার্ম!”

একটা নাম হচ্ছে মুস্তাহাব, একটা মাকরুহ, একটা মাকরুম, তাহেরিমি… আজোবাজো একটা টার্ম এরা আবিষ্কার করে ভরকে দিয়ার মত টার্মস থাকে। একটা যেকোনো মানুষ শুনলে পুরা মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। “ওরে বাবা! কত বড় আলেম! কি বলে? এগুলো—মুস্তাহাব, মাকরুহ, তাহেরিমি…” কেউ জোরে বলবে, কেউ আস্তে বলবে। আবার একজন বলছে, “কি?

মুক্তাদির পিছনে পড়লে সূরা ফাতিহা পড়লে, ইমাম হানাফী মাযহাব অনুযায়ী মাকরুহ হবে (গুনাহ হবে)। পড়াই যাবে না?” মানে, আল্লাহর রাসূল কি শিখাইলো সাহাবীদের? আর সেই সাহাবীদের কাছ থেকে উনারা কিভাবে কালেক্ট করে, কিভাবে ভাবে মাযহাব বানাইলো, মতবাদ বানাইলো? আল্লাহ মাবুদ জানে যে, সাহাবীরা কেউ পাপের কাজ করছে, আর কেউ সওয়াবের কাজ করছে।

আমিন বলা

হানাফী, মালাকি, হামলি মাযহাব অনুযায়ী, আমিন আস্তে বলবে। শাফি মাযহাব অনুযায়ী, আমিন জোরে বলবে। ইমাম ও মুক্তাদি উভয়ই। কিভাবে হলো? চারজন অবশ্য চারজন তো রাতের আধারে ইলেক্টেড। সবাই বিশাল মহাসম্মেলন হয়েছিল। সেই মহাসম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল যে, “চারজনই সঠিক।” ইমাম কিছু বলা যাবে না।

বিতির নামাজ

ইমাম আবু হানিফার মতে, বিতির নামাজ পড়া ওয়াজিব। ওয়াজিব কি জিনিস? বললাম তো, আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডারও না, রাসূলও করে নাই। কারণ, রাসূল করলে সেটার নাম হওয়ার কথা হতো সুন্নত। তাই নয় কি? আর আল্লাহর ডাইরেক্ট অর্ডার মানে কি? সেটা কোরআনে থাকতে হবে। নাই। তাহলে বিতের নামাজ পড়া এটা কি টার্মস ইউজ করছে? “ওয়াজিব”—ফরজের নিচে, সুন্নতের উপরে। ও সুন্নত ভ্যালি নেই। মালেকি, শাফি এবং হামলি মাযহাব অনুযায়ী, এই বিতের নামাজ পড়া হচ্ছে সুন্নত।

গুড। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতে আদায়: হানাফী, শাফি, মালেকি মাযহাব অনুযায়ী, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (ফরজ নামাজ) জামাতের সাথে আদায় করা সুন্নত। আর হামলি মাযহাব অনুযায়ী, হচ্ছে ওয়াজিব। বাবা! ইনি আবার ফরজেরও যায় নাই, সুন্নতও যায় নাই, উপরে উঠায় দিছে।

জুমার নামাজ

হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, ইমামের পিছনে সর্বনিম্ন তিনজন হলে জুমার নামাজ পড়া যায়। শাফি ও হামলি মাযহাব অনুযায়ী ৪০ জন। মালেকী মাযহাব অনুযায়ী ১২ জন। এই সংখ্যাটা কোথায় পেল উনারা? তো হাদিস রিসার্চ করে বানাইছে? বা সালফে সালেহীন সাহাবী-তাবেয়ী-তাবে-তাবেয়ীনদের আমল থেকে উনারা বানিয়েছে? তো তারা একেকজনের এক সিস্টেম বলল। দুঃখজনক!

নামাজের প্রতিটি আরকানের মাঝে কিছু সময় স্থির থাকা (যেমন রুকুতে গিয়ে, রুকু থেকে উঠে, দুই সেজদার মাঝখানে জলসাতে): হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ওয়াজিব। মালেকী, শাফি ও হামলি মাযহাব অনুযায়ী ফরজ। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, দুই ওয়াক্তের নামাজ একত্রে পড়া নাজায়েজ। মালেকি, শাফি ও হামলি মাযহাব অনুযায়ী, যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়া জায়েজ। এক একজন বলছে, “নাজায়েজ (গুনাহের কাজ)।”

আরেকজন বলছে, “জায়েজ (কোন গুনাহ হবে না, করতে পারো)।” এখন আমাদের তো বলতে হবে, “দুজনেই সবাই সঠিক।” ওই যে, তারা সমসংখ্যক ভোট পেয়ে ইলেক্টেড হয়েছে। বিশাল মহাসম্মেলনে, যেই সম্মেলন পৃথিবীর কোন দেশে, কত সালে, কত তারিখে হইছে, এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

মহিলাদের ইমামতি

শাফি ও হামলী মাযহাব অনুযায়ী, মহিলাদের ইমামতি অনুমোদনযোগ্য। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী মাকরুহ (মানেপাপের কাজ)। এবং মালেবী মাযহাব অনুযায়ী নাজায়েজ। নাজায়েজ আর মাকরুহও? আচ্ছা, মাকরুম হচ্ছে একটু কম কম পাপ হবে, আর নাজায়েজ মানে হচ্ছে ডাইরেক্ট নিষেধ। অথচ আমরা তো জানি যে, ডাইরেক্ট নিষেধ হলে তো সেটা তো আল্লাহ বলে দিবে। ডাইরেক্ট নিষেধ কি নিষেধ? না।

ঈদের নামাজ

ঈদের নামাজ ফরজে কিফায়া (হামলি মাযহাব অনুযায়ী)। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ওয়াজিব। মালিকি ও শাফি মাযহাব অনুযায়ী সুন্নত। একজন বলছে ফরজ, আরেকজন বলছে ওয়াজিব, আর দুজন বলছে সুন্নত। কোন দিকে যাবেন? তিনজনই চারজনই সঠিক!

এবার আসি শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু। শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়তে হবে। এবার আমরা দেখি সূরা জিনে আল্লাহ কি বলছে।

সূরা জিনের ১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: “আর নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” এই আয়াতটা আপনাদের খুব ভালো করে একটু চিন্তা করতে হবে। কারণ, আল্লাহ সূরা মোহাম্মদে বলে দিয়েছেন যে, “তোমরা এ কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করো। নাকি তোমাদের অন্তর তালাবদ্ধ হয়ে গেছে?” চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আমাদের এটা আল্লাহর অর্ডার, এটাও একটা ইবাদত (আল্লাহর অর্ডার পালন করা)।

২০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাসূলকে বলতে বলছেন: “বলো, নিশ্চয়ই আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরিক করি না।” তাহলে ১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে, মসজিদগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। কাজেই, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে ডেকো না। তো আল্লাহর মসজিদগুলোতে যাবে কে? ইহুদিরা তো আর মসজিদগুলোর মধ্যে যাবে না। খ্রিস্টানরাও যাবে না। মুশরিকরাও যাবে না। যাবে তো মুমিন মুসলিমরাই।

তো গিয়ে ওরা আল্লাহর সাথে আর কাকে ডাকবে? আল্লাহর সাথে কি এখন কৃষ্ণকে ডাকবে? রামকে ডাকবে? প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে “আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না” মানে কি? জাস্ট একটা হুশিয়ারি দিয়ে দিল যে, তোমরা ডাকো না। ঠিক আছে। কিন্তু এমন প্রজন্ম আসবে যে, তোমরা হয়তোবা তারা ডাকতে পারে। এজন্য আল্লাহ আগেই থেকে… কারণ,

আল্লাহ কোরআনে রাসূলকে বলেছেন যে, “এই কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে যাতে তুমি তোমার সামনে যারা আছে, তাদেরকে তুমি সতর্ক বাণী দিতে পারো (হুশিয়ার করতে পারো)।”

এরপর যারা এর পরে যারা আসবে, তাদেরকেও তুমি দিতে পারো। মানে, এর পরে যারা আসবে, তাদের জন্য সতর্কবাণী। এই কোরআন হচ্ছে তোমার আশেপাশে যারা আছে, তাদের জন্য সতর্কবাণী এবং এরপর যারা আসবে, তাদের জন্য সতর্কবাণী। তার মানে, এরপর যে আমরা আসবো, এই পরবর্তী নেক্সট জেনারেশনগুলো, তাদের জন্য হচ্ছে।

এই সূরা জিনের ১৮ নাম্বার আয়াত আল্লাহ তো মহাজ্ঞানী, তিনি তো অতীত‑বর্তমান‑ভবিষ্যৎ সবই জানেন। সেইম কাজটাই আমরা করছি। বলা হচ্ছে, আত্তাহিয়াতু বলা সুন্নত। মানে, আল্লাহর রাসূল বলছেন। কিভাবে বলছেন? “আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নবি (হে নবী, আপনার প্রতি সালাম)…” এখন আপনি ভাবেন তো, আল্লাহ বলেছেন যে, “আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” এখন আল্লাহর রাসূল আল্লাহর সাথে নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে বা বসে দুরুদ (মানে শেষ বৈঠকে) তিনি আল্লাহর সাথে ইব্রাহিমকে ডাকছেন, মুসা নবী, ঈসা নবী… কাউকে ডাকতে পারেন?

তিনি ডেকে বলতে পারেন যে, “হে আপনার প্রতি সালাম…” আল্লাহর সাথে আল্লাহ ছাড়া কাউকে তো ডাকা যাবে না। সূরা জিনের ১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন। আপনি আরেকজনকে ডেকে বলতেছেন। এই নবী আমরা ডাক? বলি না, এই চেয়ারম্যান সাব, এই মেম্বার সাব, “সালাম, ভালো আছেন নি?” এখানে তো আমরা তাই করছি। সেম টু সেম। “হে নবী, আপনার প্রতি সালাম…”

এখন আপনি একটু ভাবেন যে, আল্লাহর নবী কি ডাইরেক্ট এভাবে বলতো? তিনি কি শেষ বৈঠকে বসে বলতো যে, “হে নবী, আপনার প্রতি সালাম…”? তো উনি যে সালামটা দিত, কোন নবীরে দিত? কিভাবে সম্ভব এটা? আল্লাহর রাসূল যেই কাজ করছে, সেটা অবশ্যই সুন্নত। আমি ধরে নিলাম আপনাদের যুক্তি অনুযায়ী। কিন্তু আল্লাহর রাসূল কিভাবে শেষ বৈঠকে বসে বলতে পারে যে, “হে নবী, আপনার প্রতি সালাম”? তিনি কোন নবীকে সালাম দিত?

আল… সূরা জিনের ১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ ডাইরেক্ট বলে দিয়েছেন যে, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকা যাবে না। কাউকে ডেকে আপনি সালাম দিবেন? কি ডাকাই যাবে না। সালাম দিবেন তো অনেক পরে। আপনি ডাকতেছেন, সালাম দিতেছেন। শুধু সালাম না, “আসসালামু আলাইকা আইয়ুহানবী ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু (আপনার প্রতি রহমত বর্ষিত হোক)…” আপনি কি আল্লাহ? নাকি আপনি রহমত দেন, বর্ষ দেন?

এটা তো দিবে আল্লাহ। আপনি সালাম দিচ্ছেন, রহমত দিচ্ছেন, বরকত দিচ্ছেন… তাকে ডেকে। “হে নবী… হে মেম্বার সাব, হে চেয়ারম্যান সাব, আপনারে সালাম। ভালো আছেন নি? আপনার উপর রহমত, আপনার উপর বরকত…” এই ডাকতেছেন। সূরা জিনের এই ১৮ নাম্বার আয়াত ভায়োলেট করে। আল্লাহর সাথে ইব্রাহিমকে ডাকেন, মুসাকে ডাকেন, ঈসাকে ডাকেন, নবী মোহাম্মদকে ডাকেন… ডাকেন?

আপনারা… আপনারা হাদিস ঘেটে পেয়েছেন। কিন্তু হাদিস ঘেটে তো আপনাদের পাওয়ার কথা না। কারণ, আল্লাহর নবী কিভাবে সে বসে বসে কিভাবে বলবে, “আসসালামু আলাইকা…”? যুক্তিতেও মিলে না। কোরআন তো বিরোধ সাপোর্ট তো করেই না।

কোরআন তো আরো বলেছে যে, “বলো…” ২০ নাম্বার আয়াতে কি বলছে? “বলো, নিশ্চয়ই আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরিক করি না।”

আর কোন পার্টনারকে সে ডাকে না। এটা আল্লাহর রাসূলকে বলতে বলছেন। অনেক আয়াত আছে যে, আল্লাহর রাসূলকে ৩৩২ বার বলছেন। অনেকগুলো তো “বলো”, বলেন নাই? এমনি বলছেন। রাজি হলে তো এমনি তারে না বললেও তো সে বলবে। তারপরও যে সমস্ত আয়াতগুলো স্পেশাল, দেখবেন যেগুলোর আগে “কুল” আছে (“বলো”), বলছে। বুঝতে হবে যে, ওগুলার উপর আল্লাহ বেশি জোর দিয়েছেন যে, বলতে বলছেন। যে, “বলো”। খুব সেম টু সেম। ওইভাবেই আছে। বুঝতে হবে যে, এই আয়াতগুলোর মধ্যে আলাদা এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু আছে যে, এগুলোর মধ্যে সতর্ক। মানে, বেশি। যেহেতু এজন্য আবার স্পেশাল ভাবে “কুল” শব্দ আল্লাহ নিজেই সংযোজন করে দিয়েছেন। এটার মধ্যে সেই একটা যে, “বলো”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *