(102) ইবলিশের মাস্টারপ্ল্যান ( নামাজ ও সালাত সিরিজ পর্ব ২.৬/৫) — YouTube
Transcript:
(00:00) সকল প্রশংসা সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। যিনি পরম দয়ালু অসীম দয়াময়। বেক্সিমকো ফ্যাক্টরির মালিক সালমান এফ রহমান সাহেব। ফ্যাক্টরির বয়স 25 বছরেরও বেশি। মালিকের বয়স 70 বছর। তার ফ্যাক্টরির পুরনো এবং বিশ্বস্ত ম্যানেজার হলেন ফারুক সাহেব। মালিক সালমান সাহেব এবার ঠিক করেছেন টানা দুই মাসের জন্য তিনি ফ্যাক্টরির নিয়মিত কাজ থেকে বিরতি নিয়ে প্রথমে সৌদি আরব যাবেন। সেখানে হজ করবেন এবং সেখান থেকে আমেরিকায় যাবেন তার মেয়ে, মেয়ে জামাতা ও নাতি নাতনিদের সাথে সময় কাটাতে। দীর্ঘ দুই মাস তার ফ্যাক্টরির কাজকর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকা সালমান সাহেবের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তার হলেও তিনি এই সময়ে তার ফ্যাক্টরির সিনিয়র অফিসারদের কার কি কাজ, কার কি দায়িত্ব কর্তব্য, কোন সমস্যা হলে কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে এ সবকিছু খুব পরিষ্কার করে একটা ডাইরী বা নোটবুকে লিখে সবাইকে সেটা পৌঁছে দিয়েছেন। সাথে সাথে এটাও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন আমার অনুপস্থিতিতে এই ডাইরিই এই নোটবুকই তোমাদের প্রত্যেকের জন্য গাইডলাইন। আশা করি তোমরা এই ডাইরি এই নোটবুক নিয়মিত পড়বে। এখান থেকেই নিজেদের করণীয় বুঝে নেবে। সে অনুযায়ী সবকিছু করবে। তাহলেই এই 25 বছরের ফ্যাক্টরিতে নিয়মতান্ত্রিক কাজের কোন ব্যাঘাত ঘটবে না। কর্মচারীরাও শান্তিতে কাজ করতে পারবে। আর তোমরা নিজেরাও খুব ভালো থাকতে পারবে।
ডাইরিপ্রাপ্তদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো ও বিশ্বস্ত ম্যানেজার ফারুক সাহেব। সালমান সাহেবের বিদেশে চলে যাওয়ার পর একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো ফ্যাক্টরিতে। ফ্যাক্টরির মালিকের বিদেশ চলে যাওয়ার পরের দিন থেকে ম্যানেজার ফারুক সাহেব প্রতিদিন তার মালিকের রেখে যাওয়া ডাইরিখানা খুলে খুব আবেগে প্রথমেই একবার চুমু খেয়ে নেয়। তারপর অফিস কামড়ার সবচেয়ে উঁচু যে তাক আছে তার উপরে খুব যত্ন করে রাখেন। ভুলেও কখনো নিচে বা ডেস্কে বা অন্য কোন ফাইলপত্র বই পুস্তক হিসাব নিকাশের সাথে রাখেন না পাছে বসের অপমান অসম্মান না হয়ে যায়। সুন্দর করে রাখার জন্য তিনি আবার আলাদা একটা লকারের মতো তিজোরি বক্স অর্ডার দিয়ে বানিয়েছে যেন ডাইরিতে কোন ধুলোবালির স্পর্শ না লাগে। হাজার হোক বসের নিজ হাতে লেখা মহামূল্যবান ডাইরি।
দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ফারুক সাহেব বসের রুমে চলে যান। সেখানে সে ডাইরিটিকে সযত্নে তিজোরির বাক্স থেকে বের করে বস যেই চেয়ারে বসেন সেই চেয়ারের দিকে মুখ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে খোলেন মানে বসের চেয়ারটাই এখন তার কিবলা। সেই কিবলার দিকে মুখ করে ডাইরিটাকে বাক্স থেকে বের করে খোলেন তারপর খুব চমৎকার সুর ও ছন্দে মনের আবেগ ও মাধুরী মিশিয়ে কবিতা আবৃত্তি করার মতো করে সেই ডাইরির পাতা শুদ্ধ ও প্রমিত উচ্চারণে দরদ ও ভক্তি শ্রদ্ধা সহযোগে আবৃত্তি করেন। প্রতিটা শব্দের প্রতিটা বর্ণের দাড়ি ও কমা ও সেমিকোলনে তার প্রচন্ড মনোযোগ। বসের বসার চেয়ারকে লক্ষ্য করে ডাইরির পাতাগুলো অফিস আওয়ারের ভেতরে কমপক্ষে অন্তত তিনবার পাঠ তিনি করবেনই। মাঝেমধ্যে আবেগে ডাইরির পাতায় বসের নিজের হাতে লেখা অক্ষরগুলোতে হাত বুলিয়ে স্পর্শ করেন তিনি। বসের হাতের লেখা কত সুন্দর কত কত সুনিপুণ সেটা নিয়ে মনে মনে খুব তারিফ ও প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করেন তিনি। এটা এখন তার প্রতিদিনকার রুটিনে পরিণত হয়ে গেছে। বসের এবং বসের পরিবারের জন্য একটা ছোট্ট দুরুদ শরীফ টাইপের প্রশংসাগীতির মতো ছোট্ট ছন্দবদ্ধ কবিতাও তিনি ওই ডাইরি পাঠ শেষ করে প্রতিদিন তিনি পাঠ করেন। যেহেতু বহু বছরের বিশ্বস্ত ও পুরনো কর্মচারী ফারুক সাহেব বসের সম্মান ভক্তি ও শ্রদ্ধার উদ্যেশ্যে এসব করেন প্রতিদিন সেজন্য বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সাব ম্যানেজার ও অন্যান্য অফিসাররাও তার পেছনে লাইন ধরে তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন আপ্রাণ। সবাই মিলে মোটামুটি একটা শিডিউলই করে ফেলেছেন ইদানীং। এই নতুন ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান এখন ফরজে কেফায়া হয়ে গিয়েছে সবার জন্য। যেখানে অফিসের সবাই বসের রুমে এসে বসের চেয়ারের দিকে কিবলা করে অর্থাৎ সেই দিকে মুখ ফিরিয়ে তাদের জন্য লেখা বসের দিকনির্দেশনামূলক ডাইরি বসের চেয়ারটাকেই খুব সুন্দর করে সুর ছন্দ ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে মনের আবেগ ও মাধুরী মিশিয়ে সেই চেয়ারটাকেই তারা শোনান। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা ওয়াক্ত টাইম বা সময়ে রুটিন করে এই কাজটা করার কারণে তাদের মধ্যে একটা হিপ্নোটিক ইফেক্ট তৈরি হয়েছে।
কারণ আমরা সবাই জানি সাইকোলজির একটা জনপ্রিয় টার্ম আছে — কোন কাজ যদি মানুষ প্রতিদিন রেগুলার নিয়মনীতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহযোগে করে তাহলে সেই কাজের একটা হিপ্নোটিক ইফেক্ট তৈরি হয়। কেউ যখন কোন কাজ যান্ত্রিকভাবে দিনের পর দিন করতে থাকে তখন একসময় সেই ব্যক্তি ভুলে যায় সে কেন করছে ওই কাজটা।সুতরাং যা হবার তাই হলো। হিপ্নোটিক ইফেক্টে একসময় বেক্সিমকো ফ্যাক্টরির সব ম্যানেজার ‚সাব ম্যানেজার , অফিসার বেমালুম ভুলেই গিয়েছেন যে তাদের জন্য বসের নিজ হাতে লেখা ডাইরি বসের চেয়ারের জন্য নয় কিংবা বসের চেয়ারকে শোনানোর জন্যও নয়, ওই ডাইরি তাদের নিজেদের জন্য। ওই ডাইরি তাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনা সর্বশ্রেষ্ঠ গাইডলাইন।
ওই ডাইরি কেবল সুর করে পাঠ করার মধ্যে কোন উপকার নেই কোন বেনিফিট নেই কোন কল্যাণ নেই। বরং অফিসে আহুত তাৎক্ষনিক যেকোনো সংকট ও সমস্যার বাস্তব সমাধান কিভাবে করবে? কিভাবে তাদের ফ্যাক্টরির সকল কাজ সুচারুরূপে পরিচালনা করবে তার সহজ সরল সমাধান দেয়াই ওই ডাইরি লিখনী ও প্রদানের আসল ও চূড়ান্ত উদ্দেশ্য।
ওই ফ্যাক্টরিতে এই দুই মাসে অনেক ধরনের সংকট সমস্যা ও ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। মালিক যা যা আশঙ্কা করেছিলেন তা তো হয়েছেই সাথে আরো অনেক ধরনের অতিরিক্ত ক্রাইসিসও সংযুক্ত হয়েছে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট সময় মতো হচ্ছে না এলসি অর্ডার প্রডাকশন কোন কিছুই সময় মতো প্রসেস হচ্ছে না ব্যাংকে টাকা ক্রেতাদের পেমেন্ট আটকে আছে,নতুন অর্ডার থমকে আছে আর কত কি? ফলস্বরূপ কর্মচারীরা বেতন পেতে দেরি হওয়ার জন্য স্ট্রাইকে যাওয়ার পায়তারা করছে আরো কত ধরনের অনাহুত সমস্যা তৈরি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই সমস্যারও অন্ত নেই। সব মিলিয়ে ফ্যাক্টরি এখনো পথে বসে যাওয়ার অবস্থা।
এদিকে আমাদের বিশ্বস্ত ম্যানেজার ফারুক সাহেব কিন্তু সকাল দুপুর ও বিকাল রুটিন করে ওই ডাইরি পাঠ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি তার এই অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ডাইরি খতম কর্মসূচি। যে যত বেশি ডাইরি খতম করতে পারছে তার জন্য আলাদা একটা পয়েন্ট, ফ্যাক্টরির এইচআর ডিপার্টমেন্ট ঠিক করে নিয়েছে। সম্ভবত তাদেরকে আলাদা একটা বোনাসও দেয়া হবে তাদের মনে অনেক বড় আশা যে মালিক ফিরে আসার পর নিশ্চয়ই তাদের এই সহিহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে ডাইরি পাঠ খতমের পুরস্কার দেবেন।
মহান আল্লাহ সেমিটিক তথা আব্রাহামিক ধর্মের জাতির মধ্যে বিধান নাযিল করেছেন। একটা হলো তাওরাত নবী সালামুন আলা মুসার মাধ্যমে। অন্যটা ইঞ্জিল নবী সালামুন আলা ঈসার মাধ্যমে। একটা হলো জাবুর নবী সালামুন আলা দাউদ এর মাধ্যমে আরেকটা হলো কোরআন নবী সালামুন আলা মোহাম্মদের মাধ্যমে। যে কোরআন আমরা পেয়েছি সেটা নিজেকে কি বলে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত করেছে? কোরআন নিজেকে বলেছে নুর,রহমত,শিফা, পথনির্দেশক, হেদায়েত, সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী, সত্য মিথ্যা পার্থক্যের মানদণ্ড, ফুরকান,উপদেশ গ্রন্থ, প্রজ্ঞা বা হিকমতের গ্রন্থ ইত্যাদি।
এই কোরআন যদি আপনারা কেউ নিজ ভাষায় পড়ে থাকেন তাহলে জানবেন যে এখানে লিগ্যাল অর্থে আইন‑কানুন খুব কমই দেয়া হয়েছে হাতে গোনা অল্প কয়েকটা। এখানে বেশিরভাগ আয়াতই অনুপ্রেরণামূলক উপদেশমূলক যুক্তির কথাবার্তায় ভরা নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত আয়াত। চোখ কান খুলে দেখে মহান রবের সৃষ্টির মাধুর্য দেখে মুগ্ধ হওয়ার ও ঈমান বাড়িয়ে নেওয়ার আয়াত।
এই কুরআন মানুষের জন্য মানুষের ভাষায় মানুষকে চিরসুখের জান্নাতে যাওয়ার পথ দেখানোর জন্য এসেছে। মানুষের ব্যাক্তি পরিবার ও সমাজের উদ্ভুত সমস্যা ও তা সমাধানের চমৎকার নীতিও রীতিগুলো সুসজ্জিত হয়েছে। মানুষ কিভাবে চললে তার জীবনটা সুন্দর হবে তার পরিবারটা সুন্দর হবে তার সমাজটা সুন্দর হবে তার রাষ্ট্রটা সুন্দর হবে এবং তার মাধ্যমে আশেপাশের সমগ্র জগত আলোকিত হবে সেই বার্তাগুলোই কোরআনের পাতায় পাতায় বর্ণিত হয়েছে। মানুষের মন মানসিকতাকে তার চরিত্রকে সর্বোচ্চ সুন্দরতম করার জন্য আল্লাহ খুব কম সংখ্যক উপদেশ তাকে দিয়েছেন কিন্তু সেই অল্প কয়েকটি উপদেশ যদি মানুষ মেনে চলতে পারে তার জীবন হবে ধন্য এবং তার আশেপাশের মানুষগুলো তাকে পেয়েও হবে ধন্য।
যেমন সূরা নাহলের ৯০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরাণতা-ইনসাফ, সুন্দর ব্যবহার ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের হুকুম দিচ্ছেন এবং তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা মন্দ বা খারাপ কাজ ও সীমালঙ্ঘন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।”
আমরা দেখলাম কত চমৎকার উপদেশপূর্ণ নসিহত। মহান আল্লাহ এই আয়াতটার শেষেই বলছেন তিনি তোমাদেরকে “উপদেশ দেন” — ভাবুন তো মহান রবের শেখানো উপদেশটা কত সুন্দর কত চমৎকার?
প্রথম উপদেশ- তোমরা ইনসাফ করবে-ন্যায়পরায়ণ হবে- ন্যায়বিচার করবে। দ্বিতীয় উপদেশ‑তোমরা সুন্দর আচরণ করবে, সুন্দর ব্যবহার করবে। তৃতীয় উপদেশ- তোমাদের আত্মীয়-স্বজনকে তোমরা দান করবে, তাদের জন্য অর্থ সম্পদ ব্যয় করবে।
আর তিনটা কাজ করতে তিনি নিষেধ করেছেন। এক- অশ্লীল বা নোংরা-লজ্জাজনক কাজকর্ম। দুই খারাপ কাজ বা মন্দ কাজ বা অসৎ কাজ। আর তিন‑বাড়াবাড়ি করা, সীমালঙ্ঘন করা।
এই ছয়টা আদেশ ও নিষেধ যদি পৃথিবীর যে কোন মানুষ মেনে চলে তার পুরো কোরআন দরকার নেই শুধু এই ছয়টা অর্ডার এই ছয়টা আদেশ ও নির্দেশই যদি সে পালন করে আপনি ভেবে দেখুন তো তার জীবনটা কত সুন্দর হবে?কতটা আলোকিত হবে, কতটা সৌন্দর্যময় হবে?
এবং তার আশেপাশের মানুষজন সর্বপরি তার সমাজ সংসার জেলা উপজেলা এমনকি সমগ্র দেশ কতটা উপকৃত হবে? মৃত্যুর পরের জান্নাতের দরকার নেই এই পৃথিবীটাই জান্নাতে পরিণত হবে যদি গ্রামের শহরের দেশের সব মানুষ শুধুমাত্র এই একটা আয়াত তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে। সূরা নাহল আয়াত ৯০ একটা মাত্র আয়াতই বদলে দিতে পারে সমগ্র দেশের মানুষকে সমগ্র দুনিয়ার মানুষকে।
এরকম খুব ছোট ছোট আদেশ নির্দেশ আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন যেগুলোর বেশিরভাগই তার চারপাশের পরিবার প্রতিবেশী ও সমাজকে সৌন্দর্যময় করার জন্য একইসাথে পৃথিবীটাকে আরো স্বপ্নীল আরো বর্ণিল করার জন্য।
ওই যে ফ্যাক্টরির কথা বলা হলো সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো ফ্যাক্টরি? ঠিক সে রকমভাবে ফ্যাক্টরির ম্যানেজার, সাব ম্যানেজার, অফিসারদের মতো আমরা যদি আল্লাহর বাণী আল্লাহকেই সুর করে শোনাতে ব্যস্ত থাকি সেই ডাইরি বা কুরআনে বর্ণিত নির্দেশনা পথনির্দেশ হেদায়েত উপদেশ কি তা নিয়ে আমরা একেবারেই বেহুশ থাকি একেবারেই বেখেয়াল থাকি তাহলে কি হবে? ভাবুন তো একবার?
আমাদের মানবসমাজের ভেতর বাস করা কিছু মানুষরুপি অমানুষ শয়তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে কোরআন না বুঝলেও সমস্যা নেই।বরং হুজুর ছাড়া, পীর বাবা ও দয়াল বাবা ছাড়া একা একা পড়ে বোঝার চেষ্টা করলে নাস্তিক হয়ে যাবে। শুধু সুর করে পড়ে যাও। প্রতি অক্ষরে অক্ষরে ১০ নেকি বর্ণে বর্ণে ১০ নেকি!
খেয়াল করেন শুধুমাত্র এই একটা ট্রেন্ড এই একটা ডকট্রিন এই একটা সিস্টেম চালু করার ফলে ইবলিশের মাস্টারপ্ল্যান আজ সফল। সিস্টেমটা কি? তা হচ্ছে কোরআন বুঝে পড়ার দরকার নেই শুদ্ধ ও সহি উচ্চারণে কোন বোঝা ও উপলব্ধি ছাড়াই শব্দ উচ্চারণ করলেই প্রতি হরফে হরফে সওয়াব। যাদের ভাষা আরবি নয় সেই সমস্ত মুসলিমের কাছে এই কোরআনের বাণী চিরতরে বুঝতে না দেয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছে এই মাস্টারপ্ল্যান এর মাধ্যমে।
আর এই যে ট্রেন্ড এই যে ডকট্রিন এই যে পদ্ধতি এই যে সিস্টেম চালু করা হয়েছে যে শুদ্ধ সহি উচ্চারণে পড়লেই সওয়াব এবং উচ্চারণ সহি শুদ্ধ না হলে নামাজ কবুল হবে না তার ভয়াবহ ভয়ংকর পরিণতি আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।মানুষ ঠিকই কুরআন পড়ে তারাবি পড়ে খতম পড়ে সুর ছন্দ ঠিক রাখে কিন্তু কুরআনের আদেশ নির্দেশ কেউ মানেনা।
বরং সহিহ শুদ্ধ কুরআন পড়লেই হরফে হরফে সওয়াব ও উচ্চারণ সহি না হলে নামাজ দোয়া কিছুই কবুল হবেনা এই প্রোপাগাণ্ডা জোরেশোরে ছড়িয়ে বলা হচ্ছে এখন তাহলে কি করবে?
আসো জলদি আসো। এখন আমাদের মাদ্রাসা চালু করতে হবে। আলিয়া মাদ্রাসা কওমি মাদ্রাসা ইবতেদায়ী মাদ্রাসা হাফেজি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেখানে তোমাদের কি করা হবে? সহি শুদ্ধ উচ্চারণ শেখানো হবে! কিন্তু কোরআন বোঝানো হবে না। বোঝানো হবে লক্ষ লক্ষ হাদিস। সেগুলো তোমাদের মুখস্ত করানো হবে। তোমরা কোরআনের জ্ঞানে আলোকিত হবে না তোমরা হাদিসের জ্ঞানে আলোকিত হবে। তোমরা হয়ে যাবে শাইখুল হাদিস।শাইখুল মুফতি অফ হাদিসের সাগর, হাদীসের মহাসাগর। শাইখুল কোরআন তোমরা হবে না সেখানে। কুরআন শুধু সহিহ শুদ্ধ উচ্চারণে তেলাওয়াত ও তারাবি পড়ার জন্য। এইভাবে ইবলিশের মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী, সমগ্র দুনিয়াব্যাপী।
আরেকটা বিষয় গভীরভাবে খেয়াল করুন, ভাবুন, উপলব্ধি করুন। এই যে রমজান মাসের এত পবিত্রতা এত ফজিলত এত মাহাত্ম্য তার মূল কারণ কি? তার মূল কারণ হলো এই মাসে
সমগ্র মানবজাতিকে জান্নাতে নেয়ার পথ দেখানোর জন্য মহাগ্রন্থ ঐশিবাণী পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছে। আর এই কোরআন সাধারণ মানুষ সাধারণ আম জনতা অন্তত একটা মাস পড়বে, জানবে, বুঝবে উপলব্ধি করবে। তার রব তার জন্য কি উপদেশ দিয়েছেন কি নির্দেশনা দিয়েছেন কি আদেশ ও নিষেধ দিয়েছেন সেটাকেও চিরতরে জানার পথ বন্ধ করার জন্য যে আয়োজন তার নাম হচ্ছে তারাবি।
তারাবিতে কি হয়? একজন হুজুর হাই স্পিডে এমন কিছু পাঠ করে যা সে নিজেও বোঝেনা। তার পেছনের মানুষগুলো তো আরো বোঝে না। অথচ বেক্সিমকো কোম্পানির ম্যানেজার ফারুক সাহেব উদ্ভাবিত ফ্যাক্টরির সকল কর্মকর্তাদের ডাইরি খতম কর্মসূচির পরিবর্তে মানুষ যদি ঘরে বসে অথবা মসজিদে বসে অথবা বাড়ির ছাদে বসে অথবা মাঠে ঘাটে হাটে বসে কুরআন তার মাতৃভাষায় এই নিয়তে পাঠ করতো যে আমি জানবো আমার রব আমার জন্য যে ডাইরি লিখেছে তার বিষয়বস্তু কি? তার আদেশ গুলো কি? তার উপদেশগুলো কি? তার নিষেধ গুলো কি? তাহলে দুনিয়ার সব মানুষই প্রতি রমজানে অন্তত একবার পুরো কোরআনটা পড়তে পারতো জানতে পারতো বুঝতে পারতো উপলব্ধি করতে পারতো।
আপনারা যারা আমার কথা শুনছেন আপনাদের কারো বয়স 40 কারো বয়স ৫০ কারো ৬০ বা কারো ৭০ কারো ২০ কারোবা ৩০. এর মধ্যে আমরা কতজন এই কোরআন নিজের ভাষায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি? সেই সংখ্যাটা খুবই কম। যেটা সবচেয়ে হৃদয়বিদারক সবচেয়ে দুঃখজনক বাস্তবতা। অর্থাৎ ভাবুন একবার ধর্ম ব্যবসায়ীদের চক্করে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে?কে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে? তিনি আর কেউ নন আপনার আমার সবার প্রিয় দুশমন ও প্রকাশ্য শত্রু মিস্টার ইবলিশ।
ধর্ম ব্যাবসায়ীদের মাধ্যমে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ অক্ষর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও কোরআন কোনদিন পুরোটা নিজ মাতৃভাষায় পড়ে না। আর যারা আরবি বোঝেনা কিন্তু নিয়মিত সহি ও শুদ্ধ উচ্চারণে আরবিতে কোরআন পড়েই যাচ্ছেন পড়েই যাচ্ছেন পড়েই যাচ্ছেন তাদের অবস্থা ওই ম্যানেজার ফারুক সাহেবের মতোই যিনি ভুলেই গেছেন যে এই কোরআন কেন পাঠানো হয়েছে? তিনি সহিহ শুদ্ধ উচ্চারণে আবেগ অনুভূতি ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে তেলাওয়াতেই ব্যস্ত। কিন্তু ডাইরির মূল বিষয়বস্তু কি? মূল নির্দেশনা লক্ষ্য উদ্দেশ্য আদেশ‑উপদেশ নিষেধ কি সে বিষয়ে তিনি একেবারেই বেখেয়াল একেবারেই উদাসীন একেবারেই বেখবর।
এখন একটু কল্পনা করুন তো- দুই মাস পর বেক্সিমকো কোম্পানির মালিক সালমান এফ রহমান সাহেব ফিরে এসে যদি দেখেন তার নিজ হাতে লিখিত ডাইরি কেউ বুঝে পড়েনি, কেউ বুঝে দেখেনি কেউ তার নির্দেশনা উপলব্ধি করেনি, তার আদেশ উপদেশ কিছুই মানেনি জানেও নি। বোঝেও নি বোঝার চেষ্টাও করেনি বরং এটাকে একটা তিন ওয়াক্তের অর্থহীন রিচুয়ালভিত্তিক কর্মসূচী ও অনুষ্ঠানে পরিণত করেছে। যেখানে খুব সুর করে আবেগ অনুভূতি দিয়ে, ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহযোগে ডাইরি পাঠ করা হয়। ডাইরির পাতার লেখাগুলো তারতীলসহ তেলাওয়াত করা হয় ঠিকই কিন্তু কেউই পড়ার অর্থে পড়েনি, বোঝার অর্থে পড়েনি, বুঝে নিজের জীবনে অর্থাৎ ফ্যাক্টরি বা অফিসে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পড়েনি তাহলে অবস্থাটা কি হবে? এর পরিণতি কি হবে?
এর সাথে আরো ফ্যাক্টর যোগ করুন যে তার অভিজ্ঞ ম্যানেজার ফারুক সাহেব যিনি এই ফ্যাক্টরিতে আছেন প্রায় ২৫ বছর ধরে মালিকের বিরক্তি কতটা তুঙ্গে উঠবে? কতটা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়বেন তিনি তার ম্যানেজারের প্রতি?
আমাদের মসজিদ মাদ্রাসায় যারা রাত দিন কোরআন খতম করছেন এবং দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করছেন তাদের অবস্থাটা কি একটু ভেবে দেখেন তো। বিচার দিবসে হাশরের মাঠে ওইসব তথাকথিত আলেমদের অবস্থা কল্পনা করুন তো একবার যারা তুচ্ছ মূল্যে সহিহ ও শুদ্ধ উচ্চারণের ব্যবসা ও ধাধায়- আপনাকে আমাকে জেনারেশন আফটার জেনারেশন — প্রজন্মের পর প্রজন্ম কোরআনে আল্লাহর রচিত বাণী থেকে দূরে রাখলো?
বস তথা কোম্পানির মালিক সালমান এফ রহমান সৌদি আরব ও আমেরিকা থেকে ফেরত আসার পর ওই ফ্যাক্টরির ম্যানেজার প্রথম দিনেই বরখাস্ত হলেন। তার যত ফেক ভক্তি ফেক আবেগ ফেক ইমোশন সেগুলোর দুই পয়সারও মূল্য ছিলো না মালিকের কাছে। একইভাবে আমাদের সোকল্ড কুরআন খতম এর ধ্বজাধারীদের পরিস্থিতি হবে কাল হাশরের মাঠে। যে মারা গেছে সেই মুর্দার লাশের পাশে ভাড়া করে আনা মাদ্রাসার হুজুরদের দিয়ে সূরা ইয়াসিন সূরা আর রহমান খতম অথবা প্রতি রমজানে মহল্লায় মহল্লায় পাড়ায় পাড়ায় তারাবিতে কুরআন খতম কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডের মৌলিক কোন দাম কোন ভ্যালু কোন মূল্য কোন উপযোগিতা আল্লাহর কাছে আছে কি?
“ইফ ইউ ডোন্ট নো হোয়ার ইউ আর গোইং নো ম্যাটার হোয়াট রোডস ইউ টেক ইউ উইল এন্ড আপ ইন রং ডেস্টিনেশন।’ — কেউ একজন বলেছিল আপনার গন্তব্য আপনার মঞ্জিল আপনার উদ্দেশ্য যদি না জানা থাকে যে পথেই আপনি যাত্রা করেন আর যতদূর আপনি যান না কেন আপনি ভুল গন্তব্যে ভুল স্থানে ভুল মঞ্জিলে উপস্থিত হতে বাধ্য। কোরআন কেন পাঠানো হলো সেটাই যদি আমরা না বুঝি কোরআন নিয়ে যত শত টিভি প্রোগ্রাম হোক কোরআনের পাখিদের যতই পাগড়ি পড়ান অথবা আন্তর্জাতিক তেলাওয়াতের অনুষ্ঠানে প্রথম পুরস্কার পাওয়ান অথবা হুজুরদের বিনোদনমূলক কোরআনের জলসা করান অথবা কোরআনের উত্তরসূরি ওয়ারিশ দাবি করুন না কেন আমরা কোথাও গিয়ে হাজির হতে পারবো না উপস্থিত হতে পারবো না।
আমরা হাশরের মাঠে আল্লাহর দরবারে মুখও দেখাতে পারবো না। আর এগুলোই হচ্ছে এগুলোই চলছে এগুলোই ঘটছে গত শত শত হাজার বছর ধরে।
মহান আল্লাহ বিধান দিলেন হেদায়েতের জন্য জান্নাতের পথনির্দেশ করার জন্য। মানুষকে তার ব্যক্তি জীবনে তার পারিবারিক জীবনে তার সামাজিক জীবনে এমন কিছু আদেশ‑উপদেশ নির্দেশ ও নিষেধ দিলেন যা মেনে চললে তার ব্যক্তিজীবন তার পারিবারিক জীবন তার সামাজিক জীবনটা হয়ে উঠবে আনন্দময়, হয়ে উঠবে সৌন্দর্যময়, হয়ে উঠবে আলোকিত ঝলকিত বিকশিত মুখরিত। আমরা সেটাকে বানালাম ডাইরি পাঠ কর্মসূচি। তোতা পাখির মতো খুব আবেগ দিয়ে অনুভূতি দিয়ে ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহযোগে সুর ও ছন্দ প্রয়োগ করে সালমান এফ রহমান বা তার চেয়ারকে শোনানোর অনুষ্ঠানে ও কর্মযজ্ঞে। মেতে উঠলাম মোল্লা মাওলানা হাফেজ উৎপাদনের প্রতিযোগিতায়। জীবনকে জান্নাতময় বানানোর আদেশ উপদেশ গুলোকে বানিয়ে ফেললাম ওয়াজ মাহফিলের মাঠের বিনোদনের স্ক্রিপ্টে। দুনিয়া ও আখিরাত সাজানোর জন্য মহান আল্লাহ রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ বাণীগুলো মৃত মানুষকে পড়ে শোনানোর সুরেলা তেলাওয়াত এর ডাইরির পাতার কাব্যিক ছন্দ বানিয়ে ফেললাম।
সূরা মোহাম্মদের আয়াত ২৪ “তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করে না নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে গেছে।তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?”
সুরা সাদ আয়াত ‑২৯ “ এটি একটি বরকতময় কিতাব যা আমি তোমার কাছে নাজিল করেছি।যাতে তারা এর আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করতে পারে আর বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।”
শেষ করবো সুরা ইউনুসের ‑৫৭ আয়াত দিয়ে।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার রচিত ডাইরিতে বলেন-
হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নাসীহাত‑উপদেশ আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তার নিরাময়-শিফা-চিকিৎসা , আর মু’মিনদের জন্য সঠিক পথের দিশা-হেদায়েত ও রহমাত।” রিজওয়ান মাহমুদ খান , পরিচালক (তাজকিয়া নফস)
রব্বুনাল্লাহ,আল্লাহ ই আমার রব। রিজওয়ান ভাই,সালামুন আলাইকুম, ভাইজান,আপনার লেখাগুলো কি সেয়ার করা যাবে?