নামাজ ও সালাত সিরিজ পর্ব‑১

নামাজ সালাত

(59) কুরআনের আলোকে নামাজ ( পর্ব‑১/৫) — YouTube

Tran­script:

সকল প্রশংসা সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য যিনি পরম দয়ালু অসীম দয়াময়। আজ আমাদের খুতবার বিষয় সালাত। এর অনেকগুলো পর্ব করার নিয়ত করেছি কারণ এক পর্বে এর বিস্তারিত আলোচনা করা খুবই অসম্ভব একটা ব্যাপার।  সালাতের প্রকৃত অর্থ কি তার গভীর বিশ্লেষণ আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে করব। আজকের পর্বতে আমরা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবো। মানে সালাতের যে প্রচলিত অর্থগুলো দেয়া আছে সেই অর্থ অনুযায়ী আমরা আজকে দেখব যে এর মাধ্যমে কিভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মুসলিম জাতিকে শত শত বছর ধরে ধোঁকার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে, বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।

 সালাত হচ্ছে আল্লাহ প্রাপ্তির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপায় আবার এই সালাতটি হচ্ছে ধর্ম ব্যবসার সবচেয়ে বড় অস্ত্র সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এ কারণে সালাতটা আমাদের খুব ভালো করে বুঝতে হবে। সেই সাথে আমরা এর পরবর্তী পর্বগুলোতে আলোচনা করব এই সালাতের মধ্যে কিভাবে কোরআন বহির্ভূত অজস্র শিরক ঢুকানো হয়েছে। যদিও হাদিসের হুজুররা বলেন যে কোরআন হচ্ছে ওহী মাতলু আর হাদিস হচ্ছে ওহি গায়রে মাতলু। কোরআন  মাতলু ওহী সেজন্য এটা সালাতে পড়া হয় বা পড়া যায়। আমরা এর পরবর্তী পর্বগুলোতে আলোচনা করব কিভাবে গায়রে মাতলু ওহি  পর্যন্ত এই সালাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তো

আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে সূরা নিসার 43 নাম্বার আয়াত দিয়ে শুরু করি। সূরা নিসার ৪৩  আয়াতে মহান আল্লাহ খুব সহজ সরল এবং স্পষ্ট একটা ঘোষণা দিয়েছেন। সকল মানবজাতিকে নয় শুধুমাত্র যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহপাক বলছেন,                       

          “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের কাছেও যেও না যতক্ষণ না বুঝতে পারো যা তোমরা বলছো।” 

 খুব সহজ সরল স্পষ্ট পরিষ্কার একটা আয়াত। মহান আল্লাহ খুব সহজভাবে আমাদের নামাজের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন। দুই অবস্থায়ঃ- এক, নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। দুই, যতক্ষণ না আমরা বুঝতে পারি আমরা যা বলছি।

 এই দুই অবস্থায় নামাজের কাছে যেন আমরা না যাই সেই অর্ডারটাই, সেই নির্দেশটাই মহান আল্লাহ দিয়েছেন সূরা নিসার 43 নাম্বার আয়াতে। এই সহজ সরল আয়াতটাকে এর জন্ম ইতিহাস বা শানে নুজুল বানিয়ে আমাদের আলেম ওলামা নামধারীরা আল্লাহর রাসূলের সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের একজন- তার আপন চাচাতো ভাই এবং জামাতা হযরত আলীর চরিত্র কে কিভাবে কলঙ্কিত করেছে আমরা একটু দেখি। তারা  হাদিস বানিয়েছেন যে হযরত আলী একজন মদখোর নেশাখোর মাতাল ছিলেন। তিনি মদ খেয়ে নামাজ পড়তে এসে মাতলামি শুরু করেন এবং সূরা তেলাওয়াত করতে গিয়ে, এক সূরা পড়তে গিয়ে আরেক সূরা পড়ে ফেলেন। এরপরেই এই মদ হারামের আয়াত নাযিল হয়।

খেয়াল করেছেন? আসলে এই হযরত আলীকে নিয়ে এই ধর্মবিদরা এই হাদিস বেত্তারা নিজেরাই কনফিউশনে আছে, বিভ্রান্তিতে আছে। তারা একবার হযরত আলীকে এত উপরে উঠায় যে আল্লাহর রাসূল পর্যন্ত বানিয়ে ফেলে। বলে জীবরাইল ভুল করে কুরআন নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর কাছে নিয়ে এসেছে, আসলে আনার কথা ছিলো হযরত আলীর কাছে। আবার তাকে এমন ভাবে অপমান অপদস্থ করে যে মনে হয় যে তার মত নিকৃষ্ট মদখোর মাতাল নেশাখোর গাঁজাখোর এই পৃথিবীর বুকে আর নাই। তাকে উপরে উঠায় সেটাও এই হাদিস। এসব হাদীস তারাই বানায় সম্ভবত যারা শিয়াপন্থী তারা এই হাদিসগুলো রচনা করেছে।

 সূরা মায়েদার 55 নাম্বার আয়াত। এখানে কি বলা হচ্ছে ইন্নামা-ওয়ালিইইয়ুকুমুল্লা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের অলি হচ্ছে আল্লাহু।হুওয়ারাছূলুহূওয়াল্লাযীনা আ‑মানূল্লাযীনা ইউকীমূনাসসালাতা ওয়া ইউ’তূনাঝঝাকা-তা ওয়া হুম রা-কি‘ঊন। “কুরআনের রুকু যে

নামাজের রুকু নয়” সেই ভিডিওতে এই আয়াতটা নিয়ে খুব দীর্ঘ আলোচনা করেছি সেই ভিডিওটা দেখলে আপনি বুঝবেন আমরা পবিত্র কোরআনের রুকু বলতে যে প্রচলিত নামাজের যে রুকু করি- কুজো হয়ে গরু ছাগলের মতো ঝুকে থাকি সেটা বোঝানো হয়নি। সেখানে এই আয়াতটাই প্রমাণক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই আয়াতটার বাংলা অর্থ দেখুন আপনি। বয়ান ফাউন্ডেশনে বলা আছে যে “তোমাদের বন্ধু (তোমাদের ওলি) হচ্ছে কেবল আল্লাহ, তার রাসূল ও মুমিনগণ। যারা সালাত কায়েম করে যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে।”

 ফজলুর রহমান অনুবাদ করেছেন “বস্তুত তোমাদের বন্ধু হলো আল্লাহ তার রাসূল আর বিশ্বাসীগণ যারা বিনয় অবনত হয়ে নামাজ সুসম্পন্ন করে ও যাকাত দেয়।ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুবাদ করেছে “তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ‑যারা বিনত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়।” মাওলানা মহিউদ্দিন খান অনুবাদ করেছে “তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ‑যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র। আবু বকর জাকারিয়া অনুবাদ করেছে “তোমাদের বন্ধু [১] তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল [২] ও মুমিনগণ –যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং তারা বিনীত।”

 তো এখানে পরিষ্কার যে এই আয়াতে তারা রুকুর প্রকৃত অর্থটা করেছেন। সেটা হচ্ছে রুকুর প্রকৃত অর্থ বিনয়ী হওয়া বিনম্র হওয়া। তাহলে যে সমস্ত মুমিনরা সবসময় বিনীত থাকে বিনম্র থাকে ভদ্র থাকে নম্র থাকে। এবং কি করে? সালাত কায়েম করে আর যাকাত দেয়? তাদেরকে এই আয়াতে বন্ধু বলা হয়েছে। কিন্তু আপনি যদি শিয়া মাযহাবে যান তখন দেখবেন যে এই আয়াতটার তারা জন্ম ইতিহাস বা শানে নুজুল বানিয়েছে।  হযরত আলী একদিন রুকু করা অবস্থায় ছিলেন তখন একজন ভিক্ষুক আসে মসজিদে। তখন অনেকেই তাকে ভিক্ষা দেয়নি ।  হযরত আলী সেই রুকু করা অবস্থাতেই তাকে

ইশারা ইঙ্গিতে ডাক দিয়ে তাকে ভিক্ষা দেয়। এ কারণে বলা হয়েছিল যে যারা রুকু করা অবস্থায় যাকাত দেয়। এভাবে বিকৃত অর্থ করে হযরত আলীকে এই আয়াতের মাধ্যমে  মাওলা আলি বানানো হয়েছে। আহলে বায়াত নিয়ে একটা বিস্তারিত ভিডিও করার পরিকল্পনা আছে। যে যে কথা বলা হয়, তাদেরকে যেভাবে আল্লাহ এবং রাসূলের উপরে উঠানো হয় আবার একেবারে নিকৃষ্ট বানানো হয়। দুটোই যে কতটা ভ্রান্ত মতবাদ তা প্রমাণ করা। একদিকে এক দল আছে তাদেরকে খুবই ছোট করে আরেক গ্রুপ আছে তাদেরকে এত উপরে নিয়ে যায় যে আল্লাহর রাসূলের উপরে নিয়ে যায়। দুটোই আমাদের জন্য

যে কতটা ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেই বিষয়গুলো আমি আহলে বাইতের ভিডিওতে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

 যাই হোক এই আয়াতে আমরা দেখলাম যে তাকে খুব উপরে উঠানো হয়েছে যে তিনি রুকু করা অবস্থায় যেহেতু যাকাত দিয়েছেন সেহেতু তাকেই মাওলা বলতে হবে অলি বলতে হবে। এই আয়াত থেকেই কিন্তু তারা তাদের কালেমা বানিয়েছে।“ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ আলী ওলিউল্লাহ”- এই যে আলী ওলি উল্লাহ। এই আয়াতই হচ্ছে তার প্রমাণ। এই আয়াতকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় অথচ আপনি দেখবেন যে এখানে কিন্তু সিঙ্গুলার নাম্বারে নাই এক বচনে নাই।। এখানে বলা হয়েছে যারা সালাত কায়েম করে। “যারা” বলা হয়েছে “যে” বা যিনি বলা হয়নি। আবার মুমিন বলা হয়নি বলা হয়েছে মুমিনগণ। আবার দেখা যায় এই হাদিস বেত্তারাই হযরত আলীকে নিয়ে এমন ঘটনা বলেছেন যা এই ঘটনার পুরোপুরি বিপরীত। ঘটনাটি হচ্ছে  “তিনি একদিন নামাজ পড়ছিলেন। তার পায়ে তীর বিঁধে যায়। তীর বেঁধে যাওয়ায় প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল তার। কিছুতেই তা খুলতে পারছিলেন না। যখন তিনি নামাজে দাঁড়ান তখনই তার পা থেকে তীর খুলে ফেলা হয়। তিনি একটু টেরও পাননি।

 ভাবুন একবার যে মানুষের পা থেকে তীর খুলে ফেলা হয় বিদ্ধ তীরের ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা ও কষ্ট তিনি ভোগ করছিলেন অথচ তিনি একটু টেরও পাননি। সেই মানুষ কিভাবে কে ভিক্ষা চাইছে সেটার দিকে খেয়াল

করবেন নামাজের মধ্যে? তাকে যাকাত দিচ্ছেন রুকু করা অবস্থায়। ঈশারা ঈঙ্গিতে কাছে ডেকে? এটা খুবই পরস্পর বিরোধী একটা হাদিস হয়ে গেল না?

 যাই হোক আমরা সূরা নিসার 43 নাম্বার আয়াতে ফিরে যাই। এই আয়াতে হযরত আলীকে একজন মাতাল মদখোর নেশাখোর বানানো হয়েছে। যারা এভাবে মুমিনদেরকে কলঙ্কিত করে, আল্লাহর রাসূলকে কলঙ্কিত করে, বহু হাদিস তারা বানিয়েছে আল্লাহর রাসূলের চরিত্রকেও এভাবে কালিমা লিপ্ত করা হয়েছে সেসব হাদিসে, তাদের বিচার নিশ্চয়ই আল্লাহ হাশরের মাঠে করবেন।

 তো এই আয়াতে মহান আল্লাহর স্পষ্ট দুটো নির্দেশ। (১) যে নামাজের ধারে কাছেও তোমরা যাবে না। (২)  যতক্ষণ না বুঝতে পারো যা বলছো।

 এই আয়াতে আল্লাহর মূল নির্দেশ গোপন করে তারা এই আয়াতের জন্ম ইতিহাস বানিয়ে হযরত আলীকে মদখোর মাতাল নেশাখোর বানিয়েছে। 

কোরআনের যে মূল অর্থ আল্লাহর যে নির্দেশটা ছিল যে আধ্যাত্মিক দর্শনটা ছিল সেই দর্শনের সাথে এই জন্ম ইতিহাস বা শানে নাযিলের কোনই মিল নেই। যাই হোক না কেন, যে কারণেই মহান আল্লাহ এই আয়াতটা নাযিল করেছেন সে কারণ যেহেতু আমাদেরকে জানাননি সুতরাং এই আয়াতের স্পষ্ট ও মৌলিক নির্দেশ কি সেটা আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করি। এখানে বলা হচ্ছে যে নামাজে যা বলা হবে নামাজে যাওয়ার পূর্বেই আমাদের জানতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে। আমি কি বলবো অর্থাৎ আমি আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে তার সামনে যে শপথ পড়বো তা জেনে বুঝে স্বীকার করে এবং তা আমার জীবনে আমি বাস্তবায়ন করব সেটা বলবৎ রাখার অঙ্গীকার করে সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে স্ব‑ইচ্ছায় এবং স্বেচ্ছায় আমাকে বলতে হবে। এটাই হচ্ছে এই আয়াতে মহান আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ। একজন নেশাখোর একজন মদখোর একজন মাতাল কি বলে আর কি করে তা নিজেই জানে না। নেশা কেটে গেলে তার কিছু মনেও থাকে না। এ কারণেই নেশাখোরের উদাহরণটা দেয়া হয়েছে মাত্র। নামাজে আমরা আল্লাহর কাছে কি চাইলাম কি অঙ্গীকার করলাম তার কিছুই যদি না জানি কিছুই যদি না বুঝি তাহলে সেটা আর কায়েম করার, আকিম করার, প্রতিষ্ঠা করার প্রশ্নই ওঠে না। এটা একটা টু ক্লাসে পড়া বাচ্চাও খুব সহজেই বুঝতে পারে। একজন নেশাখোর একজন মাতাল কি বলে আর

কি করে তা নিজেই জানে না নেশা কেটে গেলে তার কিছু মনেও থাকে না এ কারণেই নেশাখোরের উদাহরণটা দেয়া হয়েছে মাত্র। নামাজে আল্লাহর কাছে কি চাইলাম কি অঙ্গীকার করলাম কি প্রতিশ্রুতি করলাম তার কিছুই জানিনা বুঝিনা অতএব তা আকিম করার কিয়াম করার প্রতিষ্ঠা করার প্রশ্নই ওঠে না অর্থাৎ মাতাল নেশাখোরের মতোই জিনিসটা ঘটে যায়।

 নামাজ ফার্সি একটা শব্দ। আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য খুব দুঃখজনক এবং খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে পবিত্র কুরআনের বেছে বেছে যেই শব্দগুলোর অর্থ করা দরকার ছিল অনারব ভাষায় সেটা বাংলাতে হোক ইংরেজিতে হোক ফার্সিতে হোক হিন্দিতে হোক উর্দুতে হোক সেই অর্থগুলো করা হয়নি। সেই অর্থগুলোকে ঢেকে রাখা হয়েছে গোপন করা হয়েছে এবং যেই শব্দের অর্থগুলো করলে আমরা আরো বিভ্রান্ত হয়ে যাব সেখানে অর্থগুলো সুকৌশলে করা হয়েছে।

 যেমন রুকু- রুকু শব্দের অর্থ কোন ভাষার অনুবাদেই দেয়া হয়নি। রুকু শব্দের অর্থ কি? সিজদা শব্দের অর্থ কি? যাকাত শব্দের অর্থ কি? হজ্ব শব্দের অর্থ কি? এসব শব্দের অনুবাদ বা অর্থ করা হয় নি।  অর্থ করা  হয়েছে কোনগুলোর? যেমন হাদিস শব্দের। হাদীসের অর্থ দেয়া হয়েছে বাণী। পবিত্র কোরআনে দুই প্রকার হাদিসের কথা শুধু মহান আল্লাহ বলেছেন। একটা হচ্ছে আহসান আল হাদিস যা  পবিত্র কুরআনকেই আল্লাহ বুঝিয়েছেন সুরা জুমারের ৩৯ আয়াতে। আরেকটা হচ্ছে লাহু আল হাদিস। কুরআন বাদে অন্য সকল বাণী।  এই হাদিসের অর্থটা যদি করা না হতো তাহলে যেকোনো সাধারণ মুসলিমই বুঝতে পারতো যে আল্লাহ কোরআনে এই হাদিস শব্দটা দুই অর্থে ব্যবহার করেছেন। একটা আল্লাহর বাণী অর্থে আরেকটা আল্লাহর বাণী বাদে মানব রচিত যত কিছু আছে সেগুলো। অর্থ্যাৎলাহু আল হাদিস।

 কিন্তু খুব কুটকৌশল করে খুব চালাকি করে খুব সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করে এই হাদিসের প্রত্যেক জায়গায় দেখবেন যে কোথাও হাদিসের সরাসরি অর্থ অপরিবর্তিত রাখা হয়নি। সবখানেই এর অর্থ বাণী দিয়ে বিকৃত করে আমাদের ফোকাসটাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আহসান আল হাদিস আর লাহু আল হাদিসের এই দুটো হচ্ছে কুরআন অনুযায়ী হাদীসের মৌলিক পার্থক্য।

 ঠিক একইভাবে আরো একটা শব্দ নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে।তা হচ্ছে সুন্নাত।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুন্নত শব্দটা ব্যবহার করেছেন তার নিজের জন্য।সুরা আহযাবের ৬২ সুরা ফাতহের ২৩ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে আমার সুন্নতের কোন পরিবর্তন নাই। সুন্নত শব্দের অর্থ কি? আইন বা বিধান। কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে সুন্নি বানিয়ে ফেলেছি। মানে আল্লাহ যে শব্দটা নিজের জন্য প্রয়োগ করেছেন সেটাকে আমরা নিজের নিজেদের জন্য ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছি। তাও কতটা হাস্যকর যে চিন্তা করুন আরবি কোন শব্দের সাথে ই যুক্ত করলে অর্থ্যাৎ “ই” প্রত্যয় যুক্ত করলে সেটা আমার ক্ষেত্রে বিবেচ্য হয়ে যায়। যেমন রব মানে প্রতিপালক। রাব্বি মানে আমার প্রতিপালক। আমরা প্রায়ই বলি রাব্বি জিদনি

এলমা। রব্বি অর্থ কি? আমার রব। ঠিক তেমনি সুন্নি মানে কি? আমার সুন্নত? তাহলে এই পৃথিবীতে আমরা যারা সুন্নি আছি এর অর্থটা আসলে কি দাঁড়ায়? আমার সুন্নত আমার সুন্নত? আপনি কি? আপনি কি শিয়া না সুন্নি? না ভাই আমি শিয়া না আমি সুন্নি! মানে কি? এর অর্থ হচ্ছে আমি আমার সুন্নত? কি হাস্যকর একটা ব্যাপার। সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মুসলিম বলছে-  আমি হচ্ছি আমার সুন্নত। ব্যাকরণ এর মারপ্যাঁচ দিলেও সেটা সুন্নিয়্যু হয়, সুন্নি নয়। সুন্নত কি কখনো আমার সুন্নত হয়? তারা বলে নবীর সুন্নত। এটা আরো বেশি হাস্যকর ও কুরআনের সাথে প্রচন্ডরকম সাংঘর্ষিক।সুরা আহজাবের ৬২,  সুরা ফাতহের ২৩ আয়াত অনুযায়ী  সুন্নত হবে আল্লাহর। এজন্যই কুটকৌশল অবলম্বন করে কুরআনের আয়াতে উল্লেখিত সুন্নত এর অনুবাদ বিধান লিখে প্রকৃত রহস্য আড়াল করে  তাফসীর তরজমা ব্যাখ্যা এমন ভাবে করেছে যাতে

মানুষের ফোকাসটা অন্য দিকে ঘুরে যায়। কুরআনে আল্লাহ  নিজের জন্য যে এই সুন্নত শব্দটা করেছেন সেটা যেন মানুষের ব্রেনে আর না ঢোকে মানুষ যাতে বুঝতে না পারে সে কারনে এর অর্থ জালিয়াতি করেছে।আর যেখানে সরাসরি ধরা পড়ে যাবে সেখানে আরবি শব্দটির অর্থই করা হয়নি। অর্থ করা হয়নি কোথায়? অর্থ করা হয়নি রুকুর ক্ষেত্রে। অর্থ করা হয়নি সিজদার ক্ষেত্রে। অর্থ করা হয়নি যাকাতের ক্ষেত্রে।অর্থ করা হয়নি হজ্বের ক্ষেত্রে।

 এ কারণেই আমরা সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গিয়েছি।তারা সালাতের অর্থগত অনুবাদ করেছে। কি অর্থ করেছে?নামাজ।এটা কি বাংলা শব্দ? না মোটেও বাংলা শব্দ নয়। নামাজ হচ্ছে  ফার্সি শব্দ।

  ইংরেজিতে এর অর্থগত অনুবাদ করা হয় প্রেয়ার যার বাংলা প্রার্থনা।  হাদিস বেত্তাদের মাধ্যমে আমরা এটাও জানি যে যত দোয়া করা হয়  আল্লাহর কাছে করা হয় তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়াই হচ্ছে নামাজ বা প্রার্থনা। কিন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে দোয়া নিজেই একটা আরবি শব্দ। যার অর্থ Call বা ডাক। আল্লাহ কুরআনে সালাত ও দোয়া শন্দটি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেছেন তবে কখনোই সমার্থক অর্থে নয়।

 সে বিষয় অন্য পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাই হোক — ইংরেজিতে যদি একে আমরা প্রেয়ার বলি বাংলায় যদি আমরা একে প্রার্থনা বলি সংস্কৃতিতে একে বলা হয় উপাসনা বা পূজা। ইংরেজগণ বলেন ডু প্রেয়ার।  হিন্দুরা বলে পূজা করি আর আমরা বলি নামাজ পড়ি। যদিও পবিত্র কোরআনে আপনি কোথাও একরাস সালাত পাবেন না বা ইকরা সালাত পাবেন না। আপনি সবখানে পাবেন আকিমুস সালাত। এবং হাদীসবিদ দের কথা অনুযায়ী কোরআনের প্রথম আয়াত যেটা নাযিল হয়েছে সেটা ছিল ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক। পড়ো তোমার প্রভুর নামে। তার মানে আল্লাহ ইকরা শব্দটার অর্থ জানেন। আল্লাহ নামাজ পড়া অর্থ যদি বোঝাতেন তাহলে ইকরা সালাতই বলতেন। কিন্তু মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে কোথাও

ইকরা সালাত বলেননি। বলেছেন আকিমুস সালাত। যেখানে প্রতিষ্ঠা করতে বলেছেন।Established করতে বলেছে। আমরা ঘর বাড়ি দালান কোঠা প্রতিষ্ঠা করি। লেখা থাকে Estab­lished in 1971। 

 তারপরও আমরা সেই হাদিস বেত্তাদের অর্থটাই ধরে নেই। ভাবি যে তারাই সত্য বলছেন। আমরা কি বলি? আমরা বলি নামাজ পড়ি। পবিত্র কোরআনে কোথাও আপনি এই ইকরা সালাত পাবেন না আপনি পাবেন আকিমুস সালাত যার অর্থ হচ্ছে এই যে প্রার্থনা এর উপরে আকিম থাকা প্রতিষ্ঠিত থাকা অর্থাৎ আমি আমার সেই প্রার্থনায় আমি যা বলবো যা চাইবো ঠিক সেই লক্ষ্যেই আমার প্রতিদিনের জীবন পরিচালনা করবো। আমার জীবনে সেই কথাগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, সেই জিনিস প্রতিষ্ঠা করার  সাধনায় রত থাকতে হবে।

 পৃথিবীর যেকোনো বিদেশী ভাষা বা শব্দের অর্থ সঠিক ও সার্বজনীন ভাবে জানা বোঝা থাকলে হাজার হাজার বিদেশী শব্দ আসুক বা যাক তাতে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু জানা নেই বোঝা নেই বলেই আমরা বলছি নামাজ পড়ি।

 মানুষ কেন পড়ে? আপনি কি নিজেকে কখনো প্রশ্ন করে দেখেছেন? মানুষ পড়ে  শেখার জন্য। শেখা হয়ে গেলে তার আর পড়ার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় কিসের? সেটা প্রতিষ্ঠা করার। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন একজন ডাক্তারি পড়ে অথবা একজন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। হয়তো তার সেই কোর্সটা তিন বছর বা চার বছর বা পাঁচ বছরের। তাহলে সে চার বা পাঁচ বছর ডাক্তারি পড়বে। সে কি সারাজীবন ডাক্তারি পড়তেই থাকবে? মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে? নাকি সে চার বা পাঁচ বছর পড়বে, শিখবে। শেখা হয়ে গেলে

তারপর  বাকি জীবন সে এই লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করবে। 

সুতরাং আমরা বুঝলাম যে মানুষ মানুষ পড়ে শেখার জন্য। শেখা হয়ে গেলে পড়ার আর প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় যা পড়েছে সেই লব্ধ জ্ঞান বাস্তবায়ন করার, প্রতিষ্ঠা করার। এজন্য একেবারে গন্ড মূর্খগণও কখনো বলে না যে প্রার্থনা পড়ি। গোসল পড়ি বা পায়খানা প্রসাব পড়ি। তাছাড়া মহান আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে তার কাছে যে প্রার্থনা করি সেই প্রার্থনার সাথে দৈনন্দিন কাজকর্মের মিল সমর্থন সহযোগিতা না থাকলে সেই প্রার্থনা গৃহীত হওয়ার বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তাও থাকে না।

 যেমন আপনি যদি আপনার এলাকার চেয়ারম্যান বা এমপি

সাহেবের কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করেন কোন কিছু চান যেমন ধরুন আপনি তার কাছে গিয়ে বললেন “চেয়ারম্যান সাহেব বা এমপি সাহেব আমার একটা টিউব অয়েল দরকার। আমি আপনার দলের নীতি আদর্শ সব মেনে চলি। আমি আপনার খুবই বাধ্যগত  অনুগত  একজন কর্মী এবং আপনি আমার প্রিয় অভিভাবক। কিন্তু সেই এমপি সাহেব পরে খোঁজ নিয়ে জানলেন যে আপনি আসলে বিরোধী দলের লোক এবং বিরোধী দলের মিছিল মিটিং এ আপনি সব সময় মেধা ও শ্রম ব্যয় করেন এবং এমপি সাহেবের দলের কোন নীতি আদর্শ কিছুই আপনি আপনার প্রাক্টিক্যাল লাইফে প্রতিদিনকার জীবনে  বাস্তবায়ন করেন না। এই কথা যদি এমপি সাহেব জানতে পারেন কখনো কি আপনি যত হাজার বারই তার

কাছে বা তার বাড়ি গিয়ে ধরণা ধরেন যতই তার কাছে কাকুতি মিনতি প্রার্থনা করেন আপনার সেই প্রার্থনাকে তিনি কবুল করবেন?কক্ষনো করবেন না।

 ঠিক একইভাবে আল্লাহ আপনাকে যেই নির্দেশ দিয়েছেন আদেশ দিয়েছেন সেগুলো যদি আপনি আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করেন আপনি  দিনের মধ্যে পাঁচ বার 10 বার কেন 50 ওয়াক্ত বা 50 বারও যদি আপনি তার কাছে প্রার্থনা করেন কাকুতি মিনতি করেন আপনার সেই প্রার্থনা সেই দোয়া সেই আরজি কি কোনদিনও কবুল হবে আল্লাহর কাছে? 

 এমপি সাহেবের কাছে যাওয়া  বিরোধী দলের সেই কর্মীর মতো আপনি হাজার কোটি প্রতি মাসের ৩০ দিনের মধ্যে ১০ হাজার বার বা ১০ হাজার ওয়াক্তও সেই প্রার্থনা বা কাকুতি মিনতি

করেন তার ১%ও গৃহীত হবে? হবে না। কক্ষনো হবেনা। এই সহজ বিষয় টা একটা ছয় বছরের বাচ্চাও বুঝতে পারে।

 আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি ধরুন আপনি কোন জজ বা বিচারকের কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করলেন বা ক্ষমা চাইলেন কোন অন্যায়- অপরাধ করে। সেই জজ বা বিচারক আপনাকে ক্ষমা করতে পারেন বটে কিন্তু আপনি যেই বিচারকের কাছে প্রার্থনা করলেন সেই জজের কাছে কাকুতি মিনতি করে যা বললেন তার বিষয়বস্তু যে আসলে কি? কি কি বললেন তা তো আপনাকে অন্তত ঠিকঠাক বলতে হবে নাকি?  এবং বিচারকও আপনার উপর যে যে শর্ত দিয়েছে তাও নিখুত ভাবে আপনার বুঝতেও হবে। জজ সাহেব সেই নীতি আদর্শ রুলস রেগুলেশন

অনুযায়ী আপনার সেই চাওয়া বা কাকুতি মিনতি বা প্রার্থনা মঞ্জুর করতে পারেন।

 এখন আমরা প্রার্থনা বা নামাজে কি চাইলাম কি ওয়াদা করলাম কি বললাম হৃদয়ের চাওয়াগুলো ঠিক ঠিক আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে বর্ণনা করতে পারলাম কিনা যে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলাম তাতে আমার অভাব অভিযোগগুলি লিখিত আছে কিনা? তারপর  কি কি শর্তের অধীনে আমাকে চলতে হবে সেই বিধিনিষেধগুলো আমি বুঝতে পারলাম কিনা তার বিন্দু বিসর্গও যদি আমার জানা না থাকে, বোঝা না থাকে তাহলে তা আমার পক্ষে আকিম করা বা প্রতিষ্ঠা করা বা সেই ওয়াদার উপর অটল অবিচল থাকা ১ লক্ষ বছর নামাজ বা প্রার্থনা করলেও প্রতিদিন ৫০ ওয়াক্ত করে নামাজ বা প্রার্থনা করলেও  কোনদিনই সম্ভব হবেনা। সেই ব্যক্তি মনের অজান্তে আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে তার কাছে বারবার প্রার্থনা করবে বারবার ক্ষমা চাইবে বারবার ওয়াদা করবে আর  বারবার ওয়াদা ভঙ্গ করবে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। অর্থাৎ নেশাখোরের মতোই মাতালের মতোই সে এই নামাজ বা প্রার্থনা দিনের পর দিন করতেই থাকবে। 

 আর এ কারণেই আমরা বাস্তবে দেখি যে নামাজের শেষে বা হজের শেষে ব্যক্তি আগে যেমন অপকর্ম অন্যায় অত্যাচার জুলুম বা  পাপ অর্থাৎ অতীতে যা যা করতো তা তা করতেই থাকে। তার অন্যায় অবিচার থেকে, অশ্লীল কাজ থেকে, পাপ থেকে, জুলুম থেকে এই নামাজ বা এই প্রার্থনা তাকে এক ইঞ্চিও সরাতে পারে না।

 সমগ্র মুসলিম বিশ্বের অধঃপতনের এটাই হচ্ছে মূল কারণ এটাই হচ্ছে প্রধান ও মৌলিক কারণ। অতএব সে যতই নামাজ পড়ে মনের অজান্তে ততই তার পাপ বৃদ্ধি করে ততই সে মুনাফেকের দলভুক্ত হয় আর এদের সম্পর্কেই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন পাতায় পাতায়। সূরা নিসার ১৩৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন “যারা ঈমান আনে অতঃপর কুফরি করে আবার ঈমান আনে আবার কুফরি করে অতঃপর তাদের কুফরি এরূপ বাড়তেই থাকে আল্লাহ তাদের কিছুতেই ক্ষমা করবেন না হেদায়েতও করবেন না।”

 সূরা বাকারার ২৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন যারা আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করে প্রতিশ্রুতি করে এবং ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি

করার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন তা ভঙ্গ করে এবং দুনিয়ার বুকে অশান্তি ও গোলযোগ সৃষ্টি করে বেড়ায় তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।”

 নামাজে যা বলা হয় তা আপন ভাষায় বুঝতে না পারলে হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি আবেগ আগ্রহ একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার উদয় কখনোই হয় না এবং তা মানাও যায় না। আর এর ফলে বিনয়ী নম্র বা রুকুকারী আদর্শ মুসলিম হওয়া কোনদিনই সম্ভব হয় না। আর এর পরিণতি কি দাঁড়ায়? সূরা মাউনের এক থেকে সাত নাম্বার আয়াতে আল্লাহ সেটা বলে দিয়েছেন। তুমি কি তাকে দেখেছো যে ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করে এবং অভাবগ্রস্থ দরিদ্রদের সাহায্য সহযোগিতা করে না। সুতরাং

ধ্বংস হবে সেই সমস্ত নামাজীগণ যারা নিজেদের নামাজ সম্পর্কে বেখেয়াল বা অজ্ঞ। তারা লোক দেখানো নামাজ করে, তারা পাড়া প্রতিবেশীদের সাহায্য সহযোগিতা করে না।

 এই সূরাটা পড়লে এর বিষয়বস্তু বুঝলে আপনি বুঝতে পারছেন যে কি ভয়াবহ ধোঁকা ও প্রতারণার মধ্যে আমরা পুরো মুসলিম জাতি ডুবে আছি এবং মহান আল্লাহ কত কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন  “ধ্বংস ওই সমস্ত নামাজীগণ যারা তাদের নামাজে বা তাদের প্রার্থনায় বেখেয়াল। আমরা তো সবাই বেখেয়াল সেই মদখোর নেশাখোর মাতালের মত। নামাজে দাঁড়িয়েই আমরা শপথ  করি। আমি নিশ্চয়ই একনিষ্ঠভাবে তার দিকে

মুখ ফিরালাম। কার দিকে মুখ ফিরালেন? আল্লাহর দিকে তাই নয় কি? তাকে হাজির নাজির জানলেন। মুখ ফিরিয়ে তাকে হাজির নাজির জেনে কি বলছেন আর কি করছেন? যিনি দৃশ্য অদৃশ্যের সৃষ্টিকর্তা এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই। অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই। 

সূরা আনআমের ৭৯  আয়াতে এই যে শপথনামা এটা যদি আপনি বুঝতে না পারেন তাহলে আপনি কখনো মানতে পারবেন?শত চেষ্টা করেও? হাজার রাকাত নামাজ পড়লেও এটা কোনদিনও আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না।কুরআনের  বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত আছে আল্লাহর ঠিকানা আর এগুলো যদি জানা বোঝা না থাকে কিভাবে তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে কখন করতে হবে কোন

পদ্ধতিতে করতে হবে কি কি পাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে কি কি নেক আমল করতে হবে তা পবিত্র কোরআনের পাতায় পাতায় আল্লাহ বর্ণনা করে দিয়েছেন। তাহলে আপনি তার দিকে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে মুখ ফিরিয়ে কি করছেন? তার সাথে মশকরা করছেন? তার দিকে যে আপনি মুখ ফেরাচ্ছেন যে আল্লাহ আমি তোমার দিকে মুখ ফেরালাম কিন্তু বাস্তবে যেহেতু আপনি কিছুই বুঝতে পারছেন না এজন্যই নামাজে দাঁড়ালে আপনার স্ত্রী পুত্র পরিবার চাকরি বাকরি ধন-সম্পদ নারী গাড়ি বাড়ি ইত্যাদির দিকে মন বহু কেবলার দিকে চলে যায়। আল্লাহর দিকে রজ্জু হয়েছি কেবলামুখী হয়েছি শত শত হাজার হাজার বার বললেও সেদিকে মন কিছুতেই রজ্জু হয় না। আল্লাহ যে কোথায় আছে তাই তো আপনার জানা নেই। অতএব সেদিকে মুখ ফেরানোর প্রশ্নই ওঠে না। আপনি মুখ ফিরাচ্ছেন ইমাম সাহেবের দিকে অথবা ঘরের দিকে ওই ঘরে কি আল্লাহ থাকে? কখনো কি তা ভেবেছেন কোরআন খুলে কখনো দেখেছেন যে ওই ঘরে আল্লাহ থাকে কিনা? কোরআনে কি লেখা আছে সেটা কখনো  দেখেননি। আল্লাহ কোথায়? তার ঠিকানা কি? তার পরিচয় কি? কিভাবে মুখ ফেরানো যায়? মুখ ফেরানোর মূল অর্থ কি? গভীরতা কি তার বিস্তারিত বিবরণ পবিত্র কোরআনের পাতায় পাতায় আল্লাহ দিয়েছেন! তা পড়ে জেনে বুঝে গবেষণা করে বারবার অনুশীলন করে তার সেই নিশানা আবিষ্কার করে তার দিকে স্বচ্ছ আয়নার মত একনিষ্ঠ হয়ে সকল নামাজ সকল ইবাদত করতে হয়। নামাজের উদ্দেশ্য লক্ষ্য সার্থক করে তখন অভাবহীন ও পুত পবিত্র মানে যাকাত হওয়া যায় তখন পরিশুদ্ধ হওয়া যায় বা যাকাত হওয়া যায়। প্রতি নামাজে কি পড়া হয়? সূরা ফাতেহা। এই সূরার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহর গুণগান করা হয় আবার তার আনুগত্য করা হয় আবার আল্লাহর কাছেই আবেদন নিবেদনও করা হয়। একই সূরায় আল্লাহর গুণগান আল্লাহর আনুগত্য এবং তার কাছে আবেদন নিবেদন দরখাস্ত। এতে যেকোনো মানুষের সারাজীবনের চাওয়া-পাওয়ার আবেদন‑নিবেদন লুকিয়ে আছে। এই সূরাটার মধ্যেই। এই সূরা ফাতিহা অর্থ বুঝে এর প্রতিটি

লাইনের অর্থ বুঝে মনের গভীরতা থেকে আকুতি মিনতি বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আপন প্রয়োজন আপন ভাষায় অর্থাৎ  নিজ প্রয়োজন নিজ ভাষায় হৃদয় নিংড়ানো সকল প্রেরণা সকল আবেগ অনুভূতি ঢেলে দিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর  আকুতি ও মিনতি করা যায়। একনিষ্ঠ হওয়া যায়। আত্মসমর্পণের বা মুসলমানিত্বের এইতো সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পথ। অজানা অচেনা ভাষায় যা মোটেই সম্ভব নয়। আল্লাহ আরবি ভাষা চায় না। চায় আরবি ভাষায় লিখিত সংবিধান আমরা সবাই নিজ ভাষায় বুঝি এবং ঠিক ঠিক সেই বিধি-বিধানগুলো পালন করি। অন্যদিকে আমরা না জেনে না বুঝে যে সকল আয়াত তেলাওয়াত করি

তার মধ্যে অনেক আয়াত আছে যা কতটা ভয়ঙ্কর কুফরি এবং এর যে কি অ্যাকশন এবং রিয়াকশন অর্থাৎ  ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আছে তা জানলে আপনি তাজ্জব হয়ে যাবেন।  কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি:- আমরা অনেকেই নামাজে সূরা ইখলাস পড়ি কুলহু আল্লাহু আহাদ “বলো আল্লাহ এক! সারা পৃথিবীর সকল ইমামগণই বলছেন দাঁড়িয়ে আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে আল্লাহকে সামনে রেখে আল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহকে বলছেন ‑বলো আল্লাহ এক! মুসল্লিরাও ওই  একই সুরে বলছে বলো আল্লাহ এক! আল্লাহকে সে বলছে বলো আল্লাহ এক! কি দুর্ভাগ্য এ জাতির? কি ধৃষ্টতা কি দুঃসাহস? আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহকেই বলতে

বলছে বলো আল্লাহ এক। ধরুন আপনি কোন এজলাসে আছেন কোন জজ সাহেব বা কোন বিচারক আপনাকে বলছেন স্বীকার করো আমি বিচারক। আসামি যদি সঙ্গে সঙ্গে বলে স্বীকার করো আমি বিচারক। তোমাকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হলো। আসামি যদি সঙ্গে সঙ্গে  বলে তোমাকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হলো। প্রশ্ন বা আদেশের উত্তর পাল্টা প্রশ্ন বা পাল্টা আদেশ চরম বর্বরতা ধৃষ্টতা চরম বেয়াদবি এবং কুফরি। আল্লাহর সাথেও আমরা এইভাবে চরম বর্বরতা চরম ধৃষ্টতা চরম বেয়াদবি এবং চরম কুফরি করছি তার দিকে দাঁড়িয়ে তার দিকে মুখ করে তাকে হাজির নাজির জেনে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলছি বলো আল্লাহ এক। আল্লাহকে বলতে বলছি  কি

দুর্ভাগ্য আমরা কি হতভাগা মুসলিম আমরা। কতটা বর্বর কতটা বেয়াদব কতটা বেয়াকুব জাতি আমরা। নামাজে আমরা অনেকে সূরা কাউসার পড়ি।ইন্না আ তাইনা কাল কাউসার “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি! অতএব তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো কুরবানি করো! আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে বলছি! কি বলছি? নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি! আমরা কি আল্লাহকে কাউসার দান করেছি? আমরা আল্লাহকে বলছি অতএব তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো কুরবানি করো? কি ধৃষ্টতা আপনি কল্পনা করতে পারছেন? একবার যদি কোরআনটা বুঝে বুঝে একটু পড়তেন এত বড় ধৃষ্টতা এত বড় বেয়াদবি 

আপনি কোনদিনও আল্লাহর সাথে করতে পারতেন না! সূরা বাকারার ১১৯ আয়াতে বলা হচ্ছে “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে বিশ্বাসীদের জন্য সুসংবাদদাতা ও অবিশ্বাসীদের জন্য সতর্ককারী রূপে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছি আর দোযখবাসীদের সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করা হবে না।“ এখন আমরা যদি নামাজে দাঁড়িয়ে এইভাবে আল্লাহকে বলি যে অতঃপর দোযখবাসীদের সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করা হবে না? কি ভয়ঙ্কর ধৃষ্টতাএকটু ভেবে দেখুন! সূরা বাকারার ১২০  আয়াতে বলা হচ্ছে জ্ঞান প্রাপ্তির পরেও তুমি যদি তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো

তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমার কোন সাহায্যকারী বা অভিভাবক পাবে না! সূরা বনী ইসরাইলের ১২২ আয়াতে যদি আল্লাহকে আমরা এইভাবে এই আয়াতটা বলি হে বনী ইসরাইল আমার অনুগ্রহের এর কথা স্মরণ করো যার দ্বারা আমি তোমাদের অনুগ্রহীত করেছি এবং বিশ্বের সকলের উপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি! এটা নামাজে দাঁড়িয়ে যদি আমরা আল্লাহকেই বলি? বিষয়টা কেমন দাঁড়ায়? আল্লাহ কি বনী ইসরাইল? আল্লাহকে কি আমরা বিশ্বের সকলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি?  সূরা সাবা আয়াত সাত এভাবেই আমি তোমার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মক্কা ও তার আশেপাশের লোকদের সতর্ক করতে পারো। একথাও যদি আমরা আল্লাহকেই বলি? আমরা কি আরবি ভাষায় আল্লাহর প্রতি কোরআন নাযিল করেছি?  আমরা আল্লাহকে কি মক্কা নগরীতে নবী হিসেবে পাঠিয়েছি? অথচ নামাজে দাঁড়িয়ে তাকে হাজির নাজির মেনে তাকে তো আমরা এ কথাটাই বলছি। সূরা নিসা ১০৫  নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি সত্য দ্বীনসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে সেই অনুসারে তুমি মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করো এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করো না। সূরা আনআম 106 107 তোমার প্রতিপালকের তরফ থেকে

তোমার প্রতি ওহী করা হয় তুমি শুধু তারই অনুসরণ করো তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এবং তুমি মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং আমি তোমাকে তাদের উপরে উকিল নিযুক্ত করিনি এবং তুমি তাদের অভিভাবকও নও।সুরা ফীল “ তুমি কি দেখনো তোমার রব হাতিওয়ালাদের সাথে কি করেছেন?  সূরা হুদ ১১২- সুতরাং তুমি যেভাবে ওহিপ্রাপ্ত হয়েছো তার উপরেই অটল থাকো এবং তোমার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তারাও অটল থাকুক। সাবধান সীমালঙ্ঘন করো না। সূরা নাহল ১২৩ এখন আমি তোমার প্রতি ওহী করলাম তুমি একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহিমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করো এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত  নয়। সূরা আহযাব ৫০ হে নবী নিশ্চয়ই আমি তোমার

জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে তোমার মামা খালার কন্যাগণ চাচা ফুফুর কন্যাগণ! একমাত্র তোমার জন্য হালাল করেছি সাধারণ মুসলিমদের জন্য হালাল করিনি! আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে যদি আল্লাহকে বলি হে নবী নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে কি বর্বরতা কি নিঃশংসতা আল্লাহর প্রতি কত বড় অপমান আমরা করছি কতটা বেয়াদবি করছি কল্পনা করতে পারছেন আপনি?

 সূরা হাক্কা ৪৪ থেকে ৪৭ সেই নবী যদি আমার নাম নিয়ে কিছু রচনা করতো তবে আমি অবশ্যই তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং তার জীবন ধমনী কেটে ফেলতাম অতঃপর তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারতো না! সূরা বনী ইসরাইল

৯০ থেকে ৯৩ এবং তারা বলে কখনোই আমরা তোমাতে ঈমান আনবো না যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য ভূমি থেকে এক প্রস্রবণ উৎসারিত করবে যতক্ষণ না তোমার জন্য একটি আঙ্গুর বা খেজুরের বাগান দেখতে পাবো যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি নদীনালা প্রবাহিত করবে যতক্ষণ না তুমি আকাশকে খন্ড বিখন্ড করে আমাদের উপর ফেলবে এবং যতক্ষণ না তুমি আল্লাহ ও ফেরেশতাদের আমাদের সম্মুখে হাজির করবে যতক্ষণ না দেখব যে তোমার একখানা স্বর্ণ নির্মিত বাড়ি আছে এবং যতক্ষণ না তুমি আকাশে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারো কিন্তু আকাশে অদৃশ্য হলেও তোমার উপরে আমরা ঈমান আনবো না যতক্ষণ না

তুমি  সেখান থেকে আমাদের জন্য একটা আসমানি কিতাব নিয়ে আসবে যা আমরা পাঠ করতে পারবো। তুমি জবাব দাও পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক আমি তো কেবল একজন মানুষ ও রাসূল মাত্র। সূরা বাকারা ৪৮ হে মানুষ তোমরা সেই দিনকে ভয় করো যেদিন থাকবে না কোন বেচাকেনা থাকবে না কোন বন্ধুত্ব থাকবে না কোন সুপারিশ। সুরা ত্বহা ১৭- ২১ “হে মূসা! তোমার ডান হাতে ওটা কি?” “এটা আমার লাঠি; আমি এর উপর ভর দিই, এটা দিয়ে আমার পশুর জন্য পাতা ঝাড়ি, এবং এটা আরও অনেক কাজে ব্যবহার করি।” এই ধরনের অসংখ্য আয়াত পবিত্র কোরআনের পাতায় পাতায় আপনি খুঁজে পাবেন।

 বহু আয়াত আল্লাহ নাযিল করেছেন তার নবীর জন্য, বহু আয়াত নাযিল করেছেন তার স্ত্রীদের জন্য, বহু আয়াত নাযিল করেছেন তার সাহাবীদের জন্য বহু আয়াত মুসা নবীর ঘটনা ও কথপোকথন উল্লেখ করা হয়েছে।  বহু আয়াতে

ইবলিশের সাথে কথোপকথন উল্লেখিত। বহু আয়াত  ইউসুফ নবীকে কি বলেছিলেন ইউসুফ তার ভাইদের কি বলেছিল ইউসুফের বাবা-মা তাকে কি বলেছিল সেসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।  মুসা নবী তার কওম তার ভাই তার স্ত্রী তার কওম ও ফেরাউনে কথপোকথন এর অজস্র কাহিনী বর্ণিত আছে কুরআনের পাতায় পাতায়। অজস্র নবীদের কাহিনী অজস্র সাহাবাদের সমকালীন সময়ের কাহিনি,  যুদ্ধক্ষেত্রে কে কি করবে ইহুদি খ্রিষ্টান পৌত্তলিক নাস্তিকদের  বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব আল্লাহ তার  রাসূলকে  শিখিয়ে দিয়েছেন। কত শত  ধরনের আয়াত কাফেরদের উদ্দেশ্য করে ইহুদিদের উদ্দেশ্য করে খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্য করে মুশরিকদের উদ্দেশ্য করে পৌত্তলিকদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ নাযিল করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।  এরকম অজস্র আয়াত আপনি

পবিত্র কোরআনের পাতায় পাতায় পাবেন। সালাতে বা নামাজে সেগুলো আবৃত্তি করার অর্থ হলো বিশ্বের সকল মুসলিম ঘরে বাইরে নিজেরাই আল্লাহর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহকে তাদের নবী বানিয়ে তাদের রাসূল বানিয়ে তাদের মুমিন বান্দা  বানিয়ে তার সাথে বেয়াদবি করে ধৃষ্টতা করে এবং মহান আল্লাহর সাথে ফাতরামি এবং ফাজলামি করে। শুধু অজ্ঞ মূর্খ মুমিন মুসলিমরাই যে এই কাজ করে তা নয় বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম ওলামারাও এই কাজটা করেন আল্লাহর সাথে প্রতিনিয়ত প্রতি ওয়াক্তে প্রতি রাকাতে। এরকম চরম বেয়াদবি করেন।

 যা বলা হবে তা না জেনে না বুঝে নামাজে যাওয়া কেন যে নিষিদ্ধ ও হারাম  করেছেন মহান আল্লাহ  আশা করি এতক্ষণের আলোচনায় আপনারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। 

কেন মহান আল্লাহ সূরা নিসার ৪৩ নাম্বার আয়াতে আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত যা বলি তা বুঝতে না পারি এবং  না বোঝা পর্যন্ত নামাজের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন তা আমাদের সকলকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার তাওফিক  দান করুন।

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

রিজওয়ান মাহমুদ খান , পরিচালক (তাজকিয়া নফস)

2 thoughts on “নামাজ ও সালাত সিরিজ পর্ব‑১

  1. আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো হয়েছে আল্লাহ আপনাকে এইলাম দিয়েছে ❤️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *