আমাদের পরিচয় কি? মুসলিম।শিয়া, সুন্নী, আহলে হাদিস, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত?
একজন খাটি মুমিনের কোয়ালিটি কি?
যে ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ‘ এই কালেমাতে বিশ্বাস করেন ও একেশ্বরবাদী। সে মুসলিম, আমাদের ভাই। যদিও সে সত্যিকার অর্থে একজন মুমিন কিনা তাতে সন্দেহ থেকেই যায়। সুরা: আনফাল যদি দেখেন ‘মুমিনের কোয়ালিটি‘ গুলো কি আছে আপনি জানতে পারবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিনদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বলেছেন:
মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।
সূরা: আল-আনফাল (৮:২)
যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে।
সূরা: আল-আনফাল (৮:৩)
তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক।
সূরা: আল-আনফাল (৮:৪)
আমরা প্রথম কোয়ালিটি দেখলাম, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের অন্তর কেপে উঠে এবং আল্লাহর আয়াত যখন পাঠ করা হয়, তা তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে।আমাদের দুর্ভাগ্য কি জানেন, আমরা কোরআনের আয়াত পাঠ করি ঠিকই কিন্তু বুঝি না, না বুঝার কারণে —- আমাদের ঈমানটাও বৃদ্ধি পায় না, এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। আল্লাহ কোরআন কেন আরবীতে দিয়েছেন, আমাদের কেন ভিন্ন ভাষায় পড়তে হবে এর ম্যক্সিমাম উত্তরগুলোই আমরা জানিনা। যদি সেভাবে বুঝে বুঝে পড়তাম নিশ্চয়ই এই কুরআন আমাদের অন্তরকে কাপিয়ে তুলতো আর আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করত।আল্লাহর আয়াত সমূহ পড়ে আমাদের ঈমান বৃদ্ধিও হয় না, কি হয়, শুধু হাদিস পড়ানো হয়, বুখারী লিখেছেন, তিনি ছয় লক্ষ হাদিস জানতেন। তিনি হাদিস কালেক্ট করে দুই হাজার‑আড়াই হাজার হাদিস উনার কিতাবে স্থান দিয়েছেন এবং তার মধ্যে অনেক হাদিস আছে দুইবার — চার বার করে রিপিট করার কারণে হাদিসের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার প্লাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একচুয়ালি হাদিস ২২শ প্লাস। আর আমরা ২২শ/২৩শ হাদিসে আমরা এমনভাবে ডুবে আছি যে, আমরা কোরআনের সোয়া ৬ হাজার আয়াতগুলি আমাদের ভালো করে পড়াও হয় বুঝাও হয় না। আমাদেরকে ভয় দেখানো হয় তুমি এই কুরআন একা একা পড়তে যেও না, তাহলে তুমি কাফের হয়ে যাবে, ইহুদী হয়ে যাবে, খ্রিস্টান হয়ে যাবে।অথচ আল্লাহ এখানে কত চমৎকার করে বলছেন যে, মুমিন মানে তারাই আমার আয়াত সমূহ পাঠ করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়।আয়াত সমূহ পাঠ করলে কেন ঈমান বৃদ্ধি পায়? এর উত্তর কিন্তু আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন:
‘এটি একটি কল্যাণময় কিতাব তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি যাতে তারা এর আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে, আর জ্ঞান‑বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।‘
সূরা: সাদ (৩৮:২৯)
দেখুন এখানে কিন্তু আল্লাহ বলেন নাই তাতে তুমিই (রাসূল সা:) গভীর চিন্তাভাবনা কর।কারণ, রাসুলের দায়িত্ব কি তা সূরা মায়েদার ৯৯ আয়াত অনুযায়ী জানি যে,
‘প্রচার ব্যতীত রাসূলের কোন দায়িত্ব নেই। আর তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আল্লাহ তা জানেন।‘ সূরা: মায়েদা (৫:৯৯)
আল্লাহর এই বানীগুলো মানুষের কাছে পৌছেঁ দেয়া। তিনি রাসূল এটাই তাঁর ফাস্ট এন্ড ফর্মেড ডিউটি, তবে তিনি একাধারে নবীও ছিলেন আমরা যেন ভুলে না যাই।নবী হিসেবেও কিন্তু অনেক আয়াত আছে। নবী হিসেবে যে তার টাইম পিরিয়ড ছিলো, তাঁর যেই কওম ছিল, তাদের সাথে অনেক ডিলিংস হয়েছিল, তা আমরা সূরা আবাসা পড়লে জানি, সূরা আহযাব পড়লে জানি। নবীর কিছু টাইমফ্রেম ছিলো বেসিকালি যখন আমরা, আতিউল্লাহ আতিউর রাসূল বলি, তখন কিন্তু ‘রাসূল‘ সম্ভোধন করা হয়। সেই রাসূলের প্রতি যেই নির্দেশটা ছিলো, এই কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করার নির্দেশ তাঁর উপর ছিলো না, ইভেন নবী হিসেবেও না। ছিলোটা কি, এটা পৌছেঁ দেয়া।আর গভীর চিন্তা-ভাবনা করার উপদেশটা কিন্তু আপনার‑আমার মতো আমজনতার প্রতি আল্লাহ দিয়েছেন। তোমরা আমার আয়াত নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করো। যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে। আমরা রাসূলের নামের প্রতি সামঞ্জস্য একটি সূরাতে যাই,
‘তারা কি কুরআন সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করে না, না তাদের অন্তরে তালা দেয়া আছে?‘
সূরা: মোহাম্মদ (৪৭:২৪)
আল্লাহ এই আয়াতে আমাদেরকে কটাক্ষ করেছেন, আমরা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করিনা? নাকি আমাদের অন্তরে তালা লেগে আছে। দেখুন, সেই সূরা আনফালে আল্লাহ বল্লো কি, এই আয়াত সমূহ শুনে অন্তরে ঈমান বৃদ্ধি পাবে।এখানে বলছে কি, আমাদের অন্তর কি তালা লেগে আছে? যে আমরা আয়াতগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করি না।একটু আগে আমরা দেখলাম যে, বলা হচ্ছে এই বরকতময় কিতাব নাযিল করা হয়েছে যাতে করে আমরা আয়াতগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করি।আমরা আসলে এই আয়াতগুলো (আল‑কুরআন) পড়িনা, যদি পড়তাম ও গভীর চিন্তা-ভাবনা করতাম তাহলে মুমিন হতে পারতাম।
আল্লাহ বলেছেন, মুমিনরা হলো পরস্পর ভাই।আমরা দেখি কুরআনের আয়াত নিয়ে পড়ার কথা, চিন্তা-ভাবনা করার কথা আল্লাহ উৎসাহিত করেছেন। দেখুন যদি এই কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতাম না, তাহলে আমাদের পরিচয় দিতে কষ্ট হতো না।আমরা আমাদের পরিচয় চমৎকারভাবে তুলে ধরতে পারতাম।আমরা যদি সূরা নামল এর ৯১ আয়াতটা পড়ি তাহলে দেখবো যে, এখানে আয়াতের শেষের অংশটুকুতে আমাদের পরিচয়:
‘আমাকে তো নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই শহরের রব-এর ইবাদাত করতে যিনি এটিকে সম্মানিত করেছেন এর সব কিছু তাঁরই অধিকারে। আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই।’(সূরা নামল (২৭:৯১)
আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কি আদেশ দিয়েছেন, এই আয়াতটা কিন্তু পরিস্কার যে, আমি যেন মুসলিমদের অর্ন্তভুক্ত হই। আমরা সেই বিখ্যাত জানি যে, ইহুদী-খৃস্টানদের সাথে বাহাসের সময় সেই আয়াত নাজিল হয়েছে যে, ইব্রাহিমকে তোমরা কি বলতেছো, সে ইহুদীও ছিলো না, সে খ্রিস্টানও ছিলো না, সে ছিলো মুসলিম।সূরা: নাহলের ১২৩ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
আল্লাহ নবী মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহকে ওহিতে আদেশ করেছেন, তুমি একনিষ্টভাবে নবী ইব্রাহিমের ধর্ম আদর্শ অনুসরণ কর।ইব্রাহিম হচ্ছে জাতির পিতা, ইব্রাহিম হচ্ছে আমাদের জাতির ইমাম।আল্লাহ তাহাকে নেতাও বানিয়েছেন এবং সূরা নিসা পড়লে আমরা জানতে পারি, আল্লাহ তাঁকে (ইব্রাহিম) পরম খলিল (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তো তাঁকে অনুসরণ করার কথা কিন্তু আল্লাহ নবী মুহাম্মদ স. কে বলেছেন। এবং এখানে কি পরিচয়টা দিয়েছেন? ইব্রাহিমের যেই পরিচয় ছিলো, সেইম পরিচয় আমি যেন মুসলিমদের অর্ন্তভুক্ত হই।তাহলে আল্লাহর রাসুলের পরিচয় যদি হয় মুসলিম, আর আপনি আমি যদি পরিচয় দেই আমি শিয়া, সুন্নী, সুন্নী শিন্নি, সুন্নী আহলে হাদিস, আমি তাবলিগী, আমি জামাতি, আমি হেফাজতি, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, আমরা এই সূরা: নামল ৯১ আয়াতটা ভায়োলেট করলাম।মুহাম্মদ রাসূল স. হয়েছিলেন মুসলিমদের অর্ন্তভুক্ত, আর আমরা ফিরকা বানাচ্ছি, দল-উপদলে বিভক্ত হচ্ছি।দল-উপদল বানিয়ে পথভ্রষ্ট হচ্ছি।মুসলিম হওয়ার পরে রাসুলের প্রতি ফার্স্ট অর্ডারটা ছিলো, দেখুন কত চমৎকার অর্ডার
‘আর আমি যেন আল‑কুরআন অধ্যয়ন করি, অতঃপর যে হিদায়াত লাভ করল সে নিজের জন্য হিদায়াত লাভ করল; আর যে পথভ্রষ্ট হল তাকে বল, ‘আমি তো সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
সূরা: আন্-নমল (২৭:৯২)
আর আমরা কি করি, আমরা রাসুলের আদর্শ বার বার শুনি, রাসুলকে অনুসরণ করো। আতিউল্লাহ আতিউর রাসুল।আল্লাহকে মানো রাসুলকে মানো। তো রাসুল কি মানতেন, রাসুল কি করতেন, সেই আদর্শ আমরা দেখিনা কুরআন থেকে, কুরআনে দেখি রাসুলকে কুরআনে মুসলিম পরিচয় দিতেন, কুরআন অধ্যায়ন করতেন। রাসুল স. কুরআন অধ্যায়ন করতেন, কেন? ইমাজিং! তিনি কুরআন অধ্যায়ন করতেন। আমরা করি না, আমরা হাদিস অধ্যায়ন করি। আর হাদিস অধ্যায়ন করতে করতে দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পাগল হয়ে যাই, আর আমাদের বুঝানো হয়, কুরআন তুমি পড়তে গেলে তুমি কাফের হয়ে যাবে, তুমি নাস্তিক হয়ে যাবে! তুমি হাদিস পড়ো। হাদিস বাংলায় আছে! কিভাবে আমরা কুরআন থেকে হাজার কিলো দূরে চলে যাই, আমাদের আইডেন্টিটি দিতে পারছি না। অথচ কুরআনে রাসূলকে কত চমৎকার করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যার উপর কুরআন নাজিল করা হয়েছে তার পরিচয়টা কত সুন্দর করে দেয়া হয়েছে।তাকে আদেশ দেয়া হয়েছে তিনি যেন মুসলিম হন মুসলিমদের অর্ন্তভুক্ত হন আর কুরআন অধ্যয়ন করেন।
আল্লাহ আমাদেরকে কি পরিচয় দিতে শিখিয়েছেন? আর আমরা কি পরিচয় দেব?
আমরা কি মুসলিম পরিচয় দেব? নাকি বিভিন্ন ফিরকায় সুন্নী, আহলে হাদিস, শিয়া পরিচয় দেব?
কুরআনে কি বলা আছে?
‘যারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।‘ সূরা: রোম (৩০:৩২)।
এটা কাকে বলা হয়েছে? রাসুলের উপর নাজিল হয়েছে, রাসুলকে বলা হয়েছে।এই যে, নিজের দীনকে, নিজের ধর্মকে খন্ড‑বিখন্ড যারা করে, তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন কে? আল্লাহ। তাহলে আমরা কেন তাদের অন্তর্ভুক্ত হবো। যারা মুসলিম পরিচয়কে ভেঙ্গে খন্ড‑বিখন্ড করে কখনো নিজেকে শিয়া বলে, সুন্নী বলে, আহলে হাদিস বলে ইত্যাদি দলে কি আমরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারি? সূরা রোম আয়াত ৩২ আয়াত অনুযায়ী? না, অবশ্যই না।
আর আমরা আরেকটি আয়াত দেখি,
‘নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন।‘ সূরা: আল-আনাম (৬:১৫৯)’
এখানে আল্লাহ কি বলেছেন, রাসুলকে আল্লাহ হুশিয়ার করেছেন, যারা দ্বীনকে খন্ড খন্ড করে, ধর্ম কে টুকরা টুকরা করে দলে উপ-দলে বিভক্ত হয়, তাদের সাথে রাসুলের কি কোন সম্পর্ক আছে? না, অবশ্যই না। আমাদের কোন সম্পর্ক আছে? না। তাহলে কি আমরা উপরের আয়াতগুলো বিশ্বাস করবো নাকি ইগনোর করে চলে যাবো? প্রশ্নই উঠে না। [রিজওয়ান মাহমুদ খান‑আল্লাহর ছাত্র]