কুরআন বোঝা কি সম্ভব? কারা বুঝবে?

কুরআন বোঝা কি সম্ভব? কারা বুঝবে? দি গ্রেট কুরআন (বাংলা ভার্সন)

(131) কুরআন বোঝা কি সম্ভব? কারা বুঝবে? — YouTube
https://www.youtube.com/watch?v=mdlvh6ISgSw

Tran­script:
(00:01) তিনটি প্রশ্নকে সামনে রেখে আজকে আলোচনা শুরু করা যাক। (এক) মহাগ্রন্থ আল কোরআন কি বিস্তারিত বা স্বয়ংসম্পূর্ণ? (দুই) মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু কি আল কোরআনে আছে? (তিন) মানুষ কি মহাগ্রন্থ আল কোরআন বুঝতে সক্ষম?

আজকে আমরা বুঝতে চেষ্টা করব নতুন যুগে নতুন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কিভাবে পবিত্র কুরআনে লিপিবদ্ধ করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন? এসব বিষয়ে মহান আল্লাহ কি কি বলেছেন? চলুন শুরু করা যাক।

এই প্রশ্নগুলোর প্রচলিত মতামত ও বিশ্বাস হলো আল কোরআন সবাই বুঝতে পারবে না। বড় বড় আলেম ওলামারা কোরআন বোঝেন ও বোঝাবেন। তারাই আল্লাহর কিতাব ব্যাখ্যা করেন- তাফসীর করেন। নতুন যুগের সব সমস্যার সমাধানে ইজমা কিয়াসের ব্যবস্থা তারা করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে সুন্নি হুজুরদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে বলে ইজমা। এমন ইজমা পদ্ধতি শিয়া মুসলিমদেরও আছে। ওহাবি,সালাফি,আহলে হাদীস, হানাফী শাফি হাম্বলি মালেকী মাযহাব সহ- সব দল উপদলেরই আছে । তাই সবাই ধারনা করে ইজমার সিদ্ধান্ত মান্য করা হলো কোরআনের নির্দেশ মান্য করার মতো। যদিও কোন একটি বিষয়েও সব দলের ইজমা কিয়াসের হুজুররা আজ পর্যন্ত কখনোই একমত হতে পারেননি। এমনকি খোদ প্রতিটি দলের মধ্যেও, যেমন একই হানাফী মাযহাবের মধ্যে দেখা যায়- তাবলীগী, জামাতি, চরমোনাই‑ভান্ডারি-ছারছিনা বা পীরপন্থী,মাজারপন্থি, উগ্রপন্থি- আল কায়েদা,আইএস,বোকো হারাম,জেএমবি একেক ধরনের আলেম ওলামারা কোরআনকে একেকভাবে বোঝেন বা বোঝানোর
চেষ্টা করেন বা সেই অনুযায়ী তাফসীর করে থাকেন । এরকম তাফসীর গ্রন্থ আছে হাজার হাজার। শুধুমাত্র সূরা ফাতেহার তাফসীর করেছেন বাশার বিন হায়াত হুজুর ১১ খন্ডের। কিছুদিন আগে যা সোস্যাশ মিডিয়ায় প্রচুর ভাইরাল হয়েছিল। এবং সেই প্রতিটি খন্ডের একেকটি খন্ড প্রায় ৫০০০ পৃষ্ঠা । এরকম তাফসীর গ্রন্থ হাজার হাজার সৃষ্টি করা হয়েছে এই 1400 বছর ধরে। জীবনভর বিভিন্ন দলমতের নামজাদা হুজুররা তাফসীর রচনা করেছেন। যুগে যুগে তা সংশোধিত, সংকলিত, পরিমার্জিত হয়েছে। সেসব তাফসীর সেসব দলের জন্য আলোকবর্তিকা (যেমন জামাতিদের মওদুদির তাফসির বা সালাফিদের তাইমিয়ার তাফসির) পাশাপাশি তা সাধারণ মানুষের জন্য কুরআন পাঠের সহায়িকা বলেই তারা বিশ্বাস করেন এবং প্রচার করেন। ১৪০০ বছর
ধরে প্রায় সব প্রজন্মের মানুষই এসব বিষয় বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে শতাব্দির পর শতাব্দি।

কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি এসব প্রশ্নের জবাবে মহাগ্রন্থ আল কোরআন কি বলে? যুগের নানা প্রয়োজনকে সামনে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে কুরআন আসলেই কি কোন পথ দেখিয়েছে? মহাজগতের রবের পাঠানো কিতাবে কি বলা হয়েছে? প্রথমে মৌলিক বিষয়টি দেখা যাক। পাশাপাশি যে ইজমা কিয়াস ধরিয়ে দেওয়া হলো সে বিষয়ে কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি কি ?মানুষের এসব যুক্তির এসব প্রশ্নের জবাব অবশ্যই মহান আল্লাহ দিয়েছেন বলেই আমরা বিশ্বাস করা উচিত।

আমাদের জানা দরকার মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি জগৎসমূহের লালন‑পালনকর্তা তিনি তার প্রেরিত কিতাবে আমাদেরকে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন ? তিনি কি তার কিতাব অসম্পূর্ণ বা অপূর্ণাঙ্গ করে তার রাসূলের কাছে পাঠিয়েছেন? যাতে প্রিয় নবীকে অন্য কোন কিতাব, ভিন্ন কোন পথ ও মত খুঁজতে হয়? অথবা আমাদেরকেও খুঁজতে হয়?

মহাগ্রন্থ আল কিতাব যদি মহাজগতের প্রভুর পাঠানো হুদা বা গাইডলাইন, সরল পথনির্দেশ হয়ে থাকে তাহলে তেমনটি হবার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহর কিতাব কি বলে চলুন দেখা যাক।

10 নাম্বার সূরা ইউনুসের 37 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন “এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয় বরং এটি এর পূর্বে যেসব কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী এবং বিধানসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্বলিত বিবরণ। এতে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই যে এটি নাযিল হয়েছে মহাজগতের প্রভুর পক্ষ থেকে।

11 নাম্বার সূরা হুদের এক নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন “আলিফ লাম র। এটি একটি কিতাব, এর আয়াতসমূহ বিজ্ঞানময় সুবিন্যাস্ত বিস্তারিতভাবে বর্ণিত, মহাজ্ঞানী সর্বজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। আল্লাহর এই দুটি বক্তব্যের মাধ্যমেই আল কিতাব ও মহান রবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বাতিল হয়ে যায়। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন যা কিছু প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা আসবে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত সেসব বিষয়ে মহাগ্রন্থে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ দিক নির্দেশনা আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার কিতাব নাযিল করেছিলেন 1400 বছর আগে আর তিনি বর্তমান যুগের কথা
বা আরো 20000 বছর পরের কথা ভুলে গেছেন তা কি কখনো হতে পারে ? কখনো সম্ভব?

মানুষ সময়ের বেড়াজালে বন্দি, কিন্তু মহান রব থাকেন সময়ের ঊর্ধে। তিনি সময়ের স্রষ্টা, তিনি সময়ের সীমাবদ্ধতা মুক্ত। তার কাছে সবই বর্তমান। তার কোন অতীত নেই, অজানা ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই, সবকিছুই তার হাতের মুঠোয় বন্দি। মহান রব তার কিতাবে কিয়ামত পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব বিষয় বলে দিয়েছেন। তিনি ঘোর‑বিভীষিকাময় কিয়ামতের কথাও বলেছেন একই সাথে কেয়ামতের পরে কার কি হবে, কে কি বলবে, তার জবাব কি হবে সে কথাও অগ্রিম বলে দিয়েছেন। জাহান্নামীরা কি ধরনের প্রশ্ন করবে? তাদেরকে কি ধরনের প্রশ্ন করা হবে জান্নাতিদের সাথে কি ধরনের আচরণ করা হবে? ফেরেশতারা তাদের সাথে কি আচরণ করবে? হাশরের মাঠে আল্লাহ মানুষদের কি ধরনের প্রশ্ন করবেন? কি কি প্রশ্ন করবেন? কার কি পরিস্থিতি বা দূরাবস্থা হবে? মানুষ ও আল্লাহ ইবলিশকে কি কি প্রশ্ন করবে ? আল্লাহপাক মানুষ জ্বীন পাপী নেককার, নবী রাসুল কাদের কি কি বলবেন? মানুষেরা কি কি বলবে? সবকিছু বিস্তারিতভাবে- এভরিথিং ইন ডিটেইলস আল্লাহ কোরআনে বর্ণনা করেছেন। যেই আল্লাহ কিয়ামত যদি আজ থেকে 5000 বছর বা 10000 বছর পরে হয় সেই সময়কার ঘটনা এত চমৎকারভাবে এত সুন্দর করে কে কি বলবে ইন অ্যাডভান্স ‑অগ্রিম সব জেনে বলে দিতে পারেন সেই আল্লাহ 1400 বছর পরে ২০২০-২৫ বা 2030 সালে কার কি প্রশ্ন হতে পারে? কার কি জানা শোনা চাওয়া? কার কি ধরনের জিজ্ঞাসা আল্লাহ তা জানবেন না? কিংবা সেটা জেনেও আল্লাহ তার উত্তর তার কোরআনে না দিয়েই কোরআনকে পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে ঘোষণা দিবেন? এটা বিশ্বাস করা কোন মুসলিম- কোন ঈমানদারের পক্ষে আদৌ সম্ভব?না কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং মানুষের যে নানা অযৌক্তিক অভিযোগ ও প্রশ্ন কোরআনের বিরুদ্ধে যে এই কোরআন পরিপূর্ণ নয় এই কোরআন বুঝতে গেলে 27 রকমের এলেম লাগবে, শত শত তাফসীর গ্রন্থ বুঝতে হবে, হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ হাদিস জানতে হবে এবং সেই হাদিসগুলোর সময়কাল এবং একটার সাথে আরেকটা রিলেশন সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বুঝতে হবে, তা না হলে কোরআন বোঝা যাবে না। এই কোরআন এতটাই জটিল এবং কঠিন করে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। এই বিশ্বাস কোন মুমিন মুসলিম করতে পারে না। উপরের দুটি আয়াতে সুস্পষ্ট ঘোষণার পরও বারবার হুশ হারানো দিক হারানো মানুষকে বিভিন্ন ঘটনা ও নানা উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ মনে করিয়ে দিচ্ছেন। এভাবেই তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও তাফসীর দিয়েছেন পুরো কোরআন জুড়ে। তিনি কোরআনকে বানিয়েছেন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ।

ছয় নাম্বার সূরা আনআমের 119 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন তোমাদের কি হয়েছে যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে কেন তোমরা তা থেকে খাবে না অথচ তোমাদের জন্যে যা যা হারাম করা হয়েছে তা তোমাদেরকে বিস্তারিতভাবেই বলে দেওয়া হয়েছে।

17 নাম্বার সূরা বানী ইসরাইলের 89 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন “আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য বিভিন্ন উপমা দ্বারা আমার বাণী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী না করে থাকেনি।”

18 নাম্বার সূরা কাহাফের 54 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন আমি এই কোরআনে বিভিন্ন রকম উপমার মাধ্যমে মানুষের জন্য আমার বাণী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি অথচ মানুষ বেশিরভাগ বিষয়ে তর্কপ্রিয়।

41 নাম্বার সূরার তিন নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন “এটি এমন একটি কিতাব যার আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যাকৃত, আরবি ভাষার কোরআন।” যেসব লোক জ্ঞান বা এলেম চর্চা করে তাদের জন্য।”

বিয়ে সংক্রান্ত নির্দেশনার পরেই চার নাম্বার সূরা নিসার 26 নাম্বার আয়াতে
আল্লাহ বলেন “আল্লাহ ইচ্ছে করেন তোমাদের নিকট বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদের ক্ষমা করতে আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।”

কিয়ামত সংক্রান্ত একটি উদাহরণ দিয়ে মহান রব সাত নাম্বার সূরা আরাফের 174 নাম্বার আয়াতে বলেন “এভাবেই আমি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি আমার আয়াত যাতে করে তারা হেদায়েতের পথে ফিরে আসে।”

ভুল থেকে ফিরে এসে মানুষ কিভাবে নিজেকে সংশোধন করবে তার উদাহরণ দিয়ে মহান রব ছয় নাম্বার সূরা আনআমের 55 নাম্বার আয়াতে বলেন “এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি আর এতে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।”

এবার দ্বিতীয় মৌলিক প্রশ্ন? আল কোরআনের কিছু বিষয় তো তাফসীর বা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন কারণ সেখানে এমন কিছু বিষয় আছে যা বিজ্ঞানময যেমন ভৌতবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, বিবর্তনবাদ, ভ্রূণবিদ্যা, মহাজাগতিক বিজ্ঞান, ভবিষ্যৎবাণী ইত্যাদি এমন কিছু বিষয়ও আছে যা মানুষ তার জ্ঞান দিয়ে জানতে বা নিশ্চিত হতে পারবে না যেমন মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস। নফস, রুহু, জিন, গায়েবি বা অদৃশ্য জগত, ফেরেশতা ইত্যাদি– এসব বিষয়ের কি হবে? যেহেতু মহান রব উল্লেখ করেছেন ‑তার ব্যাখ্যা কে দেবে? এই প্রশ্নের সুন্দর জবাব দিয়েছেন মহান আল্লাহ। তিনি নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ কে বলেছেন আল কোরআন নাযিল করা, মুখস্ত করানো ও সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের? কোরআনের নানা বিষয় বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহর।

75 নাম্বার সূরা কিয়ামাহর 17 থেকে 19 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন “এর সংরক্ষণ করা ও পড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার, সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি তুমি তখন সেই পাঠের অনুসরণ করো তারপর তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা করে দেয়ার দায়িত্ব আমার।” আমরা জানি ইতিপূর্বে নবী মুসার কাছে পাঠানো হয়েছিল তাওরাত। কেমন ছিল সেই কিতাব? কুরআন পড়লে দেখা যায় সেই কিতাব ছিল পরিপূর্ণ ও বিস্তারিত। ছয় নাম্বার সূরা আনআমের 154
নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন “তারপর আমি মুসাকে দিয়েছিলাম কিতাব যা ছিল কল্যাণপরায়ণদের জন্য পরিপূর্ণ, সবকিছুর বিস্তারিত বিবরণ, হেদায়েত ও রহমত, যাতে করে তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান রাখে।”

সাত নাম্বার সূরা আরাফের 145 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন আমি তার জন্য ফলকে সব বিষয়ের উপদেশ এবং সব বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি। সুতরাং এগুলো শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার কওমকে এগুলোর উত্তম নির্দেশাবলী গ্রহণ করার নির্দেশ দাও। আমি অচিরেই তোমাদের, ফাসিকদের আবাসস্থল দেখাবো।”

মুসা ও হারুনের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন 37 নাম্বার সূরা আস সাফফাতের 117 নাম্বার আয়াতে “আমি উভয়কে দিয়েছিলাম বিস্তারিত কিতাব।”

এখন আমাদের মনে আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, কোরআনের এত শত শত তাফসীর গ্রন্থের তাহলে কি হবে? শত শত হাজার বছর ধরে অসংখ্য তাফসীর গ্রন্থ রচনা করেছেন বিভিন্ন দল উপদল বা নির্দলীয় হুজুররা? হাজার বছরব্যাপী তাফসীর চর্চার কি হবে?

তাফসীর সাহিত্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা না বলে বরং মহাজগতের প্রভু তাফসীর বা কোরআনের আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যা বলেছেন তা একটু জানার চেষ্টা করি। তিনি বলেছেন কোরআনের তাফসীরও তিনিই করবেন- কারণ আমাদেরকে পথ দেখানোর দায়িত্ব তার তাই তিনি মানবজাতিকে হুদা বা পথনির্দেশ পাঠাবেন এবং তার ব্যাখ্যাও করবেন। 25 নাম্বার সূরার 32 এবং 33 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন “কাফেররা বলে তার কাছে কোরআন একসঙ্গে সম্পূর্ণ অবতীর্ণ হলো না কেন? এটা এজন্য যে, আমি এর মাধ্যমে তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করব। আমি তোমার হৃদয় মজবুত করবো এবং আমি তা পাঠ করেছি তারতিলের সঙ্গে-ধীরে ধীরে। এবং তোমার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা বা তাফসীর আমি তোমাকে দান করিনি। (অনুবাদ‑তাইসিরুল কুরআন)

ছয় নাম্বার সূরা আনআমের 114 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন “আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক মানবো অথচ তিনি তোমাদের কাছে নাযিল করেছেন আল কিতাব ব্যাখ্যাসহ- তাফসীর সহ। আর ইতিপূর্বে আমি যাদের কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানে এটি তোমার রবের পক্ষ থেকেই পাঠানো হয়েছে সুতরাং তুমি সন্দেহ‑পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।”

এ অবস্থায় মৌলিক সিদ্ধান্তটি আপনার আমার উপর এসেই পড়ে। আমরা কোন পথে যাব? মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে দাবিগুলো করেছেন তা বিশ্বাস করব নাকি অবিশ্বাস করে ভিন্ন পথে হাঁটবো? তবে সেক্ষেত্রে পরিণতি কি হবে? তার ঘোষণাও অগ্রিম দিয়েছেন মহান আল্লাহ। জাহান্নামবাসী জান্নাতবাসীকে ডেকে বলবে আমাদের দিকে কিছু পানি ছিটিয়ে দাও অথবা আল্লাহ তোমাদের যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে কিছু দাও। তখন তারা বলবে আল্লাহ এ দুটি জিনিসই হারাম করে দিয়েছেন কাফেরদের জন্য। যারা তাদের দ্বীনকে খেল তামাশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতাারিত করে রেখেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদের ভুলে থাকবো যেভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে থেকেছিল এবং যেভাবে তারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল আমি তাদের এমন একটি কিতাব পৌঁছিয়েছিলাম যা ছিল পূর্ণ জ্ঞানের বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা এবং হেদায়েত ও রহমত বিশ্বাসীদের জন্য।” সাত নাম্বার সূরা আরাফ এর 50 থেকে 52 আয়াত।

সুতরাং আমরা বলতে পারি সমগ্র বিশ্ব জগতের রব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সেই সঙ্গে পাঠিয়েছেন পথভ্রষ্টকারী ও উস্কানিদাতা জিন শয়তানকে। এ অবস্থায় মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং মহাগ্রন্থ আল কিতাব নাযিল করেছেন পথনির্দেশ বা হুদা হিসেবে। যারাই এই হুদার অনুসরণ করবে তাদেরকেই মূলত নির্দিষ্ট সময় পর পৃথিবী থেকে উদ্ধার করবেন মহাজগতের প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন এই কিতাব সম্পূর্ণ- পরিপূর্ণ- বিস্তারিত তাফসীর ও ব্যাখ্যাসহ নাযিলকৃত।

মানুষের জন্য যা কিছু হুকুম আহকাম প্রয়োজন তা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যা কিছু তাফসীর করা প্রয়োজন ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন তা উদাহরণ ও উপমাসহ বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে । শুধু তাই নয় বিভিন্ন আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা করা এবং মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে পথভ্রষ্টরা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ বিকৃত করলেও আল কুরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। কেউ এর মূল শব্দ বাক্য বা কালাম পরিবর্তন করতে পারবে না।

এ অবস্থায় ঠান্ডা মাথায় মানুষকে চিন্তা ভাবনা করে সামনে এগোতে হবে। কারণ মহাপ্রভুর দ্বীনকে খেল তামাশা হিসেবে নিলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে কুরআনের আয়াতগুলো উপলব্ধি করে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

রিজওয়ান মাহমুদ খান (ডিরেক্টর) তাজকিয়া নফস.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *