আনআম
- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন আর নিযুক্ত করেছেন অন্ধকার ও আলো । তারপরও কাফিররা (অন্যকে) তাদের রবের সাথে সমকক্ষ দাঁড় করায়। [জাআ’লা= নিয়োগ,নিযুক্ত,দায়িত্ব প্রদান,পদায়ন,নিয়োজিত,দায়িত্বপ্রাপ্ত,কর্মরত,কর্মে নিয়োজিত।]
- তিনি সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর (তোমাদের জীবনের) একটি মেয়াদ স্থির করেছেন ।এছাড়া (পুনরায় জীবিত হওয়ার) আরেকটি নির্দিষ্ট মেয়াদ‑কাল নির্ধারিত আছে (যে সম্পর্কিত জ্ঞান একমাত্র) তাঁর কাছে, কিন্তু তোমরা সন্দেহই করে চলেছ। [3:144, 56:60) (7:34,10:49, 13:38]
- আর আসমানসমূহ ও যমীনে (তিনিই আল্লাহ) , তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা কিছু অর্জন কর তাও তিনি জানেন।
- আর মানুষের কাছে তাদের রবের (নাজিলকৃত কিতাবের) আয়াতগুলোর মধ্য হতে কোন আয়াত আসলেই, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
- মানুষের কাছে যখন (নাজিলকৃত কিতাবের সত্য উপস্থিত হয়, তখন মানুষেরা সেই সত্যকে (ইজমা, কিয়াস রিজাল,তাফসিরের দোহাই দিয়ে) মিথ্যা বলে। শীঘ্রই তাদের কাছে সে খবর আসবে যে সম্পর্কে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।
- (বর্তমান যুগের মানুষেরা) কি দেখে না? তাদের পূর্বের শতাব্দীতে কত মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি। যাদেরকে এই যমীনের বুকে এতটা শক্ত‑মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম, যতটা সমৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠা তোমাদেরকেও দান করিনি। তাদের উপরে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিধারা ঝরিয়েছি। তাদের নিচের ভাগে নহরধারা, নদীনালা প্রবাহিত করেছি। তারপর তাদেরকে তাদের পাপের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের পর অন্য নতুন নতুন জাতি ও সম্প্রদায়সমূহ সৃষ্টি করেছি।
- আর যদি আমি তোমার কাছে কাগজে লিখিত কোন কিতাবও নাযিল করতাম, তারপর তারা যদি সেই কেতাব নিজেদের হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখতো, তবুও কাফিররা বলতো, এটাতো প্রকাশ্য যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। [১৭:৯২-৯৪; ৪:১৫৩]
- আর তারা বলে, তার কাছে কোন ফেরেশতা কেন নাযিল হয় না ? আমি যদি ফেরেশতা নাযিল করতাম তাহলে (যাবতীয় ব্যাপারে) চূড়ান্ত ফায়সালাই তো হয়ে যেত, তারপর তাদেরকে আর কোন অবকাশ দেয়া হত না। [16:33, 25:22] [২৩:২৩,২৪,৩৩,৩৪,৩৫]
- আর যদি কোন ফেরেশতাকে রসূল হিসেবে নিযুক্ত করতাম তাহলে তাকে তো পুরুষ মানুষের ( আকৃতি) বিশিষ্টই করতাম, এবং তাদেরকে অবশ্যই গোলকধাঁধায় ফেলে দিতাম যেমন ধাঁধাঁয় তারা এখন পড়েছে।
- আর অবশ্যই তোমার পূর্বেও রাসূলদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা-ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়েছে। তবে যারা তাদেরকে উপহাস করেছে তাদের উপহাসের পরিণতি তাদেরকেই ঘিরে ফেলেছিলো।
- বল, “তোমরা যমীনে ভ্রমণ করো এবং দেখ, (সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) মিথ্যাবাদীদের কেমন পরিণতি হয়েছিল।”
- বল, ‘আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা কার’? (তুমিই) বলে দাও, “(সব) আল্লাহরই”। তিনি তাঁর নিজের (নফসের) উপর রহমত লিখে নিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন অবশ্যই একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি (ও ধবংসের মুখে ফেলেছে) তারাই ঈমান আনবে না। [রহমত=দয়া,মেহেরবানী,অনুগ্রহ]
- রাতের (অন্ধকারে) এবং দিনের (আলোয়) যা কিছু বসবাস করে ও বর্তমান রয়েছে তা সব কিছুই আল্লাহর। তিনি সব কিছুই শোনেন ও জানেন।
- বল, ‘ আমি কি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে অলি হিসেবে গ্রহণ করব ।তিনিই খাবার দান করেন কিন্তু তাঁকে খাবার দেয়া হয় না। বল, “আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন শান্তিকামী-আত্মসমর্পণকারী-মুসলিমদের মধ্যে প্রথম হই, আর (আমাকে আরও আদেশ করা হয়েছে ) তুমি কিছুতেই মুশরিকদের মধ্যে শামিল হয়ো না।”
- বল, যদি আমি আমার রবের অবাধ্য হই, তবে নিশ্চয়ই আমি সেই ভয়াবহ দিনের (কঠিন) শাস্তির ভয় করি।
- সেদিন শাস্তি থেকে যাকে বাঁচানো হবে, তার তার প্রতি আল্লাহ বড়ই মেহেরবানি করলেন। আর সেটাই হবে সুস্পষ্ট (যথার্থ) সফলতা। [রহমত=দয়া,মেহেরবানী,অনুগ্রহ]
- আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন দুঃখ‑কষ্ট দেন তবে তিনি ছাড়া কেউ তা দূর করতে পারে না। আর তিনি যদি তোমার কোন কল্যাণ বা মঙ্গল করতে চান (তাও করতে পারেন, কারণ) তিনি তো সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
- তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র কঠোর ক্ষমতার অধিকারী । আর তিনিই প্রজ্ঞাময়,সব কিছুর পূর্ণ খরর রাখেন।
- বল, (কোনও বিষয়ে) সাক্ষ্য দানের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কে? বল, আল্লাহ! (এবং তিনিই) আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। এ কুরআন আমার কাছে ওহী করে পাঠানো হয়েছে যাতে আমি তোমাদেরকে ও যাদের কাছে এ (কুরআন) পৌঁছাবে তাদেরকে এর মাধ্যমে সতর্ক করতে পারি। তোমরা কি এমন সাক্ষ্য দিতে পার যে,আল্লাহর সাথে (অংশীদার) অন্য কোন ইলাহ‑বিধাতা-বিধানদাতা-আইনদাতা- ও আছে?” বল, “আমি (অমন) সাক্ষ্য দেবো না।” বল, “তিনিই একমাত্র ইলাহ। আর তোমরা (আল্লাহর সাথে বিধান দেয়ার ক্ষেত্রে) যেসব (ওলি,আউলিয়া,গাউছ,কুতুব,পীর,দরবেশ,উলামা,মাশায়েখ,ঠাকুর,পাদ্রী,দেব,দেবী,নবী,রাসুল) শরীক করো নিশ্চয়ই তা থেকে আমি সম্পূর্ণ দায়মুক্ত’।”
- আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা (ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা) তাঁকে (মুহাম্মদকে) চেনে, যেমন (ভালোভাবে) চেনে তারা নিজেদের সন্তানদেরকে । যারা নিজেদের (নফসের) ক্ষতি সাধন করেছে, তারা ঈমান আনতে পারবে না।
- তার চাইতে বড় নির্যাতনকারী জালিম আর কে হতে পারে? যে আল্লাহর উপরে (ইজমা কিয়াস,তাফসির,শানে নুজুলের নামে) মিথ্যা রচনা করে, অথবা তাঁর আয়াতসমূহ মিথ্যা প্রমাণ করতে চায়।এমন যালিম কক্ষনোই সাফল্য লাভ করতে পারবে না।
- যেদিন আমি তাদের সকলকে একত্রিত করব, তারপর যারা শিরক করেছে তাদেরকে বলব,- যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়?
- তখন ফিতনাকারীদের বলার মতো কিছুই যে থাকবে না।তারা শুধু একথাই বলবে, আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আল্লাহ্ হলেন আমাদের রব! আমরা তো (কাউকে শরিককারী) মুশরিক ছিলাম না।
- লক্ষ্য কর, তারা নিজেদের সম্পর্কে কেমন মিথ্যে কথা বলবে,আর তারা মিছেমিছি যা রচনা করেছিল তা উধাও হয়ে যাবে।
- তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা তোমার কথা কান পেতে শোনে, (কিন্তু সে শোনাটা যেহেতু হেদায়েত বা সত্য‑সন্ধানের জন্য নয় তাই) আমি তাদের অন্তরে পর্দা ফেলে দিয়েছি, যাতে তারা উপলব্ধি করতে না পারে,তাদের কানে আছে বধিরতা,আর যদি তারা প্রতিটি আয়াতও দেখে, তবুও তারা তার প্রতি ঈমান আনবে না। এমনকি তারা যখন বাদানুবাদ করার জন্য তোমার কাছে আসে তখন (সব কথা শোনার পর) এই কাফেররা বলে, “এ তো দেখছি আগের দিনের মানুষের কিসসা-কাহিনি-গল্পগাথা ছাড়া আর কিছু নয়।”
- তারা লোকজনকে এ (কুরআন) থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, আর নিজেরাও দূরে সরে থাকে। এভাবে ওরা নিজেরাই তো নিজেদের সর্বনাশ করছে, কিন্তু ওরা তা উপলব্ধি করতে পারছে না।
- যখন তাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের সামনে দাঁড় করানো হবে তখন তুমি যদি দেখতে (সেটা বড় ভয়ানক দৃশ্য হবে)! তারা তখন বলবে, “হায়রে আমাদেরকে যদি আবার (দুনিয়ায়) ফেরত পাঠানো হতো! তাহলে আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহকে (ইজমা,কিয়াস,তাফসির,শানে নুজুল) দিয়ে মিথ্যা আরোপ করবো না। আর আমরা মুমিনদের দলেই শামিল থাকবো। [মুমিন‑৮:২,৩,৪]
- (অথচ তাদের এ আশাও পূরণ হবে না), বরং আগে তারা যা গোপন করত, তা এখন তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে গেছে (তাই নিরুপায় হয়ে তারা এ দাবী করবে) সত্যিই যদি তাদেরকে (দুনিয়ায) ফেরত পাঠানো হয়, তবে আবার তারা সে সবই করবে, যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো। নিশ্চয়ই তারা ঘোর মিথ্যাবাদী।
- আর তারা (নাস্তিকরা) বলে, “আমাদের এ দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কোন জীবন নেই এবং (মৃত্যুর পর) আমাদেরকে আবার (জীবিত করে) উঠানো হবে না।
- তুমি যদি সেই সময় দেখতে পাও, যখন (নাস্তিকদেরকে) তাদের রব্বের সামনে দাঁড় করানো হবে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, এটা (অর্থাৎ এই দ্বিতীয় জীবন) কি সত্য নয়? তারা বলবে,হ্যাঁ সত্য, আমাদের রবের শপথ! তিনি বলবেন, তাহলে এখন তার শাস্তি ভোগ কর যা তোমরা অবিশ্বাস করতে।
- নিশ্চয়ই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা আল্লাহর সাথে মোলাকাত ও সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করছে। অবশেষে হঠাৎ যখন কিয়ামত তাদের সামনে এসে পড়বে তখন তারা বলবে, “হায় আফসোস! আমরা এ (কিয়ামত) সম্পর্কে বড়ই অবহেলা করেছিলাম!” তখন তারা তাদের (পাপের) বোঝা নিজেদের পিঠে বহন করবে। সাবধান! তারা যা বহন করবে তা অতি নিকৃষ্ট।
- দুনিয়ার জীবন খেল‑তামাশা ও ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয় (যা ক্ষনিক পরই শেষ হয়ে যায়)। তবে যারা (এই অল্প সময়টুকুতে) সাবধানতা-সতর্কতা-তাকওয়া অবলম্বন করবে, আখিরাতের জীবনই হবে তাদের জন্য উৎকৃষ্টতর।(এতটুকু কথাও কি) তোমরা বুঝতে পার না?
- তাদের কথাবার্তা যে তোমাকে যন্ত্রণা ও কষ্ট দেয় তা আমি খুব ভালভাবেই জানি, কেননা তারা তো আসলে তোমাকে মিথ্যাবাদী বলছে না; বরং (এই) অত্যাচারী জালেমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার ও অমান্য করছে।
- তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল,কিন্তু তাদের উপর মিথ্যারোপ করা ও কষ্ট দেয়ার পরও তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল, যতক্ষণ না তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছেছে। আর আল্লাহর কালাম কেউ পরিবর্তন করতে পারেনা। আর অবশ্যই রাসূলদের কিছু সংবাদ তোমার কাছে পৌঁছেছে। [6:116, 10:64, 17:77, 18:27, 33:38, 33:62, 40:85, 48:23]
- আর যদি তাদের অবহেলা ও উপেক্ষা সহ্য করা তোমার কাছে কষ্টদায়ক মনে হয় তাহলে ক্ষমতা থাকলে মাটির কোন সুড়ঙ্গ পথ খুঁজে বের কর অথবা আকাশে সিঁড়ি লাগিয়ে দাও; তারপর তাদের কাছে কোন মোজেজা বা নিদর্শন নিয়ে আসো (কিন্তু তা যেহেতু পারছ না তাই ধৈর্যধারণ কর।), আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সবাইকে হিদায়াতের উপর একত্র করতে পারেন।(কিন্তু করবেন না) সুতরাং তুমি মূর্খ‑জাহেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা। [2:256, 10:98–99, 12:103,106,108]
- প্রকৃতপক্ষে তারাই ডাকে সাড়া দেয়, যারা (রবের কথা মনোযোগ দিয়ে) শোনে। আর মৃতদের (বিষয়টা এই যে) আল্লাহই তাদেরকে আবার জীবিত করবেন। তারপর তাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরিয়ে আনা হবে। [2:260, 10:100]
- আর মানুষেরা বলছে, কেন তার উপর তার রবের পক্ষ থেকে কোনো মোজেজা নাজিল করা হচ্ছে না? তুমি বলে দাও! মোজেজা নাজিলের পূর্ণ ক্ষমতা কেবলমাত্র আল্লাহ্ই রাখেন। কিন্তু মানুষের মধ্যে অধিকাংশরাই (এর পরিণাম,হিকমত,রহস্য) জানে না। [ আয়াত- মোজেজা,নিদর্শন,ভার্স]
- আর যমীনে বিচরণশীল প্রতিটি প্রতিটি প্রাণী এবং দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মত এক একটি উম্মত। আমি কিতাবে (মানুষের হিদায়েত ও জান্নাতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়) কোন কিছুই বাদ দেই নি। কেননা তাদের রবের কাছে তাদের সকলকে একত্রিত করা হবে। (তখন যাতে অজুহাত দিতে না পারে)। [দাব্বাতিল আর্দ]
- আর যারা আমার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তারা তো বধির ও বোবা। তারা অন্ধকারের মধ্যেই রয়েছে । যার ইচ্ছা আল্লাহ থেকে পথভ্রষ্ট থাকুক আর যার ইচ্ছা (কুরআনে বর্ণিত) সিরাতুল মুস্তাকিমের সঠিক পথে অটল থাকুক। [১৭:৯; ২:৩৮,১৮৫]
- তুমি তাদেরকে বলঃ তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে চিন্তা করে আমাকে জানাও,তোমাদের উপর যদি আল্লাহর শাস্তি এসে পড়ে কিংবা তোমাদের উপর ক্বিয়ামাত এসে যায় তাহলে কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবে? [শাহ আলী বাবা,কেল্লা বাবা,দয়াল নবী,ওলি ‚আউলিয়া, গাউছ ‚কুতুব,দেব,দেবী,ঈসা,মুসা,ইয়া আলী ডাকনেওয়ালাদের জন্য প্রযোজ্য]
- বরং (কোন বিপদ এলে) তোমরা তো তাঁকেই ডাকতে থাকো এবং যে দুঃখ‑দুর্দশার জন্য তাঁকে ডাকো-দোয়া করো, তিনি ইচ্ছা করলে তা দূর করে দেন; আর তোমরা যাদেরকে (তাঁর) শরীক করো, তাদের কথা তখন একেবারেই ভুলে যাও। [দোয়া=ডাকা]
- আমি তোমার পূর্বে অনেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছিলাম,অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব অনটন ও দুঃখ‑কষ্ট‑হতাশা-বিপর্যয় দিয়ে পাকড়াও করেছি, যাতে তারা কাকুতি‑মিনতি-অনুনয় বিনয় করে।
- আমার শাস্তি যখন তাদের কাছে এসে পৌঁছাল তখন তারা কেন নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করলনা? বরং তাদের অন্তর আরো শক্ত‑কঠিন হয়ে গেল আর তারা যা করছিল শয়তান সেগুলোকে তাদের জন্য (খুব ভাল কাজ হিসেবে) সুশোভিত করে দিয়েছিল। [2:74, 5:13]
- তাদেরকে যে জিকির দেওয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমি তাদের উপর স্বচ্ছলতার দ্বার খুলে দিলাম। অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল তখন হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম; ফলে তখনি (যাবতীয় কল্যাণ থেকে) তারা নিরাশ হয়ে যায়। [16:112]
- অতঃপর অত্যাচারী জালিম সম্প্রদায়ের মূল শিকড় কেটে ফেলা হল। আর সকল প্রশংসা সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। [6:6, 7:129 (10:14, 11:57) ( 8:53, 13:11)]
- বল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহ সীল করে দেন তাহলে আল্লাহ ছাড়া কে এমন ইলাহ আছে যে তোমাদেরকে এগুলো ফিরিয়ে দেবে?” দেখো তো! কীভাবে আমি আমার আয়াতসমূহ বারবার বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি; তারপরও তারা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
- বল, তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছ,যদি আল্লাহর শাস্তি হঠাৎ কিংবা প্রকাশ্যে তোমাদের কাছে এসে যায়, তাহলে যালিম কওম ছাড়া অন্য কাউকে ধ্বংস করা হবে কি?’ . [11:104, 11:117]
- আমি রাসূলদেরকে শুধু এ উদ্দেশে পাঠিয়ে থাকি যে, তারা (ভালো ও মহৎ কাজের জন্য জান্নাতের) সুসংবাদদাতা এবং (জঘন্য কাজের জন্য জাহান্নামের) সতর্ককারী। অতএব যারা ঈমান আনবে ও নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবে না।
- আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যে মনে করে, শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে, কেননা তারা নাফরমানী- ফাসিকিতে লিপ্ত ছিলো। [7:147, 91:9–10]
- বল, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন‑ভান্ডারের‑খাজানা আছে। আর আমি গায়েবের ও কোন জ্ঞান রাখি না। আমি তোমাদেরকে এমন কথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। (জেনে রাখো হে পৃথিবীর মানুষেরা) আমি শুধুমাত্র সেই (কুরআনই) অনুসরণ করি যা আমার কাছে ওহী করে পাঠানো হয়’। বল, ‘ (যে চোখে দেখে না) অন্ধ আর যে চোখে দেখে তারা কি সমান হতে পারে? তোমরা কি তাহলে চিন্তা-ভাবনা করবে না?” [ওহি করে পাঠানো হয় কুরআন=৬:১৯]
- তুমি এই কুরআনের সাহায্যে সেইসব লোকদেরকে সতর্ক করো যাদের মনে এই ভয় আছে যে, তাদেরকে তাদের রব-এর কাছে সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোন অভিভাবক ‚আর না থাকবে কোন সুপারিশকারী। সুতরাং তারা যাতে সতর্কতা অবলম্বন করে।
- আর যারা তাদের রবকে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ডাকে (দোয়া করে) তাদেরকে তুমি তাড়িয়ে দিওনা। (আখিরাতে) তাদের হিসাব‑নিকাশের কোন কিছুর দায়িত্ব তোমার উপর অর্পিত নয় এবং তোমার হিসাব‑নিকাশের কোন কিছুর দায়িত্বও তাদের উপর নয়। এর পরও যদি তুমি তাদেরকে তাড়িয়ে দাও তাহলে তুমি যালিমদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
- আর এভাবেই আমি তাদের একদলকে অন্যদলের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছি যাতে তারা (তাদের সম্পর্কে) বলে, এরাই কি সেই লোক, আমাদের সকলকে রেখে আল্লাহ যাদেরকে অনুগ্রহ করার জন্য বেছে নিয়েছেন? (যে সকল কাফের এ কথা বলছে, তাদের ধারণায়) আল্লাহ কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের সম্পর্কে (অন্যদের থেকে) বেশি জানেন না?
- আর যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, তখন তুমি বল, সালামুন আলাইকুম-‘তোমাদের উপর শান্তি’। তোমাদের রব তাঁর নিজের উপর রহমত লিখে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ না জেনে অজ্ঞতাবশত যদি খারাপ কাজ করে, তারপর তওবা করে (ফিরে আসে আল্লাহর কাছে) তারপর নিজেকে সংশোধন করতে থাকে, তাহলে জেনে রাখবে, নিশ্চয়ই বড়ই ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। [4:94]
- আর এভাবেই আমি আমার আয়াতসমূহ তাফসীরসহ (বিস্তারিতভাবে) বর্ণনা করি (যাতে হেদায়েতের সরল পথ পরিস্কারহয়ে যায়)। আর যাতে অপরাধীদের পথও পরিষ্কাররূপে প্রকাশ পেয়ে যায়।
- বল, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকো, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে।বল, আমি তোমাদের খোশ‑খেয়ালের অনুসরণ করি না,(যদি করি) নিশ্চয়ই তখন আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো সে অবস্থায় আমি আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারব না।
- বল, ‘ নিশ্চয়ই আমি আমার রব-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দলিল‑প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা এতে মিথ্যারোপ করছো।তোমরা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা আমার কাছে নেই।হুকুম এর মালিকানা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে নেই।তিনিই সত্যকথা বর্ণনা করেন, আর তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।
- বল, “তোমরা যা তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা যদি আমার কাছে থাকতো তবে আমার ও তোমাদের মধ্যে যে ব্যাপার তার ফয়সালা হয়েই যেত।”আর আল্লাহ যালিমদের ব্যাপারে খুব ভাল করেই জানেন।
- আর তাঁর কাছেই রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ।তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না।স্থলে ও জলে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। তাঁর অজানায় (গাছ থেকে) একটি পাতাও ঝরে পড়ে না।যমীনের গহীন অন্ধকারে কোন শস্য দানা নেই, নেই কোন ভেজা ও শুকনো জিনিস যা সুস্পষ্ট কিতাবে (লিখিত) নেই।
- আর তিনিই রাতে তোমাদেরকে মৃত্যু দেন। আর (পূর্ববর্তী) দিনে তোমরা যা কিছু করেছো তাও তিনি জানেন। অতঃপর (পরবর্তী) দিনে তিনি আবার তোমাদেরকে জাগ্রত করেন, যাতে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ (জীবনকাল) পূর্ণ হয়।পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।অতঃপর (দুনিয়াতে) তোমরা যা কিছু করছিলে তিনি তোমাদেরকে তা জানিয়ে দেবেন। (39:42)
- আর তিনি তাঁর বান্দাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকারী ।তিনি তোমাদের জন্য হেফাজতকারীদের (ফেরেশতা) পাঠান। অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু হাজির হয় তখন আমার দূতেরা (মৃত্যুর ফেরেশতারা) তার মৃত্যু ঘটায়। তারা (তাদের কাজে) কোন ত্রুটি করে না।
- অতঃপর তাদের সকলকে তাদের প্রকৃত প্রভু ( হক্ব মাওলা) আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে। সাবধান! হুকুম প্রাদানের ক্ষমতা তাঁরই। তিনি সর্বাপেক্ষা দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
- বল, বিনীতভাবে-মিনতি করে আর চুপিসারে যখন তাঁকে ডাক তখন, কে তোমাদেরকে স্থলের ও জলের অন্ধকার (বিপদ) থেকে উদ্ধার করে? (বিপদে পড়লে বলতে থাক) এত্থেকে তুমি যদি আমাদেরকে রক্ষা কর তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
- বল, আল্লাহই তোমাদেরকে রক্ষা করেন এই বিপদ-মসিবত থেকে এবং সমস্ত দুঃখ‑কষ্ট হতে। তারপরও তোমরা শিরক কর।
- বল, তিনি তোমাদের উপর থেকে অথবা নিচ থেকে ‘আযাব পাঠাতে (সক্ষম) অথবা তোমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত করার মাধ্যমে একদলকে অন্যদলের সংঘাত সংঘর্ষ ও হিংসা হানাহানির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সক্ষম। দেখ, কীভাবে আমি আমার আয়াতসমূহ নানাভাবে বারবার বিস্তারিত বর্ণনা করছি, যাতে তারা ভালভাবে বুঝতে পারে।
- তোমার জাতি তো এই (কোরআনকে) মিথ্যে মনে করছে ।অথচ তা প্রকৃত সত্য। তুমি বলে দাও! আমি তো তোমাদের জন্য উকিল হয়ে আসিনি।
- প্রত্যেকটি সংবাদ প্রকাশের জন্যই তো নির্দিষ্ট সময় রয়েছে; শীঘ্রই তোমরা তা জানতে পারবে !
- আর যখন তুমি আমার আয়াতসমূহ নিয়ে উপহাসমূলক বাজে আলোচনায় মগ্ন লোকদেরকে দেখবে তখন তুমি তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে; যতক্ষণ না তারা (কুরআন ব্যতীত) অন্য হাদীসের আলোচনা শুরু করে। আর যদি শয়তান কখনো তোমাকে (এটা) ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর তুমি কিছুতেই জালিম লোকদের সাথে বসবে না।
- জালিমদের হিসাব (-এর অন্তর্ভুক্ত কর্মসমূহ) হতে কোন কিছুর দায় মুত্তাকীদের উপর নেই। তবে তারা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে। [2:41]
- যারা নিজেদের দ্বীন‑ধর্ম‑জীবন ব্যবস্থা নিয়ে খেল‑তামাশায় মেতে উঠেছে এবং এই দুনিয়ার জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে তুমি তাদেরকে বর্জন করে চলবে। আর এই কোরআন দিয়ে (তাদেরকে) স্মরণ করিয়ে দাও যে, (বিচারের দিনে) যে কেউ নিজের কৃতকর্মের কারণে আটকা পড়ে যেতে পারে। তখন কিন্তু আল্লাহ ছাড়া তার কোন অলি কিংবা সুপারিশকারী থাকবে না। আর যদি সে সব ধরণের মুক্তিপণও দিতে চায়, তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না।ওরা নিজেদের কর্মদোষেই আটকা পড়ে যাবে।তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত গরম পানীয় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, যেহেতু কুফরীতে লিপ্ত ছিল।
- বল, আমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুকে ডাকব? যা আমাদের কোনও উপকার কিংবা ক্ষতি কিছুই করতে পারবে না।আর আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েতের সঠিক পথ দেখানোর পর আমরা কি আবার পেছনে ঘুরে যাব?ঐ ব্যক্তির মতো হবো যাকে শয়তান মরুভূমির মধ্যে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে এবং যে দিশেহারা-লক্ষ্যহারা হয়ে ঘুরে মরছে? অথচ তার (মুমিন) সঙ্গী সাথীরা তাকে হিদায়েতের সঠিক পথের দিকে ডাক দিয়ে বলছে, তুমি আমাদের কাছে এসো।”‘ বল, আল্লাহর হিদায়াতই হচ্ছে সত্যিকারের সঠিক হিদায়াত, আর আমাকে সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণকারী-মুসলিম হওয়ার জন্যই আদেশ দেয়া হয়েছে।
- আর (এই নির্দেশও দেয়া হয়েছে) সংযোগ প্রতিষ্ঠা করতে ও সতর্কতা অবলম্বন করতে। আর তিনি হলেন (সেই সত্ত্বা) যাঁর কাছেই তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।
- তিনিই আসমানসমূহ ও যমীন সত্যিকারভাবে সৃষ্টি করেছেন (খেলা-তামাশার জন্য নয়)।আর যখনই তিনি বলবেন, (কিয়ামাত) ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে, তাঁর কথাই প্রকৃত সত্য। যে দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, সেদিন একমাত্র তাঁরই হবে বাদশাহী ও রাজত্ব।গায়েব ও প্রকাশ্য সব কিছু কিছুই জানেন। তিনি প্রজ্ঞাময়,সবকিছুর খবর রাখেন।
- যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বলেছিল,(বাবা!) আপনি কি মূর্তিগুলোকে বিধাতারুপে গ্রহণ করেছেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার জাতিকে পরিষ্কার পথভ্রষ্টতার মধ্যে নিমজ্জিত দেখেছি ।’
- আর এমনভাবেই আমি ইবরাহীমকে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব দেখিযেছিলাম যেন সে শক্ত‑মজবুত‑দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
- একবার রাতের অন্ধকার নেমে এলে সে একটি (উজ্জ্বল) তারকা দেখতে পায়। তখন সে বলে, “এই তো আমার রব।”কিন্তু যখন সেটি ডুবে যায় তখন বলল, “যারা ডুবে যায় আমি তাদেরকে (রব মনে করে) ভালবাসতে পারি না।”
- তারপর যখন সে চাঁদকে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখল তখন বলল, এটাই আমার রব! কিন্তু পরে যখন তাও ডুবে গেলো তখন সে বললো, “আমার (সত্যিকারের) রব যদি আমাকে হিদায়েতের সঠিক পথ না দেখান তাহলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্ট লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়েই (বেঁচে) থাকব।”
- এরপর যখন সে সূর্যকে অতি উজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখল তখন বলল, এটাই আমার রব,(কারন) এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়। কিন্তু যখন তাও অস্তমিতহয়ে ডুবে গেলো তখন সে বলল, হে আমার জাতির লোকেরা! তোমাদের শিরকের সাথে আমার আদৌ কোন সম্পর্ক নাই, আমি মুক্ত।
- আমি আমার (জীবনের) অভীষ্ঠ লক্ষ্য ও মনোযোগ একনিষ্ঠভাবে সেই মহান সত্তার দিকে ফিরাচ্ছি যিনি যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।
- তার জাতির লোকেরা তার সাথে তর্ক‑বিতর্ক‑ঝগড়া করতে থাকলে সে তাদেরকে বললঃ তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করছো? অথচ তিনি আমাকে হিদায়াতের- সঠিক পথ দেখিয়েছেন।তোমরা আল্লাহর সাথে যা কিছু শরীক করছো, আমি তাদের মোটেই ভয় করি না,অবশ্য আল্লাহ যদি কিছু ইচ্ছে করেন (তবে সে কথা আলাদা)। প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে আমার রবের জ্ঞান খুবই ব্যাপক, তবে কি এরপরও তোমরা জিকির গ্রহণ করবেনা?
- তাহলে কেন আমি সেসবে ভয় করতে যাবো? যাকিছু তোমরা শরিক করছ। অথচ তোমারা ভয় করছ না যে, তোমারা আল্লাহ্র সাথে শরীক করছ এমন কিছু,যার পক্ষে তিনি তোমাদের কাছে কোন দলির‑প্রমাণ নাযিল করেন নি। যদি তোমাদের জানা থাকে তাহলে বলো তো-এখন দুই দলের মধ্যে কারা সত্যিকারের প্রশান্তি ও নিরাপত্তা লাভের বেশি যোগ্য । [3:150–151, 29:41, 33:39] [আমান:-প্রশান্তি ৩:১৫৪; ৪৪:৫৫; ২৮:৫৭]
- যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে (অন্যের বা নিজের ওপর) জুলুম করে কলুষিত করে নি, তাদের জন্যই শান্তি ও নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।
- আর এটাই হচ্ছে আমার যুক্তি –প্রমাণ যা আমি ইবরাহীমকে তার জাতির মোকাবেলায় (প্রয়োগের জন্য) দিয়েছিলাম। আমি যাকে চাই তার মর্যাদা উঁচু করি। নিঃসন্দেহে তোমার রাব্ব প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ।
- আর আমি তাকে (ইবরাহীমকে) ইসহাক ও ইয়াকুবকে দান করেছিলাম।এদের প্রত্যেককে হিদায়াত দিয়েছিলাম। এর আগে নূহকেও হিদায়াত দিয়েছিলাম। আর তার বংশধরদের মধ্য থেকে দাউদ, সোলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকেও (হিদায়াত দিয়েছিলাম)। আর আমি এভাবেই সৎকর্মশীল‑মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।
- আর যাকারিয়্যা , ইয়াহইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকেও (হিদায়াত দিয়েছিলাম)। এরা প্রত্যেকেই ছিলেন সংশোধিত/পরিমার্জিত/পরিশোধিতদের অন্তর্ভুক্ত।
- আর ইসমাঈল,আল ইয়াসা‘আ, ইউনুস ও লূতকেও (হিদায়াত দিয়েছিলাম); (এদের) প্রত্যেককে আমি বিশ্ববাসীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম।
- এদের পূর্বপুরুষ, বংশধর ও ভাইদের মধ্য থেকে আরো অনেককে (শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম)।তাদেরকে আমি বাছাই করে মনোনীত করেছিলাম এবং সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে হিদায়েত দিয়েছিলাম।
- এটাই আল্লাহর হিদায়াত; তিনি তাঁর বান্দার মধ্যে যাকে ইচ্ছে হিদায়াত করেন। কিন্তু যদি তারা শির্ক করতো, তবে তারা যা আমল করবে তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে।
- এরা ছিল সেই লোক, যাদেরকে আমি কিতাব, হুকুমাত ও নবুওয়াত দান করেছিলাম।এখন যদি তারা (অর্থাৎ বিধর্মীরা) এগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে আমি এগুলোর ভার এমন সম্প্রদায়ের কাছে দেবো যারা (অর্থাৎ মু’মিনরা) এগুলোর অস্বীকারকারী হবে না। [29:27; 45:16; 57:26; 3:79; 3:68]
- (উপরে যাদের কথা উল্লেখ করা হল) তারা ছিলো এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেছিলেন। সুতরাং তুমিও তাদের সঠিক হিদায়াতের পথের একতেদাহ (অনুসরণ) কর। বল, “আমি তোমাদের কাছে এর জন্য (অর্থাৎ কোরআনের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য) কোন পারিশ্রমিক‑পুরস্কার বা প্রতিদান চাই না। এটাতো সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য জিকির।
- মানুষেরা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না, যতখানি মর্যাদা তাঁকে দেওয়া দরকার। কেননা তারা বলে, আল্লাহ কোনো মানুষের উপর কোনো কিছুই নাজিল করেননি। বল, মানব জাতির জন্য নুর ও হিদায়েত স্বরূপ যে কিতাব মূসা নিয়ে এসেছিলো তাহলে তা কে নাযিল করেছিলো? যা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠা আকারে রেখে দিয়েছিলে, যা(-র মধ্য হতে কিছু) তোমরা প্রকাশ করতে এবং যার অনেকাংশ তোমরা গোপন করতে এবং (যার মাধ্যমে) তোমাদেরকে এমন সব বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, যা তোমরা জানতে না এবং তোমাদের বাপ‑দাদারাও জানতো না। (হে নবী!) তুমি নিজেই (এ প্রশ্নের উত্তরে) বলে দাও, সে কিতাব আল্লাহই (নাযিল করেছিলেন)। তারপর তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা তাদের বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত থেকে আনন্দ‑ফূর্তি করতে থাকুক।
- এই (আল‑কোরআন) একটি বরকতময় কিতাব যা আমি নাযিল করেছি; এটি তার আগের সব কিতাবের সত্যায়নকারী । আর (আমি এই কিতাব নাযিল করেছি) যাতে তুমি উম্মুল কুরা- মূল জনপদ (মক্কা) ও তার আশপাশের মানুষদেরকে সতর্ক করতে পারো। যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে তারা এ কিতাবের প্রতিও ঈমান আনে এবং তারা তাদের যোগাযোগ ও সংযোগ রক্ষা করে চলে। [সালাত=সংযোগ/সংযুক্ত/যুক্ত/মিলন/যোগ/যোগাযোগ/কানেকশন/মিলিত/সম্পৃক্ত/সম্পর্ক/লিংক/নেটওয়ার্ক/সংস্পর্শ/মহামিলন 2:27; 2:157; 9:99,103; 11:87; 13:22;33:43.56; 28:51; 28:35; 13:21,25; 11:70; 4:90;70:22,23,34; 74:43; 75:31; 98:5; 107:4,5]
- সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা বলে, আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে, অথচ তার প্রতি কোনও ওহী নাযিল করা হয়নি এবং যে বলে, “আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মত আমিও শিগগিরই কিছু একটা নাযিল করব”। হায়! তুমি যদি ঐ যালিমদেরকে দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে,(তবে বড় ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে) ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, তোমাদের জানগুলোকে বের করে দাও, আজ তোমাদেরকে দূর্বিসহ-যন্ত্রণাকর শাস্তি দেয়া হবে যেহেতু তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলতে যা প্রকৃত সত্য নয় আর তাঁর আয়াতসমূহের ব্যাপারে ঔদ্ধত্য‑অহংকার প্রদর্শন করতে।
- (ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা তো আমার কাছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় একা এসেছো, ঠিক যেমনটি আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। তোমাদেরকে যা-কিছু দান করেছিলাম তা তোমরা (দুনিয়াতে) ফেলে রেখে এসেছ? আর আমিতো তোমাদের সাথে তোমাদের সেই সুপারিশকারী (পীর,অলি,গাউছ,কুতুব,নবী,রাসুল) দেরকেও দেখছিনা যাদের সম্বন্ধে তোমরা দাবী করতে যে,নিশ্চয়ই তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। তোমাদের মধ্যেকার (পীর‑মুরিদ/আশেকে-রাসুল/ইয়া উম্মাতি) সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেছে? তোমরা (মানবরচিত কিতাবের মাধ্যমে) যা যা দাবি করতে তা সব তোমাদের থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে?
- নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ — তিনি শস্য‑বীজ ও ফলের আঁটি অংকুরিত করেন। তিনি মৃত থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে মৃতকে। আল্লাহ এ রকমই, সুতরাং (হেদায়েতের সৎপথ ছেড়ে) তোমরা কোথায় ফিরে যাবে?
- আল্লাহই তো ভোরের আলো ফুটিয়ে তোলেন।তিনি রাতকে শান্তি ও আরামের জন্য এবং সূর্য ও চন্দ্র নিযুক্ত করেছেন গণনার জন্য। এটা মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর তাকদীর। [10:5]
- আর তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র‑তারকারাজি নিযুক্ত করেছেন; যাতে তোমরা সেগুলোর সাহায্যে জলে স্থলে অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও। নিঃসন্দেহে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমার আয়াতসমূহকে তাফসিরসহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
- আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এক নফস থেকে। তারপর (প্রত্যেকের জন্য) রয়েছে একটি স্থান অধিক দিন থাকার জন্য এবং একটি স্থান অল্প দিন থাকার জন্য। নিঃসন্দেহে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমার আয়াতসমূহকে তাফসিরসহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
- আর তিনিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন,তারপর এর সাহায্যে আমি সবরকমের গাছপালা উৎপন্ন করি; অতঃপর তা থেকে আমি সবুজ শাখা বের করি। তা থেকে ঘন থোকা-থোকা শস্যদানা উৎপন্ন করি। খেজুরগাছের শিষ থেকে বের করি ঝুলন্ত থোকা।আঙ্গুরের বাগান, জলপাই ও ডালিম উৎপন্ন করি। এগুলোর মধ্যে কোন কোনটি অন্য কোন কোনটির মত সাদৃশ্যময়; আবার কোন কোনটি অন্য যে-কোনটি থেকে ভিন্ন। গাছে যখন ফল ধরে তখন এর ফল ও তার পেকে ওঠার দিকে গভীরভাবে লক্ষ্য কর। এসবের ভিতরে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন ও মোজেজা রয়েছে।
- আর এই (অজ্ঞ) লোকেরা জ্বিনদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছে,অথচ তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অজ্ঞতার কারণে তারা আল্লাহর জন্য ছেলেমেয়েও সাব্যস্ত করেছে। তিনি –মহিমান্বিত! এবং তারা যা বলে তিনি তার উর্ধ্বে।
- তিনি আসমান ও যমীনের আদিস্রষ্টা। তাঁর সন্তান হবে কি করে? তাঁর তো কোন সঙ্গীই নেই। আর তিনিই তো সবকিছু সৃষ্টি করেছেন আর প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে তিনি পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন।
- তিনিই তো আল্লাহ্ , তোমাদের রব।তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। আর তিনিই সবকিছুর উপর তত্ত্বাবধায়ক‑উকিল।
- কোন চোখের দৃষ্টি তাঁকে দেখতে পারেনা, অথচ তিনি সকল কিছুই দেখতে পান। আর তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছুর খবর রাখেন।
- তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে চাক্ষুষ প্রমাণাদি (কুরআন) এসে গেছে।এখন যে (তা) দেখবে সে নিজেই লাভবান হবে। আর যে অন্ধ সাজবে (দেখবে না) তবে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর আমিতো তোমাদের পাহারাদার‑রক্ষী নই।
- আর এভাবেই আমি নানাভাবে আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি। পরিশেষে তারা বলে, তুমি (কারও কাছে) শিক্ষা-দীক্ষা-দারছ লাভ করেছ। কিন্তু আমি তো সুস্পষ্টভাবে বয়ান করি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে।
- তোমার কাছে তোমার রবের পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে যে (কুরআন) পাঠানো হয় তুমি তার অনুসরণ কর। তিনি ছাড়া কোন বিধাতা-বিধানদাতা-ইলাহ নেই। আর মুশরিকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। [৬:১৯]
- আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে তারা শির্ক করত না। (আসল শিক্ষা তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এখন তারা মানুক বা না মানুক) আমি তোমাকে তাদের পাহারাদার‑রক্ষী নিযুক্ত করি নি। আর তুমি তাদের জন্য উকীলও নও। [2:256; 18:29; 10:99 ]
- (ওহে মুমিনগণ!) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, তাহলে তারা অজ্ঞতাবশত অন্যায়ভাবে আল্লাহকেও গালি দেবে।(এ দুনিয়ায় তো) এভাবেই আমি প্রত্যেক উম্মতের দৃষ্টিতে তাদের আমলকে সুশোভিত‑চাকচিক্যময় করে দিয়েছি। (ফলে যার যার আমল তার কাছে খুব ভাল মনে হয়।) শেষ পর্যন্ত তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে, তখন তারা কি কি আমল করেছিল তা তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন।
- তারা আল্লাহর নামে অতি জোরালো কসম খেয়ে বলে, তাদের কাছে যদি সত্যই কোন নিদর্শন (অর্থাৎ তাদের কাঙ্খিত মুজিযা) আসে, তবে তারা অবশ্যই তাতে ঈমান আনবে।বল, ‘সমস্ত নিদর্শন তো কেবল আল্লাহরই এখতিয়ারভুক্ত। এবং (হে মুসলিমগণ!) নিদর্শন আসলেও যে তারা ঈমান আনবে না, এ কথা কীভাবে তোমাদেরকে বুঝানো যাবে?
- আর যেহেতু তারা প্রথমবার (এ কুরআনের প্রতি) ঈমান আনেনি, সেহেতু (তার প্রতিফলস্বরূপ) তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দিব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যেই উদভ্রান্তের মত ঘুরপাক খেতে ছেড়ে দেবো।
- আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতা নাযিল করতাম এবং মৃত ব্যক্তিরা তাদের সাথে কথাও বলত এবং (তাদের ফরমায়েশী) সকল জিনিস তাদের চোখের সামনে হাজির করে দিতাম, তবুও তারা ঈমান আনত না। অবশ্য আল্লাহ যদি চাইতেন (যে, তাদেরকে জোরপূর্বক ঈমান আনতে বাধ্য করবেন, তবে সেটা ছিল ভিন্ন কথা, কিন্তু এরূপ ঈমান কাম্য ও ধর্তব্য নয়)। মূলতঃ তাদের অধিকাংশই জাহেল।
- আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু হিসেবে নিযুক্ত করেছি মানবজাতি ও জ্বীনজাতির মধ্য থেকে শয়তানদেরকে। ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অপরকে মাধুরীমিশ্রিত‑আকর্ষণীয়-মনোমুগ্ধকর-চমৎকার কথার ওহি করে। তোমার রব যদি চাইতেন, তবে তারা তা করতে পারতো না। সুতরাং তুমি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলিকে বর্জন করে চলবে। [শর্টকাটে ও বিনা হিসেবে জান্নাতে যাওয়ার তথ্য সমৃদ্ধ মানব রচিত কিতাব এসব ওহি প্রমানকের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ]
- তার দিকে (অর্থাৎ মনোমুগ্ধকর প্রতারণার দিকে) সে সব লোকের অন্তর আকৃষ্ট হতে দাও যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে না, আর তাতেই তাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে দাও আর যে পাপকাজ তারা করতে চায় তা তাদেরকে করতে দাও।
- “তবে কি আমি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কাউকে হাকিম তথা বিচারক হিসেবে খুঁজবো? অথচ তিনিই তোমাদের কাছে তাফসীরসহ বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন।” আর আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানত যে, তা তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্যতা সহকারে-যথাযথভাবে নাযিলকৃত। সুতরাং তুমি কখনো সংশয়বাদী-সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
- আর তোমার রবের (কালিমা তথা) বাণী, সত্যতা ও ন্যায়পরায়ণতা তথা ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ । কেউ তাঁর বাণী পরিবর্তন করতে পারে না। তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। [6:34, 6:115, 10:64, 17:77, 18:27, 33:38, 33:62, 40:85, 48:23]
- তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর রাস্তা (কুরআন) থেকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে । তারা তো শুধু আন্দাজে-ধারনার অনুসরণ করে চলে। আর তারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।
- নিঃসন্দেহে তোমার রব্ব খুব ভাল করেই জানেন কে তাঁর (কুরআনের) রাস্তা থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। আর তাদেরকেও তিনি খুব ভালো করেই জানেন যারা হিদায়েতের সঠিক পথে রয়েছে।
- সুতরাং যে জিনিসে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়েছে, সে সব তোমরা খাবে। যদি তোমরা তাঁর আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনে থাকো।
- তোমাদের কী হয়েছে যে, যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তা তোমরা খাবে না? অথচ তিনি তোমাদের জন্য তাপসির করে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে। অবশ্য নিরুপায় হয়ে তোমরা কিছু খেতে বাধ্য হলে তার কথা আলাদা।আর অনেকে তো না জেনে অজ্ঞতাবশতঃ মানুষকে পথভ্রষ্ট করে।নিঃসন্দেহে তোমার রাব্ব সীমা লংঘনকারীদের সম্পর্কে ভালভাবেই ওয়াকিফহাল।
- তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন (সবরকম) পাপ ছেড়ে দাও।নিশ্চয়ই যারা পাপ কামাই করে তারা শিগগিরই তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে।
- যে জিনিসে আল্লাহর নাম জিকির করা হয়নি,তা তোমরা মোটেই খাবেনা। কারণ নিশ্চয়ই তা পাপিষ্ঠ‑ফাসিক লোকদের কাজ। শয়তানদের দল অবশ্য তাদের বন্ধুদেরকে ওহীর মাধ্যমে উসকানী দিচ্ছে, যেন তোমাদের সাথে ঝগড়া বাধায়। তোমরা যদি তাদের কথা মেনে চলো, তাহলে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে।
- যে ব্যক্তি মৃত ছিল, তারপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তার জন্য নিয়োগ করেছি একটি নুর, যার সাহায্যে সে মানুষের মধ্যে চলতে পারে,সে কি ঐ ব্যক্তির মত হতে পারে, যে ঘোর অন্ধকারের আছে এবং সেখান থেকে আর বের হতে পারছে না ? এভাবেই কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের নিজেদের আমলগুলো মনোমুগ্ধকর‑সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
- আর এমনিভাবেই আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু নেতা নিয়োগ করেছি যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে। তবে (প্রকৃতপক্ষে) তাদের চক্রান্তের প্রতিফল তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই যায়। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারেনা।
- তাদের কাছে যখন কোনো আয়াত এসে পৌঁছায়, তখন তারা বলে, আল্লাহর রাসূলদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল, আমাদের অনুরূপ জিনিস না দেয়া পর্যন্ত আমরা কখনোই ঈমান আনবনা। (নির্বোধেরা এ আবদার করলেও) আল্লাহ খুব ভালভাবেই জানেন তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব কোথায় দিতে হবে, অপরাধীরা শীঘ্রই তাদের চক্রান্তের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহর পক্ষ হতে লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। [৬১:৬,৭; ৭২;২৪-২৮; ২:২৪৬,২৪৭]
- অতঃপর যার ইচ্ছাতে আল্লাহ রয়েছে আল্লাহ তাকে হিদায়েতের পথে পরিচালিত করেন। আর ইসলামের জন্য তার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দেন। কিন্তু যার ইচ্ছাতে বিপথগামীতা থাকা রয়েছে, তার হৃদয়কে সঙ্কীর্ণ ও কঠিন করে দেন। , তার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এভাবেই আল্লাহ শাস্তি দেন তাদেরকে,যারা ঈমান আনে না।
- অথচ (কুরআন) হচ্ছে তোমার রবের সহজ সরল পথ । আমি তো তাফসিরসহ বিস্তারিতভাবে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য,যারা জিকির গ্রহণ করে।
- তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে শান্তির আবাস এবং তারা যে আমল করত, তার কারণে তিনি তাদের অলি (হবেন)।
- আর যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, সেদিন (জ্বিনদেরকে) বলবেনঃ হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা তো বিপুল সংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছ। এবং মানুষের মধ্য থেকে তাদের আউলিয়া ও বন্ধুরা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা একে অপরের দ্বারা উপকৃত হয়েছিলাম (ঠিকই),তবে হায়! আপনি আমাদের জন্য যে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেছেন তা এসে গেছে! তখন (কিয়ামাত দিবসে) আল্লাহ (সমস্ত কাফির জিন ও মানুষকে) বলবেনঃ জাহান্নামই হচ্ছে তোমাদের বাসস্থান, সেখানে তোমরা চিরকাল বাস করবে, তবে আল্লাহ (অন্য) কিছু চাইলে সে কথা ভিন্ন। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।”
- এভাবেই আমি যালিমদেরকে পরস্পরের বন্ধু বানিয়ে দেব সেই উপার্জনের বিনিময়ে যা তারা (দুনিয়াতে পরস্পরে এক সঙ্গে মিলে) করেছিল।
- হে জিন ও মানব জাতি! তোমাদের মধ্য থেকে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি যারা আমার আয়াতগুলো পড়ে শোনাত এবং তোমাদেরকে এইদিনের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করত?” তারা বলবে, “আমরা আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিচ্ছি।” আসলে, দুনিয়ার জীবন তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছিলো।(তাই) তারা তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দেবে যে, তারা কাফের ছিল।
- এটা এ কারণে যে, তোমাদের রব কোনো জনপদকে জুলুমবাজির কারণে ধ্বংস করেন না, তার অধিবাসীদের (পরিণতি সম্পর্কে) গাফিল থাকা অবস্থায়।
- প্রত্যেককে তার আমল অনুযায়ী মর্যাদা দেয়া হবে আর তারা যা করে সে ব্যাপারে তোমার রব মোটেই গাফেল নন। [2:8]
- আর তোমার রব অভাবমুক্ত , অত্যন্ত দয়াশীল।আর তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়ে তোমাদের পরে যাদেরকে ইচ্ছে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যেমন তিনি তোমাদেরকে অন্য কওমের বংশধরদের থেকে সৃষ্টি করেছেন। [22:5]
- যা ঘটবে বলে তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা ঘটবেই, তা ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষমতা তোমাদের নেই।
- বল, ‘হে আমার কওম, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় ‘আমল করতে থাক, আমিও ‘আমল করছি, অতঃপর শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে যে, কার পরিণাম কল্যাণকর। নিঃসন্দেহে যালিমরা কখনও সফলকাম হয় না।
- আর আল্লাহ যে সব শস্য ও পশু সৃষ্টি করেছেন,সেখান থেকে তারা আল্লাহর জন্য একটি অংশ নির্ধারণ করে। এরপর তাদের ধারণা অনুসারে তারা বলে, ‘এটি আল্লাহর জন্য এবং এটি আমাদের শরীকদের জন্য।’অতঃপর যা তাদের শরীকদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না আর যা আল্লাহর জন্য তা তাদের শরীকদের নিকট পৌঁছে যায়।তারা যা ফয়সালা করে তা কতই না নিকৃষ্ট !
- আর এভাবে তাদের শরীকরা বহু মুশরিকের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের (ধর্ম যুদ্ধে) বলি দেওয়ার মতো কাজটাকে আকর্ষনীয়-সুন্দর করে সাজিয়ে দেখাচ্ছে — যাতে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। এবং তাদের নিকট তাদের দীনকে সংশয়পূর্ণ করতে পারে। আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন তবে তারা তা করতে পারত না, কাজেই তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা তাদের মিথ্যে নিয়েই মগ্ন থাকুক।
- তারা তাদের ধারণা অনুসারে বলে, এই এই পশু ও ফসল সুরক্ষিত। কেউই তা খেতে পারবেনা, তবে যাদেরকে আমরা অনুমতি দিব (তারাই খেতে পারবে), আর (তারা বলে) এই বিশেষ পশুগুলির উপর আরোহণ করা ও ভার বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিছু পশুতে তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করেনা।তাদের এসব মনগড়া মিথ্যা রচনার জন্য তিনি শিগগিরই তাদেরকে প্রতিফল দেবেন।
- তারা আরো বলে, ‘এসব পশুর পেটে যা আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং এটা আমাদের স্ত্রীদের জন্য হারাম। আর যদি তা মৃত হয়, তবে সবাই এতে অংশীদার।’তিনি তাদের (এসব মনগড়া) বর্ণনার প্রতিদান জন্য শিঘ্রই তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাবান, মহাজ্ঞানী।
- অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা না জেনে তাদের সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশত হত্যা করেছে আর আল্লাহর নামে মিথ্যে কথা বানিয়ে আল্লাহর দেয়া রিজিককে হারাম করে নিয়েছে। নিঃসন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না।
- আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন জান্নাতসমূহ যার কিছু আরশে তোলা হয় আর কিছু আরশে তোলা হয় না এবং খেজুর গাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, যায়তুন ও আনার যার কিছু দেখতে একরকম‑মুতাশাবিহা, আর কিছু ভিন্ন রকম। এসব গাছপালায় যখন ফল হয় তখন তোমরা তার ফল খাও; তবে ফসল কাটার দিনে হক দিয়ে দাও। আর অপচয় করবে না; নিঃসন্দেহে তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না। [মুতাশাবিহা=একরকম/সদৃশ্য ] [2:3, 2:219, 9:60, 11:64, 55:10]
- কিছু জীবজন্তু তিনি সৃষ্টি করেছেন ভার বহনে সক্ষম করে আর কিছু সৃষ্টি করেছেন মাটির সাথে মিশে থাকার মতো করে। আল্লাহ রিযিকরূপে তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা থেকে খাও তবে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না; নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্র।
- এসব জীবজন্তু আট প্রকার।দুটি হিংস্র শ্রেণীর দুটি নম্র শ্রেণীর। বলো; আল্লাহ মর্দ শ্রেনীগুলোকেও হারাম করেন নি।; মাদী শ্রেণীগুলোকেও হারাম করেন নি। অথবা মাদী শ্রেণীগুলোর গর্ভে যা আছে তাও হারাম করেন নি। তোমরা জ্ঞান খাটিয়ে আমাকে জানাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
- আর উটের মধ্যে দু‘টি শ্রেণী এবং গরুর মধ্যেও দু‘টি শ্রেণী রয়েছে (মর্দ ও মাদী)। বলো মর্দ ‚মাদী কোন দুটোকে হারাম করা হয়েছে? অথবা যে বাচ্চা এখনও পেটের মধ্যে রয়েছে? নাকি আল্লাহ যখন এরকম নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন তোমরা উপস্থিত ছিলে? যে ব্যক্তি মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন রকম ‘ইলম ছাড়াই আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যে রচনা করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিঃসন্দেহে আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
- বল, আমার প্রতি যে ওহী নাযিল করা হয়েছে, তাতে, মানব জাতি যা খায় তার মধ্যে কিছুই আমি হারাম খুঁজে পাই না; মৃত, প্রবাহমান রক্ত ও শূকরের মাংস ছাড়া। নিঃসন্দেহে তা কলুষতাপূর্ণ ও ফাসেকি আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে সন্তুষ্ট করা। তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা কিংবা সীমালংঘন ব্যতীত শুধুমাত্র নিরুপায় হয়ে খেতে বাধ্য হয় তাহলে নিশ্চয়ই তোমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
- আর ইহূদীদের উপর আমি নখরবিশিষ্ট সব ধরনের জীবজন্তু হারাম করেছিলাম (শুধু তাইনা নখরবিহীন) গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের জন্য হারাম করেছিলাম- তবে যা এগুলোর পিঠে ও পেটে থাকে, কিংবা যা কোন হাড়ের সাথে লেগে থাকে, তা ছাড়া। তাদের অবাধ্যতার জন্য তাদেরকে এ প্রতিফল (শাস্তি হিসেবে) দিয়েছিলাম। আর নিঃসন্দেহে আমি সত্যবাদী।
- তারপরও তারা যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে তুমি বলে দাও, তোমাদের রবতো সুপ্রশস্ত ও ব্যাপক রহমতের অধিকারী। (কিন্তু তাওবা না করে অপরাধীই থেকে গেলে) তাঁর শাস্তি অপরাধী সম্প্রদায় থেকে ফিরানো হবে না।
- যারা (বিধানদাতার) সাথে শিরক্ করছে, তারা শীঘ্রই বলবে, আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে আর আমরা শিরক্ করতাম না। আমাদের বাপ‑দাদারাও করতো না। আর কোনও জিনিসকে আমরা (মানব রচিত কিতাবের ফতোয়ার মাধ্যমে) হারাম করতাম না। এমনভাবেই তো ওদের পূর্বে যারা ছিল, তারাও মিথ্যা বলেছে আমার শাস্তির স্বাদ না পাওয়া পর্যন্ত। তুমি বলে দাও, “তোমাদের কাছে কি কোন জ্ঞান (ইলম) আছে? থাকলে আমাদের সামনে তা পেশ করতে পার? তোমরা তো শুধু মিথ্যা রচনা করে যাচ্ছ।তোমরা ধারণা ও অনুমান ছাড়া আর কিছুরই অনুসরণ করছোনা, (লাহুয়াল হাদীস দিয়ে) শুধু মনগড়া কথা বল, এছাড়া আর কি ?
- বল, পরিপূর্ণ ও চূড়ান্ত যুক্তিপ্রমাণ তো কেবল আল্লাহর কাছেই আছে। তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সবাইকে (জোরপূর্বক) হিদায়াতের পথে নিয়ে আসতেন। [কিন্তু এটা তার সুন্নত নয়= [২:২৫৬; ১০:৯৯; ১৮:২৯]
- বল, তোমরা তোমাদের সেই সকল সাক্ষীকে উপস্থিত কর, যারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ এসব হারাম করেছেন। যদি তারা সাক্ষ্য দেয়ও, তবুও তুমি তাদের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়ো না। আর তুমি সেই সকল লোকের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা আমার আয়াতসমূহকে (মানব রচিত কিতাবের ইজমা কিয়াস মাছআলার মাধ্যমে) প্রত্যাখ্যান করেছে। (তারা তো আসলে) আখিরাতের উপর ঈমান রাখে না এবং (উলামা,মোল্লা,মুফতিদের) তাদের রব-এর সমকক্ষ দাঁড় করায়।
- বল, ‘এসো, তোমাদের রব তোমাদের জন্য যা যা হারাম করেছেন তা আমি পাঠ করে শোনাই, তা এই যে, তাঁর (সত্তা বা বিধানের) সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, দরিদ্রতার ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমিই তোমাদেরকে আর তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি, প্রকাশ্য বা গোপন কোন প্রকার নোংরা-অশ্লীল কাজের ধারে কাছেও যাবে না, আল্লাহ্ যা হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ‑ন্যায় সঙ্গত কারণ ছাড়া তোমরা তা হত্যা করবে না । এ সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে ওছিয়ত করছেন যাতে তোমরা চিন্তা- ভাবনা করে কাজ কর।
- ইয়াতীমরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্য ছাড়া তোমরা তাদের সম্পত্তির ধারে-কাছেও যাবে না। পরিমাপ ও ওজন ন্যায়সঙ্গত‑ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমি কোন ব্যক্তির উপর সাধ্যের অতিরিক্ত ভার (দায়িত্ব/কর্তব্য) চাপিয়ে দেই না। আর যখন কথা বলবে তখন স্বজনদের বিরুদ্ধে হলেও ইনসাফপূর্ণ‑ন্যায্য কথা বলবে। আর আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করবে। এমনিভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে ওছিয়াত করছেন যেন তোমরা জিকির গ্রহণ কর। [১৭;২২-৩৯] হিকমাত ও সিরাতুল মুস্তাকিম]
- নিঃসন্দেহে এটাই আমার (নাজিলকৃত কুরআনে) সিরাতুল মুস্তাকিমের সরল-সঠিক পথ, কাজেই তোমরা তার অনুসরণ কর, আর নানান পথের বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে অল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এভাবে তিনি তোমাদেরকে ওছিয়াত করছেন যাতে তোমরা সতর্ক হও।
- অতঃপর মূসাকে আমি এমন কিতাব দিয়েছিলাম, যা ছিল সৎকর্মশীলদের জন্য পূর্ণাঙ্গ কিতাব। আর তাতে ছিল প্রতিটি বিষয়ের তাফসিরসহ‑বিস্তারিত ব্যাখ্যা, হিদায়াত ও রহমত। যাতে তারা (আখিরাতে) তাদের রবের সাক্ষাত সম্পর্কে বিশ্বাসী হয়।
- এটি (আল‑কোরআন) আমার নাযিলকৃত একটি বরকতময় কিতাব। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ কর এবং সাবধানতা অবলম্বন কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পারো।
- যাতে তোমরা বলতে না পারো যে, কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বের দু’দল (ইয়াহূদী ও খ্রীস্টান) দের প্রতিই নাযিল হয়েছিল। আর আমরা জানতাম না (ওদের দারছ) ওরা কী পড়ত আর পড়াত।” [2:79, 2:101, 3:78, 5:48]
- অথবা তোমরা যেন এ কথাও বলতে না পার যে, “যদি আমাদের কাছে কিতাব নাযিল করা হত তাহলে আমরা তাদের চেয়ে বেশি হিদায়াত লাভ করতাম।” এখন তো তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ (আল‑কোরআন), হেদায়েত ও রহমত এসে গেছে।এরপর যে ব্যক্তি আল্লাহর (এ সব) আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করবে (কুরআন থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? যারা আমার আয়াতসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শিঘ্রই আমি তাদেরকে এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য নিকৃষ্টতম শাস্তি দেব।
- তারা কি এই অপেক্ষায় আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতারা আসবে অথবা তোমার প্রতিপালক (স্বয়ং) আসবেন কিংবা তোমার রবের কিছু নিদর্শন আসবে (তখন তারা ঈমান আনবে)? আসলে যেদিন তোমার রবের কোন নিদর্শন আসবে সেদিন এমন কারো ঈমান কোন কাজে আসবে না যে আগে ঈমান আনেনি কিংবা ঈমান অনুসারে কোন সৎকাজ করেনি। বল, তোমরা অপেক্ষা কর (তাহলে দেখতে পাবে তোমাদের কুফরীর পরিণাম কী দাঁড়ায়), আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম (আমাদের পুরস্কার প্রাপ্তি ও তোমাদের পরিণতি দেখার জন্য)। [12:108, 13:17]
- নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনকে খণ্ড‑বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই;কোন দায়িত্বও নেই। তাদের বিষয় পুরোপুরি আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। (সময় হলেই) তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।
- যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করবে সে তার দশ গুণ প্রতিদান‑পুরস্কার পাবে। আর যে কেউ পাপ ও অসৎ কাজ করবে তাকে শুধু ততটুকুই প্রতিফল দেয়া হবে যতটুকু সে করেছে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
- বল, নিঃসন্দেহে আমার রব আমাকে সরল সঠিক সিরাতুল মুস্তাকিমের পথের হিদায়াত দিয়েছেন। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, ইবরাহীমের মিল্লাত (আদর্শ), তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
- বল, আমার সংযোগ, আমার তরিকত, আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)। [নুছুকি=নিয়ম নীতি-তরিকা ২:১২৮,১৯৬,২০০; ২২:৩৪,৬৭; ৬:১৬২]
- তাঁর কোন শরীক নাই। আমাকে এই আদেশই দেওয়া হয়েছে আর আমিই সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণকারী-মুসলিম ।
- বল, ‘আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন রব খুঁজব? অথচ তিনিই সব কিছুর রব। ’প্রত্যেকে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো বোঝা বহন করবে না। পরিশেষে তোমাদের সবাইকে রবের কাছেই ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যে সকল বিষয়ে তোমরা মতভেদে লিপ্ত ছিলে (সে সব বিষয়ে প্রকৃত সত্য কোনটি)। [39:7, 53:38–39, 65:7]
- তিনিই তোমাদেরকে যমিনে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত খলিফা নিযুক্ত করেছেন, মর্যাদায় তোমাদের কতককে কতকের উপরে স্থান দিয়েছেন, যাতে তিনি আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন, নিঃসন্দেহে তোমার রব দ্রুত শাস্তি প্রদানকারী; আবার নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।
(Quran Research intelligence Team ড্রাফট অনুবাদ)
(Quran Research intelligence Team ড্রাফট অনুবাদ)
সালামুন আলাইকুম!
আমার মনে হয় রেফারেন্স আয়াত গুলোর সরাসরি অনুবাদের লিংক দিয়ে দিলে ভাল হত।
ধন্যবাদ