সিজদা কি? আদম সিজদার রহস্য?

নামাজ সালাত

 সিজদা কি? আদম সিজদার রহস্য?

ভারতের এক মুসলিম মুফতি তার ওয়াজে বলছেন “ঋগ্বেদের মধ্যে ৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদে একটা শ্লোক লেখা আছে। ষষ্ঠঙ্গের প্রণাম বিষয়টি আছে সেখানে। ষষ্টাঙ্গ বা অষ্ঠাঙ্গের প্রণামের বাংলা অর্থ হচ্ছে শরীরের আটটি অঙ্গ মাটিতে স্পর্শ করে তুমি সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করো, উপাসনা করো। একজন হিন্দু মানুষ অর্থাৎ সনাতন ধর্মের মানুষ যখন মন্দিরে গিয়ে দেব,দেবী,ভগবান বা ঠাকুরের কাছে মাথা নত করে তাকে শরীরের আটটি অঙ্গ মাটিতে স্পর্শ করাতে হয়। তাকে কপাল, নাক, দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পা মোট আটটা অঙ্গ মাটি স্পর্শ করাতে হয়। একজন মুসলমান যখন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে তাকেও শরীরের আটটা অঙ্গ  মাটিতে স্পর্শ করাতে হয়। যাকে আমরা সেজদা বলি। এভাবেই তাকে সেজদা দিয়ে অষ্টাংগ মাটিতে স্পর্শ করতে হয়। ভাইয়েরা আমার শুনুন ভালো করে- আপনি মুসলিম। সেজদা দিতে গেলে কটা অঙ্গ মাটি স্পর্শ করানো লাগে?  আটটা । ভালো করে শুনে নিন- কপাল, নাক, দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পা। আটের কম করলে নামাজ মকরুহু হয়ে যাবে। আর অষ্টাঙ্গের বেশি মাটি স্পর্শ করালেও নামাজ মকরুহ হয়ে যাবে। হিন্দু মুসলিম কিসের পার্থক্য করেন আপনারা? জ্ঞানী গুণী বুদ্ধিজীবী মুসলমানদের এই কি পরিচয়? হিনদু মুসলিমের ভেদাভেদ কেন করেন আপনারা?”                                               [যজুর্বেদে (তৈত্তিরীয় সংহিতা] ও আরণ্যক অংশে কিছু জায়গায় দেহনম্রতা,পতন বা ভূমিশয়ন ইত্যদি রূপে পূর্ণ প্রণিপাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন “নমস্কারো ব্রক্ষ্রণ্যে” “স প্রণিপত্যেন”- (ভগবদগীতায় ও আছে) এটা পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মের পূজাপদ্ধতিতে বিকশিত ধারনা– লেখক।]

 বিতাড়িত শয়তান থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই । সকল প্রশংসা সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। কোরআনে মহান আল্লাহ ৮১ বার সিজদা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কোরআনে সিজদা বলতে যা বোঝানো হয়েছে নামাজে আমরা যেই ষষ্ঠ অঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গের সেজদা দেই তা কি একই জিনিস? এ বিষয়ে তিনটা ভিডিও আপলোড করা হয়েছে সেজন্য সেদিকে যাব না। আজকে আমাদের খুতবার বিষয় আদম সেজদা কারণ আল্লাহ সেজদা শব্দটা একদিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করেছেন অন্যদিকে অথরিটির সাথে, আদমের সাথে ফেরেশতা ইবলিশ — ইউসুফ নবী, দাউদ নবী, পাহাড়, পর্বত, চন্দ্র, সূর্য, গাছপালা, তরু লতা এমনকি গাছের ছায়া ‑সবকিছুর সাথে অর্থ্যাৎ এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে সব কিছুর সাথে আল্লাহ সম্পর্কিত করেছেন। এজন্য বিষয়গুলো আমাদের খুব ভালো করে বোঝা দরকার। শত শতবার কোরআন খতম দিলেন, লক্ষ লক্ষ হাদিস মুখস্ত করলেন কিন্তু বুঝলেন না, সেই অনুযায়ী আমল করলেন না তাহলে কিন্তু আপনার সব প্রচেষ্টা জলে ভেসে যাবে, সব পরিশ্রম বিফলে চলে যাবে। কারণ দুনিয়ার জ্ঞানের সাথে ঐশি জ্ঞানের একটা বড় পার্থক্য হচ্ছে দুনিয়ার জ্ঞান অর্জন করলে সফলতা পাওয়া যায় কিন্তু ঐশী বাণীর জ্ঞান অর্জন করলে সফলতা পাওয়া যায় না। এটাকে আমল করতে হয়- অনুসরণ করতে হয় যেটা আমরা সূরা বাকারার ৩৮ আয়াতে দেখতে পাই। আল্লাহ আদমকে বলছেন “ যখন আমার পক্ষ থেকে হেদায়েত আসবে, তখন এই হেদায়েত যে অনুসরণ করবে তার কোন ভয় নেই এবং সে দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবেনা “ 

 সুতরাং যদি আপনি এই জ্ঞান অনুসরণ না করেন শুধু জ্ঞানের কিতাব, বই পুস্তক, হাজার হাজার- লক্ষ লক্ষ হাদীস মুখস্ত করে রাখেন,  দুনিয়ার তাবৎ ইজমা কিয়াস মাসলা মাসায়েল মুখস্থকরণ  আপনাকে গাঁধা বানিয়ে ফেলবে। সূরা জুমআর ৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ ইহুদিদেরকেও এরকম কটাক্ষ করে বলেছিলেন “ যাদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধার মতো, যে বহু পুস্তক বহন করে বেড়াচ্ছে।” 

আমাদেরকে আল্লাহ যে উপদেশ দিয়েছেন তা সূরা মোহাম্মদের ২৪ আয়াতে আমরা দেখতে পাই “তারা কি কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-গবেষণা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?”

 আমরা এই সিজদা নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করি, গবেষণা করি, তা না হলে আমাদের অন্তর তালাবদ্ধ হয়ে যাবে।

 আমরা প্রথমে দেখব ১৬ নাম্বার সূরা নাহলের ৪৮ থেকে ৫০ নাম্বার আয়াত। আল্লাহ বলছেন “আওয়ালাম”- তারা কি দেখে না?

 আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সেজদাবনত হয়ে?”

 ৪৯ নাম্বার আয়াত- “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যত জীবজন্তু-প্রাণী আছে তারা ও সমস্ত ফেরেশতা- সবাই আল্লাহকে সেজদা করে। এবং তারা মোটেই অহংকার করে না।’

৫০ নাম্বার আয়াত- “তারা ভয় করে তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের রবকে এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তাই পালন করে।’

 এই তিনটা আয়াতে আমাদের কয়েকটা শব্দের দিকে খুব বেশি নজর দিতে হবে কারণ তা না হলে এ কোরআনের সঠিক হেদায়েতের নুর থেকে আমরা বঞ্চিত হব। আল্লাহ তিনটা আয়াতের প্রথমেই অর্থ্যাৎ ৪৮ নং আয়াত শুরুই করেছেন “আওয়ালাম- আর্থ্যাৎ তারা কি দেখে না? তারপর বলেছেন- “সুজ্জাদান” তারা সিজদা করে তারপর বলেছেন- “ওয়াহুম দাখিরুন” তারা অনুগত হয় বা বাধ্যগত হয়।

 ৪৯ আয়াতে বলেছেন- “ওয়াহুম লা ইয়াস্তাক বারুন “ তারা অহংকার করে না।

 ৫০ আয়াতে বলেছেন- “অইয়াফআলুনা মা ইউক্ব‑মারুন” তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তাই পালন করে।

৪৮ আয়াতের শুরুতেই  আল্লাহ বলেছেন তারা কি দেখে না? অর্থ্যাৎ আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ আল্লাহ নিবদ্ধ করতে বলেছেন- আমরা কি দেখি না? আমাদের দেখতে বলেছেন । লক্ষ্য করতে বলেছেন। আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সেজদাবনত হয়ে। আসমান জমিনে যত জীবজন্তু-প্রাণী  ফেরেশতা আছে সবাই আল্লাহকে সিজদা করে। কিভাবে সিজদা করে?

— অনুগত হয়ে, বাধ্য হয়ে।

 কি করে না? তারা অহংকার করে না।  কিভাবে সেজদা করে?  তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তাই পালন করে। 

তাহলে সিজদা কি? তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা ইবলিশের মতো কোন অহংকার না করে তা পালন করে।  “অইয়াফআলুনা মা ইউক্ব‑মারুন” যা আদেশ করা হয় তারা তাই পালন করে।

 এক শ্রেণীর জালেম আপনাকে বলবে যে আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ‚তারা, ফেরেশতা- যত জীবজন্তু-প্রাণী আছে সবাই আল্লাহকে সিজদা করে আমরা দেখি না। কারণ তাদের সিজদার পদ্ধতি- তাদের সেই ষষ্ঠ অঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গর প্রণাম অর্থ্যাৎ তাদের উপুর হয়ে মাটিতে কপাল ঠোকানো সেটা মানুষৈর চেয়ে ভিন্ন পদ্ধতি সে কারনে আমরা দেখিনা।

নিঃসন্দেহে এটা পুরোপুরি কুরআন অপব্যাখ্যা ও মহান আল্লাহর প্রতি নির্মম নিষ্ঠুর মিথ্যারোপ ও মিথ্যা অপবাদ। কেননা মহান আল্লাহ এই তিনটা আয়াতের  প্রথম আয়াত অর্থ্যাৎ ৪৮ আয়াত শুরুই করেছেন “ আওয়ালাম” তথা দেখতে বলার কথা বলে। তিনি বলেছেন “ তারা কি দেখে না?”

 এর অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কার।  তাদের এই সেজদাটা আমরা অবশ্যই পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবো। যদি আমরা দেখতে চাই। আপনি দু চোখ মেলে আকাশের দিকে তাকান। দেখুন- সবাই  “অইয়াফআলুনা মা ইউক্ব‑মারুন” করছে অর্থ্যাৎ আল্লাহর আদেশ মেনে চলছে। সূর্য সময় মতো উদয় হয় অস্ত যায়। নিজ কক্ষপথে ঘোরে । সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকটা গ্রহ উপগ্রহ কক্ষপথে ঘোরে। আবার যে সৌরজগত তারা আবার এই গ্যালাক্সিতে কক্ষপথে ঘুরছে। জোয়ার ভাটা, আলো বাতাস নদ নদী সাগর মহাসাগর সবকিছু আল্লাহর আদেশ মেনে চলছে । আপনি যদি সেই বিশাল জগত থেকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ক্ষুদ্র জগতে যান তাও আপনি দেখতে পাবেন যেহেতু আল্লাহ বলেছেন তারা কি দেখে না? আপনি অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে যদি মানুষের শরীরের কোষের ক্ষুদ্র অংশ ‑একটা অনু বা পরমাণু নেন সেখানেও দেখবেন যে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। মধ্যাকর্ষ অভিকর্ষ সবকিছু আপনি ইচ্ছে করলে দেখতে পারবেন। মর্মে মর্মে উপলব্ধি করবেন যে সবাই আল্লাহর আদেশ মেনে চলছে। কেউ অহংকারী হয় না কেউ আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে না।  বিশাল সৌরমন্ডল নভোমন্ডল মহাবিশ্ব গ্যালাক্সি মাল্টিভার্স থেকে শুরু করে একেবারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু পরমাণু পর্যন্ত আপনি ইচ্ছে করলে দেখতে পারবেন যে সবাই অঅল্লাহর আদেশ মেনে চলছে। এই উৎসাহ এই চ্যালেঞ্জ মহান আল্লাহ ১৬ নাম্বার সূরার ৪৮ থেকে ৫০ আয়াতের শুরুতেই দিয়েছেন। এই সিজদা  কখনোই  কাঠ মোল্লাদের বয়ান করা ষষ্ঠ অঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গ দিয়ে উপুর হয়ে মাটিতে কপাল ঠেকানো নয় এটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন। গাছপালা তরুলতা পশুপাখির জন্ম বংশবিস্তার বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে আমাদের শরীরের রক্ত প্রবাহ, লাংস, কিডনি, ফুসফুস হার্ট, সবকিছু আল্লাহর আদেশ ঠিকই মেনে চলছে। আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি অনুবীক্ষণ যন্ত্র বা এক্সরে মেশিন দিয়ে চেক করেও দেখতে পারেন। এটাই মহান আল্লাহ আপনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আবার বিশাল শক্তিশালী লেন্স লাগিয়ে দুরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও আপনি সৌরমন্ডলে বা নভোমন্ডল পর্যবেক্ষন করতে পারেন। সবখানেই দেখবেন যে সবাই আল্লাহর আদেশ মেনে চলছে আর এই কথাটাই আল্লাহ খুব চমৎকার করে ১৩ নাম্বার সূরা রাদের ১৫ নাম্বার আয়াতে বলেছেন -“আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়- স্বেচ্ছায় কিংবা বাধ্য হয়ে তাদের ছায়াও সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সিজদা করে। আমরা জানি যে মানুষ এবং এবং জিনকে ফ্রি উইল বা স্বাধীন ইচ্ছা দেয়া হয়েছে মানুষ এবং জিন ছাড়া সমগ্র বিশ্বমন্ডলে যারা আছে তাদের ফ্রি উইল মানে ইচ্ছায় হোক অথবা অনিচ্ছায় তারা সিজদা করে। এই অনিচ্ছা শব্দটা আল্লাহ যোগ করেছেন তিনি বলছেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা আল্লাহর আদেশ মেনে চলে।  আপনি দেখবেন যে আপনার ভেতরে কিছু বিষয় আছে  আপনার ফ্রি উইল আছে সেই স্বাধীন ইচ্ছা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন আর কিছু জিনিস আছে যে আপনার ইচ্ছায় ঘটে না। আপনার শরীরের রক্ত প্রবাহ আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনার ইচ্ছায় ঘটে না। আপনি যে শ্বাস ও প্রশ্বাস নিচ্ছেন আপনার ইচ্ছায় ঘটছে না আপনার লাংস কিডনি ফুসফুস সবকিছু অটোমেটিক্যালি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করছে এটাই হচ্ছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। আপনি ইচ্ছা না করলেও এগুলো কাজ করতেই থাকবে। দুচোখ মেলে যেদিকে তাকান সবখানে দেখবেন যে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর সকল সৃষ্টি আল্লাহর আদেশ মেনে চলে অর্থ্যাৎ আল্লাহর সিজদা করে যেটা আমরা সূরা নাহলের ৫০ আয়াতে দেখেছি । “অইয়াফআলুনা মা ইউক্ব‑মারুন” তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তাই মেনে চলে।

 ৫৫ নাম্বার সূরা আর রাহমানের পাঁচ ও ছয় নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে নির্ধারিত কক্ষপথে- সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে নির্দিষ্ট হিসাব অনুযায়ী। তারকা ও গাছপালা আল্লাহকে সেজদা করে। এই যে সূর্য চন্দ্র তারকা গাছপালা কিভাবে আল্লাহকে সিজদা করে? তারা কখনোই ষষ্ঠঅঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গ ব্যবহার করে হাত পা হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে কপাল দিয়ে উপুর হয়ে থাকে না। এখানেও আমরা দেখতে পাই যে এই সিজদা হচ্ছে সেই সূরা নাহলের 50 নাম্বার আয়াতে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা, আল্লাহর আদেশ পালন করা।  তারা অ্যারোগেন্ট বা অহংকারী হয়না। যদি অ্যারোগেন্ট হতো অহংকারী হতো বিদ্রোহ করতো ইবলিশের মতো সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেত। সূর্য যদি বলতো যে আমি পৃথিবীর আরো কাছে যাব। পৃথিবীর মানুষ গরমে অতিষ্ট হয়ে প্রচন্ড উত্তাপে মরে যেত। চন্দ্র যদি বলতো আমি আরো কাছে যাব জোয়ার এমন হওয়া হতো যে সমগ্র পৃথিবী জলোচ্ছাসে মহাপ্লাবিত হয়ে সুনামি হয়ে যেত। গাছপালা বৃক্ষ সবাই যদি বিদ্রোহ করতো? আম গাছ যদি বলতো  আমি আর আম দেবো না, ধান গাছ যদি বলতো যে আমি আর ধান দেবো না সমগ্র পৃথিবী সমগ্র ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে যেত। এজন্যই মহান আল্লাহ সুরা আম্বিয়ার ২২ আয়াতে বলেছেন “যদি আসমান জমিনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ থাকতো তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত ।” ২৩ আয়াতে বলেন  তিনি যা-কিছু করেন, সেজন্য কারও কাছে তাঁর জবাবদিহি করতে হবে না-তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না, কিন্তু সকলকেই তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”

তাহলে আমরা বুঝলাম আসমান জমিনের  সবাই আল্লাহর আদেশ মেনে চলে্, আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। কখনোই ষষ্ঠ অঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গ দিয়ে উপুর হয়ে মাটিতে কপাল ঠেকায় না । 

এবার আমরা আরেকটা চমৎকার আয়াত দেখব। যে আয়াতটাও শুরু হয়েছে আল্লাহর চ্যালেঞ্জ দিয়ে।  “আলামতারা “ তুমি কি দেখ না? সুরা হাজ্বের ১৮ আয়াত- “তুমি কি দেখ না আল্লাহকে সেজদা করে যারা আসমানে আছে, আর যারা পৃথিবীতে আছে আর সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতসমূহ, বৃক্ষরাজি, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে আল্লাহকে সিজদা করে আবার অনেকেই আছে যাদের উপর শাস্তি ধার্য হয়ে গেছে আর আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মানিত করার কেউ নেই নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছে তাই করেন। ক্যান ইউ এক্সেপ্ট দিস চ্যালেঞ্জ? আপনি কি আল্লাহর এই চ্যালেন্জ গ্রহন করতে পারবেন?  আল্লাহ বলছেন তুমি কি দেখ না? এবার আপনি দেখুন।  চারদিকে তাকিয়ে দেখুন।  যারা আসমানে আছে তারা ও যারা জমিনে আছে তারা।  এরপর আল্লাহ বলেছেন সূর্য চন্দ্র তারকারাজি– আপনি গ্যালাক্সিতে যান, মিল্কি ওয়েতে যান সুবিশাল ইউনিভার্সে যান। সেটা ওয়ান ডাইমেনশনাল হোক টু ডাইমেনশনাল হোক মিল্কি ওয়ে হোক না কেন?  আপনি আল্লাহর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দেখেন সবাই আল্লাহর আদেশ মেনে চলছে। কেউ কোন ধরনের এদিক সেদিক করছে না । তারপর আল্লাহ বলছেন পাহাড়-পর্বত গাছপালা জীবজন্তু ও অনেক মানুষ আল্লাহকে সেজদা করে। তার মানে আমরা বুঝলাম অনেক মানুষও আছে যারা আল্লাহর আদেশ মেনে চলে আবার অনেকেই আছে যাদের উপর শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে আছে এই বিষয়টা আমাদের একটু বোঝা দরকার কারণ আমরা দেখছি এখানে আল্লাহ অনেক মানুষের কথা বলেছেন আবার অনেক মানুষ যাদের উপর শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে আছে তাদের কথাও বলছেন। বলছেন যে তারা সিজদা করছে। এক দিকে সকল মানুষ সবসময় আল্লাহর সিজদা করছে সচেতনভাবে হোক অসচেতনভাবে হোক বা  অবচেতনভাবে হোক তারা সবসময় আল্লাহর সিজদা করচে অর্থ্যাৎ আল্লাহর আদেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে তাদের সমগ্র জীবন উৎসর্গকৃত।  আর অন্যদিকে মানুষকে ফ্রি উইল বা স্বাধীন ইচ্ছা উপহার দেয়ার পরেও অনেক মানুষ আছে যারা সচেতনভাবে  সিজদা করে না কিন্তু অবচেতনভাবে ঠিকই সিজদা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদিও তাদের উপর শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে আছে।

কিভাবে এটা সম্ভব? জন্ম থেকেই মানুষের কোন কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। সে কোন দেশে জন্মাবে? কার ঘরে জন্মাবে? কোটিপতির ঘরে না গরীবের ঘরে? তার গায়ের রং সাদা হবে না কালো হবে? উচ্চতা কতটুকু হবে? জ্ঞান বুদ্ধি কেমন হবে? তার জীবনের ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই তার কোন কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সবকিছু ঘটছে আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। আল্লাহর আদেশে।  তার ভাষা, গায়ের রং, বিদ্যা বুদ্ধি, উচ্চতা, দেশ, পরিবার, কোথায় জন্ম নেবে- এভরিথিং বিয়ন্ড হিজ কন্ট্রোল- সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একইভাবে বিয়ের পর তার ঘরে সন্তান কেমন হবে? ছেলে সন্তান হবে না মেয়ে সন্তান হবে ফর্সা হবে না শ্যামলা হবে? বুদ্ধিমান হবে না বোকা হবে? কোন কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনটা এভাবে চিন্তা করলে দেখব যে সচেতনভাবে হোক বা অবচেতনভাবে হোক আমাদের শরীরের  অঙ্গ‑প্রত্যঙ্গ সহ শ্বাস‑প্রশ্বাস লাঞ্চ কিডনি ফুসফুস সহ অধিকাংশ দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান বিষয়ই আল্লাহরই আদেশ মেনে চলছে। উই হ্যাভ নো কন্ট্রোল ওভার দেম । তাদের ওপর আমাদের কোনই নিয়ন্ত্রণ নাই। তাহলে যে বাকি অল্প কিছু বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সিজদা না করার কারনেই আমাদের উপর শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে আছে।  এই আয়াতে পরিষ্কারভাবে আমরা বুঝলাম যে এখানে সিজদা বলতে কখনোই হাত পা কপাল হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে ষষ্ঠ অঙ্গ অষ্ট অঙ্গ দিয়ে উপুর হওয়া বোঝানো হয় নি।

 আল্লাহর আদেশ সচেতনভাবে হোক বা অসচেতনভাবে হোক, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক মেনে চলা, মেনে নেয়াই হচ্ছে সিজদা।

 অন্যদিকে যখন মানুষের ক্ষেত্রেও এই সিজদা শব্দ আল্লাহ ব্যবহার করেছেন। আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত আয়াতগুলোতে দেখলাম যেখানে কোথাও হাত পা কপাল দিয়ে মাটিতে ঠেকিয়ে উপর হয়ে সেজদা বোঝানো হয় নি কারণ সূর্য চন্দ্র গ্রহ নক্ষত্র গাছপালা তরুলতা পাহাড় পর্বত সাগর নদী লাঞ্চ কিডনি ফুসফুস অণু পরমাণু কোন কিছুরই হাত নেই পাও নেই হাঁটু নেই কপালও নেই। আর এরা কোথায় মাটিতে উপুড়  হয়ে কপাল ঠেকাবে? এটা সম্ভবও নয়।                সূরা নাহালের ৫০ আয়াতে বলা হয়েছে  “অইয়াফআলুনা মা ইউক্ব‑মারুন” যা আদেশ করা হয় তারা তাই পালন করে। আল্লাহ যা আদেশ করেন তারা সেটাই মেনে চলে। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক স্বেচ্ছায় হোক বাধ্য হয়ে হোক  সেটাই হচ্ছে সিজদা।

 কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে আমরা একটু ব্যতিক্রমধর্মী জিনিস দেখতে পাই। যখন এই সিজদা শব্দটা আল্লাহ মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন।

 আমরা প্রথমে যাই সাত নাম্বার সূরা আরাফের ১৬০ নাম্বার আয়াতে।  আল্লাহ বলছেন “আমি বনী ইসরাইলদের ১২টি জাতিগোত্রে বিভক্ত করেছিলাম। মুসার লোকেরা যখন তার কাছে পানি চাইল তখন তার কাছে ওহি নাজিল করলাম ‑তুমি তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করো ফলে পাথর ফেটে বারোটি ঝর্ণা বের হয়ে আসে। প্রত্যেক দল তাদের পানি পানের জায়গা চিনতে পারে আর আমি তাদের উপর মেঘের ছায়া প্রদান করি এবং তাদের কাছে খাদ্য হিসেবে মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করি। আর বলি আমার দেওয়া ভালো জিনিসগুলো খাও । (কিন্তু তারা আমার নির্দেশ অমান্য করে) আমার প্রতি কোন যুলম করেনি, প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের উপরই যুলম করছিল- আমার কোন ক্ষতি করেনি বরং তারা নিজেদেরই ক্ষতি করেছিল।’

১৬১ আয়াত- “যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, “এই জনপদে (জেরুজালেমে) বসবাস করো এবং এখানকার যেখানে বসে চাও আহার করো আর বল, (হে আল্লাহ) আমাদের পাপ ক্ষমা করে দাও। আর সিজদা করতে করতে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব। আমি সৎকর্মশীলদের আরো বেশি দেব।” 

“অদখুলু আলবাবা  সুজ্জাদান নাগফীর”-অর্থ্যাৎ  সিজদা করে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করো্। আপনি বলুন তো এখানে যে বলা হয়েছে এই জনপদে- (এই জেরুজালেমে) তোমরা বসবাস করো। তারা এখানে প্রবেশ করবে? প্রশ্ন ওঠে তারা আগে কোথায় ছিল? ১৬০ নং আয়াতটা পড়লেই আমরা বুঝতে পারি যে মরুভূমিতে ছিল। বসবাসের জন্য সুন্দর কোন জায়গাও ছিল না। এমন কি ক্ষুধা তৃষ্ণায় পান করার পানিও ছিল না । মুসা নবী লাঠি দিয়ে পথরে আঘাত করেন।  সেখান থেকে 12টি ঝর্ণা মহান আল্লাহ তাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন। এমনকি তাদের জন্য মান্না সালওয়া খাবার পর্যন্ত আল্লাহ দান করেছিলেন। এখন ১৬১ আয়াতে তাদেরকে বলা হচ্ছে জেরুজালেমে প্রবেশ করতে । কিন্তু সেখানে একটা দরজা আছে ।আমরা জানি যেকোনো বড় শহরে বাউন্ডারি থাকে, সীমানা প্রাচীর থাকে। আগে তো আরো বেশি সীমানা প্রাচীর বা সুরক্ষা দেয়াল ছিল। কারণ ডাকাতের ভয় ছিল, বিদেশী বহিঃশত্রুদের হামলার ভয় ছিল। যখন তখন পাশের দেশের যেকোনো ছোটখাটো রাজ্য থেকেই হামলার আশঙ্কা থাকতো। সেই লক্ষণ সেন এবং ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর ঘটনা আমরা সবাই জানি। এভাবে হুটহাট আক্রমণ বা হামলা হতো। সে কারনেই শহর রক্ষার যে প্রাচীর থাকে বা দেয়াল থাকে এবং প্রবেশের যেই দরজা থাকে সেই দরজা দিয়ে বণি ইসরাইলিদের  প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল- সিজদাবনত বা সিজদারত হয়ে।

তাহলে প্রশ্ন ওঠে তারা কি করবে? তারা কি ষষ্ঠ অঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গ দিয়ে হাত পা মুখ কপাল মাটিতে ঠুকে উপুড় হয়ে সেই শহরের গেট দিয়ে প্রবেশ করবে? হিন্দুদের প্রণামের মতো উপুড়  হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে প্রবেশ করবে? ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর হয়ে যায় না?

19:34

এখানে আমরা বুঝতেই পারছি সুরা নাহল,সুরা হাজ ও সুরা রাদে যে সিজদার আয়াতগুলো পড়েছি তা থেকে বুঝতেই পারছি মহান আল্লাহ আসলে কি বুঝিয়েছেন। আল্লাহ যে বণী ইসরাইলীদের এত নিয়ামত এত উপহার দিয়েছেন- ক্ষুধা তৃষ্ণায় পানের জন্য ১২টি ঝর্ণা দিয়েছেন, জান্নাতের মান্না সালওয়া খাবার দিয়েছেন। যেহেতু এখন খাবারের কোন কষ্ট নেই, ফেরাউনের অত্যাচার নেই। সুতরাং এখন আল্লাহর আদেশগুলো তাদের মেনে চলতে হবে- এবং পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।  সূরা নিসার ১৫৩, ১৫৪ ও ১৫৫  আয়াতে আল্লাহ বলছেন “কিতাবধারীগণ তোমাকে আসমান থেকে তাদের সামনে কিতাব নিয়ে আসতে বলে? তারা তো মুসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবি পেশ করেছিল। তারা বলেছিল “হে মুসা তুমি প্রকাশ্যে সামনাসামনি আমাদের আল্লাহকে দেখাও। তখন তাদের এই অন্যায় ও বাড়াবাড়ির জন্যই তাদের উপর

20:14

বজ্রপাত আঘাত হেনেছিলো। অতঃপর তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরেও তারা গরুর বাছুর পূজা করেছিল। আমি তাও ক্ষমা করেছিলাম আর মুসাকে আমি এক স্পষ্ট কর্তৃত্ব দান করেছিলাম। আর তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য আমি তুর পাহাড়কে তাদের ওপরে তুলে ধরেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম “আদখুলু  আলবাবা সুজ্জাদা” এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করো সিজদাবনত হয়ে।আর তাদেরকে বলেছিলাম শনিবারের ব্যাপারে সীমা অতিক্রম করো না আর তাদের নিকট থেকে কঠোর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলাম কিন্তু তারা লানত প্রাপ্ত হয়েছিল তাদের

21:03

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি তাদের অবিশ্বাস ও অন্যায়ভাবে তাদের নবীদেরকে হত্যা এবং তাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত এই উক্তি করার জন্য। হ্যাঁ তাদের অবিশ্বাস হেতু আল্লাহ ওদের অন্তরে মোহর এটে দিয়েছিলেন। এ কারণে তারা অল্প সংখ্যক ব্যতীত ঈমান আনবে না।”

 দুই নাম্বার সূরা বাকারা ৪৮, ৪৯ ও ৫০আয়াত — তোমরা এমন একটি দিনকে ভয় করো যেদিন কেউ কারো কাজে আসবে না কারো কোন সুপারিশ কবুল করা হবে না আর কারো কাছ থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না এবং তাদেরকে কোন রকম সাহায্যও করা হবে না। স্মরণ করো যখন আমি ফেরাউনের লোকদের থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলাম যারা তোমাদের

21:55

ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চাপিয়ে দিয়েছিল/ কঠোর শাস্তি প্রদান করতো। তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করতো এবং তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখতো এবং এর মধ্যে ছিল তোমাদের রব হতে তোমাদের জন্য মহাপরীক্ষা।  স্মরণ করো যখন আমি তোমাদের জন্য সমুদ্রকে বিভক্ত করে তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম আর তোমাদের চোখের সামনেই ফেরাউনের লোকদের ডুবিয়ে মেরেছিলাম। স্মরণ করো যখন আমি মুসার জন্য ৪০ রাত নির্ধারণ করেছিলাম তারপর তার প্রস্থানের পর তোমরা তখন গরুর বাছুরকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছিলে বস্তুত তোমরা তো ছিলে জালিম, অত্যাচারী। ঐ ঘটনার পরও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম যাতে

22:45

তোমরা কৃতজ্ঞ হও। স্মরণ করো যখন আমি মুসাকে তাওরাত ও সত্য মিথ্যার মানদণ্ড- ফুরকান দিয়েছিলাম যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হও- সৎপথ অবলম্বন করো। যখন মুসা তার লোকদেরকে বলেছিল হে আমার লোকেরা তোমরা গরুর বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে নিজেদের উপর জুলুম করেছো অতএব তোমাদের স্রষ্টার নিকট তওবা করো এবং নিজেদেরকে হত্যা করো তোমাদের স্রষ্টার বিচারে সেটাই তোমাদের জন্য মঙ্গল। এরপর তিনি তোমাদের তওবা কবুল করেছিলেন বস্তুত তিনি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু। স্মরণ করো যখন তোমরা বলেছিলে যে আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যে সামনাসামনি না দেখা পর্যন্ত তোমার কথায় কিছুতেই বিশ্বাস করবো না । তখন তোমাদের

23:36

উপর বজ্রপাত আঘাত হানলো আর তোমরা তা নিজেরাই দেখেছিলে। তারপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি আবার তোমাদেরকে জীবিত করেছিলাম যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। আর তোমাদের ওপর মেঘের ছায়া দিয়েছিলাম এবং তোমাদের জন্য আসমানী খাদ্য মান্না ও সালওয়া পাঠিয়েছিলাম আর বলেছিলাম আমার দেয়া উত্তম খাবার খাও। তারা তো আমার উপর জুলুম করেনি বরং নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছিল। আর স্মরণ করো যখন আমি বলেছিলাম এই জনপদ জেরুজালেমে প্রবেশ করো এবং এর যেখানে চাও সুখে স্বাচ্ছন্দে খাওয়া-দাওয়া করো আর প্রবেশকালে ক্ষমা চাও আর “আদখুলু  আলবাবা সুজ্জাদা”  সিজদাবনত হয়ে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করো আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নেককারদেরকে আরো বেশি পুরস্কার দেব।  কিন্তু এই জালেমদেরকে যা বলতে বলা হয়েছিল তারা তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল। তাই তাদের অবাধ্যতার কারণে আমি জালেমদের ওপর আসমান থেকে আজাব নাযিল করেছিলাম। স্মরণ করো যখন মুসা তার লোকদের জন্য পানি চেয়েছিল আমি বললাম হে মুসা তুমি তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করো। মুসা আঘাত করলে তখন সেখান থেকে বারোটি ঝর্ণা প্রবাহিত হলো। প্রত্যেকটি গোত্র নিজ নিজ পানি পানের জায়গা জেনে নিল। তাদেরকে বলা হলো আল্লাহর রিজিক থেকে পানাহার করো আর পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করোনা।”

 সবগুলো আয়াত পড়ে আমরা বুঝলাম যে মুসা নবীর কওম কতটা জালিম ছিল। কতটা অকৃতজ্ঞ ছিল। মহান আল্লাহ এত নিয়ামত দিয়েছিলেন, আসমান থেকে মান্না সালওয়া খাবার খাইয়েছেন ফেরাউনের নির্মম নিষ্ঠুরতা থেকে তাদের বাঁচিয়েছিলেন তারপরও তারা নবীদেরকে হত্যা করতো। মুসা নবী ৪০ দিনের জন্য তুর পাহাড়ে যাওয়ার পর তারা গরুর বাছুর পূজা শুরু করেছিল আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখতে চেয়েছিল। এরপর আল্লাহ তুর পাহাড়কে তাদের মাথার উপর ধরেছিলেন। ৪০ বছর তারা মরুভূমিতে ঘরবাড়ি ছাড়া- যাজাবরের মত কাটিয়েছে। তারপর আল্লাহ তাদেরকে এক জনপদের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কি করতো?

25:58

তারা সেখানে গোলযোগ সৃষ্টি করতো। নবীদের মানতো না । যে ১২টি দল বা গোত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন। আসমানি মোজেজার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের ঝর্ণা দিয়েছিলেন পানি পান করার জন্য। এত কিছু পেয়েও তারা সেই দলনেতাদের মানতো না। নবীদেরই মানতো না হত্যা করে ফেলতো সেখানে নেতাদের মানার তো প্রশ্নই ওঠে না।

মুসা নবীর ভাই হারুন কেও মানতো না। এরা এতটা নিষ্ঠুর এতটা জালিম। যারা এতটা যন্ত্রণা দিয়েছে নবী রাসূলদের। হত্যা পর্যন্ত করেছে। তারা কতটা অমানবিক জালিম ছিলো সুরা আহযাবের ৬৯ আয়াত পড়লে আমরা তা বুঝতে পারি। নবী মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহর সাহাবীদের প্রতি আল্লাহ আয়াত নাযিল করেছেন মুসার কওম তাকে যেমন কষ্ট দিয়েছে তেমন কষ্ট যেন সাহাবীরা নবীকে না দেয় আল্লাহ সে কথা বলেছেন।

 এত অন্যায় অপরাধের পরেও মহান আল্লাহ বাণী ইসরাইলীদের ক্ষমা করেছেন এবং সেই যাযাবরের জীবন থেকে নিষ্কৃতির জন্য একটা জনপদের সুসংবাদ দিয়েছেন। কিন্তু সেই জনপদের যে বিশাল দরজা সেখান থেকে তাদের ষষ্ঠ অঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গ দিয়ে হাত পা কপাল মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে কেন যেতে বলবেন? সেখানে কি হিন্দুদের দেব দেবীর মূর্তি স্থাপন করা? এখানে সিজদা নিশ্চয়ই  হামাগুড়ি বা হাত,পা, কপাল মাটিতে ঠেকিয়ে উপুড় হয়ে যাওয়া বোঝানো হয়নি। কারণ ওভাবে কোন মানুষের পক্ষে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া করা সম্ভব নয়।

 আপনি সেজদারত থেকে কপাল মাটিতে ঠেকিয়ে কতটুকু পথ এগোতে পারবেন? এখানে নিঃসন্দেহে আল্লাহ সুরা নাহলের ৪৮,৪৯,৫০ সুরা রাদের ১৫ সুরা আর রাহমানের ৫,৬ ও সুরা হাজ্বের ১৮ আয়াত অনুযায়ী একইভাবে আল্লাহর মেনে চলা বুঝিয়েছেন। দুটো জিনিস মেনে চলা। এক আল্লাহর আদেশ‑নিষেধ, দুই নবীর আদেশ নেতাদের আদেশ অথবা নতুন যে নগরে যে জনপদে যে জেরুজালেমে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা আল্লাহ করেছেন সেখানকার যে কর্তৃপক্ষ আছে তাদের আদেশও মেনে চলতে হবে। কারণ আমরা এই সুরা নিসা ও বাকারার আয়াতগুলো পড়েই বুঝেছি যে তারা গোলযোগ সৃষ্টি করতো, দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করতো। তারা অতিমিাত্রায় জালিম ছিল। এবং এই কনসেপ্টটা আমরা বর্তমানে পৃথিবীতেও দেখি। অনেক মুসলিমদের সুইডেন ইটালি আমেরিকা ইংল্যান্ড জার্মানি কানাডা নরওয়ে ফিনল্যান্ড বসবাসের জন্য ভিসা দেয়, জায়গা দেয়, নাগরিকত্ব দেয়, চাকরি-বাকরির ব্যবস্থা করে, ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, পড়াশোনার ব্যবস্থা করে। তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই সেখানে তারা গোলযোগ সৃষ্টি করে বোমা হামলা করে শরীয়া আইন কায়েম করতে হবে শ্লোগান তোলে। নাগরিকরা ব্যভিচার করলে হাদীসের শরীয়া আইন অনুয়ায়ী রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করতে হবে বলে আন্দোলন গড়ে তোলে। রাগের মাথায় তালাক দিলেও হিল্লা বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ছবি তোলা হারাম ঘোষণা করতে হবে। কুকুরপালা হারাম ঘোষণা করতে হবে। ইচ্ছেমত চারটা পাঁচটা ছয়টা বিয়ে করবে সেই আইন জারি করতে হবে। মোট কথা হাদীসের শরীয়াহ আইনের জন্য সেখানে বোমা হামলা, হত্যাকাণ্ড, গোলযোগ, দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু করে দেয়। যারা আশ্রয় দিল যেই শহরবাসী বা যে রাষ্ট্র ভিসা দিলো, প্রবেশের অনুমতি দিলো তাদের সাথেই এরকম অরাজকতা শুরু করে দেয়। এজন্য যেই দেশে বা যেই রাষ্ট্রে বা যেই নগরে আপনি যাবেন সেখানকার কতৃপক্ষের  কর্তৃত্বও আপনাকে সিজদা করতে হবে অর্থ্যাৎ মেনে চলতে হবে । 

যেই জনপদে তোমাদের আমি প্রবেশের ব্যবস্থা করেছি তাদের আইন তোমাকে মেনে চলতে হবে। সেখানে গিয়ে আবার শরীয়াহ আইন কায়েমের জন্য বোমা হামলা শুরু করে দিও না।  আমরা এই তিনটা সূরায় অর্থ্যাৎ সূরা বাকারা, সূরা আরাফ ও সূরা নিসায় পরিষ্কার দেখেছিলাম যে তারা কতটা ভয়ংকর জালিম ছিল? নবীদের পর্যন্ত হত্যা করতো। এত কিছুর পরও এত নিয়ামত পাওয়ার পরও এরকম উগ্রতা যাদের চরিত্র ছিল তাদেরকে আল্লাহ যে সিজদা করতে বলেছেন সে সিজদা মোটেই হাত,পা,হাটু গেড়ে উপুড় হয়ে কপাল মাটিতে ঠেকানো নয়? 

আল্লাহর আদেশ মেনে চলা এবং একই সাথে নবীদের ও নেতাদের আদেশ মেনে চলা। এবং যে নগরে বা রাষ্ট্রে তারা প্রবেশ করবে দরজা দিয়ে তখন থেকেই তারা যেন প্রতিশ্রুতি দেয় ওয়াদা দেয় যে আমরা সবকিছু মেনে চলবো। 

এরপর আমরা দেখব ১২ নাম্বার সূরা ইউসুফের ৯৯ ও ১০০ নাম্বার আয়াত । আল্লাহ বলছেন “তারা যখন ইউসুফের নিকট উপস্থিত হলো তখন সে তার মাতা-পিতাকে আলিঙ্গন করল এবং বলল আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিশরে প্রবেশ করুন।”

 আবারো সেই প্রবেশটা আমরা দেখলাম একটু আগে যেখানে আমরা মুসা নবীর কওমদের সেই আদখুলু প্রবেশটা দেখেছিলাম সেখানে তারা এক জনপদে প্রবেশ করেছিল এখানে তারা আদখুলু মিশর অর্থ্যাৎ মিশরে প্রবেশ করছে। তারপর ১০০ নাম্বার আয়াতেআল্লাহ বলছেন  “ইউসুফ তার পিতা-মাতাকে সিংহাসন এর ওপরে বসায় আর তার পিতা-মাতা ও ভাইয়েরা সকলে “লাহু সুজ্জাদান” তাকে সিজদা করল। তখন সে বলে বাবা এটাই তো আমার পূর্বেকার স্বপ্নের তাৎপর্য আমার প্রভু তা সত্যে পরিণত করেছেন।  তিনি আমাকে কারাগার থেকে বের করে এবং আমারও আমার ভাইদের মধ্যে শয়তান কর্তৃক বৈরিতা সৃষ্টির পরেও তোমাদেরকে মরুজীবন থেকে এখানে নিয়ে এসে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।

 এখানে আমরা দেখলাম- সেই মরু জীবন ? বনী ইসরাইলীরাও  একইরকম মরুজীবনে ছিল ৪০টি বছর।

আয়াতের শেষাংশে বলা হচ্ছে- আমার প্রভু যা চান নিশ্চয়ই তা সুনিপুনভাবে সম্পন্ন করেন। তিনি মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

এবার আমরা সামগ্রিক বিষয়টা ঠান্ডা মাথায় বোঝার চেষ্টা করি।ইউসুফ নবীর পিতা-মাতা একটা সিংহাসনে উঠলো। আমরা জানি  সিংহাসন হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু জায়গায় থাকে। যেকোনো একটা ঘরের বা প্রাসাদের সর্বোচ্চ স্থানে থাকে। সেখানে বসে ইউসুফ নবীর পিতা-মাতা কিভাবে হাত পা

হাটু মাটিতে ঠেকাবে? অথবা নাকও  কপাল মাটিতে ঠেকিয়ে ষষ্টাঙ্গ বা অষ্টাঙ্গের প্রণাম করবে? এরকম ষষ্টাঙ্গ বা অষ্টাঙ্গের প্রণাম কি আদৌ সম্ভব? পুরোপুরি অসম্ভব ও অকল্পনীয়। তাই নয় কি?

 এখানে অঅসল ঘটনা হচ্ছে তারা যে মিশরে প্রবেশ করেছে- মিশরের আইন কানুন তাদের মেনে চলতে হবে। ইউসুফ নবী এখন সরকার বা বাদশাহর নিযুক্ত মন্ত্রী। তার আদেশ ও তাদের মেনে চলতে হবে। রাষ্ট্রের, মন্ত্রীর বা সরকারের আদেশ নিষেধ ও মেনে চলতে হবে।  যেরকমটা বানি ইসরাইলীরা যেই জনপদে প্রবেশ করবে সেখানকার আইন‑কানুন মেনে চলবে, ঠিক তেমনি মিশরের আইন‑কানুনও তাদের মেনে চলতে হবে। আর বনী ইসরাইলীরা তাদের কর্তৃত্ব মেনে চলবে তাদের আদেশ মেনে চলবে নবীদের নির্দেশ মেনে চলবে। হারুন নবী বলবে যে তোমরা গরুর বাছুর পূজা করো না । তারা শুনবে না? এরকম হতে পারবে না।  নেতা বা নবী এদের আদেশও মেনে চলতে হবে সকল বাণী ইসরাইলীদের।  এখানে যে ইউসুফ নবীর ১২ ভাই আছে পিতা-মাতা আছে সবাইকে ইউসুফ নবীকে মেনে চলতে হবে। যেহেতু ইউসুফ এখন একজন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা-কর্তৃত্বশীল বা রাষ্ট্রের নেতৃত্বের পর্যায়ে আছে। সুতরাং অবশ্যই তার আদেশ নিষেধ তাদের মেনে চলতে হবে। উপুড় হয়ে কপাল মাটিতে ঠুকে ষষ্টাঙ্গের প্রণাম নয়। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই হিন্দুদের ষষ্টাঙ্গের প্রণাম তাহলে প্রশ্ন আসে ইউসুফ নবী যে স্বপ্নে দেখেছিলেন তাকে চন্দ্র সূর্য সিজদা করছে । সেই স্বপ্নের কি হবে? চন্দ্র সূর্য কি আসমান থেকে মাটিতে নেমে এসে হাত পা হাটু কপাল মাটিতে ঠেকিয়ে ইউসুফ নবীকে ষষ্ঠ অঙ্গ বা অষ্ট অঙ্গের সেই সিজদা করেছিল স্বপ্নের মধ্যে? এটা আদৌ সম্ভব? 

কেন সম্ভব নয়? কারণ আমরা তো জানি যে সূর্য পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুণ বড় আর চন্দ্র পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ আর অন্য যে তারকারাজি সেগুলো তো আমরা জানি সূর্যের মতোই বিশাল বড় এমনকি তার চেয়ওে কয়েকশো গুণ বড় বড় নক্ষত্র গ্যালাক্সিতে রয়েছে।  কমপক্ষে পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুণ বড়ও যদি হয় সূর্য, অন্যান্য তারকা বা নক্ষত্রগুলো? অবশ্যই সেই ১৩ লক্ষ গুণ বড় বিশাল আকৃতির নক্ষত্রদের ষষ্টাঙ্গের প্রণাম করা সম্ভব নয়। ওদের কি পৃথিবীর মাটিতে নেমে আসা সম্ভব? জায়গায় কুলোবে? নাকি স্থান সংকুলান হবে? এটা কোনদিনও সম্ভব নয় যে ইউসুফ নবীর সামনে সেই চন্দ্র সূর্য হাত পা হাটু কপাল গেড়ে কপাল ঠেকাবে। এটা আদৌ সম্ভব নয় এবং রীতিমত হাস্যকর। তাহলে স্বপ্নের বাস্তবতা কি হতে পারে? একটাই অর্থ হতে পারে। ইউসুফ নবী স্বপ্নে চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রদের আঙুলের ইশারায় বা মুখে  আদেশ করেছেন একেকটিকে একেক দিকে সরে যেতে। তিনি যেমন আদেশ করেচেন তারা তেমনি ভাবে সরে গেছে। কখনো ডানে, কখনো বায়ে, কখনো পেছন দিকে, কখনো সামনের দিকে। অর্থ্যাৎ তার আদেশ মেনে চলেছে। যাকে যেদিকে যেতে বলেছে সে সেদিকে গিয়েছে। তার নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেছে।

 এরপর আমরা দেখি সূরা বাকারার ৩৪ আয়াত।  আল্লাহ বলছেন “আর আমি যখন ফেরেশতাদের বলেছিলাম তোমরা আদমকে সিজদা করো তখন ইবলিশ ছাড়া অন্যরা সিজদা করেছিল ইবলিশ (য়াস্তাকবারা) অহংকার করল এবং অস্বীকার করল।”

 আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে আজকে শুরুতেই আমরা বুঝেছিলাম সূরা নাহলের ৪৮ থেকে ৫০ আয়াত?  আল্লাহ বলেছেন তোমরা কি দেখো না ? মহান আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাদের ছায়াগুলো ডানে বামে ঝুঁকে আল্লাহকে সেজদা করে এবং যা কিছু আছে আসমান জমিন ভূমণ্ডল নভোমন্ডলে সবাই আল্লাহকে সিজদা করে। যত জীবজন্তু আছে, যত প্রাণী আছে যত ফেরেশতা আছে সবাই আল্লাহর অনুগত থাকে (লা আস্তাকবারা) তারা অহংকার করে না।

এখন এইযে আমরা সূরা বাকারার ৩৪ আয়াতে দেখলাম যে ইবলিশ (আস্তাকবারা) বা অহংকার করেছিল কিন্তু  সূরা নাহলের ৪৮, ৪৯, ৫০ আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে সকলফেরেশতা, আসমানসমূহ, জমিনসমূহ, গ্রহ, নক্ষত্র, গাছপালা ও তাদের ছায়াগুলো পর্যন্ত (লা আস্তাকবারা) তারা কেউ অহংকার করে না। তাহলে কি করে?

 তারা আল্লাহর আদেশ মেনে চলে। আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। তাহলে ইবলিশ কি করেছিলো? আস্তাকবারা করেছিল? অহংকার করেছিল?  দ্যাটস দা বিগেস্ট ক্রাইম- যা ছিলো সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ। ফেরেশতাদের মৌলিক বৈশিষ্টের সাথে প্রচন্ডরকম সাংঘর্ষিক। (সুরা নাহল-৪৯)  আদমের আদেশ মেনে চলতে সে রিজেক্ট করেছিল, অস্বীকার করেছিলো। পরবর্তীতে সে তার যুক্তিও তুলে ধরেছিল।  কেন সে রিজেক্ট করেছে , অস্বীকার করেছে?

 তাহলে এই যে আসমান জমিনের কোন কিছুই আস্তাকবারা করে না- অহংকার করে না আল্লাহর আদেশ মেনে চলে যথাযথভাবে। ঠিক তেমনি আদমকেও আল্লাহ একইভাবে সম্মানিত করেছেন, রেস্পেক্টেড করেছেন। সবাই আদমের নির্দেশ মেনে চলবে- আদেশ মেনে চলবে। শুধুমাত্র আস্তাকবারা করেছিল ইবলিশ। সে অহংকার করেছিল। সে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় তাকে মেনে চলবে না। এখানে মোটেই হাটু হাত পা কপালে মাটিতে ঠেকিয়ে উপুড় হয়ে হিন্দুদের  ষষ্ঠ অঙ্গের পূজা বা প্রণাম নয়। কারণ আমরা জানি আমাদের সবার ভেতরেই (মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস) খান্নাছ থাকে। সে কুমন্ত্রণা দেয়। যতদিন আমরা বেঁচে থাকি সে কখনোই আমাদের বাধ্যগত হয় না। বরঞ্চ আমরাই তার কুমন্ত্রণার ফাঁদে পড়ে বাধ্যগত হই। সে আমাদের শরিক করতে বলে, জুলুম করতে বলে, মিথ্যা বলতে বলে, গীবত করতে, লোভ‑লালসা অহংকার হিংসা সবকিছুর মানসিক অদৃশ্য উস্কানি বা কুমন্ত্রণা সে আমাদেরকে দেয়। আর বাকি সবাই অর্থ্যাৎ আসমান জমিনে  যা আছে সবাই আমাদের জন্য দোয়া করে, আমাদের সেবা যত্ন করে, বাস্তুসংস্থান করে। ফেরেশতারা পর্যন্ত আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আমাদের সবসময় সঙ্গী হয়ে থাকে, রব্বুনাল্লাহ বললে তারা আমাদের কাছে নাযিল হয় আমাদের নিরাপত্তা দেয়, প্রহরা দেয়, আমাদের আমলনামা গুলো লিখে রাখে, জান্নাতে আমাদের গার্ড অফ অনার দিয়ে নিয়ে যাবে, সালাম দেবে, সেখানে সেবা করবে (১৩/২৩; ১৬/৩২; ২১/১০৩; ৪১/৩০; ৪২/৫) এবং এর আগের ভিডিওতে আমরা আলোচনা করেছি দুনিয়া ও আখিরাতে এই ফেরেশতারাই আমাদের বন্ধু থাকে।

 শুধুমাত্র আস্তাকবারা করে এই শয়তান ও খান্নাছ। তবে তারা কোন শারীরিক ক্ষতি করতে পারে না শুধুমাত্র কুমন্ত্রণাই দিতে পারবে। কুমন্ত্রণা বা উস্কানি দিতে পারলেও আমরা দুনিয়ার জীবনে কখনোই তাদের দেখতে পাবো না। সূরা আরাফের ২৭ আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে তোমরা তাদের দেখতে পারবে না।

 যদি সেই ইবলিশ অন্যান্য ফেরেশতাদের মত আমাদেরকে সেভাবে মেনে নিত, দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের বন্ধু হতো, আল্লাহর প্রতি ভরসা করার পর (৪১/৩০) আয়াতের ফেরেশতাদের মত তারা নাযিল হতো আমাদের কাছে।

 আমাদের মৃত্যুর সময় ( ১৬/৩২) আয়াতের ফেরেশতাদের মত আমাদের সালাম দিত আমাদের জান্নাতে নিয়ে যেত, হাশরের মাঠে আমাদের বন্ধু হিসেবে উপস্থিত হতো, আমাদের জীবনটা হয়তো আরো অনেক সুন্দর হয়ে যেত।

 কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের সে (আস্তাকবারা) অহংকার করে।সমগ্র মহাবিশ্ব জগতের বাকি সবাই আল্লাহ যা আদেশ দেয় তাই মেনে চলে। যখনই আল্লাহ বলেন  ফেরেশতা অমুক বান্দার কাছে নাযিল হও, অমুকের কাছে ওহী নিয়ে যাও, অমুনা নবীর মায়ের কাছে ওহি নিয়ে যাও, মৌমাছির কাছে ‍ওহি নিয়ে যাও, মানুষদের নিরাপত্তা দাও, তাদের আমলনামা লেখো, অমুকের মৃত্যুর সময় হয়েছে , যাও;  তাকে সালাম দাও তার জান বের করে নিয়ে আসো। সে যেন একটু ব্যথাও না পায় খেয়াল রেখো, হাশরের মাঠে নেককার মুত্তাকী মুহসীন বান্দাদের পাশে পাশে থাকো তাদের বন্ধু হয়ে যাও, তাদের জন্য সুপারিশ করো,  জান্নাতে তাদের গার্ড অফ অনার দিয়ে স্বাগতম জানিয়ে নিয়ে যাও ।

তারা মহান আল্লাহর সকল আদেশ শোনে, মানে ও পালন করে। তারা আস্তাকবারা করে না, আমি মাটির তৈরি মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলেনা,  ইবলিশের মত আনা খাইরুম মিনহু বলে না।আমি তার চেয়ে উত্তম বলেনা।

 মহান আল্লাহ আমাদেরকে সিজদার কোরআন ভিত্তিক প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুক এবং সারাজীবন ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আমাদেরকে আল্লাহর সকল আদেশ মেনে চলার তথা সিজদা করার তৌফিক দান করুক।

 আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

রিজওয়ান মাহমুদ খান‑ব্যবস্থাপনা পরিচালক (তাজকিয়া নফস ডট কম)

4 thoughts on “সিজদা কি? আদম সিজদার রহস্য?

  1. “অনেক মুসলিমদের সুইডেন ইটালি আমেরিকা ইংল্যান্ড জার্মানি কানাডা নরওয়ে ফিনল্যান্ড বসবাসের জন্য ভিসা দেয়, জায়গা দেয়, নাগরিকত্ব দেয়, চাকরি-বাকরির ব্যবস্থা করে, ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, পড়াশোনার ব্যবস্থা করে.….….….….…মোট কথা হাদীসের শরীয়াহ আইনের জন্য সেখানে বোমা হামলা, হত্যাকাণ্ড, গোলযোগ, দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু করে দেয়।” Won­der­ful anal­o­gy from con­tem­po­rary world!!!!

  2. আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আ’লামিন। সালাম। সেজদাহ সম্পর্কে ভিডিও গুলো দেখেছিলাম। আজকে সম্পুর্ন রুপে বুঝলাম। সত‍্যি অসাধারণ। তবে লেখনি একটু সংখিপ্ত করার চেষ্টা করার অনুরোধ রইল।হাদীসের চোরাবালীতে গলা পযর্ন্ত ডুবে থাকাগন ধৈর্য্য ধরে পড়তে চাবে না। আর একটা পরামর্শ বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে লেখা যায় কিনা ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।

  3. জাজাকাল্লাহ প্রিয় ভাই,
    আপনার অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগুলো ৯৯%ই আমার মন মত হয়।
    আপনাকে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকলে করতাম।
    আমি,সিলেট থেকে বলছি। আমি একটা ব্যাংকে জব করি। খুব একটা সময় পাওয়া যায় না জবের পরে।
    তবু,কোন এসাইনম্যান্ট বা কাজ থাকলে দিবেন যাতে আল্লাহর জন্য কোন কাজে নিজেকে শরীক করতে পারি।

    সালামুন আলাইকুম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *