যাকাত কি কেন কিভাবে? যাকাত নিয়ে জালিয়াতি? কেন দরবেশ হবো? 

যাকাত সাদকা

                            যাকাত কি কেন কিভাবে? 

                              যাকাত নিয়ে জালিয়াতি। 

                           কেন সাধু, সন্নাসী ‚দরবেশ হবো?

 আমরা বহু গল্প উপন্যাস, নাটক সিনেমায় দেখেছি ‑অনেক সম্পদশালী মানুষ, অনেক রাজা বাদশা- যুবরাজ‑শাহজাদা, নবাব‑জমিদার, আমীর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ঘরবাড়ি রাজ প্রাসাদ ছেড়ে বনে জঙ্গলে চলে যেত। দরবেশ হয়ে যেত। এখনো চলে যায় এবং ভবিষ্যতেও যাবে। কিন্তু কেন?

 কেন মানুষ তার রাজপ্রাসাদ, আরাম‑আয়েশ সবকিছু ছেড়ে বনে জঙ্গলে চলে যায়? গহীন অরণ্যে চলে যায়? সুখ‑শান্তি আরাম আয়েশ ভোগ বিলাস বিসর্জন দেয়? কেন মুনি ঋষি ফকির দরবেশ হয়ে যায়? আর এর সাথে যাকাতেরই বা কি সম্পর্ক?

এই বিষয়টা যদি আমরা বুঝতে পারি আল্লাহর কুরআনের এক অত্যন্ত সুন্দর চমৎকার নূর

আমরা আমাদের অন্তরে ঢোকাতে পারবো।

এবং জীবনের মহান এক দার্শনিক অর্থবহ বৈপ্লবিক মহাপরিবর্তন আমাদের মধ্যে আধ্যাত্মিকভাবেই অবচেতন মনেই চলে আসবে।

সূরা আদিয়াতের ৬ নাম্বার আয়াতে-আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন “ইন্নাল ইনছানা লিরব্বিহী লাকানুদ।” “নিশ্চয়ই মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।”

যেই মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এত দয়া করে মায়া করে সৃষ্টি করেছেন সেই মানুষকেই তিনি বলছেন- সে বড়ই অকৃতজ্ঞ তার রবের প্রতি।

 প্রশ্ন হচ্ছে কেন?

সূরা আদিয়াতের ৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন “ ইন্নাহু লিহুব্বিল খাইরি লাশাদিদ।”-

নিশ্চয়ই সে ধনসম্পদের আসক্তিতে, ধন সম্পদের লোভে বড়ই আসক্ত, বড়ই প্রবল, বড়ই শক্ত।” আমরা বুঝলাম যে মানুষের অকৃতজ্ঞ হওয়ার যেই প্রক্রিয়াটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের চোখে ধরা পড়েছে

সেটা হচ্ছে আমরা ধন সম্পদের ভালোবাসায় অত্যন্ত বেপরোয়া, অত্যন্ত আসক্ত, অত্যন্ত প্রবল। সম্পদের প্রতি লোভ‑লালসায় আমরা সবচেয়ে বেশি শক্ত‑সবচেয়ে বেশি অনড়।

সূরা তাকাসূরের ১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন -“ “(ধন-সম্পদ) বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভেলকি লাগিয়ে (আখিরাত) ভুলিয়ে রেখেছে।(জীবনভর তোমরা এমনটাই করতে থাক) যতক্ষণ না কবরে পৌঁছাও।”- সুরা তাকাসুর আয়াত‑১,২]

“(ধন-সম্পদ) বৃদ্ধির  প্রতিযোগিতা আমাদের ভুলিয়ে রেখেছে আমাদের মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছে 

যতক্ষণ না আমরা কবরের সাক্ষাৎ পাই। কবরের সাক্ষাৎ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই ধন

সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা আমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। আমাদের আখিরাত ভুলিয়ে রাখে, আমাদের দুনিয়ার মোহ‑মায়ায় মজিয়ে রাখে। আর এজন্যই আমরা অকৃতজ্ঞ হয়ে যাই। আমরা আর অল্পতে সন্তুষ্ট হই না। যত পাই আমরা তত চাই। আরো চাই

আরো চাই, চাইতেই থাকি যতক্ষন না মৃত্য আমাদের কবর পর্যন্ত নিয়ে যায়।

আর ইবলিশ এই চ্যালেঞ্জটাই মহান আল্লাহর সাথে করেছিল সুরা আরাফের ১৭ আয়াতে যে তুমি তোমার অধিকাংশ বান্দাকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাই আমাদের ধিক্কার দিয়ে আফসোসের সুরে বলছেন

 “ইন্নাল ইনছানা লিরব্বিহী লাকানুদ।”  নিশ্চয়ই মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ। সূরা ফজরের ২০ আয়াতে আল্লাহ বলছেন “অতুহিব্বুনাল মাআল আহুব্বান জামমান।” আর তোমরা ধনসম্পদকে অত্যধিক ভালোবাসো। অতিরিক্ত ভালোবাসো- মহব্বত করো।(সবচেয়ে বেশি- ভালো, তোমরা বাসো, তোমাদের ধনসম্পদকে।)

২৪ নাম্বার আয়াতে বলছেন “যখন সে আখিরাতে হাশরের মাঠে থাকবে তখন সে বলবে- “হায়! আমি যদি আমার এ জীবনের জন্য কিছু আগেই পাঠাতাম? কিছু অগ্রীম পাঠিয়ে দিতাম!

মানুষ এত বেশি ধন সম্পদের নেশায় ও বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় মত্ত ও মগ্ন থাকে যে আখিরাতের জন্য

কিছু আগে পাঠানোরও প্রয়োজন বোধ করে না । আর এই আফসোস, এই অনুশোচনা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে সেই কঠিন হাশরের মাঠে।

সুরা হুমাজার দুই নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন-“আল্লাজি জামআয়া মালান ওআদ্দাদাহ”-

(দুর্ভোগ ও ধ্বংস) তাদের জন্য যারা ধন সম্পদ জমা করে রাখে আর বারবার গণনা করে।

সূরা লাইলের ১১ আয়াতে আল্লাহ আমাদের কটাক্ষ করে বলছেন- “ ওয়ামা ইয়ুগনি আনহু মালউহু ইজা তারদ্দা”- তার ধন সম্পদ তার কোনো কাজেই আসবে না যখন সে ধ্বংস গহব্বরে অধঃপতিত হবে-

অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস- এই ধন সম্পদের নেশায় পড়ে আমরা আমাদের আখিরাত বরবাদ করছি। আমরা আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছি। আমরা পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। কিন্তু এই ধন সম্পদ আমাদের কোন কাজেই আসবে না কাল কঠিন হাশরের মাঠে ।

সূরা বালাদের ৬ আয়াতে আল্লাহ মানুষের আরেকটা দম্ভোক্তি প্রকাশ করেছেন সুনিপুণভাবে। “ইয়াকুলু আহলাকতু মালআন লুবাদা্”- 

সে বলে আমি প্রচুর ধন সম্পদ উড়িয়েছি-প্রচুর ধন সম্পদ নিঃশেষ করেছি।

সূরা লাইলের ১৭, ১৮ ও ২০ আয়াতে আল্লাহ বলছেন- (সেই প্রজ্জলিত জাহান্নামের আগুন থেকে) দূরে রাখা হবে তাদের যারা আত্ম শুদ্ধির উদ্দেশ্যে তাদের ধন সম্পদ দান করে, মানুষকে বিলিয়ে দেয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।”

সুতরাং পবিত্র কুরআনের ৩০ পারায় আমরা দেখলাম যে একের পর এক সূরা মহান আল্লাহ নাজিল করেছেন। যে সূরাগুলার মূল বক্তব্য হচ্ছে- যে আমরা মানুষেরা কত বড় অকৃতজ্ঞ, কত বড় নেমকহারাম।

আমরা ধন সম্পদের নেশায় ও প্রতিযোগীতায় কতটা মোহাচ্ছন্ন যে কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই

নেশা আমাদের কাটে না । আমাদের এই ধন সম্পদের মোহ মায়া থেকে বের করে জান্নাতের পথে আনার জন্য মহান আল্লাহ একের পর এক সূরা নাযিল করেছেন ।

দেখুন কুরআন যখন নাজিল হয় মানুষকে কিন্তু  প্রথমে নামাজের আদেশ নির্দেশ বা অর্ডার দেয়া হয়নি

রোজার আদেশ দেয়া হয়নি, কুরবানীর আদেশ দেয়া হয়নি হজের আদেশ দেয়া হয়নি।

সর্বপ্রথমে সবার আগে যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের (IMPACT) গভীর প্রভাব ফেলতে চেয়েছেন সেটা হচ্ছে মানুষের ভেতরকার রাজ্যটার ওপর। সেই ভিতরকার রাজ্যটাকে তছনছ করে গুঁড়িয়ে দিয়ে যদি তাজকিয়া করা যায় পরিশুদ্ধ করা যায় ভেঙে চুরমার করে নতুন করে গড়া যায় জীবনের মৌলিক দার্শনিক আদর্শ জান্নাতমুখি করা যায়, সম্পদের মোহ মায়া থেকে তাকে এক ঝাটকায় বের করে আনা যায় সেই মানুষটার পক্ষেই সম্ভব হবে কুরআনের আলোয় আলোকিত হওয়া।

সেই মানুষটার পক্ষেই সম্ভব হবে এই পৃথিবীটাকে আলোকিত করা মানুষের যেই অতল গভীর অন্তঃস্থলের রাজ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন (IMPACT) গভীর প্রভাব ফেলতে চেয়েছেন সেটা হচ্ছে আমাদের নফস।

সূরা নিসার ১ নাম্বার আয়াত পড়ে আমরা জানি যে এই নফস থেকেই আমরা সবাই সৃষ্টি। সুরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন-

“কুললু নাফসিন জাইকাতুল মউত- প্রত্যেকটা নফসকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।”

হুজুররা আমাদের ভুল বোঝায় যে আমাদের রুহ কবজ করা হবে। কিন্তু সূরা বানী ইসরাইলের ৮৫ আয়াত পড়ে আমরা জানি রুহ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ। সুতরাং ফেরেশতারা মোটেই রুহ কবজ করবেনা। নফস কবজ করবে।  এই নফস হচ্ছে আমাদের মূল চালিকা শক্তি। সূরা ফজরের ২৭-৩০ আয়াতে আল্লাহ বলেন ইয়া আইয়াতুহান নাফসু মুতমাইন্নাহ ইরজিই ইলা রব্বিকি রদিয়াতাম মারদিইয়াহ। ফাদখুলি ফী ইবাদী অয়াদখুলি জান্নাতি।- হে প্রশান্ত নফস! তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার (নেককার প্রিয়) বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও। আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’

 এই নফসকেই আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানাবেন। এই নফসের পরিশুদ্ধির উপরই নির্ভর করে

আমরা জান্নাতে যাব নাকি জাহান্নামে যাবো? যত ধরনের রিচুয়াল আমরা করি তা কি আমাকে জান্নাতে নিতে পারবে?

সূরা লাইল কি বলে?

সূরা শামস কি বলে?

সুরা শামসের প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন ওয়াশ শামসি ওয়াদুহাহা, ওয়াল ক্বমারি ইজা তালাহা, অন্নাহারি ইজা জাল্লাহা, ওয়াল লাইলি ইজা ইয়াগশাহা, ওয়াছ সামায়ি ওয়ামা বানাহা, ওয়াল আরদি ওয়ামা ত্বহাহা, ওয়া নাফসিহু ওয়ামা ছাওয়াহা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছয়টা জিনিসের কসম কেটে তারপর মহান আল্লাহ কসম কাটছেন

এই নফসের। বলছেন — ওয়া নাফসি হু ওয়ামা ছাওয়াহা।

সেই নফসের কসম‑যেই নফসকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুসামঞ্জস্যপূর্ণ, সুঠাম, পরিপাটি, সুষম করেছেন।

৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন- ফায়ালহামাহা ফুজুরহা ওয়াতাক্বওয়াহা-  এবং তাকে পাপ ও পুণ্যের ‑অসৎকর্ম ও সৎকর্মের — ভালো ও মন্দের জ্ঞান দান করেছেন।

এই আয়াত থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি পৃথিবীর  প্রত্যেকটা মানুষ  কোনটা পাপ আর কোনটা পুণ্য যদি সে কোনদিন  তাওরাত ইঞ্জিল কুরআন নাও পড়ে তাও সে উপলব্ধি করতে পারবে কারন পাপ ও পূণ্যের পার্থক্য করার সেই জ্ঞান তার নফসের মধ্যে আল্লাহ ইলহাম করে দিয়ে দিয়েছেন। এর ঠিক পরেই ৯ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন-

“কদ আফলাহা মান জাককাহা- নিঃসন্দেহে সেই সফলকাম হয়েছে যে (তার নফসকে) পরিশুদ্ধ করেছে।”

১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন- “ওয়াক্বদ খবা মানদাছ ছাহা্” — আর সেই ব্যর্থ হয়েছে যে (তার নফসকে) কলুষিত করেছে। সুতরাং এখন দিনের আলোর মতো আমাদের কাছে পরিষ্কার যে এই নফসকে পরিশুদ্ধ করাটাই হচ্ছে আমাদের জীবনের  আল্টিমেট টার্গেট- সর্বোচ্চ সাধনা- পরম আরাধ্য ও তপস্যা। জীবনের  উদ্দেশ্য ও মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যস্থল। 

এই নফসকে যদি আমরা পরিশুদ্ধ করতে পারি আমাদের জন্ম স্বার্থক, মানব জীবন সফল। জান্নাত আমাদের জন্য অবধারিত। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে আমরা শামিল হবো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।

প্রশ্ন হচ্ছে এই নফসকে কিভাবে পরিশুদ্ধ করবো? 

সূরা লাইলে  আল্লাহ বলছেন- ওয়াল লাইলি ইজা-ইয়াগশা-। ওয়ান নাহা-রি ইযা-তাজাল্লা-। ওয়ামা-খালাকাজ যাকারা ওয়াল উনছা।ইন্না ছা‘ইয়াকুম লাশাত্তা-।

কসম রাতের যখন তা ঢেকে যায়, কসম দিনের যখন তা আলোকিত হয়, কসম তার যিনি নর নারী সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই তোমাদের চেষ্টা সাধনা বিভিন্ন প্রকারের। সুতরাং যে দান করেছে এবং

তাকওয়া অবলম্বন করেছে আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে আমি তার জন্য সহজ ও সরল পথে চলা সহজ করে দেবো আর যে কৃপণতা করেছে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে- বেপরোয়া হয়েছে

আর উত্তমকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে , আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সহজ করে দেবো। আর তার ধন সম্পদ তার কোনো কাজেই আসবে না যখন সে অধঃপতিত হবে । নিশ্চয়ই হেদায়েতের সরল সঠিক পথ  প্রদর্শন করা আমারই দায়িত্ব।  আর অবশ্যই আমার অধিকারে ইহকাল ও পরকাল।

অতএব আমি তোমাদের সতর্ক করছি সেই লেলিহান অগ্নিশিখা সম্পর্কে । তাতে নিতান্ত হতভাগা ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না । যে সত্যকে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । আর তা থেকে দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাকিকে। যে তার ধন সম্পদ দান করে

আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে । আল্লাযী ইউ’তী মা-লাহূ ইয়াতাঝাক্কা-। যে তার ধন সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে- যাকাতের উদ্দেশ্যে আর তার প্রতি কারো এমন কোনো অনুগ্রহ নেই যার প্রতিদান তাকে দিতে হবে। ( সে দান করে) কেবল তার মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়। আর সে অবশ্যই সন্তুষ্ট হবে ( এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে)।   ( সুরা লাইল ১‑২১)

 সূরা লাইল আমাদের সবার জীবনে বৈপ্লবিক মহা পরিবর্তন নিয়ে আসার মতো  একটা যুগান্তকারী সুরা। ১ থেকে ৭ আয়াতে  আল্লাহ বলছেন- যদি আপনি আল্লাহর পথে চলতে চান সেটাও আল্লাহ আপনার জন্য সহজ করে দেবেন আর যদি আপনি আল্লাহর আদেশের  বিরুদ্ধাচরনের পথে চলতে চান সেই পথে চলাও আল্লাহ আপনার জন্য  সহজ করে দেবেন। তারপর ১৪ আয়াতে আল্লাহ বলছেন — জাহান্নামের 

প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করছি। ১৭ আয়াতে আল্লাহ বলছেন- যারা মুত্তাকী তাদের কাছ থেকে এই জাহান্নামকে দূরে রাখা হবে।  সরল সঠিক সহজ পথ আল্লাহ দেখাচ্ছেন ১৭ ও ১৮ আয়াতে। কারন ১২ আয়াতে আল্লাহ বলছেন সহজ সরল হেদায়েতের  পথ  দেখানো কোন ওলি আউলিয়া গাউছ কুতুব হুজুরদের নয়- মহান আল্লাহর নিজেরই  দায়িত্ব। ইন্না আলাইনা লাল হুদা।

প্রশ্ন হচ্ছে সেই সহজ সরল পথটা কি?

যারা মুত্তাকি এবং যারা ধন সম্পদ দান করে যাকাতের উদ্দেশ্যে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। (সুরা লাইল ১৭-১৮)

এই যাকাত হচ্ছে মোল্লা মৌলোভী হুজুর ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে

বেশি পরিমাণে ম্যানুপোলেট করা ও অপব্যাখ্যা করা কুরআনিক শব্দগুলোর একটি। 

আমরা জানি যে কুরআনের অজস্র শব্দকে এই মোল্লাবাহিনী ধর্ম ব্যবসায়ীরা ম্যানুপুলেট করেছে, অপব্যাখ্যা করেছে তাদের ধর্ম ব্যবসা ও  বিজনেস চাঙ্গা রাখার জন্য । তারা হাদিস শব্দটাকে ম্যানুপুলেট করেছে, সালাত শব্দটাকে ম্যানুপুলেট করেছে, দোয়া শব্দটাকে ম্যানুপুলেট করেছে, সিজদা শব্দটাকে ম্যানুপুলেট করেছে,  রুকু শব্দটাকে ম্যানুপুলেট করেছে আর ভয়ঙ্কর নৃশংসভাবে ম্যানুপুলেট করেছে এই যাকাত শব্দটাকে। 

অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকাত বলতে পবিত্র কুরআনে বুঝিয়েছেন নফসের আত্মশুদ্ধি- পরিশুদ্ধি। নফসের  এই পরিশুদ্ধতাই হচ্ছে মানব জীবনের সফলতার সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি ও সর্বোচ্চ লক্ষ্য।

মহান আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তির, সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি  প্রাপ্তির সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে নফসের পরিশুদ্ধি।

এবং এই পরিশুদ্ধ নফসকেই অর্থ্যাৎ  নফসে মুৎমাইন্নাকেই

জান্নাতে প্রবেশের সানন্দ্য আমন্ত্রণ করা হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের

তরফ থেকে। যেটা আমরা সূরা ফজরের ২৭ থেকে ৩০ আয়াতে দেখেছি। এই পরিশুদ্ধি বা যাকাত  কখনোই ২ পার্সেন্ট ৩ পার্সেন্ট ৫ পার্সেন্ট ১০ পার্সেন্ট নয়।

ধর্ম ব্যবসায়ীদের ইবলিশি প্ররোচনায় হোক অথবা যারা রাজা বাদশা বা বড় বড় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিল তাদের প্ররোচনায় হোক বা  ধর্ম ব্যবসায়ীদের গুরু ইবলিশের ধোঁকাবাজিতেই হোক এটাকে সঞ্চিত ধন সম্পদের আড়াই শতাংশ বা  ২.৫ পার্সেন্ট দিলেই হবে এবং বছরে মাত্র একবার দেয়ায়ই যথেষ্ট এই কুরআন বিরুদ্ধ পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে মানুষকে আত্মশুদ্ধির পথ থেকে মোল্লারা হাজার লক্ষ কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়েছে।

সবচেয়ে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে যাকাত শব্দের অর্থ প্রায় সকল অনুবাদেই যাকাত রেখে দেয়া হয়েছে। যেমন রেখে দেয়া হয়েছে রুকু শব্দটি,  যেমন রেখে দেয়া হয়েছে,সিজদা শব্দটি।  যাকাতের অনুবাদ বা অর্থ তারা খুব চতুরতার সাথে এড়িয়ে গেছে। কুটকৌশল প্রয়োগ করার লক্ষ্যে তারা এর অনুবাদ করেনি। প্রশ্ন হচ্ছে যাকাত শব্দটিকে অনুবাদ না করে আরবিতেই কেন তারা রেখে দিয়েছে?

 যাতে ধন সম্পদশালী ধনী মোল্লারা  সারা বছর ইচ্ছেমতো ভোগ বিলাস চালিয়ে যেতে পারে। 

মানুষের ধনসম্পদ লুটপাট করতে পারে। কুক্ষিগত করে রাখতে পারে। 

মোল্লারা বড় বড় ধনী ব্যবসায়ীদের , রাজা বাদশা নবাব ও অর্থ বিত্ত শালীদের সম্পদের নিরাপত্তা ও আমৃত্যু ভোগ বিলাস চালিয়ে রাখার সুযোগ প্রদানের হীন স্বার্থেই এই আলেম নামের জালেমরা, রাজা বাদশা ও খলিফাদের মোটা অংকের বেতনভুক্ত দরবারি আলেমরা এই যাকাতটাকে মেনুপুলেট করেছে, ধনী গরীবের ভেদাভেদ দূর করার সবচেয়ে চমৎকার আল্লাহ প্রদ্ত্ত কৌশলটাকে ধুলিষ্যাৎ করেছে। 

অকল্পনীয়ভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক বড় বড় ধনাঢ্য  ব্যবসায়ী রাজা বাদশা এমপি মন্ত্রী নবাব জমিদাররা গরীবের রক্তচুষে  তাদের জমাকৃত অঢেল  সম্পদের উচ্ছিষ্ট মাত্র আড়াই (২.৫) শতাংশ

তাদের ইচ্ছে মত নিম্নমানের শাড়ি লুঙ্গি দরিদ্রদের উপহাসস্বরুপ  দেবে সেটাকে জায়েজ ও জাস্টিফাই করার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার  জন্যই এই যাকাত শব্দটাকে তারা অনুবাদে অর্থ করেনি। 

এবং নিজেকে পরোক্ষভাবে আল্লাহ সাজিয়ে কুরআন বহির্ভূতভাবে আড়াই (২.৫) শতাংশে নিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছে ধন সম্পদশালীদের সম্পদের পাহাড় গড়ে দেবার জন্য। দরিদ্রকে চিরকাল দরিদ্র রাখার জন্য।  । আরবি আতু যাকাত অর্থ হচ্ছে পরিশুদ্ধতা  অর্জন করা বা নিজের মাঝে নিয়ে আসা।

ভাবুন তো যেই আতু যাকাত শব্দটার অর্থ হচ্ছে পরিশুদ্ধতা অর্জন করা বা নিজের মধ্যে নিয়ে আসা

যেটা (ইন্টারনাল) তথা অন্তরের নফসের ভেতরের  একটা ব্যাপার সেটা কিভাবে অন্যজনকে দিয়ে দেয়া যায়?  মোল্লারা  আতু অর্থ করেছে দেয়া এবং যাকাত অর্থ যাকাতই রেখে দিয়েছে। আসলে আরবী “যাকাত” শব্দের অর্থ কি সম্পদ দান না অন্য কিছু️?

‘যাকাত’ শব্দের অর্থ প্রায় সকল অনুবাদেই যেহেতু তারা  যাকাতই রেখে দিয়েছে, এটার অনুবাদ বা অর্থ তারা করেনি ! প্রশ্ন ওঠে যাকাতকে আরবিতেই কেন রেখে দিয়েছেন তারা?

যারা সারা বছর ইচ্ছামত ভোগ দখল করার পরে বছরে উচ্ছিষ্ট সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ নিজেদের মনমত খরচ করা কে যাকাত বলে তাদের কাছে প্রশ্ন, এটা কোরআনের কোন আয়াতে আছে????

আরবী ‘আতু যাকাত’ অর্থ পরিশুদ্ধতা অর্জন করা বা নিজের মাঝে নিয়ে আসা; এটা কি করে দেওয়া যায়?????

১৮ নাম্বার সূরা কাহাফের ৮১ নাম্বার আয়াতেও আমরা যাকাত শব্দটা দেখতে পাই।

এই আয়াতে বলা হচ্ছে- فَأَرَدْنَآ أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَوٰةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا

 “তাই আমি চাইলাম তাদের রব তাদেরকে এই ছেলেটির পরিবর্তে  এমন এক সন্তান দান করেন যে হবে তার চেয়ে যাকাতে উত্তম তথা পরিশুদ্ধতায় উৎকৃষ্ট এবং দয়া মায়া ভক্তি ভালোবাসায়- সদাচরনে অধিক ঘনিষ্ঠ।”

আমরা সেই মুসা নবীর (খিজিরের সাথে) ভ্রমণের কাহিনী থেকে এই বিষয়টা জানতে পারি।

যারা যাকাত বলতে শুধু অর্থ প্রদানকে বোঝেন তাদের কাছে প্রশ্ন ১৮ নাম্বার সূরা কাহাফের ৮১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ কাকে এবং কি যাকাত দিলেন?

অনেকে আরবী যাকাত শব্দের আগে أْتِ শব্দ দারা বুঝাতে চান যে এটা দেয়া বুঝায়। أْتِ শব্দের অর্থ কুরআনের ২৪০ টি আয়াতে বিশ্লেষন করে পাওয়া যায় ২১০টির বেশি জায়গায় আনা, আসা, নিয়ে আসা, অর্জন করা বোঝায়। যথা- (সুরা ২: ২৩, ৩৮, ৮৫, ১০৬, ১১৮, ১৪৫, ১৪৮, ১৮৯, ২১০, ২১৪, ২২২, ২৪৮, ২৫৪, ২৫৮, ২৬০,  ৩:৯৩, ১২৫, ১৬১, ১৮৩, ৪:১০২, ৫:৪১,৫২, ৫৪, ১০৮; ৬:৪,৫,৩৪,৩৫, ৪০, ৪৬,৪৭, ৭১, ১৩০, ১৫৮;  ৭:১৭,৩৫,৫৩,৭০,৭৭, ৮০,৮১,৯৭,৯৮,১০৬, ১১২,১২৯,১৩২,১৩৮,১৬৩,১৬৯,১৮৭,২০৩;  ৮:৩২; ৯:২৪,৫৪,৭০,৯২; ১০:১৫,৩৮,৩৯,৫০,৭৯;  ১১:৮,১৩,৩২,৩৩,৩৯,৯৩,১০৫; ১২:৩৭,৪৮,৪৯,৫০,৫৪,৫৯,৬০,৬৬,৮৩,৯৩,১০৭; ১৩:৩১,৩৮,৪১; ১৪:৯,১০,১১,১৭,১৯,৩১,৪৪; ১৫:৭,১১,৬৪,৯৯; ১৬:১,২৬,৩৩,৪৫,৭৬,১১১,১১২; ১৭:৮৮,৯২; ১৮:১৫,১৯,৫৫,৭৭; ১৯:২৭,৩৮,৪৩,৮০; ২০:৯,১০,১১,৫৮,৬০,৬৪,৬৯,৭৪,৭৫,১২৩,১২৬,১৩৩; ২১:২,৩,৫,৪০,৪৪,৪৭,৬১; ২২:২৭,৫৫; ২৩:৬৮,৯০; ২৪:৪,১৩,৪৯; ২৫:৩৩; ২৬:৫,৬,৩১,৩৭,৮৯,১৫৪,২০২; ২৭:৭,২১,৩১,৩৭,৩৮,৩৯,৪০,৮৭; ২৮:২৯,৩০,৪৬,৪৯,৭১,৭২; ২৯:২৯,৫৩; ৩০:৪৩; ৩১:১৬; ৩২:৩; ৩৩:১৮,২০,৩০; ৩৪:৩; ৩৬:৩০;৪৬; ৩৭:২৮,১৫৭; ৩৮:২১; ৩৯:২৫,৪০,৫৪,৫৫,৭১; ৪০:৩৫,৫০,৫৬,৭৮; ৪১:১১,৪০,৪২,৪৭; ৪৩:৭,৬৬; ৪৪:১০,১৯,৩৬; ৪৬:৪,২২;  ৪৭:১৮; ৫১:২৪,৫২; ৫২:৩৪,৩৮; ৫৯:২; ৬০:১২; ৬১:৬; ৬৩:১০; ৬৪:৫,৬; ৬৭:৮,৩০; ৭১:১; ৭৪:৪৭; ৭৬:১; ৭৮:১৮; ৭৯:১৫; ৮৫:১৭; ৮৮:১; ৯৮:১;   ১৫৪; ৪৬::২২ এসব আয়াতে কোন ভাবেই أْتِ শব্দের অর্থ দেওয়া বা দেয়া  বোঝায় না)

সুতরাং ’ আতু যাকাত’ আলাদা কোনো অর্থ প্রদান নয়। এর অর্থ পরিশুদ্ধিতা আনা বা অর্জন করা বা নিজের মধ্যে পরিশুদ্ধিতা নিয়ে আসা।

সম্পদ প্রদানের মাধ্যমে ও যাকাত/পরিশুদ্ধ হওয়া সরাসরি মহান আল্লাহ নিরেইশত পদ্ধতি।(সুরা ৯২:১৮)

অর্থ প্রদান বা দান সম্পর্কে কোরআনে প্রচুর আয়াত আছে, এটা কোন পার্সেন্টেজ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ব্যায় বা দান করবে (বাকারা: ২১৫, ২১৯, ২৬২-২৬৭, ২৭০-২৭৪, ৯:৬০)

দানের ব্যাপারে ষ্পষ্ট আয়াত আছে সুরা ৯:৬০। দানের আরবী সাদাকা এবং উক্ত আয়াতে এই সাদাকা বা দানকে ফরজ বা বাধ্যতামূলক বলা হয়েছে। সাদাকা বা অর্থ দান যে ফরজ এই ব্যাপারে প্রচলিত ধর্মীয় গুরু ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা  কিছু বলেনা।

আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে পরিশুদ্ধ করেন এবং এটা তার দয়ার নমুনা এবং সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোতেও যাকাত অর্থ পরিশুদ্ধিতা বুঝিয়েছে ( সুরা ২: ১২৯,১৫১,১৭৪; ৩:৭৭,১৬৪;  ৪:৪৯; ৯:১০৩;  ২৪:২১; ৫৩:৫২;  ৬২:২)।

কুরআনে অসংখ্য বার (প্রায় ৮৩ বার) সালাতের সাথে যাকাত শব্দটি এসেছে। এখন প্রশ্ন হলো যাকাতের অর্থ যদি সম্পদ দেয়া বোঝায় তাহলে সালাত কায়েম (আল্লাহর সাথে, কুরআনের সাথে, রাসুলের সাথে, মুমিনদের সাথে, অসহায় দরিদ্রদের সাথে সংযোগ স্থাপন) করার পর পরইতো যাকাত দান/ অর্থ দান করার কথা এবং প্রতিদিনই করার কথা, বছরে একবার কেন⁉️

আসল অর্থ হবে ‘আকিমুস সালাত’ (সংযোগ স্থাপন কর) ‘ওয়া আতু যাকাত’ (এবং পরিশুদ্ধিতা/পবিত্রতা নিয়ে আস)। অর্থাৎ, আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমেই নিজের মাঝে পরিশুদ্ধিতা নিয়ে আস।

যাক্কাহ বা যাকাত বা পরিশুদ্ধ হওয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ সুরা নাজিয়াতের ১৫ থেকে ২৬ আয়াতে বলেন, মূসার হাদীস কী তোমার কাছে পৌঁছেছে ? যখন তার রব তাকে পবিত্র তুয়া উপত্যকায় সম্বোধন করে বলেছিলেন, ফিরআউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালংঘন করেছে। অতঃপর তাকে বল ‘তোমার কি ইচ্ছা আছে যে, তুমি যাকাত/পরিশুদ্ধ হবে? আর আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাকে ভয় কর? নিশ্চয়ই যে ভয় করে তার জন্য এতে শিক্ষা রয়েছে।

 সুরা মারইয়ামের ১২ থেকে ১৫ আয়াতে বলেন- “হে ইয়াহইয়া, তুমি কিতাবটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। আমি তাকে শৈশবেই হিকমাত দান করেছি। আর আমার পক্ষ থেকে তাকে  যাকাত/পরিশুদ্ধতা দান করেছি এবং সে ছিল আল্লাহভীরু। আর সে ছিল তার পিতা-মাতার সাথে সদাচারী, আর ছিল না অহংকারী, অবাধ্য। আর তার উপর শান্তি, যেদিন সে জন্মেছে এবং যেদিন সে মারা যাবে আর যেদিন তাকে জীবিত অবস্থায় উঠানো হবে।” 

সুরা মারইয়ামের ৩০ থেকে ৩২ আয়াতে আল্লাহ বলেন- “শিশুটি বলল, আমি তো আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আর যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত (পরিশুদ্ধতা অর্জন) করতে। আর আমার মাতার প্রতি অনুগত থাকতে এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগা। আর আমার উপর শান্তি, যেদিন আমি জন্মেছি এবং যেদিন আমি মারা যাব আর যেদিন আমাকে জীবিত অবস্থায় উঠানো হবে। 

সুরা কাহাপ আয়াত ১৯- “আর এমনিভাবে আমি তাদেরকে জাগিয়ে তুলেছিলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসা করে। তাদের একজন বলল, তোমরা কতক্ষণ অবস্থান করলে? তারা বলল, আমরা একদিন কিংবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। তারা বলল, তোমরা কতক্ষণ অবস্থান করেছ, সে ব্যাপারে তোমাদের রবই অধিক ভাল জানেন। তাই তোমরা তোমাদের কাউকে তোমাদের এই মুদ্রা নিয়ে শহরে পাঠিয়ে দাও। অতঃপর সে যেন দেখে শহরের কোন খাবার একেবারে যাকাত বা পরিশুদ্ধ, তখন সে যেন তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসে। আর সে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবে এবং কাউকে যেন তোমাদের ব্যাপারে না জানায়’।” 

 সুরা কাহাফ আয়াত ৭৪ থেকে ৮১ “অতঃপর তারা চলতে লাগল। অবশেষে যখন তারা এক বালকের সাক্ষাৎ পেল, তখন সে তাকে হত্যা করল। সে বলল, আপনি মাছুম/পরিশুদ্ধ/ নিষ্পাপ/যাকিয়াত জীবন হত্যা করলেন, যে কাউকে হত্যা করেনি? আপনি তো খুবই মন্দ কাজ করলেন। সে বলল,আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কখনই ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না? মূসা বলল, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি, তাহলে আপনি আমাকে আর আপনার সাথে রাখবেন না। আমার পক্ষ থেকে আপনি ওযর পেয়ে গেছেন। আর বালকটির কথা এই যে, তার পিতা-মাতা ছিল বিশ্বাসী। আমি আশংকা করলাম যে, সে বিদ্রোহ আচরণ ও অবিশ্বাস দ্বারা তাদেরকে বিব্রত করবে। অতঃপর আমি চাইলাম যে, তাদের রব যেন তাদেরকে তার পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে যাকাত/পরিশুদ্ধতায় উত্তম ও দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্টতর। (১৮:৭৪-৭৬,৮১)

হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে যাকাত/পরিশুদ্ধ করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (২:১২৯)

আর যে ব্যক্তি যাকাত/পরিশুদ্ধ অর্জন করে সে নিজের জন্যই পরিশুদ্ধ অর্জন করে। আর আল্লাহর কাছেই তো প্রত্যাবর্তন।(৩৫:১৮)

নিশ্চয়ই যে তার রবের নিকট অপরাধী অবস্থায় আসবে,তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না,বাঁচবেও না। আর যারা তাঁর নিকট বিশ্বাসী হয়ে ও সৎকর্ম করে উপস্থিত হবে,তাদের জন্য আছে সুউচ্চ মর্যাদা। স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটা তাদেরই পুরস্কার যারা যাকাত/পরিশুদ্ধ হয়। (২০:৭৪-৭৬)

 আমি তোমার জন্য কল্যাণের পথকে সহজ করে দিব। কাজেই তুমি উপদেশ দাও যদি উপদেশ উপকার দেয়। সেই উপদেশ গ্রহণ করে, যে ভয় করে। আর নিতান্ত হতভাগ্য তা উপেক্ষা করবে। যে ভয়াবহ আগুনে প্রবেশ করবে। অতঃপর সে সেখানে মরবেও না,বাঁচবেও না। অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে সে, যে নিজেকে যাকাত/পরিশুদ্ধ করে।(৮৭ঃ৮‑১৪)

 শপথ নফসের এবং তার, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। অতঃপর তাকে অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সেই সফলকাম হয়েছে যে নিজ নফসকে যাকাত/পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সেই ব্যর্থ হয়েছে যে নিজ নফসকে কলূষিত করেছে।(৯১: ৭‑১০) 

অতএব আমি তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছি লেলিহান আগুন সম্পর্কে। তাতে নিতান্ত হতভাগা ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না। যে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর তা থেকে দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাকীকে। যে তার ধন-সম্পদ দান করে যাকাত/আত্ম‑পরিশুদ্ধির জন্য। আর তার প্রতি কারো এমন কোন অনুগ্রহ নেই, যার প্রতিদান দিতে হবে। কেবল তার মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়। আর অচিরেই সে সন্তোষ লাভ করবে।(৯২: ১৪-২১)

 তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও যাকাত/পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের সাথে সংযোগ করো। নিশ্চয় তোমার মনোযোগী সংযোগ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (৯:১০৩)

 অবশ্যই বিশ্বাসীগণ সফলকাম হয়েছে। যারা নিজদের সালাতে বিনয়ী/নম্রতা অবলম্বন করে। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিরত থাকে। আর যারা যাকাত/পরিশুদ্ধ অর্জনের ক্ষেত্রে সবর্দা সক্রিয়। (২৩: ১‑৪) 

অতএব তোমরা নিজেদেরকে খুব যাকাত/পরিশুদ্ধ মনে করো না। কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, সে সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত। (৫৩ঃ৩২)

 নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপে আবদ্ধ হল। তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজদেরকে যাকাত/পরিশুদ্ধ মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে চান তাকে যাকাত/পরিশুদ্ধ করেন। আর তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও অন্যায় করা হবে না।(৪ঃ৪৮-৪৯) 

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা বা অনৈতিক ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখনও যাকাত/পরিশুদ্ধ হতে পারতো না, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা যাকাত/পরিশুদ্ধ করে থাকেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(২৪ঃ২১)

 হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। অতঃপর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পরিশুদ্ধতম পদ্ধতি। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। যে গৃহে কেউ বাস করে না, তাতে তোমাদের কোন ভোগসামগ্রী থাকলে, সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোন পাপ হবে না। আর আল্লাহ জানেন যা তোমরা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। বিশ্বাসী পুরুষদেরকে বল,তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পরিশুদ্ধতম পন্থা । নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।(২৪ঃ২৮-৩০)

নিশ্চয় আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।(২ঃ১৭৪) 

নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর অঙ্গীকার ও তাদের শপথের বিনিময়ে খরিদ করে তুচ্ছ মূল্য,পরকালে এদের জন্য কোন অংশ নেই। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন না, আর তাদেরকে যাকাত/পরিশুদ্ধও করবেননা। তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।(৩:৭৭)

 যাকাত অর্থ পরিশুদ্ধতা। সম্পদ প্রদানের মাধ্যমে এই পরিশুদ্ধতা অর্জন করার জ্বলন্ত প্রমাণ

৯২ নাম্বার সূরা লাইলের ১৮ নাম্বার আয়াত । অর্থ প্রদান বা দান সম্পর্কে কুরআনে প্রচুর আয়াত আছে এটা কোন পার্সেন্টেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ব্যয় বা দান করবে। কিভাবে করবে?  তার ধাপ কি হবে ? কাকে কাকে দান করবে ? তার তালিকা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন সূরা বাকারার ১৭৭ ও ২১৫ আয়াতে। কতটুকু দান  করবে তা দিয়েছেন ২১৯ আয়াতে। তাছাড়া  ২৬২ থেকে ২৬৭ আয়াতে। ২৭০ থেকে ২৭৪ আয়াতে।  সূরা তাওবার ৬০ আয়াতে। দানের ব্যাপারে পরিষ্কার স্পষ্ট আয়াত আছে সূরা তাওবার ৬০ নাম্বার আয়াতে । দানের আরবি সাদাকা এবং এই আয়াতে সাদাকা বা দানকে ফরজ করা হয়েছে, বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অথচ দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে সাদাকা বা অর্থ দান যে ফরজ এই ব্যাপারে প্রচলিত ধর্মীয় গুরুরা তেমন কিছুই বলে না । অনেক সময়  ভাবলক্ষনে মনে হয়  এটা নফল টাইপের কিছু। দান সাদকা আপনি করলে ভালো না করলে তেমন কোন সমস্যা নেই।

অথচ সূরা তওবার ৬০ আয়াত টা যদি আমরা পড়ি আমরা পরিষ্কার দেখতে পাবো আল্লাহ বলছেন “ফারিদাতাম মিনাল্লাহ” আল্লাহ এই দানকে ফরজ করেছেন । আমাদের শোনানো হয় নামাজ আল্লাহ ফরজ করেছেন। রোজা আল্লাহ ফরজ করেছেন । হজ ও কুরবাণী আল্লাহ ফরজ করেছেন।  কিন্তু নামাজ, রোজা, হজ্ব, কুরবাণী  সম্পর্কিত কোন আয়াতেই আপনি ফরজ শব্দটা পাবেন না । কিন্তু এখানে আমরা পরিষ্কার দেখছি এই দান সাদকাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফরজ করেছেন। 

এবং কাকে কাকে দিতে হবে সেই খাতগুলো পরিষ্কার করে আল্লাহ বলে দিয়েছেন। অসহায় দরিদ্রদের প্রাপ্য ফরজ খাতের আয়াতগুলো ঢেকে রেখে মসজিদগুলো বিশাল অট্টালিকা করা হয় দামী দামী ঝাড়বাতি, টাইলস দিয়ে চাকচিক্যময় করা হয় আরাম আয়েশের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা এসি লাগানো হয়। রীতিমতো সুখ শান্তিময়  রাজ প্রাসাদ বানানো হয়। আর সেই রাজ প্রাসাদে নামাজ পড়ে  যখন  সেই মুসল্লীরা বের হয় আসে তখন  দেখে সেই রাজপ্রাসাদের রাজসিক দরজার দুই  পাশে হতদরিদ্র নিঃস্ব  অসহায় গরীব মানুষ হাত পেতে ভিক্ষা চাইছে। 

এক টাকা দু টাকা পাঁচ টাকা দশ টাকা তখন তাদের দেয়া হয় অথচ  এই অসহায় মানুষগুলোর ফরজ হকের প্রাপ্য টাকা মেরে দিয়ে রাজপ্রিাসাদ বানানো হয়েছে সেই নির্মম নিষ্ঠুর তিক্ত সত্য কথাটি তাদের মোল্লারা জানায় না। এই হতদরিদ্র অসহায় মানুষেরাই  ছিল আল্লাহর বলা দান সাদকার খাতের সর্বেচ্চ অগ্রাধীকার তালিকার সুযোগ্য হকদার। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস  তাদের বঞ্চিত করে তাদের প্রাপ্য টাকা মসজিদে দেয়া হচ্ছে, মাদ্রাসায় দেয়া হচ্ছে, মসজিদের বেতনভুক্ত ইমাম, মুয়াজ্জিন ‍ও ওয়াজের ভাড়া করা হুজুরকে দেয়া হচ্ছে। ওয়াজিনরা হেলিকপ্টারে উঠচে এই অসহায় মানৈুষেদের প্রাপ্য টাকা দিয়ে। 

এর চেয়ে মর্মান্তিক, হ্রদয়বিদারক, নির্মমতা আর কিই বা হতে পারে?  আল্লাহর কুরআনের নির্দেশ লঙ্ঘন করে, কুরঅন সাংঘর্ষিক  হাদিস বানিয়ে তাদের শোনানো হয় “যে ব্যক্তি পৃথিবীতে

একটা সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করবে, জান্নাতে তার জন্য আল্লাহ একই রকম একটা

সুরম্য বাড়ি নির্মাণ করে দেবে। [ বুখারী শরীফ, হাদীস নম্বর: ৪৫০ এবং  মুসলিম শরীফ , হাদীস নম্বর: ৫৩৩ ]

এই হাদীস কতটা ভয়ংকর, কতটা কুরআন বিরোধী এবং  কতটা ইসলাম বিরোধী তা আপনি আল্লাহর রাসূলের জীবনী যদি একটু সিরাত গ্রন্থ থেকে পড়েন বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারবেন।

আল্লাহর রাসূল তার জীবদ্দশায় যেই মসজিদে নামাজ পড়েছেন সেটা ছিল সেই খেজুর পাতায় গড়া মসজিদ। অত্যন্ত দুর্বল অবকাঠামোর মসজিদ। বৃষ্টিতে ভিজে যেত, কাদা মাটিতে সব একাকার হয়ে যেত। এমনকি অর্ধজাহানের খলিফা হযরত ওমরের সময়তেও সেই মসজিদ এরকমই ছিল। তারপরেই উমাইয়ারা যখন ক্ষমতায় আসলো শুরু হয়ে গেল মসজিদের নামে অট্টালিকা ও রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করার হিড়িক।  আর রাসূলের নামে মিথ্যা হাদিসে বানানোর প্রতিযোগীতা।  গরিব অসহায় অভাবী আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী এতিম ও মুসাফীর ভিক্ষুকদের বঞ্চিত করে অথবা তাদের অল্প কিছু দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করো তাহলে জান্নাতে সুরম্য  অট্টালিকা বানানো হবে রাজপ্রাসাদ বানানো হবে। 

তাহলে ভাবুন একবার- আল্লাহর রাসূলের, প্রথম খলিফা আবু বকরের, দ্বিতীয় খলিফা ও রাসুলের শ্বশুর হযরত ওমরের জান্নাতের বাড়িগুলো কেমন হবে?

 তারা যেরকম মসজিদ বানিয়েছিলো সেইরকমই হবে? দুর্বল ভাঙ্গাচোরা গরীবি হালতের? খেজুর পাতার ছাউনি দেয়া নিম্নমানের ফকিন্নি মার্কা  জান্নাতের বাড়ি তারা পাবে?

এটা কি আদৌ সম্ভব না বিশ্বাসযোগ্য?

এইভাবেই তারা ম্যানুপুলেট করেছে, কুরআন সাংঘর্ষিক হাদীস বানিয়েছে, গরিব অসহায় মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে দরবারি আলেমদের খুশি করেছে উমাইয়া রাজা বাদশাহ স্রৈাচারী স্বঘোষিত খলিফারা। 

সেই থেকে শুরু আজও চলছে ভবিষ্যতেও চলবে। 

আমরা দেখতে পেলাম দান সাদকাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফরজ করেছেন।

আর কি ফরজ করেছেন? সেটা হচ্ছে কুরআন। সুরা কাছাছ আয়াত ৮৫ ও সুরা নুর আয়াত এক। 

এই কুরআনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফরজ করেছেন অথচ এই মোল্লা বাহিনী আমাদের এমন ভাবে বোঝায় যে কুরআন পড়া হচ্ছে একটা নফল ইবাদত । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন

এ কুরআনের মাধ্যমেই মানুষকে পরিশুদ্ধ করেন , কুরআনের নূরে মানুষকে আলোকিত করেন এবং এটা তার দয়া ও রহমতের আধার। সুরা ইউনুস আয়াত‑৫৭- “হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নাসীহাত আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তার চিৎিসা, আর মু’মিনদের জন্য সঠিক পথের হিদায়েত ও রহমাত (কোরআন) এসেছে। সুরা নাহল আয়াত- ৮৯ “আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে এটা প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা  এবং মুসলিমদের জন্য  হিদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ রয়েছে।”

তেপ্পান্ন নাম সূরা নজমের ৩২ আয়াতে আল্লাহ বলছেন “অতএব তোমরা নিজেদেরকে খুব যাকাত/পরিশুদ্ধ মনে করো না। কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে সে সম্পর্কে তিনিই সম্মক অবগত।” 

 অথচ আমরা দেখি আমাদের চারপাশে স্বঘোষিত যাকাত/পরিশুদ্ধ  পীর দরবার গাউছ কুতুব দরবার খুলে বসেছে । আর আল্লাহ সুরা নজমের ৩২ আয়াতে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন

যে তোমরা নিজেদের খুব পরিশুদ্ধ বা যাকাত মনে করো না

কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে সেটা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। 

সূরা নিসার ৪৮ থেকে ৪৯ আয়াতে আল্লাহ বলছেন “নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। আর যে আল্লাহর সাথে (কোনকিছু) শরীক করে নিঃসন্দেহে সে মহাপাপে আবদ্ধ হলো। তুমি কি তাদের দেখোনি যারা নিজেদেরকে যাকাত/পরিশুদ্ধ মনে করে?

বরং আল্লাহ যাকে চান তাকে যাকাত বা পরিশুদ্ধ করেন আর তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না।

সূরা নূরের ২১ আয়াতে আল্লাহ বলছেন “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক

অনুসরণ করো না। কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা বা অনৈতিক ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো

পরিশুদ্ধ বা যাকাত হতে পারতে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পরিশুদ্ধ করে থাকেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রতা সর্বজ্ঞ। 

সূরা বাকারার ১৭৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন “নিশ্চয়ই আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যারা যা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে তারা কেবল আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে আর আল্লাহ কেয়ামতের দিনে তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে যাকাত বা পরিশুদ্ধও করবেন না আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আমরা অজস্র আয়াত দেখলাম যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের পরিশুদ্ধতার কথা বলছেন নফসের যাকাত বা পরিশুদ্ধতার কথা বলছেন এবং এখানে একটি আয়াতেও বাহ্যিক যে পরিচ্ছন্নতা অজু করা গোসল করা কুলি করা, নাকে পানি দেয়া ঠিকমতো ঢিলা কুলুক ব্যবহার করা সঠিকভাবে টিস্যু ব্যবহার করা এরকম কোন কথাই একটি আয়াতেও বলা হয়নি। বরং  আমরা খেয়াল করেছি যে নফসের পরিশুদ্ধতার কথা বলা হয়েছে।

এবং আমরা সূরা বালাদ, সূরা লাইল, সূরা শামস ও সূরা আদিয়াতে দেখেছি যে মানুষ

ধন সম্পদের ভালোবাসায় ও নেশায় কতটা উন্মক্ত।

সম্পদের প্রতি লোভ লালসার  জন্যই মানুষ পরিশুদ্ধ হতে পারে না।

মানুষের আরো ধন সম্পদ চাই। এই অর্থ বিত্ত অঢেল ধন সম্পদের জন্যই মানুষ জুলুম করে, মানুষ খাদ্যে ভেজাল দেয়, মানুষ অন্যের ধন সম্পদ ঠকিয়ে খায়, মানুষ ঘুষ খায়, মানুষ সুদ খায়, মানুষের মধ্যে লোভ কাজ করে, হিংসা কাজ করে, অহংকার কাজ করে এ সবকিছুর একটাই কারণ তা হচ্ছে ধন সম্পদ এর প্রতি ভালোবাসা ও মোহ মায়া এবং আরো বেশি সম্পদ গড়ার প্রতিযোগিতা আমাদের মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছে।

 সূরা তাকাসুরে আমরা দেখেছি কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই নেশা আমাদের কাটবে না। 

তাহলে উপায় কি?

এর সহজ সরল উপায় হচ্ছে আমার যেন কোন ধনসম্পত্তিই না থাকে।

তাহলে তো আর আমার নেশা আসবে না সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগীতাই থাকবে না। 

 এজন্যই  যুগে যুগে বহু মানুষ যারা এই নফসটাকে উপলব্ধি করতে পেরেছে বুঝতে পেরেছে যে নফসের মধ্যে যেই লোভ থাকে, হিংসা থাকে, সম্পদের প্রতি মোহ মায়া থাকে এর জন্যই আমরা কালো বাজারি করি, দুর্নীতি করি, ঘুষ ‚সুদ খাই, খাদ্যে ভেজাল দেই, মানুষের ধনসম্পদ ঠকিয়ে খাযই, ছলেবলে কৌশলে আত্মসাৎ করি, মানুষের হক নষ্ট করি জগতের সকল অপকর্ম করি।

এই সকল অপকর্ম ও দুনিয়ার ধন সম্পদের লোভ লালসা মোহ মায়া থেকে বাঁচতে হলে আমাকে এই ধনসম্পদের বাইরে চলে যেতে হবে এই দর্শন ও আধ্যাতিকতা যখন মানুষের মধ্যে আসে

তখনই বড় বড় ধন সম্পদশালী মানুষ, রাজা বাদশাহ, নবাব, জমিদার ও ধনাঢ্য লোকজন রাজপ্রাসাদ ছেড়ে, অট্টালিকা ছেড়ে বনে জঙ্গলে চলে যায়। সেখানে গিয়ে দরবেশী জীবনযাপন শুরু করে।

এর গুঢ় রহস্য ও কারন কি? কারণ হচ্ছে  মানুষ যখন পরিবারের মধ্যে থাকে- স্ত্রীকে

সন্তানদেরকে, পরিবারকে আরো ভালো রাখার জন্য মানুষ আরো বেশি ধনসম্পদ অর্জনের চেষ্টা করে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ যখন একাকী বসবাস শুরু করে তখন তার  বেশি বেশি

অর্থ সম্পদ গড়ার মোহ মায়া  বিদুরিত হয়। 

তখনই সে নফসের সত্যিকারের পরিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারে। এই ফিলোসফি ও দর্শন থেকেই এই দরবেশী জীবনযাপনের উদ্ভব, বৈরাগী , সাধু সন্নাসী জীবনযাপনের সূচনা । 

এই সন্নাসবাদ, বৈরাগ্যবাদ ও দরবেশী আধ্যাত্মিক দর্শনতত্ত্ব কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নাজিল করেন নি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে এটা কবে থেকে শুরু হয়েছে ?

সেই রহস্য ফাঁস করেছেন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের ৫৭ নাম্বার সূরা হাদীদের ৫৭ নাম্বার আয়াতে।  আল্লাহ বলেন “আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা

এই দরবেশবাদ, এই বৈরাগ্যবাদ প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের উপর লিপিবদ্ধ করে দেইনি।”

সুতরাং  বৈরাগ্যবাদ, সন্ন্যাসবাদ, দরবেশবাদ মানুষেরাই উদ্ভাবন করেছে, আবিষ্কার করেছে।

মহান আল্লাহ এটা তাদের উপর ধার্য করেন নি।  বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য

তারা নিজেরাই এটা উদ্ভাবন করেছে, কিন্তু এটাও তারা সঠিকভাবে পালন করেনি।

তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল আমি তাদেরকে তাদের ন্যায্য পুরস্কার দিয়েছি। তবে তাদের মধ্যে অধিকাংশই অবাধ্য, পাপাচারী, পাপীষ্ঠ। 

আমাদের আজকের আলোচনার খুবই ( impact­ful) গুরুত্বপূর্ণ  আয়াত হচ্ছে সূরা হাদীদের এই ২৭ নাম্বার আয়াত।

আল্লাহ বলছেন যে

“এই সন্ন্যাসবাদ

এই দরবেশবাদ

এই বৈরাগ্যবাদ

এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কারো উপর বিধান হিসেবে দেননি। তবে মানুষই আত্মশুদ্ধির  জন্য এই সম্পদের প্রাচুর্যের মোহ মায়া থেকে বের হওয়ার জন্য এই দরবেশবাদকে, বৈরাগ্যবাদকে, সন্ন্যাসবাদকে  উদ্ভাবন করেছে।

কিন্তু শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে  আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এটাকে অস্বীকার করেনি।নিন্দাও করেন নি। তিনি বলেছেন যে আমি এটা তাদের উপর ধার্য করিনি বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য

তারা নিজেরা এটা উদ্ভাবন করেছে। 

তার মানে আমরা বুঝলাম তাদের সত্যিকারের উদ্শ্যে কিন্তু আল্লাহ জানেন কেননা মনের খবর তো তিনি জানবেনই যে তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল? সেটা ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

মানুষ যখন এই অর্থ সম্পদের মোহ মায়া লোভ লালসা থেকে বের হতে পারবে তখনই

সে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ পরে আবার বলছেন যে

এটাও তারা সঠিকভাবে পালন করেনি।

এটা যে চরম  বাস্তব তাতো আমরা আমাদের চারপাশে তাকালেই দেখতে পাই।  অনেক দরবেশ আছে যারা, পীর ফকির, সাধু সন্নাসী আছে, দয়াল বাবা আছে যারা ধান্দাবাজ ও প্রতারক। 

এই দরবেশী সন্নাসী পর্দার আড়ালে তারা মানুষের  ধন সম্পদ কেড়ে নেয়। সুরা তাওবার ৩৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন- “ হে মু’মিনগণ! আলেম ও দরবেশ ‑পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই ভুয়া কর্মকান্ডের মাধ্যমে লোকের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ ও গ্রাস করে থাকে এবং মানুষকে আল্লাহ্র পথ হতে নিবৃত্ত করে। আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহ্ র পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।

এখনো আমরা অনেক পীর দরবেশ গাউছ কুতুব ফকির সাধুর  নাম শুনি যাদের অধিকাংশই হচ্ছে এই প্রতারক ও অসৎ। 

সঠিকভাবে তারা এই সন্নাসবাদ, দরবেশবাদ পালন করেনি। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শেষে আবার বলছেন যে তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল আমি তাদেরকে তাদের ন্যায্য পুরস্কার দিয়েছি। 

তার মানে এটা যদি আপনি করতে পারেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অবশ্যই আপনাকে ন্যায্য পুরস্কার দেবেন। তবে বেশিরভাগই হবে অবাধ্য ফাসিক পাপাচারী। 

সুতরাং আমরা যত পীর অলি আওলিয়া গাউছ কুতুর, সাধু, সন্নাসী ফকির দরবেশ দেকতে পাই যারা বনে জঙ্গলে চলে যায় বা আলাদা একটা খানকা বা দরগাহ খোলে দুনিয়ার প্রতি যাদের কোন মোহমায়া নাই। স্ত্রী পরিবার,  ঘর সংসার সবকিছু বাদ দিয়ে যারা জীবনটাকে বেছে নিয়েছে

তাদের অধিকাংশই হচ্ছে পাপাচারী ফাসিক।  সেটাও এই আয়াতে পরিষ্কারভাবে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন। আবার এর মাধ্যমে আপনি ইচ্ছে করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।

 আপনি যদি খুব চেষ্টা করেন যে আপনি আপনার নফসকে পরিশুদ্ধ করবেন নফসের মধ্যে যে

সম্পদের প্রতি  মোহ মায়া থাকে যার জন্য মানুষ ঘুষ খায়, সুদ খায়, দুর্নীতি করে , জুলুম করে। মানুষ যত পাপ করে তার নব্বই ভাগই হচ্ছে এই সম্পদের প্রতি মোহমায়া।

সুতরাং নফসের ভেতর থেকে এই মোহ মায়া বের করতে পারলে অটোমেটিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরো ছোট ছোট পাপই আপনার থেকে চলে যাবে আথবা নিরব বনে জঙ্গলে একাকী বসে বসে আপনি সেসব পাপ করার সুযোগই পাবেনা। 

নফসকে পরিশুদ্ধ করা যদি আপনার পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য হয় যে আপনি কিছুতেই পারছেন না

তাহলে  তরিকা এই মারেফত আপনি প্রয়োগ করতে পারেন। আপনি সাধু, সন্নাসী, দরবেশী । তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে এটা কিন্তু আল্লাহ কর্তৃক প্রবর্তিত নয়।

যারা যারা আপনাকে  কামালিয়াত আহালিয়াত সাহালিয়াত মারেফাত বিভিন্ন ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে

আপনার মাথা খারাপ করে ফেলতে চায় তাদের খপ্পর থেকে আপনাকে আগে বেঁচে থাকতে হবে

তারপর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আপনি এই পথ বেছে নিতে পারেন।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে এই ধন সম্পদের প্রাচুর্য মোহ মায়া থেকে

নিজের নফসকে দূরে রাখার পরিশুদ্ধ করার তৌফিক দান করুক এবং এই পরিশুদ্ধ নফস নিয়ে যেন আমরা মৃত্যুবরণ করতে পারি তার জন্য চেষ্টা সাধনায় নিজেদের রত থাকার মানসিক শক্তি দান করুক এবং হাশরের মাঠে যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বলেন সূরা ফজরের সেই বিখ্যাত আয়াত- ইয়া আইয়াতু হান্নাফছুল মুতমাইন্নাহ ইরজি‘ঈইলা-রাব্বিকি রা-দিয়াতাম মারদিইয়াহ।ফাদখুলী ফী ‘ইবা-দী ওয়াদখুলী জান্নাতী।– 

            হে প্রশান্ত নফস!  [13:28, 91:9]

তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।

অতঃপর আমার (প্রিয়) বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও।

আর আমার জান্নাতে প্ৰবেশ কর।

শেষ করছি সুরা লাইণের বিখ্যাত ৯ ও ১০  আয়াত দিয়ে-  কাদ আফলাহা মান ঝাক্কা-হা। ওয়া কাদ খা-বা মান দাছ ছা-হা-।                                                                                    নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে (তার নফসকে) পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে-ই ব্যর্থ হয়েছে, যে তাঁর (নাফস)-কে নোংরা-ময়লা-কলঙ্কিত‑কলুষিত‑দুষিত করেছে।

রিজওয়ান মাহমুদ খান- ব্যবস্থাপনা পরিচালক ( তাজকিয়া নফস)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *