জাতির পিতা ও নেতা (২২:৭৫; ২:১২৪) নবী ইব্রাহিম এর উত্তরসূরী তিনটি প্রধান ধর্ম : ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম এবং শান্তি (ইসলাম) ধর্ম। এছাড়া বাহাই, দ্রুজ, রাস্তাফারি, সামারিতান ধর্মগুলোও আব্রাহামিক ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করে। আব্রাহামিক ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের কিছু মৌলিক বিষয় তাদের ধর্মে রয়েছে তাও সত্য।
মুসা নবীর প্রাপ্ত তাওরাত কিতাবের অনুসারী জাতি হিসাবে দাবি করা ইহুদিদের ভেতর বর্তমানে ৫ টি প্রধান শাখা আছে: ১) অর্থোডক্স ইহুদি ধর্ম, ২) কনজারভেটিভ বা মাসুর্তি ইহুদী ৩) রিফর্ম ইহুদী ৪) হিউম্যানিস্টিক ইহুদি ৫)রিকনস্ট্রাকশনিস্ট ইহুদি।
তার উপর আছে উপশাখা: ১) হারেদি, ২) হাসিদিক, ৩) মিসনাগডিম, ৪) ফালাশা ৫) কারাইত, ৬) সামারিতান, ৭) সেফার্দিক, ৮) মিজরাহি ৯) সাতমার ১০)চাবাদ‑লুবাভিচ ১১)ব্রেস্লভ।
তাদের উপর নাজিল হয়েছিল তাওরাত কিতাব, কিন্তু তারা তৈরি করলো তানাখ। কিন্তু বিশ্বাস স্থাপন এবং মেনে চলা শুরু করলো তালমুদ, মিশনা, সিদ্দুর, জোহার, মিদ্রাজ, গেমারা, নবীইম, কেতুবিম ছাড়াও অন্যান্য কিতাবসমূহ যা ঐশ্বরিক বা আল্লাহ প্রেরিত তো নয়ই বরং স্বীকৃত মানব রচনা।
ঈসা নবীর উপর নাজিল হয়েছিল ইঞ্জিল, যা হয়ে গেছে বাইবেল, এবং সেটাও বর্তমানে বিভক্ত: ১) ওল্ড টেস্টামেন্ট ২) নিউ টেস্টামেন্ট। খ্রিষ্টধর্মে বর্তমানে তিনটি প্রধান শাখা,বিশ্বাস ও গ্রন্থ সংখ্যার ভিন্নতা আছে: ১) ক্যাথলিক খ্রিষ্টান- বাইবেলে ৭৩ টি বই, ঐতিহ্য এবং পোপের কর্তৃত্বে বিশ্বাসী। ২) অর্থোডক্স খ্রিষ্টান- পোপ নেই, আছে চার্চ(গ্রিক,রাশিয়ান,সার্বিয়ান, ককেশীয় প্রভৃতি), কিতাব সংখ্যা ৭৭ থেকে ৮০টির মতন। ৩) প্রোটেষ্টান্টিইজম- বাইবেলকে সর্বোচ্চ হিসেবে গণ্য করে এবং বিশ্বাসের ওপর জোর দেয়, গ্রন্থ সংখ্যা একটু কম, ৬৬ টি ।
রয়েছে অনেক উপশাখা: রোমান ক্যথলিক, ইস্টার্ন ক্যাথলিক, গ্রিক অর্থোডক্স, রাশিয়ান অর্থোডক্স, কপ্টিক অর্থোডক্স, লুথেরান,ক্যালভিনিস্ট/রিফর্মড, ব্যাপটিস্ট, মেথোডিস্ট, অ্যাংলিকান, পেনটিকোস্টাল, প্রেসবিটারিয়ান, ইভাঞ্জেলিক্যাল, ওরিয়েন্টাল অর্থোডক্স , জিহোবা‘স উইটনেস, মরমনস, ল্যাটার ডে সেইন্টস, ইউনেট্রিয়াজম প্রভৃতি।
নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর উপর ইসলাম ধর্মের একমাত্র কিতাব সমগ্র বিশ্ববাসীর হিদায়েতের জন্য নাজিল হয় কুরআন (২:১৮৫) । আল্লাহ এটিকে পূর্নাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন বিধান (৫:৩,৬৭; ৬:১১৪,১১৫) এবং তিনিই সবচাইতে শ্রেষ্ঠ হাদিস হিসেবে কুরআনকে এবং কুরআনের পর আর কোন হাদিসে আমরা বিম্বাস করবো বলে হুমকি দিয়েছেন (৩৯:২৩; ৪৫:৬; ৭:১৮৫; ৭৭:৫০) একইসাথে তাফসির ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন নাজিল করেছেন বলে দাবি করেছেন [২৫:৩৩; ১২:১১১; ১৭:১২; ৬:৫৫; ৬:৯৭,৯৮,১১৪,১১৯,১২৬,৭:৩২,৫২,১৭৪; ১০:৫,২৪,৩৭; ১১:১; ১৩:২; ৩০:২৮; ৪১:৩,৪৪] । বারংবার সাবধান ও দাবী করা সত্ত্বেও মুসলমানেরা এই আয়াতগুলো অস্বীকার করছে এবং ৩০:৩২ ও ৬:১৫৯ আয়াতে কঠিন ভাবে দল উপদল বানাতে নিসেধ ও তিরস্কার করার পরও দূর্ভাগ্যজনকভাবে সমগ্র মুসলমান জাতি বর্তমানে ২ টি প্রধান মাজহাব বা গোষ্ঠীতে (সুন্নি এবং সিয়া) ভাগ হয়ে গিয়েছে। সুন্নিরা বুখারী, মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান, সুনান আদ‑দারিমী, সুনান আদ‑দারাকুতনী, শুআবুল ঈমান, আল-আদাবুল মুফরাদ, মিশকাতুল মাসাবীহ, রিয়াদুস সালেহীন, আল-আরবাঈন আন-নবাবিয়্যাহ ছাড়াও অঞ্চল ভেদে প্রায় ৪০টি মানব রচিত হাদিসের কিতাব অনুসরণ করে। এছাড়া ইজমা,কিয়াস,রিজাল,মাছলা, মাছায়েল এর কিতাব হাজার হাজার থেকে এখন ১৪০০ বছরে লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে সিয়ারা সুন্নিদের একটি হাদিসের কিতাবও বিশ্বাস করেনা, স্বীকার ও করেনা। তাদের হাদিসের কিতাব সুন্নিদের থেকে ভিন্ন। এদের মধ্যে রয়েছে কিতাব আল‑কাফী, মান লা ইয়াদুরুহু, আল-ফকীহ, তাহজীব আল-আহকাম, আল-ইস্তিবসার, বিহার আল-আনোয়ার, ওয়াসাইল আল‑শিয়া, মুস্তাদরাক আল-ওয়াসিল, হক উল ইয়াকিন, আয়না আল‑হায়াত, নাহাজুল বালাগা, সাহিফা সাজ্জাদিয়া ইত্যাদি প্রায় ৩৫টি হাদিসের কিতাব ও হাজার হাজার ইজমা, কিয়াস, মাছলা, মাছায়েল ও রিজালের কিতাব রয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের একটি শাখা সুন্নি হলেও এর উপশাখা আছে ৪ টি: হানাফী মাযহাব, মালেকী মাযহাব, শাফেয়ী মাযহাব, হাম্বলী মাযহাব। এদের আবার উপদল আছে: সালাফি বা ওহাবি বা আহলে হাদিস, সুফি, আশআরি ও মাতুরিদি ছাড়াও আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন পীরপন্থি, মাজারপন্থি,বেরেলোভী, মারেফতি (কাদেরিয়া, চিশতিয়া,সাবেরিয়া,মোজাদ্দেদিয়া, নকশবন্দিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া, আলফে সানিয়া সহ) অন্যান্য নামের যেমন জামাতি, হিজবুতি, তাবলিগী, তাহরির, তাওহিদি, আল কায়েদা, আই এস, বোকো হারাম, হেকায়েতে সাহাবা, জে এম বি, আনসার উল্লাহ, আল্লাহর দল, সুরেশ্বেরী, দেওয়ানবাগী, ভান্ডারী, শাহ আলী উপদল চলমান। অন্যদিকে শিয়া সম্প্রদায় ইছনে আশারিয়া (১২ ইমামিয়া), ইসমাইলিয়া (৭ ইমামিয়া) এবং জায়েদি (৫ ইমামিয়া) উপশাখায় বিভক্ত। এছাড়া এদের প্রত্যেকের আছে উপশাখা: দাউদি বোহরা, নিজারী ইসমাঈলি (আগাখানি), গুলাত, মুস্তালি, হুথি, আলাভি বা নুসাইরি, আহলে হক/ইয়ারসান এবং অন্যান্য আঞ্চলিকভাবে গঠিত পীরপুজারি, মাজারপূজারি শত শত দল উপদল।
ইসলামী বিশ্বাসমতে, পূর্বের ২টি ধর্ম তাদের ধর্মীয় কিতাবকে বিকৃত করেছে বলেই আল্লাহ সর্বশেষ কিতাব দিয়েছেন কুরআন । আর তারা আকিদা বা বিশ্বাস বা বিধানসমূহে বিভিন্ন বিষয় সংযোগ/অপসারণ করেছে বলেই তারা বাতিল ধর্ম এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম।
এখন আমার একান্ত জিঞ্জাসা :
বাতিল ধর্ম প্রশ্নে, আমরা, পূর্বতন ২ ধর্মের চাইতে কম যাচ্ছি কিসে?
রাসুলুল্লাহ ও তার ৪ প্রধান সাহাবিরা হাদিস লিপিবদ্ধ করতে ভুলে গেলেন কিভাবে?
শত শত বছর পর সংগৃহীত এবং সিংহভাগ বাতিলকৃত (যেমন বুখারির সংগৃহীত হাদিস ৬ লক্ষ কিন্তু ৫.৯৩ লক্ষ বাতিল করে কিতাবে রেখেছেন ৭ হাজার+) ছাড়া ইসলাম তথা কুরআন অচল হচ্ছে কিভাবে?
তাহলে কি আল্লাহ’র বারবার করা দাবিসমূহ মিথ্যা?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনেক ভালো লেগেছে ভাই
না ভাই বলতে চেয়েছি এই লেখা গুলো অনেক ভালো লেগেছে
আমি পড়তেছি মনে হয় জ্ঞান অর্জন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ