Al-Ma’idah

Uncategorized

মায়েদা

  1. তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনো! তোমরা তোমাদের ও‘য়াদা/অঙ্গীকার/প্রতিশ্রিুতিগুলি পূর্ণ করবে।তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তু/পশু হালাল করা হয়েছে,তবে যেগুলি হারাম হওয়া (সম্পর্কে তোমাদের উপর পবিত্র কুরআনের আয়াত নাজিল করা হয়েছে) সেগুলি এবং ইহরাম বাঁধা অবস্থায় তোমাদের শিকার করা জন্তুগুলি হালাল  মনে করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হুকুম করে থাকেন।  [5:3]
  2. তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনো! তোমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের, পবিত্র মাসসমূহের,(হজ্বে পাঠানো ) উপহার, চাবি/গলায় মালা-পরানো চিহ্নিত (পশুর) এবং রবের সম্মান ও সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র গৃহের (কাবার) উদ্দেশ্যে গমনকারী (হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান,ইহুদি) জাতিদের অসম্মান করো না। যখন তোমরা হালাল হও, তখন শিকার কর।তোমাদেরকে মসজিদুল হারামে যেতে বাধা দিয়েছিল বলে কোন সমপ্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে বাড়াবাড়ি /সীমা ছাড়িয়ে যেতে উৎসাহিত/প্ররোচিত না করে। তোমরা কল্যাণকর/নেক/সৎ/ভালো/মহৎ কাজ ও সাবধানতা/সতর্কতার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও শক্রতা/বাড়াবাড়ি/সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আর আল্লাহর সতর্কতা/সাবধানতা অবলম্বন করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। 
  3. তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে (আগেই) মৃত, রক্ত ও শূকরের গোশত এবং যা  আল্লাহ ছাড়া অপরের নামে উৎসর্গীকৃত ; শ্বাস রোধে মারা জন্তু, আঘাতে মৃত জন্তু, উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু, সংঘর্ষে মৃত এবং  হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু- তবে যা তোমরা (যবাহ দ্বারা) পবিত্র করেছ তা ব্যতীত। আর যা কষ্ট দিয়ে জবাই করা হয়েছে আর ভাগ্য নির্ণায়ক বা লটারিও হারাম। এগুলো পাপিষ্ঠ/ফাসিকি কাজ। যারা (আল্লাহর আয়াত অস্বীকার/অবিশ্বাস/গোপন)কুফরী করে, আজ তারা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলাম/শান্তি/আত্মসমর্পনকে। তবে যে তীব্র ক্ষুধায় বাধ্য হবে, কোন পাপের প্রতি ঝুঁকে নয় (তাকে ক্ষমা করা হবে), নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[নাছাব=কষ্ট দিয়ে ৩৮:৪১]
  4. তোমার কাছে তারা প্রশ্ন করে/জানতে চায় ‑কি কি জিনিস তাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে? তুমি বলে দাও, সমস্ত ভালো/উত্তম বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।আর তোমাদের শিকারি কুকুর, সেগুলোকে তোমরা যেভাবে শিখিয়েছো, আল্লাহ্ তাদেরকে সেভাবে শিখিয়েছেন,তারা যা শিকার করে আনে তা তোমরা খাও এবং ওগুলিকে শিকারের জন্য পাঠানোর সময় আল্লাহর নাম স্মরণ কর।  আর তোমরা সবাই আল্লাহর তাকওয়া/সতর্কতা/সাবধানতা অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ খুব দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।”                                                                 [তৈয়ব= ভালো/উত্তম ৪:২ ; ৭:৫৮; ৩৫:১০; ৪৫:১৬; ৬১:১২; কালাব=কুকুর ৭:১৭৬; ১৮:১৮]
  5. আজ  তোমাদের জন্য সমস্ত ভালো/উত্তম জিনিস হালাল করা হল । আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাবারও তোমাদের জন্য হালাল করা হলো। আর তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য হালাল করা হলো।  আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হল ; যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করবে, তবে প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রেয়সী-সঙ্গী/উপপত্নী হিসেবে নয়। আর যে ঈমানের সাথে কুফরী করবে, অবশ্যই তার আমল বরবাদ হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।             [তৈয়ব= ভালো/উত্তম ৪:২ ; ৭:৫৮; ৩৫:১০; ৪৫:১৬; ৬১:১২]
  6. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো!যখন তোমরা সংযোগের জন্যে প্রস্তুত হবে তখন মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধোবে, মাথা মুছবে এবং গোড়ালির ওপরের দুইগিঁট (কাবা) পর্যন্ত পা ধোবে।যদি তোমরা অপবিত্র/দূরেও থাকো প্রাণবন্ত/ঝকঝকে/নির্মল হয়ে আসবে।আর তোমরা যদি অসুস্থ/রোগাক্রান্ত হও (এবং পানি ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা থাকে) কিংবা সফরে থাক, অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে (মলমূত্র ত্যাগ করে) আসে, কিংবা তোমরা নারীদের সংসর্গে যাও আর (অযু/গোসল করার জন্য) পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম/সংকল্প করবে অর্থাৎ ঐ মাটি দ্বারা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মুছে/বুলিয়ে/ছুঁয়ে দেবে।আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা/সংকীর্ণতা/সংকোচ/ কুন্ঠাবোধ/কষ্ট/অপরাধ/দোষ/বাধা/অসুবিধা করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র/প্রাণবন্ত/নির্মল/বিমুক্ত/ঝকঝকে করতে এবং তার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।                                                               [কাবা= গিট,গোড়ালি,নব্য যুবতী=৫:৯৫,৯৭; ৭৮:৩৩ তহার= ২:২২২ প্রাণবন্ত/নির্মল/বিমুক্ত/ঝকঝকে/স্বচ্ছতা/পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে। 56:79 জুনুব=দূরে/পাশে/দিকে ৪:৩৬; ১৪:৩৫; ১৭:৬৮,৮৩; ১৯:৫২; ২০:৮০; ২৮:২৯,৪৪,৪৬; ৩৭:৮; ৪:৩৬,১০৩; ৯:৩৫;৩২:১৬; ২২:৩৬; কর্তব্য =৩৯:৫৬;   পাশ কাটানো/উপেক্ষা ৮৭:১১ তায়াম্মুম= সংকল্প ২/২৬৭ ছয়িদ= উর্ধ,৩:১৫৩; দুঃসহ ৭২:১৭ কঠিন চড়াই উৎরাই মিশন ৭৪:১৭; উপরে ওঠা ৬:১২৫; ৩৫:১০ মাছেহ= বোলানো, আলতো করে ছুয়ে দেয়া ৩৮:৩৩ হেরাছ+ সংকীর্ণতা/সংকোচ/ কুন্ঠাবোধ/কষ্ট/অপরাধ/দোষ/বাধা/অসুবিধা ৪:৬৫; ৬:১২৫; ৭:২; ৯:৯১; ২২:৭৮;২৪:৬১; ৩৩:৩৭; ৩৩:৩৮; ৩৩:৫০; ৪৮:১৭; 
  7. তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামাত এবং তাঁর সেই অঙ্গীকার স্মরণ কর, যার দ্বারা তিনি তোমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ করেছিলেন,যখন তোমরা বলেছিলে, আমরা (আল্লাহর আদেশসমূহ) ভালোভাবে শুনলাম ও আনুগত্য মেনে নিলাম।আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া/সতর্কতা/সাবধানতা অবলম্বন কর;  নিশ্চয়ই তিনি (ছুদুর) অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে পূর্ণ খবর রাখেন। [1:4–5]
  8. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! তোমরা আল্লাহর জন্য ইনসাফ/ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও/অবিচল থাকো।                                                                                    কোন ( হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান,ইহুদি,বাঙালি,চাইনিজ,কোরিয়ান,জাপানিজ) সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন সুবিচার বা ইনসাফ  বর্জনে/ত্যাগ করতে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার করবে।এটা তাকওয়া/পরহেজগারীর অধিকতর নিকটবর্তী/খুবই ঘনিষ্ঠ। আর তোমরা আল্লাহর সতর্কতা/সাবধানতা/তাকওয়া অবলম্বন কর। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ নিশ্চয়ই তার খবর রাখেন।
  9. যারা ঈমান এনেছে ও সংশোধনের কাজ করেছে, তাদেরকে আল্লাহ ওয়াদা/প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে,তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। 
  10. আর যারা অবজ্ঞা/অবহেলা/উপেক্ষা/কুফরী করে এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে তারাই হচ্ছে জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী। [69:27]
  11. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো,তোমাদের উপরে আল্লাহ্‌র নিয়ামত স্মরণ করো –যখন একদল লোক তোমাদের বিরুদ্ধে হাত বাড়াতে চেয়েছিল, তখন আল্লাহ তোমাদের (ক্ষতিসাধন করা) থেকে তাদের হাত ঠেকিয়ে রেখেছিলেন, কাজেই তোমরা আল্লাহর  সতর্কতা/সাবধানতা/তাকওয়া অবলম্বন কর।মুমিনদের তো  আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত। [4:71, 8:60]
  12. নিশ্চয়ই আল্লাহ ইসরাইলের বংশধর থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন, আর তাদের মধ্য থেকে বারজন প্রধান/দলনেতা/সর্দার নিযুক্ত করেছিলেন।আল্লাহ বলেছিলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, যদি তোমরা সংযোগ প্রতিষ্ঠা করো ও পরিশুদ্ধ হও  আমার রসূলগণের প্রতি ঈমান আন, তাদেরকে সম্মান/মর্যাদাপূর্ণ আচরণ কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে অবশ্যই আমি তোমাদের পাপগুলো মুছে দেবো এবং অবশ্যই তোমাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত’।কিন্তু এর পরও তোমাদের মধ্যে যে কুফরি করবে সে অবশ্যই সত্য সঠিক সরল পথ হারিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।”                                                                        [২:২৬১  [৫:১২; ৬৪:১৭; ৫৭:১১; ৫৭:১৮; ২:২৪৫] 
  13. তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে লা‘নাত করেছি আর তাদের হৃদয়কে আরো শক্ত‑কঠিন করে দিয়েছি। তারা আল্লাহর কালাম (এর সঠিক অর্থ) বিকৃত করেছিলো (ইজমা,কিয়াস,রিজাল,সিরাত,শানে নুজুল,তাফসীর,ইজতিহাদের মাধ্যমে)। এবং তাদেরকে যে জিকির দেয়া হয়েছিল  তারা তার মধ্য হতে এক বড় অংশকে ভুলে গিয়েছিলো। আর তুমি সবসময় তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সকলকেই (আল্লাহর কালামের) খিয়ানত করতে দেখবে।সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে যাও/উপেক্ষা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ নেক/উত্তম/ভালো/সৎকর্মশীল- মুহসিনদেরকে ভালবাসেন।
  14. আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা/সাহায্যকারী/খ্রিষ্টান’,আমি তাদের থেকেও অঙ্গীকার নিয়েছিলাম;কিন্তু তাদেরকে যে জিকির/উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তারাও তার সৌভাগ্যের/গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভুলে গিয়েছে।এজন্যই আমি কেয়ামত পর্যন্ত তাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ উসকে দিয়েছি। আর তারা যা করত আল্লাহ অচিরেই তাদেরকে তা জানিয়ে দেবেন।                                          হাজ্বা:-সৌভাগ্য ২৮:৭৯; ৪১:৩৫  [খ্রীষ্টানদের দল উপদল=ক্যাথলিক, অর্থডক্স, প্রোটেস্টান্ট (ইভানজেলিক,লুথেরান,ব্যাপটিস্ট,পেনটেকোস্টাল,রিফর্মড,এ্যাঙ্গলিকান,মেথডিস্ট,কোয়াকার) আদি খ্রিষ্টান (মনাফিজ,ডোডোক্স ),আদি কিপ্পুর,সেভেন্থ‑ডে অ্যাডভেন্টিস্ট,জিহোভাস উইটনেস,মরমন / চার্চ অব জেসাস ক্রাইস্ট অব ল্যাটার ডে সেন্টস]
  15. হে কিতাবধারীরা! তোমাদের কাছে আমার (এই) রাসূল এসে পড়েছে,(তাওরাত ও ইনজীল) কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে,তার অনেক কিছু তোমাদের কাছে সে প্রকাশ করছে আবার অনেক কিছু এড়িয়ে যাচ্ছে । (জেনে রাখো) অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নুর ও সুস্পষ্ট/পরিষ্কার কিতাব (কুরআন) এসেছে।
  16. (এই কিতাব) দ্বারা আল্লাহ্ তাকে হেদায়ত করেন যে শান্তির পথে  নিরন্তর/অবিরাম তাঁর সন্তষ্টি লাভ করতে চায়।আর তাদের বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে তাঁর ইচ্ছায়, আর তাদের হেদায়ত/পরিচালিত করেন সহজ-সঠিক পথের দিকে।  [ইত্তেবা=একটানা/ক্রমাগত/নিরন্তর/অবিরাম/নিরবচ্ছিন্ন/অবিরত/টানা/ধারাবাহিক/ক্রমবর্ধমান/অবিচ্ছিন্ন  ৪:৯২; ৫৮:৪]
  17. মসীহ্ (ঈসা) ইবনে মারইয়ামকে যারা ঈশ্বর/গড/ আল্লাহ বলে,নিশ্চয়ই তারা কাফির হয়ে গিয়েছে। যদি তাই হয়, তবে বল- যদি আল্লাহ মসীহ ইবনে মরিয়ম, তাঁর মা (মেরি) এবং যমীনে/ভূমন্ডলে যারা আছে, তাদের সবাইকে ধ্বংস করতে চান, তবে এমন কারও সাধ্য আছে কি যে আল্লাহর কাছ থেকে তাদেরকে বিন্দুমাত্রও বাঁচাতে পারে? আর আসমানসমূহ, যমীন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে , তার রাজত্ব আল্লাহর জন্যই। তিনি যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
  18. ইয়াহূদী ও নাসারা(খ্রিষ্টান)রা বলে,“আমরা আল্লাহর সন্তান (চিলড্রেন অফ গড) ও তাঁর প্রিয়জন।” বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন? বরং তোমারও অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ মানুষ মাত্র।তিনি যাকে ইচ্ছা পরিত্রাণ/ক্ষমা  করবেন এবং যাকে ইচ্ছা (জাহান্নামে) শাস্তি দিবেন।” নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তাতে (রাজাধিরাজ) আল্লাহরই সাম্রাজ্য এবং তাঁর দিকেই (সবাইকে) ফিরে যেতে হবে।
  19. হে কিতাবধারীরা! রাসূলদের আগমন দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পর‑তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসে পৌঁছেছে, তোমাদের কাছে  বয়ান/বর্ণনা করছে (আমার আয়াত) না হলে তোমরা বলতে, “আমাদের কাছে (জান্নাতের) কোন সুসংবাদদাতা কিংবা (জাহান্নাম সম্পর্কে) কোন সতর্ককারী আসেনি।” সেজন্যই এখন তোমাদের কাছে একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী এসেছে। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
  20. আর যখন মূসা তার কওমকে বলল, ‘হে আমার কওম, স্মরণ কর তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমত, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে নবী বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে রাজা-বাদশাহ বানিয়েছেন, আর তোমাদেরকে দান করেছেন এমন কিছু যা  বিশ্বভুবনে অন্য কাউকে দেননি।
  21. হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র/মুকাদ্দাছ ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের  পিছনের দিকে ফিরে যেয়ো না, তাহলে তোমরা সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।                                                                                                           [পবিত্র/মুকাদ্দাছ ভূমি = 2:125, 6:137, 12:58, 12:94, 21:71, 23:50, 26:59, 29:26, 30:3, 44:3]
  22. তারা বলল, ‘হে মূসা! নিশ্চয়ই সেখানে এক দুর্দান্ত‑শক্তিশালী কওম রয়েছে।যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়, আমরা কিছুতেই সেখানে  প্রবেশ করবনা।হাঁ, তারা যদি সেখান থেকে বেরিয়ে যায় তবে অবশ্যই আমরা (সেখানে) প্রবেশ করব। 
  23. যারা (আল্লাহকে) ভয় করছিল তাদের মধ্যে দু’জন লোক যারা আল্লাহর নিয়ামাতপ্রাপ্ত তারা বলল,তোমরা তাদের (মোকাবেলার) উদ্দেশ্যে দরজায় প্রবেশ কর।প্রবেশ করলেই তোমরা বিজয়ী হবে।(বিজয়ের ব্যাপারে)আল্লাহর উপরই তোমরা ভরসা কর যদি তোমরা মুমিন হও’।                              [এই দুই ব্যক্তি ছিলেন যশোয়া ও কালিব Bible; Num­bers 14:6–30]
  24. তারা বলেছিল, “হে মূসা! ওরা যতক্ষণ ভিতরে থাকবে ততক্ষণ আমরা কিছুতেই সেখানে ঢুকব না। সুতরাং (তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হলে)  তুমি আর তোমার রব্ব চলে যাও এবং তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আমরা তো এখানেই বসে থাকব। 
  25. মূসা বলল, “হে আমার রব!  আমি ও আমার ভাই ছাড়া অন্য কারো ওপর আমার কোন ক্ষমতা নেই;সুতরাং তুমি আমাদের দুজনকে (এই) অবাধ্য/বিদ্রোহী/ফাসিক লোকদের থেকে আলাদা করে দাও।”
  26. আল্লাহ বললেন, “তাহলে এই (পবিত্র ভূমি) তাদের জন্য চল্লিশ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে।(এ সময়) তারা যমীনে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকবে।সুতরাং তুমি অবাধ্য‑পাপিষ্ঠ‑ফাসিক কওমের জন্য আফসোস করো না’। [2:259, 17:5–6]
  27. আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ সঠিকভাবে পাঠ করে শুনিয়ে দাও; যখন তারা (আল্লাহর উদ্দেশ্যে) একটি করে কোরবানি পেশ করেছিল।তখন তাদের একজনের কোরবানি কবুল হল,অন্যজনের কুরবানি কবুল করা হল না।তখন দ্বিতীয়জন (প্রথমজনকে) বলল, “আমি তোমাকে খুন করে ফেলব।” প্রথমজন বলল, “আল্লাহ তো কেবল মোত্তাকীদের কোরবানি কবুল করেন।”
  28. আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি আমার দিকে হাত বাড়ালেও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য কখনো তোমার দিকে হাত বাড়াব না, (কারণ) আমি বিশ্ব জগতের রব আল্লাহকে ভয় করি।
  29. আমি চাই যে, (আমার দ্বারা কোন পাপ না হোক) তুমি আমার পাপ এবং তোমার পাপ (দুজনেরই) পাপ মাথায় তুলে নাও; তারপর তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও,আর সেটিই হচ্ছে যালিমদের প্রতিদান’।
  30. অতঃপর তার নফস তাকে প্রলুব্ধ করল তার ভাইকে হত্যা করতে।ফলে সে তাকে হত্যা করল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
  31. তখন আল্লাহ একটি কাক  পাঠালেন, সে মাটি খুঁড়তে লাগল, যাতে (হত্যাকারী ভাইকে) দেখাতে পারে, কীভাবে সে ভাইয়ের লাশ গোপন করে লুকাবে।এটা দেখে সে বলল, “হায়রে! আমি কি আমার ভাইয়ের মৃতদেহটি লুকাতে এই কাকটির মতও বুদ্ধি খাটাতে পারলাম না?” অতঃপর সে অনুতপ্ত‑লজ্জিত হল।
  32. এ কারণেই আমি বনী-ইসরাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছিলাম যে, যে কেউ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করবে, হত্যার অপরাধ ছাড়া, কিংবা দেশে ফ্যাসাদ‑বিশৃঙ্খলা-মহা- বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, সে সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করার (পাপে মহা-পাপিষ্ঠ হবে)। আর যে ব্যক্তি একজন মানুষের প্রাণ বাঁচাবে, সে সমগ্র মানবজাতির প্রাণ বাঁচানোর (পূণ্য অর্জন করবে)।  আমার রসূলগণ তো তাদের কাছে সুস্পষ্ট দলিল‑প্রমাণ নিয়ে এসেছিল।  তবুও তাদের মধ্যে অনেকেই এর পরেও যমীনে বাড়াবাড়ি করতেই থাকে।
  33. যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর যমীনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা  ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এই যে,তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে  কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত‑পা কেটে দেওয়া হবে অথবা তাদেরকে যমিন থেকে নির্বাসিত করা হবে।   এটা হল তাদের জন্য দুনিয়ার লাঞ্ছনা। (এ ছাড়া) আখেরাতেও তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ মহা শাস্তি।    [4:64]
  34. (তবে এ শাস্তি) তাদের জন্য নয় যারা তোমাদের আয়ত্বে আসার পূর্বে তাওবা করবে/ফিরে আসবে। জেনে রেখ, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
  35. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে সতর্ক হও এবং তাঁর ওয়াছিলা/নৈকট্যলাভের উপায় খোঁজ করো এবং তাঁর পথে (কুরআন দিয়ে) জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [কুরআন দিয়ে সবচেয়ে বড় জিহাদ=২৫:৫২] 
  36. জমিনে যা কিছু আছে তা সব এবং তার সাথে আরো সমপরিমাণ সম্পদ যদি কাফেরদের হয় এবং তারা রোজ কেয়ামতের শাস্তি থেকে মুক্তি/নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য এগুলো বিনিময় হিসেবে দিতে চায় তবুও তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
  37. তারা আগুন থেকে বের হতে চাইবে; কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না,বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।
  38. যে পুরুষ ও যে নারী চুরি করে, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও, যাতে তারা নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিফল পায় (এবং) আল্লাহর পক্ষ হতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আর আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
  39. কিন্তু অন্যায়/জুলুম করার পর কেউ তাওবা করলে/ফিরে আসলে এবং (নিজেকে) সংশোধন করলে, আল্লাহ তার দিকে ফিরে আসবেন/তাওবা করবেন। আল্লাহ হলেন বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
  40. তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনের  রাজত্ব শুধু আল্লাহরই? তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন! আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
  41. হে রাসূল, তোমাকে যেন তারা চিন্তিত না করে, যারা কুফরীর দিকে দ্রুতবেগে ছুটে চলে,  –যারা মুখে বলে, ‘ঈমান এনেছি’ অথচ তাদের অন্তর ঈমান আনেনি ।এবং যারা ইহুদী; মিথ্যাবলার জন্যে তারা (গুপ্তচর বৃত্তি করে) কান পেতে শোনে। তারা অন্যদলের (গুপ্তচর), যারা তোমার কাছে আসেনি।তারা (আল্লাহর) কালাম এর সঠিক অর্থ বিকৃত করে  (এবং শানে নুজুল,তাফসির,সিরাতের মাধ্যমে) প্রসঙ্গ বদলে ফেলে।তারা বলে — “তোমাদের যদি এই দেওয়া হয় তবে তা গ্রহণ করো, আর যদি তোমাদের এই দেয়া না হয় তবে সাবধান হও।” আসলে আল্লাহ যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তার জন্য তুমি আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করার ক্ষমতা রাখ না। ওরা হল সেইসব লোক যাদের  কলব/অন্তরসমূহকে আল্লাহ পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতে কঠিন শাস্তি। [মাওয়াদিহ=প্রসঙ্গস্থান]
  42. তারা মিথ্যা শুনতে খুবই আগ্রহশীল এবং অবৈধ সম্পদ খাওয়াতে অত্যন্ত আসক্ত । সুতরাং যদি তারা তোমার কাছে (বিচারের জন্য) আসে, তাহলে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিবে কিংবা তাদেরকে এড়িয়ে চলবে। আর তাদেরকে যদি এড়িয়ে চলো, তাহলে তারা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এবং যখন বিচার‑ফায়সালা করবে তখন ইনসাফের ভিত্তিতেই তাদের মধ্যে ফায়সালা করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এমন বিচারকদেরকে খুবই ভালোবাসেন, যারা ইনসাফের ভিত্তিতে বিচার‑ফায়সালা করে।
  43. তারা কিভাবে তোমার থেকে ফায়সালা নিতে চায়, যখন তাদের কাছে তাওরাত রয়েছে, যার ভেতর আল্লাহর হুকুম‑বিধান‑ফায়সালা লিপিবদ্ধ আছে? তা সত্ত্বেও তারা এরপর মুখ ফিরিয়ে নেয় ‑কারণ,তারা মু’মিনই নয়।
  44. নিশ্চয়ই আমি তাওরাত নাযিল করেছিলাম;তাতে ছিল হিদায়াত ও নুর,এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফায়সালা প্রদান করত অনুগত নবীগণ এবং রববানী ও ধর্মবিদ‑পন্ডিতগণ।  কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল। আর তারা ছিল এর উপর সাক্ষী। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় করো আর আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে সামান্য মূল্য তোমরা গ্রহণ করো না।আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা  বিচার‑ফায়সালা করে না তারাই কাফের। 
  45. এবং আমি তাতে (তাওরাতে) তাদের জন্য (বিধান) লিখে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান ও দাঁতের বদলে দাঁত।  আর সব রকমের আঘাত বা জখমের কিসাস তথা বদলা ঠিক এই হিসেবে। কিন্তু যদি কেউ তা সাদকা করে দেয়, তবে সেটা তো তার জন্যে কাফফারা হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই যালিম। 
  46. আর আমি তাদের পেছনে ঈসা ইবনে মারইয়ামকে পাঠিয়েছিলাম । সে ছিল তার সামনে বিদ্যমান তাওরাতের সত্যায়নকারী। আমি তাকে ইনজীল (কিতাব) দিয়েছিলাম, যাতে ছিল হিদায়াত ও নুর যা তার পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতের সত্যায়নকারী আর মোত্তাকীদের জন্য হিদায়াত ও ওয়াজ‑নসীহত।
  47.  আর ইনজীলের অনুসারীগণ তাতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যেন বিচার‑ফায়সালা করে আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা বিচার‑ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক।
  48. আর আমি তোমার কাছে সত্যসহ এই কিতাব (আল‑কোরআন) নাযিল করেছি যা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী  ও সেগুলোর তদারককারী। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি সে (কুরআন) অনুযায়ী তাদের মাঝে  বিচার‑ফায়সালা কর এবং যে সত্য (কিতাব) তোমার কাছে এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল‑খুশীর অনুসরণ করো না । তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটা করে শরীয়ত ও মানহাজ/আমলপদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি । আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত/একটিমাত্র জাতি করতে পারতেন, কিন্তু  (তা করেননি) যাতে তিনি তোমাদেরকে যা (আলাদা শরীয়ত ও মানহাজ) দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করতে পারেন (কর্মে তোমাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ)। সুতরাং তোমরা সৎ/ভাল/মহান/মহৎ/কল্যাণকর/মানবিক কাজে প্রতিযোগিতা কর (হিন্দু/বৌদ্ধ,ইহুদী,খ্রিষ্টানদের সাথে পাল্লা দিয়ে)। আল্লাহর কাছেই তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে।তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন যে (সব ধর্মীয়)  বিষয়ে তোমরা মতবিরোধ করছিলে।। [সুরা মুলক‑২  ; 2:101, 2:148, 3:78, 21:92–93, 23:52]
  49. আর (আমি আদেশ করছি যে)  তুমি তাদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করবে আল্লাহ যেই (কুরআন) নাযিল করেছেন  সেই (কুরআন) অনুযায়ী ।আর তুমি তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করবে না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক তারা যেন আল্লাহ তোমার প্রতি যেই (কিতাব)  নাযিল করেছেন তার কোন (সামান্য) অংশ থেকেও তোমাকে ফেতনায় ফেলতে না পারে।অতএব  যদি তারা (কিতাব থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখো, আল্লাহ্ তাদেরই কোনো পাপের কারণে তাদেরকে বিপদে (মুসিবতে) ফেলতে চান।আর নিশ্চয়ই মানুষদের অধিকাংশই পাপিষ্ঠ‑ফাসেক। 
  50. তবে কি তারা জাহেলিয়াত যুগের বিচার‑ফায়সালা চায়? দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের কাছে বিচার‑ফায়সালা প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে উত্তম ফায়সালাকারী?
  51. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টান (নাসারা) দেরকে আউলিয়া/অভিভাবক  হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের আউলিয়া ।আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের অতি ঘনিষ্ঠ হবে, সে নিশ্চয়ই তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।আল্লাহ কখনো জালেম কওমদেরকে হেদায়েত করেন না। [ইহুদি ও খ্রিষ্টানরাও বন্ধু ও ইনসাফের হকদার= 60:7- 9]  [ইয়াতাওয়াল্লা= অতি ঘনিষ্ঠ/মুখ ফিরিয়ে নেয়া-৩৩:৬; ৩:৬৮; ৫:১০৭; ২:৬৪,৮৩,১৩৭; ৫:৪৩,৪৯]
  52. সুতরাং যাদের অন্তরে অসুখ রয়েছে তুমি তাদেরকে দেখবে তারা তাদের (অর্থাৎ ইয়াহূদী, নাসারা মুশরিকদের) দৌড়ে গিয়ে বলবে, আমাদের ভয় হয় আমরা কোন বিপদের চক্করে পড়ে না যাই।হয়তো আল্লাহ বিজয় দান করবেন কিংবা নিজের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেবেন যাতে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছিল তার কারণে অনুতপ্ত হবে।
  53. আর ঈমানদাররা বলবে, এরা কি তারাই যারা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে বলেছিলো যে, তারা অবশ্যই তোমাদের সাথেই আছে?” তাদের আমলসমূহ  বরবাদ‑ব্যর্থ  হয়ে গেছে যার ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হয়ে যাবে।
  54. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো তোমাদের মধ্যে থেকে যে কেউ তার দ্বীন‑জীবন আদর্শ থেকে মুরতাদ হয়ে ফিরে যাবে (এতে ইসলামের কোন ক্ষতি নেই, কেননা) , আল্লাহ্ তবে শীঘ্রই একটি কওম নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে।  তারা মুমিনদের উপর বিনম্র‑কোমল এবং কাফিরদের উপর কঠোর হবে। তারা আল্লাহ্‌র পথে (কুরআন দিয়ে) জিহাদ করবে। আর কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয়-পরওয়া করবেনা। এটি আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান‑মর্যাদা। যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, মহাজ্ঞানী।  
  55. তোমাদের বন্ধু তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও (কুরআনের সতর্কবাণীতে বিশ্বাসী) মুমিনগণ –যারা সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে ‚পরিশুদ্ধ হয় এবং তারা নম্র‑ভদ্র‑বিনীত । [সালাত=সংযোগ/সংযুক্ত/যুক্ত/মিলন/যোগ/যোগাযোগ/কানেকশন/মিলিত/সম্পৃক্ত/সম্পর্ক/লিংক/নেটওয়ার্ক/সংস্পর্শ/মহামিলন  2:27; 2:157; 9:99,103; 11:87; 13:22;33:43.56;   28:51; 28:35; 13:21,25; 11:70; 4:90;70:22,23,34;  74:43; 75:31; 98:5; 107:4,5]  [কুরআন আল্লাহ ও দরিদ্র অসহায়দের সাথে সালাত প্রতিষ্ঠা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ] [যাকাত=নিষ্পাপ/নিষ্কলঙ্ক/নির্দোষ/পাপমুক্ত//মাছুম/খাটি/বিশুদ্ধ/পরিশুদ্ধ/নির্মল/নিখুত/নির্ভেজাল/শুদ্ধ/পবিত্রতা/পরিশুদ্ধতা 18:81, 92;18, 79:18, 19:13, 19:31, 18:19, 2:129,251; 3:164; 62:2; 35:18; 20:76; 87:14; 91:9; 9:103; 23:4; 53:32; 4:49; 24:21,30; 2:174; 4:77]    [রুকু= বিনয়ী,বিনম্র,বিনীত (অনুবাদ :- তাইসিরুল কুরআন,বয়ান ফাউন্ডেশন,মুফতি ত্বকি উসমানি,মুজিবুর রহমান,ফজলুর রহমান,মাওলানা মুহিউদ্দিন খান,ইসলামিক ফাউন্ডেশন  এর বাংলা কুরআন অনুবাদ]
  56. আর যারা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও (কুরআনের সতর্কবাণীতে বিশ্বাসী) মুমিনদেরকে অতি ঘনিষ্ঠ (বন্ধু) বানাবে (তারাই আল্লাহর দল), আল্লাহর এই দলই বিজয়ী হবে।
  57. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো!  তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-ঠাট্রা ও খেল‑তামাশা মনে করে তাদেরকে ও কাফেরদেরকে তোমরা আউলিয়া হিসেবে গ্রহণ করো না আর যদি তোমরা (কুরআনের সতর্কবাণীতে বিশ্বাসী) মুমিন হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে সাবধান- সতর্ক হও।
  58. আর যখন তোমরা সালাতের দিকে ডাক, তখন তারা একে হাসি-ঠাট্রা ও খেল‑তামাশারূপে গ্রহণ করে। এটা এজন্য যে, তারা হল নির্বোধ সম্প্রদায়।  
  59. বল, “হে কিতাবধারীরা! একমাত্র এ কারণেই কি তোমরা আমাদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ন (শত্রুতা) পোষণ করছো যে, আমরা আল্লাহ ও আমাদের প্রতি (যেই কুরআন) নাযিল হয়েছে এবং যা আগে নাযিল করা হয়েছে (সেই তাওরাত ও ইন্জিল) এর প্রতি ঈমান এনেছি। অথচ তোমাদের অধিকাংশই (আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি) নাফরমান‑ফাসেক (হয়ে লাহুয়াল হাদীস তালমুদ  মিশনা মিদ্রাস নবীইম বানিয়েছো)।”                                                                                                           [ইহুদী খ্রিষ্টানদের লাহুয়াল হাদীস=তালমুদ,মিসনা,মিদ্রাস,জোহার,সিদ্দুর,নবীইম,কেতুবীম,গেমারা,রোমান মিছাল,লিতুরগি,ছুম্মা থিলোযিকা,কনফেশনস,ইমিটেশন জি ঈসা,কানুন ল, ফিলোকালিয়া ইত্যাদি]
  60. বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব যা আল্লাহর কাছে আছে? যাদেরকে আল্লাহ লা’নত করেছেন এবং যাদের উপর তিনি গজব দিয়েছেন। আর যাদের কাউকে তিনি বানর ও কাউকে শূকর করেছেন এবং (তাদের কেউ) ( মোল্লা ঠাকুর পাদ্রী তথা) তাগূতের ইবাদাত করেছে। তারা মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সরল পথ থেকে সবচেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট’। ” [2:65, 4:51]   [ মূর্তি কখনো তাগুত হতে পারেনা কারন তার আল্লাহ কিতাবের বিরোধিতা/অপব্যাখ্যা করার শক্তি/ক্ষমতা/ কৌশল থাকে না।যা আছে ফাদার,ক্লার্জি,বিশপ,প্রিস্ট,পাদ্রি,পোপ,সাধু,তপস্বী, ঋষি,ঠাকুর,রাবাই,উলামা,মওলানা,মুফতি,মোল্লা,শায়খ„মুহাদ্দিস,মুজতাহিদদের।]
  61. আর তারা যখন তোমাদের কাছে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। অথচ অবশ্যই তারা কুফরী নিয়ে প্রবেশ করেছে এবং তারা তা নিয়েই বেরিয়ে গেছে। আর তারা যা গোপন করে, আল্লাহ তা খুব ভালভাবেই জানেন।
  62. আর তুমি তাদের মধ্য থেকে অনেককে দেখতে পাবে যে, তারা পাপে, সীমালঙ্ঘনে এবং  অবৈধ‑হারাম ভক্ষণের প্রতিযোগিতায়ছুটোছুটি করছে।তারা যা করে তা কতই না জঘন্য‑নিকৃষ্ট!
  63. (তাদের) (আল্লাহওয়ালা দাবিদার) দরবেশ‑রাব্বানীরা ও পন্ডিত‑উলামা-মাশায়েখ (দাবিদাররা) কেন তাদেরকে পাপের কথা বলতে ও হারাম খেতে নিষেধ করে না? তারা যা করছে, নিশ্চয়ই তা কতই না নিকৃষ্ট!   [ 9:31,34]
  64. আর ইয়াহূদীরা বলে,“আল্লাহর হাত  বাঁধা (তিনি ব্যয় করছেন না)। তাদের হাতই বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে, তার জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছে। বরং তাঁর (কুদরতী) দুই হাত প্রসারিত (মুক্ত)। তিনি যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় করেন।আর তোমার কাছে তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে নিশ্চয়ই তা তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরী বাড়িয়ে দিচ্ছে।  আমি তাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা‑হিংসা‑বিদ্বেষ কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী দেখতে পাচ্ছি। (ইহুদীরা)  যখনই যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে আল্লাহ তা নিভিয়ে দিয়েছেন। আর তারা যমীনে দাঙ্গা-ফাসাদ‑বিপর্যয় করে বেড়ায় এবং আল্লাহ দাঙ্গা-ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। [22:40]
  65. আর যদি কিতাবধারীরা ঈমান আনত এবং সতর্কতা অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের পাপগুলো মুছে দিতাম এবং অবশ্যই তাদেরকে নিআমতে ভরা সুখময় জান্নাতসমূহে দাখিল করতাম।
  66. তারা যদি তাওরাত ও ইনজীল এবং তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা কায়েম করত, তাহলে তারা তাদের ওপর থেকে এবং তাদের পায়ের নিচ থেকে খাদ্যের যোগান পেত । তাদের মধ্যেএকটি দল আছে  যারা (সৎপথের অনুসারী) সত্যপন্থী।কিন্তু তাদের অধিকাংশই যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট।
  67. হে রাসূল, তোমার রবের কাছে থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তুমি (মানুষকে) তার সব কিছুই পৌঁছে দাও/তাবলীগ করো। যদি (তা) না কর, তবে (তার অর্থ হবে) তুমি আল্লাহর বাণী কিছুই পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্চয়ই  আল্লাহ (কুরআনের আয়াত অবজ্ঞাকারী/উপেক্ষাকারী/গোপনকারী) কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
  68. বল, “হে কিতাবীরা! যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত ও ইনজীল এবং তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা কায়েম কর  ততক্ষণ তোমরা কোন কিছুর উপরই নেই।”তোমার কাছে তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে নিশ্চয়ই তা তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরি বাড়িয়ে দেবে। কাজেই কাফির কওমের জন্য তুমি আফসোস করো না।
  69. এটা সুনিশ্চিত যে,মুমিন, ইহুদী, সাবেঈ/ভিন্ন ধর্মের এবং খৃষ্টানদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং সংশোধনের কাজ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবে না। [2:62]
  70. আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে অনেক রসূল পাঠিয়েছিলাম। যখনই কোন রসূল তাদের কাছে এমন কিছু নিয়ে এসেছে  যা তাদের মন চায় না,তখন তারা তাদের একদলকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছে। আর তাদের একদলকে হত্যা করেছে।  
  71. তারা ভেবেছিল তাদের কোন বিপর্যয় হবে না এজন্য তারা অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছিল। এরপর আল্লাহ্ তাদের দিকে ফিরলেন। তারপরেও তাদের অনেকেই পুনরায় অন্ধ ও বধির হয়ে গেল। তারা যা করে আল্লাহ তা খুব ভালোভাবেই দেখছেন।  [তাওবা = ফেরা]
  72. মসীহ্ (ঈসা) ইবনে মারইয়ামকে যারা ঈশ্বর/গড/ আল্লাহ বলে,নিশ্চয়ই তারা কাফির হয়ে গিয়েছে। অথচ মাসীহ তো বলেছিল,  ‘হে ইসরাঈল-সন্তানগণ! তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর’।যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর সুনিশ্চিতভাবে আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।তাই জাহান্নামই হবে তার বাসস্থান।আর জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই।
  73. নিঃসন্দেহে তারাও কাফির হয়ে গিয়েছে যারা বলেঃ ‘আল্লাহ তিনের (অর্থাৎ তিন ঈশ্বরের) একজন’,অথচ এক ইলাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ/বিধাতা নেই। তারা যদি তাদের এ ধরনের (ভয়াবহ শিরকি) কথা বন্ধ না করে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে যারা কুফরীতে লিপ্ত রয়েছে তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসবেই।   [তিন ঈশ্বর= ঈশ্বর+ঈসা (সান অফ গড)+রুহুল আমিন/জীবরাইল/পবিত্র আত্মা] 
  74. তবে কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না কিংবা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে না? আর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
  75. মাসীহ (ঈসা) ইবনে মারইয়াম একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই ছিলো না; তার আগেও অনেক রসূল (মরে) চলে গিয়েছে। আর তার মা ছিলেন পরম সত্যবাদিনী।  তারা দুজনেই খাওয়া-দাওয়া করতো।দেখ, কীভাবে আমি ওদের জন্য আমার  আয়াতসমূহ (বিস্তারিতভাবে যুক্তি ও উদাহরণসহ) বর্ণনা করছি। তারপরও দেখ, ওরা কীভাবে (সত্য থেকে উল্টা দিকে) ঘুরে চলে যাচ্ছে (শিরকের দিকে)?
  76. বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ‘ইবাদাত করবে যার কোন ক্ষমতা নেই তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার?  অথচ (একমাত্র) আল্লাহই সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।”
  77. বল, হে কিতাবের অধিকারীরা ! তোমরা তোমাদের দ্বীন/ জীবন ব্যবস্থার ব্যাপারে সত্য প্রমাণ ছাড়া বাড়াবাড়ি করো না। আর তোমরা পূর্বেকার পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের লোকদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না। তারা তো অনেক লোককে পথভ্রষ্ট করেছে। আর তারা নিজেরাও সরল সঠিক রাস্তা থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
  78. ইসরাঈল সন্তানদের মধ্য হতে যারা (আল্লাহর আয়াতের প্রতি অবজ্ঞা/উপেক্ষা/কুফরি করেছে, তাদেরকে দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়াম এর  ভাষায় অভিশাপ দেয়া হয়েছে। এটা শুধু এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা এবং সীমালঙ্ঘন করতো।
  79. তারা যে জঘন্য‑অন্যায় কাজ করত তা থেকে একে অপরকে নিষেধ করত না। তারা যা করত তা কতই না নিকৃষ্ট!
  80. তাদের মধ্যে অনেককে তুমি দেখতে পাবে, যারা কাফিরদের সাথে অন্তরঙ্গ‑ঘনিষ্টতা করে।তারা তাদের নিজেদের (নফসের) জন্যে আগে যা কিছু পাঠায়, তা অবশ্যই নিকৃষ্ট। (সে কারণে) আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তারা তো চিরকাল শাস্তির মধ্যেই কাটাবে।
  81. তারা যদি আল্লাহ ও নবীর প্রতি এবং যা তার প্রতি নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখত, তবে তাদেরকে আউলিয়া হিসেবে গ্রহণ করত না।কিন্তু তাদের অধিকাংশই পাপিষ্ঠ‑ফাসিক।
  82. তুমি অবশ্যই মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উগ্রবাদী-কঠোর পাবে ইহুদেরকে এবং সেই সমস্ত লোককে, যারা শিরক করে।  তুমি মুমিনদের প্রতি সম্প্রীতি-ভালোবাসা-বন্ধুত্বে নিকটবর্তী পাবে, কেননা তাদের মধ্যে অনেক পোপ‑পাদ্রী-যাজক‑বিশপ-পন্ডিত‑উলামা-মাশায়েখ ও সংসারবিরাগী-দরবেশ‑ফকির‑সাধু ‑সন্নাসী রয়েছে। আর এজন্যেও যে, তারা অহংকারও করে না।            [ 9:31,34]
  83. (যারা নিজেদেরকে খ্রিষ্টান বলে) তারা যখন রসূলের প্রতি নাযিলকৃত (কুরআনের) বাণী শোনে, সত্যকে উপলব্ধি করার কারনে, তুমি দেখবে-তাদের দু-চোখ অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে।  তারা বলে, “হে আমাদের রব! আমরা বিশ্বাস করেছি-ঈমান এনেছি, সুতরাং সাক্ষ্যদাতাদের সাথে আমাদের নামও লিখে নিন।
  84. আর আমাদের কি এমন ওযর আছে,  যে জন্য আমরা আল্লাহর প্রতি  আর যে মহাসত্য (কুরআন) আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে তার প্রতি ঈমান আনব না  ? অথচ এ আশা রাখবো যে, আমাদের রাব্ব সংশোধিত,পরিশুদ্ধ, নির্মল,খাটি, বিশুদ্ধ কওমের সাথে আমাদেরকে শামিল করবেন? 
  85. সুতরাং তাদের এই কথার কারণে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিদান হিসাবে জান্নাত দান করবেন।যার তলদেশ দিয়ে ঝর্নাধারা প্রবাহিত হবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।আর এটাই হল সৎকর্মশীল‑মুহসিনদের পুরস্কার।
  86. আর যারা কুফরী করেছে ও আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে,তারা হবে জাহীমের অধিবাসী।
  87. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! আল্লাহ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট/পছন্দনীয় যেসব বস্তু হালাল করেছেন সেগুলোকে তোমরা ( ইজমা,কিয়াস,রিজাল,হাদীসের দোহাই দিয়ে) হারাম করে নিও না আর (ফতোয়াবাজি করে) সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের  ভালবাসেন না।
  88. আর আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়েছেন তা থেকে খাও এবং সেই আল্লাহর সতর্কতা অবলম্বন কর,  — যাঁর প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।
  89. তোমাদের অর্থহীন/বেহুদা/ফালতু/নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে-দৃঢ়ভাবে  যে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। সুতরাং শপথভঙ্গের কাফফারা (পাপের মোচন/প্রায়ঃশ্চিত্তের) জন্য তোমরা তোমাদের পরিবার‑পরিজনকে যে ধরনের খাবার দাও তার মধ্যে সবচেয়ে ভালোমানের খাবার দশজন মিসকীন‑অভাবগ্রস্তকে দেবে, অথবা তাদেরকে জামা-কাপড় দেবে কিংবা একজন দাস‑দাসী মুক্ত করে দেবে। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই সে তিনদিন সিয়াম সাধনা করবে। তোমরা কখনো কসম করলে এটাই তোমাদের কসমের কাফফারা।সুতরাং  তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে।  এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। [উছতা=সবচেয়ে ভালো ৬৮:২৮] আইমান= কসম/শপথ  5(41),29(2),47(31), 23(1–5) 74(43–45),16(92)’58(14–22) এবং আইমান/“ايمن” শব্দের ব্যাখ্যায় 4(33) এবং অঙ্গীকার ও শপথ সম্পর্কে,3(77),2(,93),5(53,108),6(109),9(12,13),16(38,91,92,94,95),24(53,54),66(2)শপথকে ঢাল স্বরূপ ব্যবহার করার ব্যাপারে, 58(16),63(2),9(62)]
  90. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! নিশ্চয়ই মাদক, জুয়া/কষ্ট  ছাড়া অর্জিত সম্পদ , প্রতিমা-বেদী/কোনো স্থানে মানত মানা ও ভাগ্য নির্ণায়ক বা লটারি তো শয়তানের এক একটি ঘৃণ্য কাজ। সুতরাং তোমরা এসব থেকে দূরে থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
  91. (জ্বীন ও মানুষ) শয়তানতো এটাই চায় যে, মাদক ও জুয়া-কষ্ট  ছাড়া সহজলভ্য অর্থ দিয়ে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা সৃষ্টি করতে। আর তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও সংযোগ থেকে বিরত রাখতে। তবুও কি তোমরা (ওসব কাজ থেকে) নিবৃত্ত হবে না?
  92. আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আর সাবধানতা অবলম্বন কর; তারপরও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টভাবে  (আমার কুরআনের বাণী) পৌঁছে দেয়া।
  93. যারা ঈমান এনেছে আর সংশোধনের কাজ করেছে তারা (পূর্বে) যা-কিছু খেয়েছে তার কারণে তাদের কোনও গুনাহ নেই । তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, ঈমান আনার সাথে সাথে সংশোধনের কাজও করতে হবে। (আগামীতে যেসব জিনিস নিষেধ করা হয় তা থেকে) বাঁচার জন্যে সতর্ক থাকতে হবে, ঈমান রাখতে হবে।এরপরও  সদা-সতর্ক‑হুশিয়ার থাকতে হবে একই সাথে ভালো কাজ করে যেতে হবে। আল্লাহ তো সৎকর্মশীল‑মুহসিনদেরকে ভালোবাসেন।
  94. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের হাত ও বর্শার নাগালে আসা শিকারের কিছু প্রাণী দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করবেন, যাতে তিনি জেনে নেন যে, কে তাকে না দেখেও ভয় করে। সুতরাং যে ব্যক্তি এরপরও সীমা লংঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
  95. হে মুমিনগণ, ইহরামে থাকা অবস্থায় তোমরা শিকারকে হত্যা করো না  তোমাদের মধ্যে যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে  তা হত্যা করবে তাকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।  যা (মূল্যের দিক দিয়ে) সেই জানোয়ারের সমতুল্য হয় যাকে সে হত্যা করেছে, যার (আনুমানিক মূল্য) তোমাদের দুজন ন্যায়বান ব্যক্তি ফায়সালা করে দেবে, (অতঃপর নিরূপিত মূল্য দ্বারা পশু ক্রয় করে) সেই পশু—কাবায় উপহার তথা হাদিয়া হিসেবে পৌঁছাতে হবে;  না হয় কাফফারা  হিসেবে (নিরূপিত মূল্যের খাদ্যদ্রব্য) অভাবগ্রস্থ‑মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে, অথবা এর সম পরিমাণ সিয়াম সাধনা করবে, যাতে সে তার কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করে। [ আগে যা গিয়েছে আল্লাহ তা ক্সমা করে দিয়েছেন। কিন্তু যে আবার এ কাজ করবে আল্লাহ  তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন । আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। [কাফফারা= পাপ মোচন; পাপের প্রয়শ্চিত্ত]  22:28
  96. তোমাদের জন্য জলে–পানিতে-সমুদ্রে (প্রাণী)  শিকার করা আর তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে। তোমাদের ও পর্যটকদের ভোগের জন্য। তবে যতক্ষণ তোমরা এহরামরত থাকবে ততক্ষণ তোমাদের জন্য স্থলের শিকার হারাম করা হয়েছে। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাঁর দিকে তোমাদের সবাইকে  একত্রিত করা হবে।  [বাহার=জল মাওলানা জহুরুল হক]
  97. আল্লাহ্ কাবাকে বাইতুল হারাম হিসেবে নির্ধারিত করেছেন। মানুষের জন্য দৃঢ়তা অবিচলতার প্রতীক হিসেবে।পবিত্র মাসসমূহের, (হজ্বে পাঠানো) উপহার, চাবি/গলায় মালা-পরানো (পশুর)।এটা এজন্য যাতে তোমরা জানতে পার যে, যা কিছু আসমানসমূহে আছে আর যা কিছু যমীনে আছে, আল্লাহ তা জানেন, আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবহিত।                              [হাদিয়া=উপহার,গিফট; কালায়িদ= চাবি, গলার মালা; কিয়ামা=অটল/সঠিক/দৃঢ়/অবিচল/সংঘটিত/চিরস্থায়ী ৭০:৩৩; ৬৫:২; ২:২৮২; ১৭:৯; ৭৩:৬; ১০:৮৯; ১১:১১২; ৪১:৩০; ৪২:১৫; ৩০:৫৫; ৫:৮; ২০:২১১;৩৫:৩৫; ১২:৪০; ৩০:৪৩; ৯৮:৩,৫; ৫:৩৭; ৯:২১ পবিত্র মাসসমূহের,(হজ্বে পাঠানো ) উপহার, চাবি/গলায় মালা-পরানো চিহ্নিত (পশুর)] 
  98. জেনে রাখ যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা এবং এটাও জেনে রাখ যে,আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
  99. (আল্লাহর কিতাবের বাণী) পৌঁছে দেয়া ছাড়া রসূলের উপর কোন দায়িত্ব নেই।আর তোমরা যা কিছু প্রকাশ কর এবং যা কিছু গোপন কর তা সবকিছুই আল্লাহ জানেন।
  100. বল,   ‘মন্দ ও ভাল এক নয়  যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ‑চমৎকৃত করে। অতএব, হে বিবেক‑বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’। [14:24–27;2:243, 6:116–119, 11:17]
  101. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! তোমরা এমন সব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশ করা হলে তোমাদের কাছে  খারাপ লাগবে-কষ্ট পাবে।(সুতরাং সাবধান) কুরআন নাযিলের সময় তোমরা যদি সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে তা (কিন্তু) তোমাদের কাছে প্রকাশ করে দেয়া হবে।(এ পর্যন্ত অতীতে যা করেছ) আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল। [ 5:15, 15:1, 22:40; 11:1; 5:3]
  102. তোমাদের আগেও একটি কওম এ জাতীয় প্রশ্ন করেছিল; তারপর (তার যে উত্তর দেওয়া হয়েছিলো) তাতে তারা কাফির হয়ে গিয়েছিল ।. [2:68, 2:108]
  103. কপালপোড়া-বদনসীব, নমশুদ্র‑নীচুজাত, অতি ঘনিষ্ট  ও উত্তপ্ত অগ্নি-আশীর্বাদ যজ্ঞ‑হ্যাম, এ সবের কোনটাই আল্লাহ নির্ধারন করেন নি। বরং যারা কুফরী করেছে তারাই আল্লাহর নামে মিথ্যা আরোপ করে,এবং তাদের অধিকাংশই নির্বোধ/বোঝে না।                                           [হাম=উত্তপ্ত,গনগনে,গরম ৯:৩৫; ১০১:১১; ৮৮:৪ হিন্দুরা আগুনকে দেবতা রূপে পূজা করে এবং যজ্ঞ, হোম ‚হ্যাম বা হবিষ্য উৎসর্গ করে ঈশ্বরের আরাধনা করে।যজ্ঞে পবিত্র অগ্নিকুণ্ডে ঘি, চাল, তিল, সামগ্রী উৎসর্গ করা হয়।মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে এই উপচার অগ্নিদ্বারা দেবতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আরতি ও প্রদীপপ্রতিদিন পূজার সময় মাটির বা ধাতুর প্রদীপে ঘি/তেল জ্বালিয়ে দেবতাকে অর্ঘ্য দেওয়া হয়।বিবাহ ও শেষকৃত্যবিবাহের সাত পাকে ঘোরা  হয় অগ্নিকে সাক্ষী রেখে।শেষকৃত্যে দেহ দাহের মাধ্যমে আত্মাকে মুক্ত করা হয় — অগ্নি দিয়ে] বাহিরা-পানি-জল-সমুদ্র‑সাগর; ওয়াছিলা= অতি ঘনিষ্ঠ,যুক্ত,মিলিত,অক্ষুন্ন,২৮:৩৫; ১৩:২১,২৫; ৪:৯০; ২:২৭]
  104. যখন তাদেরকে বলা হয়, “আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার দিকে এবং রসূলের দিকে এসো” তখন তারা বলে, “আমরা আমাদের বাপ‑দাদাদেরকে যে পথে পেয়েছি আমাদের জন্য তা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট।” আচ্ছা! যদি এমন হয় যে, তাদের বাপ‑দাদারা  কিছুই জানত না এবং সঠিক হিদায়েতপ্রাপ্ত ছিলো না (তবুও কি তারা তাদের পথেই চলবে)?
  105.  তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! তোমাদের নিজেদের (নফসকে পরিশুদ্ধ করার) দায়িত্ব তোমাদের। যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, যদি তোমরা হেদায়েতের পথে চলো ।আল্লাহর কাছেই তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমরা যা আমল করতে তা তোমাদের জানিয়ে দেবেন।
  106. তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোনো! যখন তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন ওসিয়ত করার সময়  তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে। অথবা তোমরা সফরে থাকলে এবং সে অবস্থায় তোমাদের মৃত্যুর বিপদ এসে পড়লে তোমাদের ছাড়া অন্যদের (অর্থাৎ অমুসলিমদের) মধ্য থেকে দুজন সাক্ষী রাখবে। যদি (সাক্ষীদের সততা সম্পর্কে) তোমাদের সন্দেহ হয় তাহলে সাক্ষীদ্বয়কে সালাতের পর আটকে রাখবে এবং তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলবে, “ আমরা এর বিনিময়ে কোন মূল্য (দুনিয়াবি সুবিধা) নেবো না ।হোক না তারা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। আর আমরা আল্লাহর সাক্ষ্য গোপন করব না। এমন কাজ করলে নিশ্চয়ই আমরা গোনাহগার‑পাপীদের দলেই শামিল হয়ে হবো।
  107. তারপর যদি জানা যায় যে, তারা (মিথ্যা বলে) সুনিশ্চিত পাপে জড়িয়ে পড়েছে, তবে যাদের স্বার্থহানি ঘটেছে , তাদের মধ্য হতে (মৃতের) অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় অপর দু’ব্যক্তি এদের স্থানে (সাক্ষ্যদানের জন্য) দাঁড়াবে। অতঃপর তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলবে, ওই প্রথম দুই ব্যক্তি অপেক্ষা আমাদের সাক্ষ্যই বেশি সত্য এবং (এই সাক্ষ্যদানে) আমরা কোনোরকম সীমালংঘন করছি না। যদি আমরা তেমন করি, তাহলে অবশ্যই আমরা সীমালঙ্ঘনকারী-জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
  108. এ পদ্ধতিতে বেশি আশা থাকে যে, লোকেরা (প্রথমেই) সঠিক সাক্ষ্য দেবে অথবা ভয় করবে যে, (মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে) তাদের শপথের পর পুনরায় অন্য শপথ নেওয়া হবে (যা আমাদের পূর্বের মিথ্যা সাক্ষ্য বাতিল করে দেবে) । তোমরা আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন কর আর (তার পক্ষ হতে যা-কিছু বলা হয়েছে, তা সিজদার নিয়তে) শোন। আল্লাহ অবাধ্য- ফাসিক কওমকে হিদায়াত করেন না। 
  109. যেদিন আল্লাহ্‌ সমস্ত রাসূলদেরকে একত্র করবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা (মানুষের কাছ থেকে তোমাদের আহবানের) কী জবাব পেয়েছিলে?” তারা বলবে, আমরা কিছুই জানি না,নিশ্চয়ই আপনি সকল গায়েবী-গোপন তত্ত্ব ভাল জানেন।  [নবী রাসুলরা গায়েব জানেন না তারা তো আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুখ মাত্র।]
  110. যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! তুমি তোমার প্রতি আর তোমার মায়ের প্রতি আমার নি‘মাতের কথা স্মরণ কর। যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম রুহুল কুদ্দুছ‑জীব্রাইলকে দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে (শুধূ) পরিণত বয়সে (নয়) দোলনায় থাকা অবস্থায়ও । (শুধু তাই নয় আরো নিয়ামত স্মরণ করো) আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল;আর আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির মূর্তির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁ দিতে, ফলে আমার ইচ্ছায় তা পাখি হয়ে যেত।আর তুমি আমার হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করে দিতে;স্মরণ কর (আরো নিয়ামত) আমার হুকুমে তুমি মৃতকে জীবিতও করতে পারতে।আর যখন তুমি সুস্পষ্ট দলিল‑প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে তখন আমি বনী ইসরাঈলকে তোমার (ক্ষতি করা) থেকে  নিবৃত্ত রেখেছিলাম। তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলল- “এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।”                                                                                  [3:45–48, 3:111, 4:157, 6:123. 7:176  জিব্রাইল‑রুহুল কুদ্দুছ‑রুহুল আমীন‑পবিত্র আত্মা-Holy Spirit‑2:87, 2:97, 2:253, 5:110, 16:2, 16:102, 26:193, 42:52]
  111. আর যখন আমি আমি হাওয়ারীদের (ঈসার সঙ্গী-সাথী-সাহাবীদেরকে)  ওহি করেছিলাম যে,‘তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আন’। তারা বলেছিল, ‘আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা অবশ্যই আত্মসমর্পণকারী-শান্তিকামী- মুসলিম’।
  112. যখন হাওয়ারীগণ বলেছিল, ‘হে (মাসিহ) ঈসা ইবনে মারইয়াম, আপনার রব কি আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য‑পরিবেশিত ঝাঁপি নাযিল করে দেবেন ?’ সে বলেছিল, যদি তোমরা মুমিন হও, ‘আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর।  [7:96; 5:66]
  113. তারা বলেছিল,  ‘আমরা চাই যে,তা থেকে কিছু খাব ও আমাদের হৃদয় প্রশান্তি লাভ করবে।আর আমরা (আগের চেয়ে আরো বেশী শক্ত ‑মজবুত বিশ্বাসের সাথে) জানতে পারব যে, ‚আপনি আমাদেরকে যা-কিছু বলেছেন তা সত্য এবং আমরা এ বিষয়ের সাক্ষী থাকতে চাই।’
  114. (মাসিহ) ঈসা ইবনে মারইয়াম বলেছিল, ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব,আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ খাঞ্চা-ঝাঁপি নাযিল করুন; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সবার জন্য হবে আনন্দ‑উৎসব-ঈদ । আর হবে তোমার থেকে একটা মোজেজা-নিদর্শন।  আর আমাদেরকে রিযিক দান করুন; আপনিই তো উত্তম রিযিকদাতা”।
  115. আল্লাহ বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে তা নাযিল করব ; কিন্তু এর পর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরী করলে তাকে আমি এমন (ভয়ানক) শাস্তি দেব, যে শাস্তি সমগ্র বিশ্বজগতের আর কাউকে দেইনি।’ 
  116. আর (সেই সময়ের বর্ণনাও শোন) যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! তুমিই কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার মা’ কে ইলাহরূপে গ্রহণ কর? ঈসা বলবে; আমি তো আপনার সত্তাকে (শিরক থেকে) পবিত্র মনে করি। আমার জন্যে শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোন অধিকার আমার নেই। আমি যদি অমন কথা বলতাম, তবে নিশ্চয়ই আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরে যা কিছু গোপন আছে, তাও আপনি জানেন। কিন্তু আপনার গুপ্ত বিষয় আমি জানি না। নিশ্চয়ই আপনি সকল গায়েবী-অদৃশ্য বিষয় সবচেয়ে ভাল জানেন।
  117. “আপনি আমাকে যা (বলতে) আদেশ দিয়েছিলেন, তা ছাড়া আমি তাদেরকে অন্য কিছুই বলিনি। তা এই যেঃ তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহ্‌র ইবাদত কর। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের (কাজকর্মের)  উপর শহীদ তথা সাক্ষী ছিলাম। কিন্তু যখন আপনি আমাকে মৃত্যু দিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনিই তো সব কিছুর উপর শহীদ তথা সাক্ষী।                                                                                                     [ওফাত =মৃত্যু ২:২৩৪,২৪০; ৩:১৯৩; ৪:৯৭; ৬:৬০,৬১; ৭:৩৭,১২৬; ৮:৫০; ১০:৪৬,১০৪; ১২:১০১; ১৩:৪০; ১৬:২৮,৩২,৭০; ২২:৫; ৩২:১১; ৩৯:৪২; ৪০:৬৭,৭৭; ৪৭:২৭]
  118. যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন,দিতে পারেন কারন তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন,তাও পারেন কারন আপনি তো মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
  119. আল্লাহ বলবেন, “‘এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীরা তাদের সত্যবাদিতার জন্য উপকৃত হবে।” তাদের জন্য এমনসব জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই হচ্ছে মহাসফলতা।
  120. আসমানসমূহ ও যমীন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার রাজত্ব‑আধিপত্য আল্লাহরই এবং তিনি সব কিছুর উপর পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান। (Quran Research intel­li­gence Team ড্রাফট অনুবাদ)

(Quran Research intel­li­gence Team ড্রাফট অনুবাদ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *