রুহ এর ৬ প্রকার অর্থ কেন কুরআনে?

"কুরআন না বোঝার ৫ টি কারণ" যাকাত রুহ ও নফস

(57) রুহ এর ৬ প্রকার অর্থ কেন কুরআনে? — YouTube

Tran­script:

আজকে আমাদের খুতবার বিষয় রুহ। রুহ এমন একটা শব্দ যে শব্দের গভীরতা, ব্যাপকতা এত বিশাল ও  এত ব্যাপক যে পৃথিবীর প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ (আড়াইশো)  কোটি খ্রিস্টান এই রুহকে- পবিত্র আত্মাকে ‑হোলি স্পিরিটকে ঈশ্বর বা আল্লাহ মনে করে।  শুধু খ্রিস্টানরা যে এই রুহকে ঈশ্বর বা আল্লাহ বা ত্রিত্ববাদ বা ট্রিনিটির তিনটা পার্টের একটা পার্ট মনে করে অথবা সরাসরি ঈশ্বর মনে করে এমনটা নয়। শুধু যে তারাই পথভ্রষ্ট বা বিভ্রান্ত হয়েছে তা নয়। হাজার হাজার মুসলিম পর্যন্ত এই রুহ এর অর্থবিভ্রান্তির কারণে পুরো কোরআনকে হাজার লক্ষ হাদিস ইজমা কিয়াস শানে নুজুল তাফসীর ও রিজালের মাধ্যমে গুলিয়ে ফেলেছে।

 বিশেষ করে অলি আউলিয়া পীর গাউস কুতুব পীর পূজারী মাজার পূজারী ধারার যারা রয়েছেন তারা এই রুহ শব্দ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তিতে পড়েন। কারণ শব্দটা ছয়টি ভিন্ন অর্থে কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যবহার করেছেন সর্বমোট ৫৭ বার। একবার ব্যবহার করেছেন তুররুহ হিসেবে, একবার ব্যবহার করেছেন রইহা হিসেবে, তিনবার ব্যবহার করেছেন রুহি হিসেবে, দুইবার ব্যবহার করেছেন রইহানা হিসেবে, ২১ বার ব্যবহার করেছেন রুহ হিসেবে এবং ২৯ বার ব্যবহার করেছেন রিহা হিসেবে।

 এই যে ৫৭ বার  ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রুহ শব্দটার মূল রুট ওয়ার্ড বা মৌলিক শব্দের ধাতুটা ব্যবহার করেছেন সেটা নিয়েই আজ আমাদের খুতবা।

 অত্যন্ত সেন্সিটিভ অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সংবেদনশীল, ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক এই রুহ শব্দটি। যে শব্দটি  নিয়ে পৃথিবীর ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি খ্রিস্টান এবং মুসলিমরা আজও পর্যন্ত বিভ্রান্তির বেড়াজালে রয়েছে। সেজন্য এরকম সেনসিটিভ ‚স্পর্শকাতর, সংবেদনশীল, ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক বিষয়ের আলোচনা শোনার ক্ষেত্রে আপনাদের প্রথমে অনুরোধ করব রুহ নিয়ে এর আগে দুটো ভিডিও করা আছে একটা হচ্ছে “রুহ এবং আত্মা ভিন্ন জিনিস” আরেকটা হচ্ছে  “রুহ এবং  জিব্রাইল কি ভিন্ন জিনিস” এই দুটো ভিডিও দেখার অনুরোধ করব তাহলে এই খুতবাটি বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।

 প্রথমে আমরা দেখে নেই এই ৫৭ বার কি কি অর্থে রুহ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে পবিত্র কুরআনে? ১৬ নাম্বার সূরা নাহলের ছয় নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে তুরিহুনা এর অর্থ হচ্ছে তোমরা সন্ধ্যায় চারণভূমি থেকে আনো।

 ৩৪ নাম্বার সূরা সাবার ১২ নাম্বার আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে রওয়াহুহা হিসেবে।  এর অর্থ করা হয়েছে  সন্ধ্যার বেড়ানো।  ১২ নাম্বার সূরা ইউসুফের ৮৭ নাম্বার আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে রওহি হিসেবে। সেখানে এর অর্থ করা হয়েছে অনুগ্রহ।  ৮৭ নাম্বার আয়াতে এই শব্দটা দ্বিতীয়বার এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সেখানেও এর অর্থ করা হয়েছে অনুগ্রহ। 

আমরা জানি যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরেকটা নাম হচ্ছে রহমান আরেকটা নাম হচ্ছে রহিম দুটো শব্দের প্রথমেই রুহ বা রহ উচ্চারণ করতে হয় এবং এই রুহ, রহ, রহিম, রহমান একই ধাতু থেকে উদগত। এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে রহমান রহিম রহমত করেন এই বিষয়টা প্রকাশ করতে এই রুহ বা রইহি শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়।  আল্লাহর এই দয়া আল্লাহর এই অনুগ্রহ আল্লাহর রহমত সবকিছুই রুহ এর অন্তর্গত।

 আমরা প্রথমে সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ শব্দগুলো দেখি এরপর দেখি রুহ হিসেবে যে ২১ বার ব্যবহৃত হয়েছে সে আয়াতগুলো।

দু নাম্বার সূরা বাকারার ৮৭ নাম্বার আয়াতে রুহ, জিব্রাইল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

 সূরা বাকারার ২৫৩ নাম্বার আয়াতেও রুহ শব্দটি জিব্রাইল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

  সূরা নিসার ১৭১ নাম্বার আয়াতে রুহ হিসেবে।

 পাঁচ নাম্বার সূরা মায়েদার ১১০ নাম্বার আয়াতে হোলি স্পিরিট বা পবিত্র আত্মা বা জিব্রাইল হিসেবে।

 ১৫ নাম্বার সূরা হিজরের ২৯ নাম্বার আয়াতে আমার রুহ অর্থে।

 ১৬ নাম্বার সূরা নাহলের দুই নাম্বার আয়াতে রুহ দিয়ে অর্থে।

 ১৬ নাম্বার সূরা নাহলের ১০২ নাম্বার আয়াতে জিব্রাইল হিসেবে।

 ১৭ নাম্বার সূরা বাণী ইসরাইলের ৮৫ নাম্বার আয়াতে রুহ হিসেবে ‑এবং  আল্লাহর আদেশ সংগা হিসেবে।

 ১৯ নাম্বার সূরা মারইয়ামের ১৭ আয়াতে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন আমাদের রুহ হিসেবে। 

 ২১ নাম্বার সূরা আম্বিয়ার ৯১ আয়াতে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন আমাদের রুহ হিসেবে।

 ২৬ নাম্বার সূরা শুয়ারার ১৯৩ আয়াতে জিব্রাইল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

 ৩২ নাম্বার সূরা আস সিজদার ৯ আয়াতে তার রুহ

 ৩৮ নাম্বার সূরা সাদের ৭২ আয়াতে আমার রুহ।

 ৪০ নাম্বার সূরা গাফিরের ১৫ আয়াতে রুহকে 

 ৪২ নাম্বার সূরা শুরার ৫২  আয়াতে রুহ হিসেবে। অনেক অনুবাদকারী এখানে রুহকে অনুবাদে            কোরআন হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

 ৫৮ নাম্বার সূরা মুজাদালার ২২ আয়াতে রুহ দিয়ে।

 ৬৬ নাম্বার সূরা তাহরীমের ১২ আয়াতে আমাদের রুহ দিয়ে।

 ৭০ নাম্বার সূরা মাআরিজের ৪  আয়াতে জিব্রাইল হিসেবে।

 ৭৮ নাম্বার সূরা নাবার ৩৮ আয়াতে জিব্রাইল হিসেবে।

 ৯৭ নাম্বার সূরা কদরের ৪ আয়াতে জিব্রাইল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

 এবার আমরা দেখি রিহি হিসেবে বা রিয়াহ হিসেবে যে ২৯ বার ব্যবহার করা হয়েছে

সেখানে কি কি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

 ২ নাম্বার সূরা বাকারার ১৬৪ আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে বাতাসের হিসেবে।

 তিন নাম্বার সূরা আল ইমরানের ১১৭ আয়াতে বায়ু ।

সাত নাম্বার সূরা আরাফের ৫৭ আয়াতে বাতাস।

 আট নাম্বার সূরা আনফালের ৪৬ আয়াতে তোমাদের শক্তি ।

১০ নাম্বার সূরা ইউনুসের ২২  আয়াতে বাতাসের সাথে।

১০ নাম্বার সূরা ইউনুসের ২২ আয়াতে বাতাস হিসেবে।

১২ নাম্বার সূরা ইউসুফের ৯৪ আয়াতে ঘ্রাণ হিসেবে ।

১৪ নাম্বার সূরা ইবরাহীমের ১৮ আয়াতে বাতাস হিসেবে ।

১৫ নাম্বার সূরা হিজরের ২২  সূরা বাণী ইসরাইলের ৬৯ এবং   সূরা কাহাফের ৪৫ আয়াতে বাতাস হিসেবে। সূরা আম্বিয়ার ৮১ আয়াতে বায়ুকে ২২ নাম্বার সূরার ৩১ নাম্বার আয়াতে বাতাস ২৫ নাম্বার সূরার ৪৮ আয়াতে বাতাসকে ২৭ নাম্বার সূরার ৬৩ আয়াতে বাতাস কে ৩০ নাম্বার সূরার ৪৬ আয়াতে বাতাস ৩০ নাম্বার সূরার ৪৮ আয়াতে বাতাস ৩০ নাম্বার সূরার ৫১ আয়াতে বাতাস ৩৩ নাম্বার সূরার নয় আয়াতে প্রবল ঝড় ৩৪ নাম্বার সূরার ১২ আয়াতে বাতাসকে ৩৫ নাম্বার সূরার নয় আয়াতে বাতাস ৩৮ নাম্বার সূরার ৩৬ আয়াতে বাতাসকে ৪১ নাম্বার সূরার ১৬ আয়াতে বাতাস ৪২ নাম্বার সূরার ৩৩ আয়াতে

বাতাসকে ৪৫ নাম্বার সূরার পাঁচ আয়াতে বায়ুর ৪৬ নাম্বার সূরার ২৪ আয়াতে ঝোড়ো বাতাস ৫১ নাম্বার সূরার ৪১ আয়াতে বায়ু প্রবাহ ৫৪ নাম্বার সূরার ১৯ আয়াতে বাতাস ৬৯ নাম্বার সূরার ছয় আয়াতে বায়ু দিয়ে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

 তাহলে রুহ এর অর্থ আমরা অসংখ্যবার দেখলাম বাতাস বা বায়ু হিসেবে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন।

 জিব্রাইল, পবিত্র আত্মা, রুহুল আমিন, রুহুল কুদ্দুস, রুহানা এসব অর্থে ব্যবহার তো আমরা আগেই দেখেছি ।

আবার আদমের মধ্যে রুহ ফুঁকে দেয়া সেসব আয়াতও আছে। 

আজকের আলোচনার প্রথমেই আমরা শুরু করবো বাতাস নিয়ে।  তারপরে আমরা ধীরে ধীরে গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করব।

 বাতাসকে আমরা অনেকেই মূল্যায়নই করি না। আল্লাহ যে রুহ রইহা  রিয়াহা হিসেবে ২১ বার এই রুহকে বাতাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন তা আমরা পাত্তাই দিতে চাইনা।  বাতাসের শক্তিটা কি ? পাওয়ারটা কি ? ক্ষমতাটা কি?  আমরা কখনো ভাবি না, ভাবার চেষ্টাও করি না।

 অথচ ৪৭ নাম্বার সূরা মোহাম্মদের ২৪ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন তারা কি আমার এই কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা গবেষনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?

 চার নাম্বার সূরা নিসার ৮২ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন “তবে কি তারা  কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করে না? যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা এই কোরআন রচিত হতো

তাহলে এর মধ্যে অনেক অসঙ্গতি, বহু বৈপরিত্য দেখা যেত।”

 আমরা দূর্ভাগ্যবান যে আসলেই আমরা চিন্তা ভাবনা করি না।  আমাদের গভীর চিন্তা ভাবনা করতে হবে  বাতাস হিসেবে এতবার কেন এই রুহ শব্দ মহান আল্লাহ ব্যবহার করেছেন?

  অসুস্থ রোগীদের দেখতে হাসপাতালে যান কখনো? যদি যান তখন দেখবেন যে মুমূর্ষু রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে গেলে এই বাতাসের কত মূল্য?

  একটা অক্সিজেন  সিলিন্ডারের কত দাম লাগে?

 মহাকাশচারীরা যখন মহাকাশ যানে করে উর্ধাকাশের দিকে যান এই বাতাস সিলিন্ডারে করে যখন নিয়ে যান তখন বোঝা যায় যে বাতাসের কত মূল্য?

 নদী বা সাগরের ডুবুরীরা  যখন এই বাতাসের সিলিন্ডার নিয়ে সাগরের গভীরে যান তারা বুঝতে পারেন বাতাসের কত মূল্য?

মাত্র একটা মিনিট যদি আপনার চারপাশে বাতাস না থাকে, অক্সিজেন না থাকে আপনি দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করবেন। এই বাতাস আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।

 আবার আমরা আরেকটা বাতাস অর্থাৎ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ছাড়ি।

 এটা দিয়ে আবার উদ্ভিদ গাছপালা সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে।

 যদি আমরা এই অক্সিজেন নিয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড না ছাড়তাম তাহলে গাছপালা খাদ্য কিভাবে বানাতো?  আর আমরা কিভাবে বেঁচে থাকতাম?  আমাদের চারপাশে আমরা খালি জায়গা বা শূন্যস্থান  দেখি। আসলে সব জায়গাতেই পদার্থ রয়েছে, বাতাস রয়েছে, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে শুরু করে অজস্র অদৃশ্য বাতাস আমাদের চারপাশ ঘিরে আছে। 

 পৃথিবীর কত দেশের মানুষ এই বাতাস বা বায়ু দূষণের কারণে কত কষ্টে, কত রোগে ভোগে তার হিসেব কি আমরা রাখি?

 বিশুদ্ধ বাতাস কে না চায়?

 সেজন্য কোরআনে এতবার এই বাতাস বায়ু হিসেবে রুহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 কিন্তু আমরা এর মর্ম বুঝি না। দুর্গন্ধ নাকেে এলে তখন হয়তো আমরা একটু একটু টের পাই অথবা হসপিটালে যখন আমাদের অক্সিজেন লাগে তখন টের পাই আবার এই যে ১১টা গ্যাসীয় মৌল রয়েছে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফ্লোরিন, নিয়ন, ক্লোরিন, আর্গন, ক্রিপ্টন, জেনন, রেডন এগুলো আবার পরস্পর একটা আরেকটার সাথে মিলেমিশে অথবা কঠিন পদার্থের সাথে মিলে শত শত হাজার হাজার নতুন নতুন পদার্থ তৈরি করে যা আমাদের জীবন জীবিকায় অপরিসীম ভূমিকা রাখে। কিন্তু খালি চোখে না দেখার কারণে আমরা এগুলোর মূল্যই বুঝি না।

কিন্তু যিনি মহান রব তিনি ঠিকই জানেন যে এগুলো আমাদের জন্য কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 অক্সিজেন:- অক্সিজেন নামক বাতাস দিয়ে শুধু যে আমরা নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকি তাই নয় চিকিৎসার ক্ষেত্রে, ঢালাই এর ক্ষেত্রে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। নাইট্রোজেন আগুন নেভাতে ব্যবহৃত হয়, হিলিয়াম বেলুন ও চিকিৎসা সরঞ্জামে আর্গন– ঢালাইতে,  কার্বন ডাইঅক্সাইড- কার্বোনেটেড কোমল পানীয়তে, অ্যাসিটিলিন ঢালাইতে প্রোপেন, তাপের জন্য জ্বালানি বা গ্যাস গ্রিল এ বিউটেন লাইটার এবং টর্চের জ্বালানি হিসেবে, নাইট্রাস অক্সাইড অ্যানাস্থেসিয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, এয়ার কন্ডিশনার রেফ্রিজারেটর ফ্রিজের  কুলার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এজন্য বলা হয়ে থাকে যে অক্সিজেন শিল্পকল কারখানায় যেমনটা ব্যবহৃত হয় ঠিক একইভাবে এটা গুরুত্বপূর্ণ জীবের শ্বাস‑প্রশ্বাসের জন্য। মানুষ এটা গ্রহন করে আর ত্যাগ করে কার্বন ডাইঅক্সাইড। যার মাধ্যমে আবার উদ্ভিদ গাছপালা বেঁচে থাকে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বেশিরভাগ অংশ নাইট্রোজেন দিয়ে তৈরি। আমাদের দেহ ও পরমাণুর মধ্যে আর্গনের পরিবর্তে নাইট্রোজেন গ্যাস থাকে। নাইট্রোজেন গ্যাস একটা ভালো অগ্নিদমনকারী। এটা আগুন নেভাতে ব্যবহৃত হয়। মহাবিশ্বে হিলিয়াম প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু পৃথিবীতে তুলনামূলক বিরল। লিক শনাক্তকরণে গ্যাস সিস্টেমের চাপ এবং বিশুদ্ধকরণে ঢালাই এর কাজে ব্যবহৃত হয় সিলিকন জার্মেনিয়াম টাইটান এবং জিরকোনিয়াম। স্ফটিক গুলো হিলিয়াম বায়ুমন্ডলে জন্মানো হয়। কার্বন ডাইঅক্সাইড কোমল পানীয়কে বুদবুদ যুক্ত করে তোলে এবং গ্রীনহাউস গ্যাস হিসেবে স্থান করে নেয়। এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে । সুতরাং বাতাস যে কত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কল কারখানা মিল ফ্যাক্টরি থেকে শুরু করে আমাদের নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য জিনিস তা সারাদিন রাত লিখেও শেষ করা সম্ভব নয়।।

 আর বাতাসের শক্তি কেমন?  নদী বা সাগরে যখন ঘূর্ণিঝড় হয় তখন মানুষ টের পায় এই বাতাসের কতটা প্রচন্ড শক্তি।  ঝড়ের কবলে পরে  কত হাজার মানুষ মরে যায় প্রতিনিয়ত।  নৌকা ডুবিতে, লঞ্চ ডুবিতে, জাহাজ ডুবিতে মরে যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ।  কত শহর নগর গ্রাম  ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল । কত বন বাগান ঘরবাড়ি উড়ে গেল এই বাতাসের প্রচন্ড শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে।  কিন্তু আমরা বাতাসকে দুচোখে না দেখার কারণে উপলব্ধি করি না।  খুব গরমের মধ্যে যখন গায়ে শীতল বাতাস পরশ বুলিয়ে যায় তখন আমরা বুঝতে পারি বাতাস কত স্নিগ্ধ, কতো মনোরম। 

 বাতাস কম হয়ে গেলে গরমে আমাদের শরীর ঘেমে অস্থির হয়ে যাই। অনেক সময় মানুষ বলে যে ওর গায়ে বাতাস লেগেছে- মানে খারাপ কিছুর প্রভাব পড়েছে।  হাত পাখার বাতাস থেকে ফ্যানের বাতাসকিংবা এসির

বাতাস আমাদের সবারই খুব পছন্দের জিনিস।  আমরা এও জানি মানুষের শরীরে যদি প্রাণ থাকে কিন্তু বাতাস না পায় নিঃশ্বাস নিতে না পারে  সর্বোচ্চ এক মিনিট সে বেঁচে থাকতে পারবে।  তারপর নিঃসন্দেহে সে মরে যাবে । 

আদমকে বানানোর পরও আল্লাহ এরকম বাতাস ফুঁকে দিয়েছিলেন বা রুহ ফুঁকে দিয়েছিলেন। এজন্য সাধু সন্নাসী দরবেশরা বাতাসকে দম বলেও ডেকে থাকে। দম ফুরাইলে থাকবে না বেলা।  দমে দমে লওরে মন আল্লাহরই নাম।  এই দম, এই বাতাস, এই রুহ আরো পাঁচটি ভিন্ন অর্থে আল্লাহ কোরআনে ব্যবহার করেছেন।

 আমরা প্রথমে তিনটা আয়াত দেখব। সব আয়াত নিয়ে আলোচনা করলে  অনেক বড় হয়ে যাবে।  যেই তিনটা আয়াত দেখলে আমরা বুঝতে পারবো যে এই রুহ আর ফেরেশতা বা মালাইকা পুরোপুরি ভিন্ন ভাবে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

 রুহ আর ফেরেশতা কখনোই এক জিনিস নয়। ৭৮  নাম্বার সূরা নাবার ৩৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন “সেদিন রুহ (জিব্রাইল) আর ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। কেউ কোন কথা বলতে পারবে না।  সে ব্যতীত যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দেবেন আর সে সঠিক কথাই বলবে।’

 তাহলে এই আয়াতে আমরা দেখলাম যে ফেরেশতা আর রুহ আলাদাভাবে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

 ৭০ নাম্বার সূরা মাআরিজের চার নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন “ফেরেশতাগণ ও রুহ (জিব্রাইল) এমন একদিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয় যার পরিমাণ ৫০ হাজার বছর।”

আমরা তো চিরকাল শুনে এসেছি এই রুহ নাযিল হয় উপর থেকে নিচে নেমে আসে। ফেরেশতারাও উপর থেকে নিচে নেমে আসে। এই আয়াতে আমরা বিপরীতটা দেখলাম যে রুহ আর ফেরেশতাগণ আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয় এবং এর পরিমাণ হচ্ছে ৫০ হাজার বছর।  এই রুহ আর ফেরেশতাদের আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে ৫০ হাজার বছর সময় লাগে।  পুরো বিষয়টি সাত আসমান ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

 সাত আসমান কি সেই ভিডিওটা দেখে নেবেন দয়া করে।  তাহলে এখানেও আমরা দেখলাম যে রুহ বা জিব্রাইলকে ফেরেশতাদের সাথে একীভূত করা হয়নি। কারন ফেরেশতা আলাদা জিনিস আর রুহ বা জিব্রাইল আলাদা জিনিস।  অবশ্যই দুটো আয়াতে রুহ জীব্রাইল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

 আমরা আজকের আলোচনার শুরুতেই জানি যে রুহ শব্দটা আল্লাহ ছয় অর্থে কোরআনে ব্যবহার করেছেন। এরপর আমরা দেখব ৯৭ নাম্বার সূরা কদরের চার নাম্বার আয়াত আল্লাহ বলছেন মালাইকাতুহু মিন কুল্লি আমর” সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিব্রাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে নাযিল হয় বা অবতরণ করে।  এই আয়াতে আমরা আগের আয়াতের বিপরীত জিনিস দেখলাম।  এই আয়াতে দেখলাম যে ফেরেশতা আর রুহ তারা তানাজ্জাল করে বা নাযিল হয় বা অবতরণ করে। আর আগের আয়াতে আমরা দেখেছিলাম অর্থ্যাৎ সুরা মাআরিজের ৪ আয়াতে যে রুহ ও ফেরেশতারা ঊর্ধে ওঠে বা  উপরে আরোহণ করে।  তাহলে ৭৮ নাম্বার সূরা নাবার ৩৮ আয়াত এবং ৭০ নাম্বার সূরার চার আয়াত এবং ৯৭ নাম্বার সূরার চার আয়াত আমাদের পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ফেরেশতা এবং রুহ পুরোপুরি আলাদা এবং ভিন্ন জিনিস এবং ভিন্নভাবেই মহান আল্লাহ তাদেরকে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন।

 এবার আমরা দেখব যে রুহ শব্দটা আল্লাহ পবিত্র আত্মা আরবিতে যাকে বলা হয় রুহুল কুদ্দুস হিসেবে ব্যবহার করেছেন কিভাবে?

 ১৬ নাম্বার সূরা নাহলের ১০২  আয়াতে আল্লাহ বলছেন- “বলো, রুহুল কুদ্দুস তোমার রবের নিকট হতে সত্যসহ কোরআন অবতীর্ণ করেছেন ঠিক ঠিকভাবে।যারা মুমিন তাদেরকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং সুসংবাদ হেদায়েত স্বরূপ মুসলিমদের জন্য। ” 

এই কুরআন রুহুল কুদ্দুস বা জিব্রাইল রবের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নাযিল করেছে। এখানে রুহুল কুদ্দুস শব্দটি ব্যবহার করেছেন আল্লাহ। কুদ্দুস মানে আমরা জানি পবিত্র । এই পবিত্র রুহ বলতে আল্লাহ জিব্রাইল কে বুঝিয়েছেন।  আপনি বলতে পারেন যে আপনি কিভাবে সুনিশ্চিত হলেন যে এই রুহুল কুদ্দুস বলতে আল্লাহ জিব্রাইল কে বুঝিয়েছেন? এর প্রমাণ হচ্ছে সূরা বাকারার ৯৭ আয়াতে আল্লাহ প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন কিন্তু সেখানে রুহুল কুদ্দুস বলেননি সেখানে সরাসরি জিব্রাইল বলেছেন । আল্লাহ বলছেন “বলো যে ব্যক্তি জিব্রাইলের শত্রু হয়েছে সে রাগে মরে যাক, সে অনুশোচনায় মরুক কেননা নিশ্চয়ই জিব্রাইল তা আল্লাহর অনুমতিতে তোমার অন্তরে নাযিল করেছেন তোমার হৃদয়ে পৌঁছে দিয়েছেন যা এর পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং হেদায়েত ও মুমিনদের জন্য সুসংবাদ।”

 তাহলে এই যে কুরআন এটা আল্লাহর রাসূলের অন্তরে বা হৃদয়ে নাযিল করেছেন। কে অন্তরে পৌঁছে দিয়েছে? পরিষ্কারভাবে আল্লাহ বলে দিয়েছেন জিব্রাইল। আর সুরা নাহলের ১০২ আয়াতে দেখলাম দেখলাম রুহুল কুদ্দুস।  সুতরাং  রুহুল কুদ্দুস আর জিব্রাইল সমার্থক শব্দ হিসেবেই আল্লাহ ব্যবহার করেছেন এই দুটো আয়াত পাশাপাশি বিশ্লেষণ করলে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি। 

 ২৬ নাম্বার সূরা শুয়ারার ১৯২ থেকে ১৯৪ আয়াতে আমরা দেখি যে মহান আল্লাহ সেখানে রুহ শব্দ

ব্যবহার করেছেন।  কিন্তু রুহুল কুদ্দুস বলেননি।  বলেছেন রুহুল আমিন । আল্লাহ বলছেন “আর নিশ্চয়ই এ কুরআন সৃষ্টিকুলের রবের নিকট হতে নাযিলকৃত । রুহুল আমিন বা বিশ্বস্ত আত্মা এটা নিয়ে অবতরণ করেছে বা নাযিল হয়েছে।  ১৯৪  আয়াতে আল্লাহ বলছেন “তোমার অন্তরে বা তোমার হৃদয়ে যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।”

 এই তিনটা আয়াত বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি যে এখানে রুহুল আমিন বলা হয়েছে আর বাকারার ৯৭ আয়াতে দেখলাম যে জিব্রাইল বলা হয়েছে। তার আগে আমরা ১৬ নাম্বার সূরা নাহলের ১০২ নাম্বার আয়াতে দেখলাম যে রুহুল কুদ্দুস বলা হয়েছে।  রুহুল কুদ্দুস এবং রুহুল আমিন হচ্ছেন জিব্রাইল তা এই তিনটা আয়াতের বিশ্লেষণে পরিষ্কারভাবে আমরা বুঝতে পারি ।

এবার আমরা দু নাম্বার সূরা বাকারার ৮৭ আয়াত পড়লে বুঝবো যে এই রুহুল কুদ্দুস বা জিব্রাইলকে আল্লাহ ঈসা নবীকে শক্তিশালী করার জন্য পাঠিয়েছিলেন।  আল্লাহ বলছেন “আর আমি নিশ্চয়ই মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তারপরে একের পর এক রাসূল প্রেরণ করেছি এবং মারিয়াম পুত্র ঈসাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আর তাকে শক্তিশালী করেছি রুহুল কুদ্দুস দিয়ে বা পবিত্র আত্মা দিয়ে।  তবে কি তোমাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এমন কিছু নিয়ে এসেছে যা তোমাদের মনোপুত নয় তখন তোমরা অহংকার করেছো তারপর নবীদের একদলকে তোমরা মিথ্যাবাদী বলেছ আর একদলকে হত্যা করেছো? “ 

পুরো আয়াত পড়লে আমরা বুঝতে পারি যে রুহুল কুদ্দুস ঈসা নবীকে শক্তিশালী করার জন্য এসেছিলেন। অর্থ্যাৎ আল্লাহ তাকে পাঠিয়েছেন। সুতরাং এই রুহুল কুদ্দুস ও রুহুল আমিন ও জিব্রাইল একই জিনিস। ১৯ নাম্বার সূরা মারইয়ামের ১৭ নাম্বার আয়াতেও আমরা এই রুহ শব্দ পাই।  কিন্তু সেখানে বলা হয়েছে রুহানা। আল্লাহ বলছেন “তখন আমাদের রুহ আমরা তার কাছে পাঠিয়েছিলাম যে একজন মানুষের আকৃতির মত হয়ে তার সামনে এসেছিল।”

 এবার আমরা আলোচনার দ্বিতীয় ধাপে যাই। যেখানে আমরা দেখব যে এই রুহ শব্দটা আল্লাহ

আধ্যাত্মিক শক্তি বা ডিভাইন এনার্জি বা ঐশ্বরিক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ১৬ নাম্বার সূরার দুই নাম্বার আয়াতে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন রুহু। রুহি মিন আমরিহি  ৪০ নাম্বার সূরা গাফিরের ১৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন।  ৪২ নাম্বার সূরা শুরার ৫২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন রুহা মিন আমরিনা । 

 এই তিন আয়াতে রুহ শব্দটা আমরা দেখতে পাই যে আল্লাহর কমান্ড বা আদেশ বা নির্দেশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ ১৬ নাম্বার সূরা নাহলের দুই নাম্বার আয়াতে বলছেন “তিনি তার এ রুহকে যে বান্দার উপর চান  নির্দেশক্রমে ফেরেশতাদের মাধ্যমে

অবতীর্ণ করেন এই মর্মে যে তোমরা সতর্ক করো যে আমি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই কাজেই আমাকে ভয় করো।  ৪০ নাম্বার সূরা গাফিরের ১৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন “তিনি সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী আরশের অধিপতি তার বান্দাদের মধ্য থেকে যার প্রতি ইচ্ছা আপন নির্দেশে রুহ পাঠান যার প্রতি ইচ্ছা তার বান্দাদের মধ্যে আল্লাহ তার রুহা মিন আমরিহি তার আদেশের তার নির্দেশের রুহ পাঠিয়ে দেন যেন সে কেয়ামতের দিন সম্পর্কে মানুষদের সতর্ক করতে পারে। ৪২ নাম্বার সূরা সূরার ৫২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন অনুরূপভাবে আমি তোমার কাছে আমার নির্দেশ থেকে রুহা মিন আমরিনা আমার নির্দেশ থেকে রুহ পাঠিয়েছি তুমি জানতে না কিতাব কি এবং ঈমান কি কিন্তু আমি একে নুর বানিয়েছি যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করি আর নিশ্চয়ই তুমি সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও।”

 দুরুদ শরীফ ভিডিওতে এই আয়াত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ এই নূর বা আলো বানিয়েছেন  কুরআনকে। কুরআনকে আল্লাহ নূর বলেছেন সুরা মায়েদার ১৫ আয়াতে। এই নূরের মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন এবং ৩৩ নাম্বার সূরা আহজাবের ৪৩ এবং সূরা ইব্রাহিমের প্রথম আয়াত পড়লে আমরা জানি যে মানুষকে মিনাজ জুলুমাতি ইলাল নূর বা জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে  অর্থ্যাৎ হেদায়েতের দিকে নিয়ে আসার জন্য এই কুরআন পথ প্রদর্শকের কাজ করে। এটাই হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্য হেদায়েত বা পথ প্রদর্শক যা সূরা বাকারার ১৮৫ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন। তাহলে আল্লাহর আদেশ বা রুহু মিন আমরিহির তিনটা আয়াত আমরা দেখলাম। ১৬ নাম্বার সূরার দুই আয়াত ৪০ নাম্বার সূরার ১৫ আয়াত এবং ৪২ নাম্বার সূরার ৫২ নাম্বার আয়াত।

 এবার আমরা দেখব যে এই রুহ শব্দটা আধ্যাত্মিক শক্তি বা ঐশ্বরিক শক্তি বা আল্লাহর ডিভাইন এনার্জি হিসেবে কিভাবে ব্যবহৃত হয়?

 যেই রুহ কে বলা হয়েছে মিন রুহি। এই মিন রুহির মাধ্যমে মানুষের আত্মা বা নফস নিঃশ্বাস নেয়া শুরু করে অর্থ্যাৎ জীবিত হয়ে যায়।  ১৫ নাম্বার সূরার ২৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন “অতঃপর যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে মিন রুহি দেব তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও।” তাহলে আমরা দেখলাম যে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার পরে তার মধ্যে মিন রুহি দেয়া হচ্ছে।  ৩২ নাম্বার সূরা আস সাজদার নয় নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন “তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন বা সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন আর তার ভিতরে ফুঁকে দিয়েছেন আর তিনি তোমাদের জন্য কান চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” এই আয়াতে শুধু আদমের ক্ষেত্রে নয় দুনিয়ার সকল মানুষের মধ্যেই আল্লাহ রুহ ফুঁকে দেন বলেও প্রতীয়মান হয়।

আদমকে সুঠাম করার পরে তার মধ্যে যদি এই রুহ দেয়া না হতো তাহলে তার চোখ কান অন্তর ঠিকই থাকতো কিন্তু সে শুনতে পারতো না দেখতে পারতো না । যেমনটা লাশের ক্ষেত্রে ঘটে।  আপনার সামনে যদি লাশ থাকে সেই লাশের হাত থাকবে চোখ থাকবে কান থাকবে কিন্তু সে শুনতে পারবে না দেখতেও পারবে না। 

 ৫৮ নাম্বার সূরা আল মুজাদিলার ২২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন “আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় তুমি পাবে না যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতাকারীদেরকে ভালোবাসে হোক না এই বিরোধীরা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা তাদের ভাই অথবা তাদের জ্ঞাতিগোষ্ঠী। আল্লাহ এদের অন্তরে ঈমান বদ্ধমূল করে দিয়েছেন আর নিজের পক্ষ থেকে রুহ দিয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন।”

 আমরা দেখলাম যে আল্লাহ বলছেন আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় তুমি পাবে না তাদের অন্তরে ঈমান বদ্ধমূল করে দিয়েছেন। আর কি করেছেন?  নিজের পক্ষ থেকে রুহ দিয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন । আমরা দেখেছিলাম যে ঈসা নবীকেও আল্লাহ রুহ দিয়ে শক্তিশালী করেছিলেন।  সেখানে অবশ্য রুহুল কুদ্দুস বলা হয়েছিল।  তাদেরকে তিনি দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝর্ণাধারা, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও তার তার প্রতি সন্তুষ্ট । এরাই হিজবুল্লাহ এরাই আল্লাহর দল।  জেনে রেখো আল্লাহর দলই সাফল্য মন্ডিত আল্লাহর দলই সফলকাম।  হিজবুল্লাহরাই

সফলকাম।

 তাহলে আমরা আজকে আমাদের সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্য হেদায়েতের যে আলোকবর্তিকা পবিত্র কুরআন সেই কুরআন থেকে রুহ শব্দটা শিখলাম যে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে এই রুহ শব্দটা আল্লাহ ব্যবহার করেছেন।  আমরা বুঝতে পারলাম যে রুহ আর ফেরেশতা আলাদা জিনিস। আমরা এটাও জানতে পারলাম যে রুহ বলতে আল্লাহ সরাসরি জিব্রাইলকে অসংখ্যবার বুঝিয়েছেন।  আবার এই রুহ দিয়ে ঈসা নবীকে শক্তিশালী করা হয়েছে। এই রুহ দিয়ে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী শক্তিশালী ঈমানদারদেরকে আল্লাহ শক্তিশালী করেন।  এই রুহ আল্লাহর রাসূলের অন্তরে কোরআন নিয়ে নাযিল হতো।  আবার আল্লাহর নির্দেশে রুহ বিভিন্ন সময় নাযিল হয়। আবার এই রুহ ঊর্ধাকাশে উঠে আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। তাতে ৫০ হাজার বছর সময় লাগে। সুতরাং এই রুহ কখনো পবিত্র আত্মা কখনো রুহ কখনো আল্লাহর আদেশ কখনো ডিভাইন এনার্জি কখনো জিব্রাইল কখনো বাতাস কখনো মানুষের জীবনী শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কোরআনে।  মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তার কুরআনের বাণী উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন এবং এ কোরআনের মাধ্যমে যেন আমরা সত্যিকার অর্থেই খাঁটি মুসলিম খাঁটি মুমিন এবং মুত্তাকী হতে পারি সেই প্রতিযোগিতায় যেন জীবনের বাকিটা সময় অনেক বেশি এগিয়ে থাকতে পারি সেই তৌফিক যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের দান

করেন সেই দোয়া সেই প্রার্থনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে করে আজকের আলোচনা শেষ করব কারণ এই রুহ শব্দটা দিয়েই রুহ রহমান রহিম রহমত শব্দ গঠিত হয়।  আল্লাহর সেই রহমান রহিম  গুণ যেন আমাদের মধ্যেও চলে আসে এবং এই দুনিয়ার জীবনে আখিরাতের জীবনেও যেন আমরা আল্লাহর রহমত আল্লাহর রহম অর্জন করতে পারি।

 আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

রিজওয়ান মাহমুদ খান- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (তাজকিয়া নফস)

5 thoughts on “রুহ এর ৬ প্রকার অর্থ কেন কুরআনে?

  1. জিবরাইল অথবা ফেরেশতারা কি মানুষের বেশ ধারন করতে পারে? বিস্তারিত pls

    1. জী । জিব্রাইল মানুষের বেশে মরিয়ম এর কাছে এসেছিলো।

  2. জিবরাইল যদি আল্লাহর কাছে যেতে পঞ্চাশ হাজার বছর লাগে তাহলে এই কুরআন আল্লাহর কাছ থেকে আনতে তো জিবরাইলের বার যাওয়া লাগছে। তাহলে তেইশ বছরে পুরো কুরআন কিভাবে নাজিল হলো।?

    1. তাহলে কি কুরআনে আল্লাহ মিথ্যে বলেছে?

  3. সালামুন আলাইকুম। নতুন কিছু জানতে পারলাম। যা আগে কখনো এভাবে চিন্তা করিনি। ধন্যবাদ এই গবেষণার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *